ঢাকা : ঘূর্ণিঝড় মহাসেন আগামীকাল বুধবার বিকাল নাগাদ বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। আবহাওয়া অধিদফতর ও সিএনএন এ পূর্বাভাস জানিয়েছে। সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবিলায় ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র নৌবাহিনীর যৌথ টাইফুন সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টি দুর্বল হয়ে পড়লেও রবিবার বিকাল থেকে আবার সক্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করেছে। আবহাওয়া অধিদফতরের কর্তব্যরত কর্মকর্তা গতকাল রাত পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা কতটুকু হতে পারে সে বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে পারেননি। তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড়টি এখন পর্যন্ত সাইক্লোন পর্যায়ে রয়েছে। এর পরবর্তী পর্যায় তীব্র সাইক্লোন, তারপর হ্যারিকেন এবং সর্বোচ্চ পর্যায় সুপার সাইক্লোন। এখনো ঘূর্ণিঝড়টি পরবর্তী পর্যায়সমূহে পৌঁছায়নি এবং এখনো অনেক দূরে অবস্থান করছে। তাই ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। শ্রীলঙ্কার তৃতীয় শতকের রাজা মহাসেনের নামে এ ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করা হয়েছে।
গতকাল রাতে আবহাওয়ার সর্বশেষ বুলেটিনে জানান হয়, দক্ষিণ-পূর্ব ও তত্সংলগ্ন দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় মহাসেন সামান্য উত্তরে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ১২৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্র বন্দর থেকে ১২১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে এবং মংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ১১৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছিল। ঘূণিঝড়টি আরো ঘনীভূত হয়ে উত্তর দিকে অগ্রসর হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘন্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকট সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও মংলা সমুদ্র বন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরের অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলার এবং সমুদ্রগামী জাহাজসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
গভীর সমুদ্রে এখনো অসংখ্য মাছ ধরার ট্রলার অনেকেই ইতিমধ্যে উপকূলে আশ্রয় নিয়েছে
চট্টগ্রাম
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মহাসেন নিয়ে উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে চরম আতংক বিরাজ করছে। সাগরে মাছ ধরার ট্রলার, পণ্যবাহী জাহাজ ও নৌবাহিনীর জাহাজগুলোকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। তবে এখনো অসংখ্য মাছ ধরার ট্রলার গভীর সমুদ্রে রয়েছে। বোট মালিক সমিতি জানায়, সাগরে মাছ ধরার অধিকাংশ নৌযান ইতিমধ্যে কক্সবাজার, বাঁশখালী ও কর্ণফুলী নদীর ভেতরে নিরাপদ স্থানে চলে এসেছে। তবে গভীর সমুদ্রে থাকা নৌযানগুলোর সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। চট্টগ্রাম ফিশিং বোট মালিক সমিতির নেতা চৌধুরী মাঝি জানান, এখনো ২৮ থেকে ৩০টি ফিশিং বোট সাগরে রয়েছে। তাদের সাথে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।
এদিকে গতকাল সোমবার দেখা গেছে শতশত ফিশিং বোট ও পণ্য পরিবহনকারী লাইটার জাহাজ ও নৌবাহিনীর জাহাজ কর্ণফুলীর নদীর ভেতরে আশ্রয় নিয়েছে। অভ্যন্তরীণ নৌপথ উত্তাল থাকায় নৌপথে পণ্য পরিবহন বন্ধ রয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে লাইটারেজ জাহাজে করে ভোগ্যপণ্যসহ বিভিন্ন শিল্প কারখানার কাঁচামাল দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছানো হয়। কিন্তু সাগর উত্তাল থাকায় পরিবহন বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে পণ্য বোঝাই করেও কয়েকশ লাইটারেজ জাহাজ কর্ণফুলী নদীতে নোঙ্গর করে রয়েছে।
এদিকে নৌবাহিনীর কর্মকর্তা লে. কমান্ডার হাসানুজ্জামান জানান, তাদের জাহাজগুলোকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় মহাসেন মোকাবিলায় মংলা বন্দরে বিশেষ সতর্কতা সুন্দরবনে রেড এলার্ট
মংলা
