Saturday, June 2

রেমিট্রেন্স বাড়ায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে

মে মাসের ২৫ দিনে (২৫ মে পর্যন্ত) প্রবাসীরা বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে ৯৩ কোটি ডলারের রেমিট্রেন্স পাঠিয়েছেন। গত ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) পাঠানো অর্থের পরিমাণ ১ হাজার ৬৪ কোটি ডলার। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত রেমিটেন্সের পরিমাণ ১ হাজার ১৫৭ কোটি ডলার। গত অর্থবছরে (২০১০-১১) রেমিটেন্সের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ১৬৫ কোটি ডলার, যা এবারের ১১ মাসের প্রায় সমান।রেমিট্রে বাড়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে। মে মাসের প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) ৭০ কোটি ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ৯৫০ কোটি ডলারে নেমে এলেও বৃহস্পতিবার এর পরিমাণ ছিল ৯৬০ কোটি ডলার।চলতি ২০১১-১২ অর্থবছরে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের পরিমাণ পরিমাণ ১৩ বিলিয়ন (১ হাজার ৩০০ কোটি) ডলারে গিয়ে দাঁড়াবে বলে আশা করছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান, যা গত বছরের চেয়ে একশ কোটি ডলার বেশি।রেমিট্রে বাড়ায় আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের বিপরীতে টাকাও শক্তিশালী হচ্ছে জানিয়ে আগামীতে টাকা আরো শক্তিশালী হবে বলে আশা করছেন তিনি।আতিউর রহমান গভর্নর বলেন, �চলতি অর্থবছরের ১১ মাসেই গত অর্থবছরের পুরো সময়ের সমান রেমিট্রে এসেছে। জুন মাসের রেমিট্রে যোগ হলে এবার রেমিট্রে ১৩ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে ঠেকবে।�চলতি মাসের বাকি এক সপ্তাহের রেমিট্রে যোগ হলে মে মাসে রেমিটেন্সের পরিমাণ ১১০ কোটি ডলারের বেশি হবে বলে ধারণা করছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।চলতি অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল পর্যন্ত রেমিটেন্সের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, এই ১০ মাসের নয় মাসেই ১০০ কোটি ডলারের বেশি রেমিট্রে এসেছে। সবচেয়ে বেশি এসেছে জানুয়ারি মাসে ১২২ কোটি ১৪ লাখ ডলার।তথ্য অনুযায়ী, অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে রেমিট্রে প্রবাহে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ দশমিক ৪১ শতাংশ। গত অর্থবছরের এ সময়ে প্রবৃদ্ধি ছিল ৪ দশমিক ৫৮ শতাংশ।আমদানি সংক্রান্ত তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে শিল্প স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধনী যন্ত্রপাতি (ক্যাপিটাল মেশিনারি) আমদানির জন্য এলসি (ঋণপত্র) খোলার পরিমাণ কমেছে ২৬ শতাংশ। আর শিল্পের কাঁচামাল আমদানির এলসি কমেছে ১০ শতাংশের বেশি।গত অর্থবছরের এ সময়ে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির এলসির পরিমাণ বেড়েছিল ৭০ শতাংশ। আর শিল্পের কাঁচামাল আমদানির এলসি বেড়েছিল ৫১ শতাংশ।চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে খাদ্য আমদানি কমেছে প্রায় ১০০ শতাংশ। অথচ গত অর্থবছরের এ সময়ে এটা বেড়েছিল ২৫০ শতাংশের বেশি।গভর্নর বলেন, �অপ্রয়োজনীয় ও বিলাসবহুল পণ্য আমদানিতে ঋণ না দিতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যার ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে সামগ্রিক আমদানিতে।�তবে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক জায়েদ বখত শিল্প যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানি কমে যাওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।তিনি বলেন, �কম প্রয়োজন ও বিলাসবহুল পণ্য আমদানি কমলে সমস্যা নেই। কিন্তু শিল্প স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধনী যন্ত্রপাতি ও শিল্পের কাঁচামাল আমদানি কমলে চিন্তার বিষয়।�মূলধনী যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানি কমলে শিল্প খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, এই খাতে প্রবৃদ্ধি কমবে। সে ক্ষেত্রে কাক্সিক্ষত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি (জিডিপি প্রবৃদ্ধি) অর্জন নাও হতে পারে।�আতিউর রহমান বলেন, জ্বালানি তেল, যন্ত্রাংশ, সার ও ভোগ্যপণ্যের আমদানি মূল্য পরিশোধে ব্যয় বেশি হওয়ায় গত কয়েক মাসে বিদেশি মুদ্রার চাহিদাও ছিল বেশি। এতে ডলারের বিপরীতে টাকার মান পড়ে যায়।সম্প্রতি এসব পণ্যের আমদানি ব্যয় কমার পাশাপাশি রেমিট্রে প্রবাহ বাড়ায় অভ্যন্তরীণ বাজারে ডলারের যোগানও বেড়েছে।�ফলে ডলারের বিপরীতে টাকার শক্তিশালী হওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। কার্ব মার্কেটেও ডলারের বিপরীতে টাকার মান বেড়েছে,� বলেন গভর্নর।টাকার মান বাড়ার পক্ষে উদাহরণ দেখিয়ে তিনি বলেন, �ভারতীয় মুদ্রায় (রুপি) এখন ১ ডলার কিনতে ৫৬ টাকা লাগছে। মাস খানেক আগেও এটা ৫৪ টাকায় পাওয়া যেত।�সরকারি মালিকানাধীন জনতা ব্যাংক বৃহস্পতিবার ৮২ টাকা ২৩ পয়সায় ডলার বিক্রি করেছে। আর কিনেছে ৮১ টাকা ২৫ পয়সায়। বিদেশি এইচএসবিসি ব্যাংক ডলার কিনেছে ৮২ টাকা ২৯ পয়সায়। বিক্রি করেছে ৮১ টাকা ৩২ পয়সা দরে।চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি এ যাবৎকালে সর্বোচ্চ ৮৪ টাকা ৮৪ পয়সায় উঠেছিল ডলারের দর।�এর পর থেকেই ডলারের দর ধীরে ধীরে কমে স্থিতিশীল অবস্থায় ফিরছে,� বলেন আতিউর রহমান।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়