Saturday, June 16

সংকটের কবলে মুদ্রাব্যবস্থাপনা : টাকার মান কমছে-ই

এক বছরের ব্যবধানে বিশ্বের প্রায় সবগুলো প্রধান প্রধান মুদ্রার সাথে বাংলাদেশি টাকার বিনিময় মূল্য অস্বাভাবিকভাবে কমে গেছে। ২০১১ সালের ৩০ জুন এক মার্কিন ডলারের দাম ছিল ৭৪ টাকা ১০ পয়সা। একই সময়ে এক ইউরোর দাম ৮৪ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১০৬ টাকা। এক ব্রিটিশ পাউন্ডের দাম ১০৪ টাকা থেকে হয়েছে ১১৯ টাকা ০৪ পয়সা। এক বছর পর চলতি বছরের ১০ জুন সেই এক মার্কিন ডলারের সরকারি দাম দাঁড়িয়েছে ৮২ টাকা ১৭ পয়সা। এক বছরের ব্যবধানে কোনো মুদ্রার এত বেশি দরপতনকে তীব্র উদ্বেগের কারণ বলে জানিয়েছেন। তবে খোলা বাজারে মার্কিন এক ডলারের দাম এখন ৮৪ টাকা বলে জানা গেছে।টাকা আরো মূল্য হারাতে পারে বলে ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা আশংকা করছেন। তাদের মতে, অর্থ মন্ত্রণালয় ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক টাকা নিয়ে খেলতে গিয়ে টাকাকে এতটাই দুর্বল করে ফেলেছেন যে, বিদেশের প্রায় সকল মুদ্রার সাথে টাকার দাম কেবলি কমছে। মাত্র ক�বছর আগেও যেখানে থাই মুদ্রা বাথ এর সাথে বাংলাদেশি মুদ্রার বিনিময় হার ছিল প্রায় সমান সমান, এখন তা অর্ধেকেরও নিচে নেমে গেছে। অন্য প্রায় সকল বিদেশি মুদ্রার সঙ্গে বাংলাদেশি মুদ্রার অবস্থা প্রায় একই রকম।অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত�র কঠোর নজরদারির কারণে মহাজোট সরকারের প্রথম দুই বছর পর্যন্ত টাকার মান কিছুটা স্থিতিশীল থাকলেও গত এক বছর ধরে কেবলি মূল্য হারাচ্ছে বলে মনে করেন কর বিভাগের সাবেক মহাপরিচালক মোঃ শাহজাহান। তিনি বলেন, এখন এমন একটা সময়ে ডলারের সাথে টাকার মান দ্রুত পড়ে যাচ্ছে যখন পৃথিবীর অন্য প্রায় সকল মুদ্রার সাথে ডলারের অবস্থা দুর্বল। পুঁজিবাজারে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো একাকার হয়ে সামগ্রিক মুদ্রা ব্যবস্থাকেই মহা বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিয়েছে বলে তিনি মনে করেন।সরকারি হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে মার্কিন এক ডলার সমান বাংলাদেশি ৮২ টাকা ১৭ পয়সা। খোলা বাজারে এই দর বাংলাদেশি টাকায় ৮৫ টাকা পর্যন্ত উঠছে। ২০০৯-১০ অর্থবছর পর্যন্ত টাকা-ডলারের গড় দর ছিল সর্বোচ্চ ৬৯.১৮ টাকা। ২০১০-১১ অর্থবছরে টাকা-ডলারের গড় দর ছিল সর্বোচ্চ ৭৬.৪৬ টাকা। আর ২০১১-১২ অর্থবছরে গড় দর ছিল সর্বোচ্চ ৭৯.৮৯ টাকা। বাংলাদেশ ইলেকট্রিকেল এসাসিয়েশনের সাবেক চেয়ারম্যান মীর নিজামউদ্দিন আহম্মেদ বলেন, গেল ক�বছর ধরেই দেশীয় মুদ্রা অব্যাহত চাপে রয়েছে। স্থবিরতায় আক্রান্ত মুদ্রা ক্রমান�য়ে তার ক্রয় ক্ষমতা হারাচ্ছে।