Friday, May 10

কে হবেন কাণ্ডারি

সমকাল ডেস্ক
ইমরান খান ট্রাম্পকার্ড: প্রায় ১৭ বছর ধরে রাজনীতির সাইডলাইনে থাকার পর এবার একটা ব্রেক থ্রুর আশা করছেন পাকিস্তানের ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিকে পরিণত হওয়া ইমরান খান (৬০)। সমস্যাকবলিত পাকিস্তানকে নতুন এক পথে পরিচালিত করার স্বপ্ন দেখিয়েছেন তিনি ভোটারদের।কে হবেন কাণ্ডারি
দাঙ্গা, সহিংসতা ও জঙ্গি তৎপরতায় পর্যুদস্ত পাকিস্তানে ইমরানের মতো আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত ব্যক্তিত্ব কমই আছেন। নির্বাচনী প্রচারে ইমরান খান ভোটারদের নতুন এক পাকিস্তান গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তার কথা খুব সহজ- এখন সময় এসেছে নতুনভাবে চেষ্টা করার। তরুণ ও শহুরে মধ্যবিত্ত ভোটাররা তার কথায় আকৃষ্ট হয়েছেন। তালেবান ও আল কায়দাবিরোধী মার্কিন ড্রোন হামলার কট্টর সমালোচক তিনি।
ইমরান খান আশা করছেন ভূমিধস বিজয়ের মাধ্যমে ক্ষমতায় যাওয়ার। তবে সদ্য বিদায়ী দল পিপিপির নিষ্ক্রিয় ও নিরুত্তাপ প্রচারের পর এটি নিশ্চিত যে, মূল লড়াই হবে নওয়াজ শরিফের মুসলিম লীগ ও ইমরানের খানের পিটিআইর মধ্যেই। এক্ষেত্রে ট্রাম্পকার্ড হয়ে উঠতে পারেন ইমরান খান।
ইতিহাসের হাতছানি: পাকিস্তানের নওয়াজ শরিফের (৬৩) সামনে ইতিহাসের হাতছানি। এবারের নির্বাচনে জিতলে তিনিই হবেন দেশটির তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হওয়া প্রথম ব্যক্তি। তার দল পাকিস্তান মুসলিম লীগের (পিএমএল-এন) বিজয়ের সমূহ সম্ভাবনাই দেখছেন অনেকে।
পাকিস্তানের বিরোধীদলীয় এ নেতা ধনকুবের স্টিল ব্যবসায়ী। অর্থকড়ির দিক দিয়ে যথেষ্ট শক্তিশালী হলেও তালেবানের ব্যাপারে তিনি বেশ নমনীয় বলেই অভিযোগ রয়েছে। পাকিস্তানের সবচেয়ে ধনী ও জনসংখ্যাবহুল প্রদেশ পাঞ্জাব নওয়াজ শরিফের মূল ঘাঁটি। সেখানে তিনি পাঞ্জাবের সিংহ নামে পরিচিত।
নির্বাচনী প্রচারে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ব্যক্তিগত বিমানে চষে বেড়িয়েছেন নওয়াজ। প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন দেশের বিপুল সমস্যা সমাধানের, অর্থনীতি ও জ্বালানি সংকট নিরসনের। কঠোর পরিশ্রম ও সঠিক নীতির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।
আত্মবিশ্বাসী নওয়াজ সভা-সমাবেশে নিজেকে পরবর্তী সরকারপ্রধান হিসেবেই তুলে ধরেছেন।
১৯৯৯ সালে সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগে ১৯৯০-৯৩ এবং ১৯৯৭-৯৯ সাল পর্যন্ত দু'দফা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন নওয়াজ। কোনোবারই মেয়াদ পূরণ করতে পারেননি। দ্বিতীয়বারে উৎখাত হওয়ার পর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয় তাকে। তিনি নির্বাচিত হলে পাকিস্তানে মার্কিন ড্রোন হামলা ও আমেরিকার সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের বিরোধিতা করবেন বলে মনে করছে পশ্চিমারা।
হালভাঙা নৌকা পিপিপি: পাকিস্তানের সদ্য বিগত সরকারের নেতৃত্বে ছিল পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)। কিন্তু আগামী শনিবারের নির্বাচন সামনে রেখে দলটির অবস্থা হয়েছে হালভাঙা নৌকার মতো। দলটির সভা-সমাবেশ-প্রচার সবকিছুতেই ঝিমিয়ে পড়া ভাব। পিপিপি নেতা আসিফ আলি জারদারি দেশের প্রেসিডেন্ট হওয়ায় নির্বাচনী কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে পারছেন না। গুরুত্বপূর্ণ এ সময়ে দলের কাগজে-কলমে প্রধান বিলাওয়াল ভুট্টোও দেশের বাইরে। এ অবস্থায় বেশ সংকটে রয়েছে দলটি।
