নিজস্ব প্রতিবেদক:
সিলেটের কানাইঘাটে আহসান উল্লাহ ও তার পরিবারকে গ্রামের কতিপয় মাতব্বররা সমাজচ্যুত করে প্রায় আড়াই মাস ধরে একঘরে করে রেখেছে। বাড়ি-ঘরে হামলা ও সমাজচ্যুত করার কারনে চরম নিরাপত্তাহীনতায় এক প্রকার বন্দী জীবন যাপন করছে পরিবারটি। থানা পুলিশ থেকে শুরু করে আদালতে মামলা দেয়ার পরও কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না বলে উপজেলার ঝিঙ্গাবাড়ী ইউনিয়নের ঝিঙ্গারখাল গ্রামের মৃত নিছার আলীর পুত্র বৃদ্ধ আহসান উল্লাহ ও তার পরিবারের সদস্যরা জানান।
সরেজমিনে এলাকায় গিয়ে জানা গেছে, ঝিঙ্গারখাল জামে মসজিদ ও কবরস্থানের জায়গা-জমি সংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে গ্রামের কতিপয় মাতব্বর মিলে আহসান উল্লাহ’র পরিবারকে দীর্ঘ দিন থেকে একঘরে করে রেখেছে। ঝিঙ্গারখাল মৌজার ২১৬নং দাগে ২৬টি খতিয়ানে মোট ২একর ৯৮ শতক লায়েক পতিত জমি রয়েছে। এরমধ্যে ৩৭৬নং খতিয়ানে আহসান উল্লাহ’র রয়েছে ৩৩শতক জমি। এই লায়েক পতিত জমি স্থানীয় মহল্লার মসজিদে রেজিষ্ট্রি করে দেওয়া জন্য বৃদ্ধ আহসান উল্লা ও তার ছেলেদের চাপ প্রয়োগ করেন, গ্রামের কতিপয় মাতব্বররা। এতে বৃদ্ধ আহসান উল্লাহ ও তার ছেলে আওলাদ হোসেন রাজি না হলে তাদের নানা হুমকি প্রদান করে জমি দখলের পায়তারা করেন গ্রামের মাতব্বররা।
পাশর্^বর্তী ফাগু গ্রামের মুরব্বীয়ানরা থেকে শুরু করে এলাকার জনপ্রতিনিধিরা বিষয়টি মিমাংসা করার জন্য বার বার উদ্যেগ গ্রহণ করলেও আহসান উল্লাহর পরিবারকে একঘরে করে রাখা গ্রামের মাতব্বররা সালিশ-বিচার মানেনি। যার কারনে আওলাদ হোসেন বাদী হয়ে সম্প্রতি সময়ে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গ্রাম্য মাতব্বর সোহেল মিয়া, মুসা মিয়া, ছয়ফুল আলম, রাসেল আহমদ, তোতা মিয়া, নাসির উদ্দিন, আফছার উদ্দিন, ইসলাম উদ্দিন, ফয়েজ উদ্দিন সহ বেশ কয়েকজনকে বিবাদী করে মামলা দায়ের করেন। মামলার প্রেক্ষিতে আদালত কারন দর্শানোর নোটিশ জারী করলে উল্লেখিত মাতব্বররা ক্ষুব্ধ হয়ে গত ১৪ এপ্রিল বেলা আড়াইটার দিকে বৃদ্ধ আহসান উল্লা’র বসত বাড়িতে হামলা করে এবং ঐদিন রাতেই আহসান উল্লার খড়ের ঘর ও মহিষের বাতান আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়। এরপর আহসান উল্লাহর পরিবারকে গ্রামের মাতব্বররা সমাজচ্যুত করে একঘরে রাখার সিদ্ধান্ত নেয় এবং গ্রামের জামে মসজিদে পুরুষ সদস্যদের নামাজ পড়তে নিষেধ দেয়, পাশাপাশি রাস্তা-ঘাটে চলাফেরায় বাঁধা সহ শিশুদের মক্তব ও স্কুলে যেতে নিষেধ দেয় তারা।