বর্তমানে টাকার অবাধ বিনিময়যোগ্যতা চালু থাকার কারণে এখন আর কেন্দ্রীয় ব্যাংক টাকার বিনিময় হার নির্ধারণ করে দেয় না। আর্ন্তজাতিক মুদ্রার সাথে স্বনির্ধারিতভাবে বিনিময় হার নির্ধারিত হয়। বাণিজ্যিকভাবে প্রতিদ্বন্দ�ী যে দেশের মুদ্রা বেশি শক্তিশালী হবে তারাই লাভবান হয়। বিশেষ করে আমদানিকারক হলে তো কথাই নেই। এক সময় বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও ইইসি�র অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলেছিল, মুক্তবাজার অর্থনীতি চালু করে সরকার যে দূরদর্শিতা ও বাস্তবতার পরিচয় দিয়েছিল, তার ফলে আশাতীত সাফল্য অর্জন করা সম্ভব হয়েছিল। নতুন শতাব্দীর শুরুর দশকে বাংলাদেশ এশিয়ার অন্যান্য ইকোনমিক টাইগারদের সমপর্যায়ে গিয়ে দাঁড়াতে পারবে। অবশ্য হরতাল ধর্মঘট ও নেতিবাচক রাজনীতি পরিহার করে একটি অনুকূল গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখতে পারলেই এ রকম একটি আদর্শ অর্থনৈতিক অবস্থা সৃষ্টি করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন সিপিডি�র নির্বাহী পরিচালক।ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রিজের সাবেক সভাপতি আর ইঞ্জিনিয়ার সাইফুল ইসলাম বলেন, আমাদের উৎপাদন ব্যবস্থা আমদানি করা কাঁচামাল নির্ভর। টাকার ঘন ঘন অবমূল্যায়নের ফলে শিল্পে ব্যবহার্য সকল কাঁচামালের দাম বেড়ে যাবে। ব্যাক-টু ব্যাক এলসি নির্ভর রফতানি পণ্যও তার প্রতিযোগিতা করার ক্ষমতা হারাবে। অর্থ ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণেই মূলত টাকার অবমূল্যায়ন করতে হচ্ছে।এফবিসিসিআই�র সাবেক সভাপতি আঃ আউয়াল মিন্টু জানান, মুদ্রা মূল্যের তুলনামূলক স্থিতিশীলতাকে দেশের অর্থনীতির জন্য খুবই ইতিবাচক বলে মনে করা হয়। বিশ্ব অর্থনেতিক ব্যবস্থার ব্যাপক পরিবর্তনের মুখে মুদ্রামান সন্তোষজনক পর্যায়ে না থাকলে আর্থিক খাত বিপর্যস্ত হয়ে যেতে পারে বলে তিনি মনে করেন।১ ইউএস ডলার = ৮২.১৭৫০ বাংলাদেশী টাকা১ ইউরো = ১০২.৯৮৫৮ বাংলাদেশী টাকা১ ব্রিটিশ পাউন্ড = ১২৭.৫৮৯০ বাংলাদেশী টাকা১ কানাডিয়ান ডলার = ৮০.১১৪১ বাংলাদেশী টাকা১ অস্ট্রেলিয়ান ডলার = ৮১.৬৬২৬ বাংলাদেশী টাকা১ হংকং ডলার = ১০.৫৯১৭ বাংলাদেশী টাকা১ ইন্ডিয়ান রূপী = ১.৪৭৪৫ বাংলাদেশী টাকা১ কুয়েতি দিনার = ২৯৩.০১১৩ বাংলাদেশী টাকা১ মালেশিয়ান রিংগিত = ২৫.৯২৬৮ বাংলাদেশী টাকা১ পাকিস্তানি রূপী = ০.৮৭১২ বাংলাদেশী টাকা১ সৌদি রিয়াল = ২১.৯১০৪ বাংলাদেশী টাকা১ সিঙ্গাপুরি ডলার = ৬৪.২৩০৬ বাংলাদেশী টাকা সূত্র ফেয়ার নিউজ আপলোড তারিখ : 2012-06-15

শেয়ার করুন

1 comment:

  1. থাই বাটের বতমান দাম টা কত?

    ReplyDelete

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়