পিপিপির নেতৃত্বাধীন জোট সরকার পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সরকারের পাঁচ বছরের মেয়াদ পূরণ করতে সক্ষম হয়। শান্তিপূর্ণভাবে একটি নির্দলীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরও করে দলটি। সংকটের আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে দলটি। দলের নির্বাচনী কার্যক্রমে শীর্ষ কোনো নেতাকে দেখা যাচ্ছে না। তালেবানের হুমকির মুখে বড় দুটি সমাবেশও বাতিল করতে হয়েছে।
নানা সমালোচনা রয়েছে প্রেসিডেন্ট জারদারিকে ঘিরে। তারপরও ক্ষমতা ধরে রাখতে পেরেছেন তিনি। কিন্তু এ যাত্রায় দলকে উদ্ধারে তাকে তেমন কার্যকর বলে মনে করছেন না বিশ্লেষকরা।
বিলাওয়ালই ভরসা: সদ্য ক্ষমতা ছাড়া পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি। কিন্তু মাত্র ২৪ বছর বয়সের এ তরুণের সাধারণ নির্বাচনে দল পরিচালনা করার মতো যোগ্যতা থাকার কথা নয়। হয়েছেও তাই। নিরাপত্তার অজুহাতে গুরুত্বপূর্ণ এ সময়ে দেশের বাইরে রয়েছেন তিনি। নির্বাচনে প্রার্থিতা করার মতো বয়সও হয়নি তার। যদিও তার ওপরই নির্ভর করছে দলের আশা-ভরসা।
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পিপিপি নেত্রী বেনজির ভুট্টো যখন ২০০৭ সালে বোমা হামলায় মারা যান, তখন তার ছেলে বিলাওয়ালের বয়স মাত্র ১৯ বছর। তখন তিনি ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তারপরও পারিবারিক রাজনীতির ঐতিহ্য ধরে বেনজিরের বাবা জুলফিকার আলি ভুট্টোর গড়া দলের নেতৃত্বে আনা হয় অপরিপকস্ফ বিলাওয়ালকেই। নামে দলের চেয়ারম্যান হলেও পেছনে থেকে দল পরিচালনা করেন তার বাবা প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি।
দলের নেতা বা আশা-ভরসা হলেও বিলাওয়াল কিন্তু কম বয়সের কারণে এবারের নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারছেন না।
নিরাপত্তার অজুহাতে গত মাসেই দুবাই চলে যান বিলাওয়াল। তবে নির্বাচনী পোস্টার, ব্যানারে মা-বাবার ছবির মাঝখানে শোভা পাচ্ছে তার ছবি। টেলিভিশনে প্রচারিত বিজ্ঞাপনে সক্রিয় রয়েছেন তিনি। ভুট্টো পরিবারের জনপ্রিয়তা ও অবস্থানকে কাজে লাগাতে দলের সভা-সমাবেশে তাকেই ভবিষ্যৎ কাণ্ডারি হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে।
দৃশ্যপটে নেই মোশাররফ: বেশ আশা নিয়েই দেশে ফিরেছিলেন পাকিস্তানের সাবেক স্বৈরশাসক জেনারেল পারভেজ মোশাররফ। নিজেকে দেশের পরিত্রাতা ঘোষণা করে বলেছিলেন, পাকিস্তানিরা তার জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু সবই বাগাড়ম্বরে পরিণত হয়েছে। দৃশ্যপটে নেই তিনি। কারাবন্দি মোশাররফ নির্বাচনেও অংশ নিতে পারছেন না।
বেশ দুর্বিপাকেই পড়েছেন সাবেক এ সেনাপ্রধান। একের পর এক মামলায় জড়িয়ে পড়ছেন। তাকে দেখে জুতো ছুড়ে মারছেন আইনজীবীরা। একটি আদালত তো তাকে রাজনীতিতে আজীবনের জন্যই নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। দেশ পরিচালনা দূরের কথা, সাব-জেল ঘোষিত ঘরের বাইরেই যেতে পারছেন না তিনি। মোশাররফ নিজেও জানতেন, পাকিস্তানে ফিরলে তাকে আইনি ও নিরাপত্তাজনিত সমস্যার মুখে পড়তে হবে। তার পরও কেন তিনি লন্ডন ও দুবাইয়ের স্বেচ্ছানির্বাসনের জীবন ছেড়ে পাকিস্তানে ফিরলেন! অনেকে বলছেন, উপদেষ্টারা বিভ্রান্ত করেছেন তাকে। অনেকে বলছেন, দেশপ্রেম দেখাতেই দেশে ফিরেছেন তিনি।
কিন্তু রাজনৈতিক ক্যারিয়ার যখন প্রায় শেষের পথে, কারাগারই ঠিকানা হয়ে উঠতে যাচ্ছে- এ অবস্থায় কী ভাবছেন তিনি। সূত্র :আল জাজিরা অনলাইন।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়