Tuesday, June 25

এই দ্বীপ শুধুই নারীদের!

ফিচার ডেস্ক:

দ্বীপটির নাম ‘সুপার-শি’। ফিনল্যান্ডের হেলসিংকির পাশ ঘেঁষে চলে গেছে বাল্টিক সাগর। শীতল এই নীল জলরাশির উপকূলে সবুজে ঘেরা ছোট্ট এই দ্বীপটি শান্ত ও স্নিগ্ধতায় ভরপুর। 

এই দ্বীপটির নামের সঙ্গে জাড়িয়ে আছে ‘শি’। আর এতেই আপনার মনে দ্বীপটি নিয়ে কৌতূহল জাগতে পারে। এর সঙ্গে নারীদের কোনো সম্পর্ক আছে কি?  
হ্যাঁ, তা তো বটেই। ‘সুপার-শি’ এর সঙ্গে নারীদের সম্পর্ক খুব গভীরে! তবে এর চেয়ে বড় তথ্য হচ্ছে, এই দ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পুরুষদের চোখে অধরাই থেকে যাবে। অর্থাৎ এই দ্বীপে ‘পুরুষ নিষিদ্ধ’।
বিষয়টা শুনে অবাক হতেই পারেন। ভাবছেন, এটা কী করে সম্ভব? আর কেন-ই বা এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে? নিশ্চই এর পেছনে কোনো যৌক্তিক কারণ রয়েছে। 
পৃথিবীতে এমন অনেক স্থান আছে যেখানে নারীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আর ‘সুপার-শি’ দ্বীপে কি না তার উল্টো! এই যেমন ধরুন, জাপানের ওকিনোশিমা দ্বীপের কথা। এখানে নারীদের প্রবেশ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। এই দৃষ্টান্ত মাথায় নিয়েই কি শুধু নারীদের জন্য দ্বীপটি তৈরি হয়েছে? আর এখানে নিষিদ্ধ করা হয়েছে পুরুষদের।
এর উত্তর জানতে হলে দ্বীপটির মালিক আমেরিকান নারী উদ্যোক্তা ক্রিস্টিনা রোথের কথা শুনতে হবে। তিনিই এই দ্বীপটিতে পুরুষ নিষিদ্ধের মতো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাহলে শোনা যাক, রোথের কথা। 
অবসর কাটাতে ক্রিস্টিনা রোথ একবার আমেরিকার একটি রিসোর্টে যান। সেখানেই তার মাথায় এই অভিনব চিন্তাটা আসে। কারণ, সেখানে গিয়ে পর্যটকদের আচার-আচরণ দেখে রোথের উপলব্দি হয়, নারী পর্যটকদের প্রতি পুরুষ পর্যটকদের আচরণটা ঠিক স্বাভাবিক নয়। 
তিনি উপলদ্ধি করেন, কোথায় যেন একটা অবহেলা, ক্ষোভ কাজ করছে। পাশাপাশি রোথ খুব গভীরভাবে খেয়াল করেন, নারীদের নিজের প্রতি যত্ন বা মনোযোগের কিছুই নেই। তাদের সব মনোযোগ পুরুষদের প্রতি। তিনি দেখতে পান, কোনো নারী পর্যটক হয়তো মনোযোগ দিয়ে একটি কাজ করছেন। কিন্তু কোনো সুদর্শন পুরুষ দেখলেই লিপিস্টিক দিতে শুরু করলেন।
সেই থেকেই রোথ শুধু নারীদের জন্য একটি দ্বীপ বানানোর পরিকল্পনা মাথায় আঁটেন। যেখানে নারী তার নিজের মতো থাকবেন এবং শুধু নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকবেন। রোথের প্রথম চিন্তা ছিল অবকাশকেন্দ্রটি নিজের দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে করবেন। সেই অনুযায়ী একটি পরিকল্পনাও করে ফেলেন।
তবে এর মধ্যেই রোথের সঙ্গে এক ফিনিশিয় যুবকের দেখা হয়। কথায়-কথায় তা হৃদয় দেয়া-নেয়ার পর্যায়ে গড়ায়। প্রেমিকের সঙ্গে তার দেশ দেখতে গিয়ে ফিনল্যান্ডের প্রেমে পড়ে যান রোথ। মুহূর্তেই দ্বিধাগ্রস্ত না হয়ে সিদ্ধান্ত পাল্টে ফেলেন রোথ। মার্কিন সামাজ্যে নয়, ফিনল্যান্ডেই স্বপ্নের রিসোর্টটি তিনি বানাবেন।
তাই দেরি না করে চটজলদি আট দশমিক চার একরের ‘সুপার-শি’ দ্বীপকে বিশাল অবসরকেন্দ্রে রূপ দিতে কাজ শুরু করেন রোথ। 
তাহলে রোথের ‘শুধু নারীদের জন্য’ এই অভিনব দ্বীপ বানানোর ক্ষেত্রে কোনো ‘পুরুষ-বিদ্বেষ’ মনোভাব কী কাজ করেছে? রোথ জানান, তা ঠিক নয়। পুরো ভাবনার পেছনে পুরুষদের প্রতি কোনো বিদ্বেষ আসেনি। বরং ক্রিস্টিনা রোথ জানান, ভবিষ্যতে নারীদের অতিথি হয়ে পুরুষরাও হয়তো তার এই দ্বীপে আসবেন। কিন্তু দ্বীপটিতে নারীদেরই প্রাধান্য থাকবে।
এই দ্বীপে নারীদের অবসর যাপন ও স্বাস্থ্যগত যত্নের সব ব্যবস্থাই রয়েছে। নারীদের জন্য স্পা, ইয়োগার পাশাপাশি রান্নার ক্লাসও রয়েছে। ‘সুপার-শি’ দ্বীপে পাঁচটি বিলাস বহুল কেবিন তৈরি করা হয়েছে। লক্ষ্য রয়েছে দশটি কেবিন করার। গেল জুন থেকে যাত্রা শুরু হওয়া এই দ্বীপ শুধুই নারীদের।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়