এ ব্যাপারে পাশর্^বর্তী ফাগু গ্রামের আব্দুল আজিজ, মড়া মিয়া, আব্দুস শুক্কুর ও ফয়ছল আহমদ সহ অনেকেই জানিয়েছেন, আহসান উল্লাহ’র ৩৩ শতক জমি গ্রামের লোকজন কবরস্থানের জায়গা বলে দাবী করছে, অথচ এই জমির শ্রেণী লায়েক পতিত, কবরস্থানের জায়গা কবরস্থানেই রয়েছে। কিন্তু গ্রামের মানচিত্রে কবরস্থান কিংবা গোরস্তানের কোন চিহ্ন নেই।
সরেজমিনে আরো জানা যায় বৃদ্ধ আহসান উল্লাহ ও তার স্বজনরা এই মসজিদের জন্য ৩টি দলিলে মোট ৪৮ শতক জমি দান করে মসজিদ নির্মাণ করেন। তাদের হাতে নির্মিত এ মসজিদে দীর্ঘদিন থেকে তারা পাঁচ ওয়াক্তের নামাজ জামাতে আদায় করতে না পারছেন না।
আহসান উল্লাহ কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, তার পৈত্রিক জমিজমা জবর দখলের উদ্দেশ্যে গ্রামের মাতব্বররা আমার পরিবারকে সমাজচ্যুত করে রাখায় শুধু নামাজ নয় মক্তবে তার পরিবারের শিশুরা পর্যন্ত লেখাপড়া করতে পারছে না। এমনকি তার ছেলেদের গ্রামে চলাচল করতে বাধাঁ প্রদান ও নানা ধরনের হুমকি দেয়া হচ্ছে।
আহসান উল্লাহর পুত্র আওলাদ হোসেন বলেন, মহল্লার কবরস্থান কবরস্থানের জায়গায় রয়েছে। আমাদের লায়েক পতিত ৩৩ শতক জমির মধ্যে কোন কবরস্থান নেই। কিন্তু গ্রামের মাতব্বররা উক্ত জমি কবরস্থানের দোহাই দিয়ে তাদেরকে একঘরে করে রেখেছেন। বর্তমানে তারা নানা ধরনের হুমকির মধ্যে নিরাপত্তাহীনতায় দিনযাপন করছেন। তাদের আত্মীয় স্বজনরা এই গ্রামে না থাকায় বিভিন্ন ভাবে নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছেন। আওলাদ হোসেন আরো বলেন, এই দাগে ২৬টি খতিয়ানে ২৬জন মালিক রয়েছেন। কিন্তু তার পিতা আহসান উল্লাহ ব্যতিত বাকি ২৫জনের সাথে রহস্যজনক কারনে মাতব্বরদের কোন ঝামেলা নেই। তারা নিরীহ হওয়ার কারনে জমি দখল করতে না পেরে গায়ের জোরে তাদেরকে একঘরে করে রাখা হয়েছে। থানায় গিয়েও কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না তারা।
তবে আসহান উল্লাহর প্রতিপক্ষ গ্রামের তোতা মিয়ার সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি আহসান আল্লাহর পরিবারকে সমাজচ্যুত করে রাখা সহ মসজিদে নামাজে বাঁধা প্রদানের বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, মসজিদের জায়গা ও কবরস্থানের জায়গা নিয়ে আহসান উল্লাহর পরিবারের সাথে বিরোধ রয়েছে। মূলত বিরোধপূর্ণ জায়গাটি মসজিদের কবরস্থানের।
ঝিঙ্গারখালের আশপাশ গ্রামের সচেতন মহল, আহসান উল্লাহর পরিবারকে সমাজচ্যুত করা সহ তাদের চলাফেরায় বাঁধা নিষেধের ঘটনায় সিলেটের উর্ধ্বত পুলিশ কর্মকর্তা সহ স্থানীয় প্রশাসন ও থানা পুলিশকে দ্রুত এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন। তা না হলে এনিয়ে যে কোন সময় বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে তারা জানান।
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়