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মহাসেন উপকূলে আঘাত হানার আশংকার খবরে মংলা বন্দরসহ সুন্দরবন উপকূলীয় এলাকায় গভীর উত্কণ্ঠার সৃষ্টি হয়েছে। মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষসহ স্থানীয় বিভিন্ন প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশেষ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা ও নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে একটি কট্রোল রুম খুলে পরিস্থিতি মনিটরিং করতে শুরু করেছে। সুন্দরবন বিভাগ পুরো বন জুড়ে সতর্ক অবস্থাসহ রেড এলার্ট জারি করেছে।
মহাসেন মোকাবিলায় বরিশালে সতর্কতা
বরিশাল অফিস জানায়, বরিশালে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় জরুরি বৈঠক হয়েছে। বরিশাল থেকে নৌ-বাহিনীর জলযান ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। নৌ-বাহিনীর একটি সূত্র জানিয়েছে, খুলনা ও চট্টগ্রাম থেকে নৌ-বাহিনীর জাহাজসহ গুরুত্বপূর্ণ নৌযানগুলো নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনা হচ্ছে। উপকূলীয় এলাকার মাছ ধরার ট্রলার ও নৌযানগুলো নিরাপদে আনা হয়েছে। দুর্গম চরগুলোতে বসবাসকারী মানুষকে আশ্বস্ত করতে রেডক্রেসিন্টের পক্ষ থেকে প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
পিরোজপুরে দুর্যোগ প্রস্তুতি
পিরোজপুর অফিস জানায়, ঘূর্ণিঝড় মহাসেন মোকাবিলায় পিরোজপুরে গতকাল সোমবার বিকালে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এ সভায় জেলার ঘূর্ণিঝড় ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলসহ সর্বত্র বিশেষ প্রস্তুতি নেয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়।
খোলা রাখা হচ্ছে সাইক্লোন শেল্টার ঘূর্ণিঝড় মহাসেন মোকাবিলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা
বাগেরহাট প্রতিনিধি জানান, ঘূর্ণিঝড় মহাসেন মোকাবিলায় উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতি হিসেবে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি এক জরুরি সভা করেছে। ঘূর্ণিঝড় মহাসেন আঘাত হানার আগেই সব মানুষকে যাতে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া যায় তার জন্য ২০১টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
মহাসেন মোকাবিলায় রায়পুর উপজেলায় প্রস্তুতি
রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) সংবাদদাতা জানান, মেঘনা নদী ও উপকূলীয় চরাঞ্চলের লোকজনদের নিরাপদ স্থানে চলে আসার জন্য মাইকিং করে জানানো হয়েছে এবং দুর্যোগকালীন সময়ের জন্য ১১টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় মহাসেন, কর্মকর্তাদের কর্মস্থল ত্যাগ না করার নির্দেশ মহেশখালী দ্বীপবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান
মহেশখালী (কক্সবাজার) সংবাদদাতা জানান, সম্ভাব্য প্রলয়ংকরি ঘূর্ণিঝড় মহাসেন থেকে দ্বীপ উপজেলার জনসাধারণের জীবন-মাল রক্ষার্থে মহেশখালী উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিঠির এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভা থেকে সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবিলায় উপকূলবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় 'মহাসেন' রামগতিতে চরাঞ্চলের লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে আনা হচ্ছে
রামগতি সংবাদদাতা জানান, উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় 'মহাসেন'। বন্দরগুলোতে দেখানো হচ্ছে চার নম্বর সতর্ক সংকেত। 'মহাসেন' এর সম্ভাব্য আঘাত মোকাবেলায় জনগণকে সতর্ক থাকার জন্য গতকাল সোমবার দুপুর থেকে লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে। উপজেলার দুর্গম ও বিচ্ছিন্ন চর গজারিয়া-তেলিরচর এবং নিম্ন চরাঞ্চল থেকে লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে আনা হচ্ছে। উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে খোলা হয়েছে সার্বক্ষণিক নিয়ন্ত্রণ কক্ষ।
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় 'মহাসেন' এর ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় সবধরনের সতর্কতা গ্রহণ করেছে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন। 'মহাসেন' মোকাবেলায় প্রস্তুতি ও করণীয় বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য গতকাল সোমবার বিকালে জেলা প্রশাসক স্থানীয় সার্কিট হাউজ সম্মেলন কক্ষে দুর্যোগ প্রস্তুতি কমিটির এক জরুরি সভা আহ্বান করেন।
