Friday, July 27

রমজানুল মুবারক: আজ রহমতের ৭ম দিন

আজ শুক্রবার,৭ রমজান ১৪৩৩ হিজরী। রহমতের দশকের সপ্তম দিন। দীর্ঘ রোযা,গরম ও তাপদাহের মধ্যেও মুমিনের সিয়াম সাধনা পুরোদমে অব্যাহত আছে। প্রেক্ষিতে মহান আল্লাহর দরবারে আরজ তিনি যেন আবহাওয়া ও পরিবেশকে সহনীয় রাখেন। মানব জাতিকে সৎপথের দিশা দেয়ার জন্য এক লক্ষ চবিবশ হাজার নবী রাসূল দুনিয়াতে এসেছেন। হযরত আদম আ. থেকে নিয়ে হযরত ঈসা আ. পর্যন্ত সকল নবী রাসূলের উম্মতের উপরই সিয়াম সাধনার ফরয বিধান ছিল। যার ধারাবাহিকতা এখনো অব্যাহত আছে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ কুরআন মাজীদে বলেন,‘ ‘হে মুমিনগণ! তোমাদের জন্য রোযার বিধান দেয়া হল যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের দেয়া হয়েছিল। যাতে তোমরা তাকওয়া হাসিল করতে পার। (সূরা বাকারা-২/১৮৩) এতে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে পূর্ববর্তী উম্মতগণের উপর রোযা ফরয ছিল। তবে আগেকার উম্মতের সিয়ামের দিন,সময় সংখ্যা ও প্রকৃতি নির্ধারনের ব্যাপারে বিস্তারিত ও সুস্পষ্ট কোন বিধি বিধানের সন্ধান পাওয়া যায়না। মানুষের ইচ্ছা মর্জি ও খেয়াল খুশির উপরই ছেড়ে দেয়া হয়েছিল। ফলে সবাই নিজ নিজ সুবিধা বুঝে সিয়াম সাধনার সময় ইত্যাদি নির্ধারন করতে পারতো। এমনি ভাবে পূর্ণ সিয়াম বা আংশিক সিয়াম রাখার এখতিয়ারও তাদের ছিল। এখতিয়ার ছিল বিশেষ কয়েকটি জিনিস বর্জন করার। অবশ্য ধর্মের পক্ষ থেকেও বিশেষ কয়েকটি জিনিস বর্জন ও অপর কয়েকটি জিনিস গ্রহণের নির্দেশ ছিল। কোন কোন ভারতীয় ধর্মে এর নজীর পাওয়া যায়। কেউ হয়তো গোশত জাতীয় খাবার বর্জন করা জরুরী মনে করতো। আবার কেউ হয়তো আগুন স্পর্শিত খাদ্য পরিহার করতো। আবার কেউ হয়তো লবন মিশ্রিত পানীয়ও এ ধরনের সাধারণ জিনিস ব্যতিত অন্য সকল কিছু বর্জন করা জরুরী মনে করতো। গান্ধীজীও তার অনুসারীদের ব্রত শেষোক্ত পর্যায়ের ছিল। (বিস্তারিত দেখুন ‘আরকানে আরবাআ ২৭১-২৭২ ফৃ.) সিয়ামের প্রকৃকি নির্ধারনে এই অবাধ স্বাধীনতা প্রকৃতপক্ষে সিয়ামের ভাবমূর্তি ও তার প্রাণশক্তি সম্পূর্ণরূপে বিনষ্ট করে দিয়েছিল। চারিত্রিক মহত্বতা,নৈতিক শুচিতা,চিন্তার বিশুদ্ধতা,আত্নিক পবিত্রতা এবং আল্লাহর নৈকট্য ও সান্নিধ্য লাভের অন্যতম মাধ্যম। এই সিয়াম কালক্রমে অন্ত:সার শূন্য নিছক এক অনুষ্ঠানে পর্যবশিত হয়ে পড়েছিল। যেহেতু যাবতীয় এখতিয়ার মানুষের হাতেই অর্পিত ছিল সেহেতু খাদ্যেরে পরিমান সংকোচন বিশেষ কোন খাদ্য গ্রহণ ও বর্জন, সময় ও সংখ্যা নির্ধারন, এক কথায় যাবতীয় বিষয়টিই ছিল মানুষের ইচ্ছাধীন। ফলে এর মধ্যে অলসতা অবহেলা ও ফাঁকিবাজির অভ্যাস গড়ে উঠলো। একটি মহান ধর্মীয় বিধান মানুষের খেয়ালিপনা ইচ্ছা ও মর্জির শিকাড় হয়ে পড়েছিল।