সভায় জেলার সকল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। এমনকি যারা ছুটিতে রয়েছে তাদেরকেও স্টেশনে ফিরে আসার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ভোলা (উত্তর) প্রতিনিধি জানান, উপকূলের দিকে ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় 'মহাসেন' মোকাবেলায় ভোলার প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। জেলাব্যাপী মাইকিং চলছে। মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর মধ্যবর্তী বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলের বাসিন্দাদের মূল ভূখণ্ডে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতির প্রায় ৯ হাজার ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির প্রায় ২শ' স্বেচ্ছাসেবীকে সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও ৭ উপজেলায় খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। উপজেলাগুলোতে মজুদ করা হয়েছে শুকনো খাবার। স্বাস্থ্য বিভাগে ৯২টি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় মহাসেন-এর প্রভাবে উত্তাল হয়ে উঠছে ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদী। টানা বাতাসের কারণে এ দুটি নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর উপকূল থেকে মাছধরা ট্রলারগুলো ঘাটে ফিরতে শুরু করেছে বলে জানা গেছে। গতকাল ঘাট থেকে গভীর নদী বা সমুদ্রের উদ্দেশ্যে কোন জেলে ট্রলার ছেড়ে যায়নি।
ঘূর্ণিঝড় মহাসেন মোকাবেলায় নোয়াখালীতে প্রস্তুতি
নোয়াখালী প্রতিনিধি জানান, ঘূর্ণিঝড় মহাসেনের সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবেলায় নোয়াখালীতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা প্রশাসন। জেলার উপকূলীয় অঞ্চলের উপজেলা দ্বীপ হাতিয়া, সুবর্ণচর, কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাট এলাকায় ৪ শতাধিক ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে এবং ঐসব এলাকার জনগণকে দ্রুত সরিয়ে আনতে নৌযান প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
টেকনাফ উপকূলে ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড় মহাসেন নিয়ে আতংক : প্রশাসনের ব্যাপক প্রস্তুতি
টেকনাফ সংবাদদাতা জানান, টেকনাফ উপকূলে ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড় মহাসেন নিয়ে আতংক বিরাজ করছে। এ উপকূলে আবহাওয়া অধিদপ্তর কর্তৃক ৪ নং সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এ ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সোমবার আকাশের মেঘ গুমট ধরে তীব্র গরম অনুভূত হয়েছে। তবে অন্যান্য ঘূর্ণিঝড়ের চেয়ে এবার উপকূলীয় এলাকায় আতংক অনেক বেশি দেখা যাচ্ছে। এদিকে উপজেলা প্রশাসন সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবেলায় রবিবার বিকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির এক প্রস্তুতি সভা করা হয়।(ডিনিউজ)
গতকাল রাতে আবহাওয়ার সর্বশেষ বুলেটিনে জানান হয়, দক্ষিণ-পূর্ব ও তত্সংলগ্ন দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় মহাসেন সামান্য উত্তরে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ১২৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্র বন্দর থেকে ১২১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে এবং মংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ১১৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছিল। ঘূণিঝড়টি আরো ঘনীভূত হয়ে উত্তর দিকে অগ্রসর হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘন্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকট সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও মংলা সমুদ্র বন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরের অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলার এবং সমুদ্রগামী জাহাজসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
গভীর সমুদ্রে এখনো অসংখ্য মাছ ধরার ট্রলার অনেকেই ইতিমধ্যে উপকূলে আশ্রয় নিয়েছে
চট্টগ্রাম
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মহাসেন নিয়ে উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে চরম আতংক বিরাজ করছে। সাগরে মাছ ধরার ট্রলার, পণ্যবাহী জাহাজ ও নৌবাহিনীর জাহাজগুলোকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। তবে এখনো অসংখ্য মাছ ধরার ট্রলার গভীর সমুদ্রে রয়েছে। বোট মালিক সমিতি জানায়, সাগরে মাছ ধরার অধিকাংশ নৌযান ইতিমধ্যে কক্সবাজার, বাঁশখালী ও কর্ণফুলী নদীর ভেতরে নিরাপদ স্থানে চলে এসেছে। তবে গভীর সমুদ্রে থাকা নৌযানগুলোর সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। চট্টগ্রাম ফিশিং বোট মালিক সমিতির নেতা চৌধুরী মাঝি জানান, এখনো ২৮ থেকে ৩০টি ফিশিং বোট সাগরে রয়েছে। তাদের সাথে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।
এদিকে গতকাল সোমবার দেখা গেছে শতশত ফিশিং বোট ও পণ্য পরিবহনকারী লাইটার জাহাজ ও নৌবাহিনীর জাহাজ কর্ণফুলীর নদীর ভেতরে আশ্রয় নিয়েছে। অভ্যন্তরীণ নৌপথ উত্তাল থাকায় নৌপথে পণ্য পরিবহন বন্ধ রয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে লাইটারেজ জাহাজে করে ভোগ্যপণ্যসহ বিভিন্ন শিল্প কারখানার কাঁচামাল দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছানো হয়। কিন্তু সাগর উত্তাল থাকায় পরিবহন বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে পণ্য বোঝাই করেও কয়েকশ লাইটারেজ জাহাজ কর্ণফুলী নদীতে নোঙ্গর করে রয়েছে।
এদিকে নৌবাহিনীর কর্মকর্তা লে. কমান্ডার হাসানুজ্জামান জানান, তাদের জাহাজগুলোকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় মহাসেন মোকাবিলায় মংলা বন্দরে বিশেষ সতর্কতা সুন্দরবনে রেড এলার্ট
মংলা
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মহাসেন উপকূলে আঘাত হানার আশংকার খবরে মংলা বন্দরসহ সুন্দরবন উপকূলীয় এলাকায় গভীর উত্কণ্ঠার সৃষ্টি হয়েছে। মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষসহ স্থানীয় বিভিন্ন প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশেষ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা ও নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে একটি কট্রোল রুম খুলে পরিস্থিতি মনিটরিং করতে শুরু করেছে। সুন্দরবন বিভাগ পুরো বন জুড়ে সতর্ক অবস্থাসহ রেড এলার্ট জারি করেছে।
মহাসেন মোকাবিলায় বরিশালে সতর্কতা
বরিশাল অফিস জানায়, বরিশালে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় জরুরি বৈঠক হয়েছে। বরিশাল থেকে নৌ-বাহিনীর জলযান ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। নৌ-বাহিনীর একটি সূত্র জানিয়েছে, খুলনা ও চট্টগ্রাম থেকে নৌ-বাহিনীর জাহাজসহ গুরুত্বপূর্ণ নৌযানগুলো নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনা হচ্ছে। উপকূলীয় এলাকার মাছ ধরার ট্রলার ও নৌযানগুলো নিরাপদে আনা হয়েছে। দুর্গম চরগুলোতে বসবাসকারী মানুষকে আশ্বস্ত করতে রেডক্রেসিন্টের পক্ষ থেকে প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
পিরোজপুরে দুর্যোগ প্রস্তুতি
পিরোজপুর অফিস জানায়, ঘূর্ণিঝড় মহাসেন মোকাবিলায় পিরোজপুরে গতকাল সোমবার বিকালে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এ সভায় জেলার ঘূর্ণিঝড় ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলসহ সর্বত্র বিশেষ প্রস্তুতি নেয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়।
খোলা রাখা হচ্ছে সাইক্লোন শেল্টার ঘূর্ণিঝড় মহাসেন মোকাবিলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা
বাগেরহাট প্রতিনিধি জানান, ঘূর্ণিঝড় মহাসেন মোকাবিলায় উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতি হিসেবে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি এক জরুরি সভা করেছে। ঘূর্ণিঝড় মহাসেন আঘাত হানার আগেই সব মানুষকে যাতে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া যায় তার জন্য ২০১টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
মহাসেন মোকাবিলায় রায়পুর উপজেলায় প্রস্তুতি
রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) সংবাদদাতা জানান, মেঘনা নদী ও উপকূলীয় চরাঞ্চলের লোকজনদের নিরাপদ স্থানে চলে আসার জন্য মাইকিং করে জানানো হয়েছে এবং দুর্যোগকালীন সময়ের জন্য ১১টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় মহাসেন, কর্মকর্তাদের কর্মস্থল ত্যাগ না করার নির্দেশ মহেশখালী দ্বীপবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান
মহেশখালী (কক্সবাজার) সংবাদদাতা জানান, সম্ভাব্য প্রলয়ংকরি ঘূর্ণিঝড় মহাসেন থেকে দ্বীপ উপজেলার জনসাধারণের জীবন-মাল রক্ষার্থে মহেশখালী উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিঠির এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভা থেকে সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবিলায় উপকূলবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় 'মহাসেন' রামগতিতে চরাঞ্চলের লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে আনা হচ্ছে