এর রশি টেনে ধরার মত কোন উচ্চতর শক্তি ছিলনা সেখানে। কেননা সিয়াম পালনকারীদের যদি একথা বলা হতো যে সিয়ামের দিনে কি ভাবে তুমি পানাহার করছো? উত্তরে সে বলতো আমার রোযা তো শেষ বা আমার রোযা শুরু করতে যাচ্ছি কেবল। এ কারণেই পূর্বতন ধর্মের অনুসারীরা সিয়ামের আত্নিক,নৈতিক তথা সর্ববিধ কল্যাণ থেকে বঞ্চিত ছিল। বাস্তবে সিয়ামের প্রকৃত মর্ম ও হাকীকতই তাদের হাতছাড়া হয়ে গিয়েছিল। ইসলামী শরীয়তে সিয়ামের যাবতীয় বিধি বিধান নির্ধারিত করে দেয়ার সবচেয়ে বড় হিকমত ও তাৎপর্য এখানেই। ইমামুল হিন্দ শাহ ওয়ালিউল্লাহ রহ.দেহলভী তাঁর অমর গ্রন্থ ‘হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা’য় লিখেছেন,‘সিয়ামের ব্যাপারে এখতিয়ার দেয়া হলে ব্যাখ্যাদান ও পলায়নের দরজা উন্মুক্ত হয়ে পড়ে। আর ইসলামের এই সর্বাপেক্ষা আনুগত্য প্রকাশের মাধ্যম অলসতার শিকাড় হয়ে যাবে। (‘হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা’ ২/৩৭) প্রাচীন ধর্মসমূহে ধারাবাহিক সিয়ামের কোন বিধান ছিল না। বছরে বিভিন্ন দিন বিক্ষিপ্তভাবে সিয়াম পালনের প্রথা চালু ছিল। দুই রোযার মাঝে এত বেশি সময়ের ব্যবধান থাকতো যে মানব জীবনে সিয়ামের কোন প্রভাব পরিলক্ষিত হতো না। ভেতরের পাশবিক রিপু গুলো দমিত হবার পরিবর্তে আরো উসকে যেত। মানুষের ধ্যান ধারণা মন মানসিকতা ও আবেগ অনুভূতিকে পবিত্র বিশুদ্ধ ও নির্মল করার পূর্বেই সিয়ামের মেয়াদ ফুরিয়ে যেত। ফলে প্রাচীন ধর্মসমূহ কার্যত আল্লাহ প্রদত্ত্ব সিয়ামের ফলাফল লাভ থেকে বঞ্চিতই ছিল। এজন্য বিক্ষিপ্ত সিয়ামের পরিবর্তে ধারাবাহিক সিয়াম ছিল মানুষের স্বভাব ও প্রকৃতির একান্ত দাবী। ইসলাম সেই আবেদনে সারা দিয়ে নাযিল করেছে দীর্ঘ একমাস ব্যাপী ধারাবাহিক সিয়ামের বিধান। এ সম্পর্কে শাহ ওয়ালিইল্লাহ দেহলভী রহ. লিখেছেন,‘আত্নিক উৎকর্ষ তথা নিরংকুশ আনুগত্যের ফলপ্রসূ অনুশীলনের জন্য বিক্ষিপ্ত পানাহার বর্জনের পরিবর্তে ধারাবাহিক সিয়ামের বিধানই ছিল অপরিহার্য। কেননা দু একবারের অনশন /উপবাসব্রত যত কঠোর ও দীর্ঘই হোক তা মানুষের জন্য কাংখিত সুফল বয়ে আনতে সক্ষম নয়।’ (‘হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা’ ২/৩৭) রমজানুল মুবারকের সিয়াম ফরয হওয়ার পূর্বে আশুরার সিয়াম পালনের নির্দেশ ছিল মুসলমানের উপর। হিজাযের গুটি কতক আরব গোত্র এবং আরব ইহুদীদের মধ্যেও আশুরার সিয়ামের প্রচলন ছিল। ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোন থেকে বিষয়টি আলোচনার দাবী রাখে। ইনশাআল্লাহ আগামীতে এ বিষয়ে আলোকপাতের চেষ্টা করবো। দয়ময় আল্লাহ আমাদের জন্য যে সুষম কার্যকর সিয়ামের বিধান দিলেন সে জন্য তাঁর দরবারে আলীশানে নিযুত কোটি শোকর আদায় করছি। আল্হামদুলিল্লাহ! আসুন এই সিয়ামের কদর করি। সবাই উপকৃত হই। এর রূপ রস প্রকৃতি থেকে নিজেদের সমৃদ্ধ করি। পরিপূর্ণ মানুষ হই। মহান আল্লাহ আমাদের তাওফীক দিন। আমীন। দৈনিক সিলেটের ডাক ২৭ জুলাই

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়