রামগতি সংবাদদাতা জানান, উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় 'মহাসেন'। বন্দরগুলোতে দেখানো হচ্ছে চার নম্বর সতর্ক সংকেত। 'মহাসেন' এর সম্ভাব্য আঘাত মোকাবেলায় জনগণকে সতর্ক থাকার জন্য গতকাল সোমবার দুপুর থেকে লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে। উপজেলার দুর্গম ও বিচ্ছিন্ন চর গজারিয়া-তেলিরচর এবং নিম্ন চরাঞ্চল থেকে লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে আনা হচ্ছে। উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে খোলা হয়েছে সার্বক্ষণিক নিয়ন্ত্রণ কক্ষ।
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় 'মহাসেন' এর ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় সবধরনের সতর্কতা গ্রহণ করেছে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন। 'মহাসেন' মোকাবেলায় প্রস্তুতি ও করণীয় বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য গতকাল সোমবার বিকালে জেলা প্রশাসক স্থানীয় সার্কিট হাউজ সম্মেলন কক্ষে দুর্যোগ প্রস্তুতি কমিটির এক জরুরি সভা আহ্বান করেন।
সভায় জেলার সকল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। এমনকি যারা ছুটিতে রয়েছে তাদেরকেও স্টেশনে ফিরে আসার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ভোলা (উত্তর) প্রতিনিধি জানান, উপকূলের দিকে ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় 'মহাসেন' মোকাবেলায় ভোলার প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। জেলাব্যাপী মাইকিং চলছে। মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর মধ্যবর্তী বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলের বাসিন্দাদের মূল ভূখণ্ডে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতির প্রায় ৯ হাজার ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির প্রায় ২শ' স্বেচ্ছাসেবীকে সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও ৭ উপজেলায় খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। উপজেলাগুলোতে মজুদ করা হয়েছে শুকনো খাবার। স্বাস্থ্য বিভাগে ৯২টি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় মহাসেন-এর প্রভাবে উত্তাল হয়ে উঠছে ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদী। টানা বাতাসের কারণে এ দুটি নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর উপকূল থেকে মাছধরা ট্রলারগুলো ঘাটে ফিরতে শুরু করেছে বলে জানা গেছে। গতকাল ঘাট থেকে গভীর নদী বা সমুদ্রের উদ্দেশ্যে কোন জেলে ট্রলার ছেড়ে যায়নি।
ঘূর্ণিঝড় মহাসেন মোকাবেলায় নোয়াখালীতে প্রস্তুতি
নোয়াখালী প্রতিনিধি জানান, ঘূর্ণিঝড় মহাসেনের সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবেলায় নোয়াখালীতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা প্রশাসন। জেলার উপকূলীয় অঞ্চলের উপজেলা দ্বীপ হাতিয়া, সুবর্ণচর, কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাট এলাকায় ৪ শতাধিক ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে এবং ঐসব এলাকার জনগণকে দ্রুত সরিয়ে আনতে নৌযান প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
টেকনাফ উপকূলে ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড় মহাসেন নিয়ে আতংক : প্রশাসনের ব্যাপক প্রস্তুতি
টেকনাফ সংবাদদাতা জানান, টেকনাফ উপকূলে ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড় মহাসেন নিয়ে আতংক বিরাজ করছে। এ উপকূলে আবহাওয়া অধিদপ্তর কর্তৃক ৪ নং সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এ ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সোমবার আকাশের মেঘ গুমট ধরে তীব্র গরম অনুভূত হয়েছে। তবে অন্যান্য ঘূর্ণিঝড়ের চেয়ে এবার উপকূলীয় এলাকায় আতংক অনেক বেশি দেখা যাচ্ছে। এদিকে উপজেলা প্রশাসন সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবেলায় রবিবার বিকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির এক প্রস্তুতি সভা করা হয়।(ডিনিউজ)
খবর বিভাগঃ
বিশেষ খবর
সর্বশেষ সংবাদ
সারাদেশ

0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়