Tuesday, June 25

প্রিয় মুরসি, আপনি আমাদের মাঝে জীবিতই!

আমর দারাজ
মিসরীয় সাবেক আন্তর্জাতিকবিষয়ক ও পরিকল্পনামন্ত্রী 
আপনি জীবিত! কারণ আপনার শাহাদত মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষের পথকে আলোকিত করেছে। জন্মভূমির ইজ্জত-সম্মান ও বিপ্লবের মর্যাদা ফিরিয়ে আনতে তাদের মধ্যে প্রতিরোধের-আত্মা আপনিই ফুঁকে দিয়েছেন। শুরু করে দিয়েছেন নতুন জাতীয় কর্মসূচি। সমাপ্তি ঘটবে, মিসর যখন আপন পথে ফিরে আসবে ঠিক তখনই।
আপনি জীবত! কারণ আপনার সঙ্গে সাক্ষাতের পূর্ব পর্যন্ত আমাদের মধ্যে আপনার আত্মা বহমান থাকবে। বছরের পর বছর জেলের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে আপনি যে আমানত নিয়ে চলেছেন, এ আত্মা আমাদের তার যোগ্য করবে।
আপনি জীবিত! কারণ আপনি সিকি শতাব্দী থেকে আত্মত্যাগের উদাহরণ, দানের নমুনা এবং উন্নত চরিত্র ও মূল্যবোধের বাতিঘর হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। আজ স্মরণ আসছে, কত সংকট আমরা একসঙ্গে মোকাবিলা করেছি। যখন আপনি ছিলেন পাহাড়সম দৃঢ়।
কীভাবে ভুলতে পারি আপনাকে!
যখন প্রকৌশলী খায়রাত শাতকে বাদ দিয়ে আপনাকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া চেষ্টা করছিল, আর আপনি প্রত্যাখ্যান করছিলেন! আমাদের চাপে আপনি তা গ্রহণ করেন। আপনি আমানত ও দায়িত্ব হিসেবে তা গ্রহণ করেছিলেন।
কীভাবে আপনাকে ভুলতে পারি!
২০১২ সালে গাজার ওপর জায়নবাদী আগ্রাসনে সিংহের মতো গাজার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। আপনার সেই আওয়াজ আজও মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষের কানে দরাজ কণ্ঠে ভেসে আসেÑ ‘কিছুতেই গাজাকে একাকী ছেড়ে দিতে পারি না।’ 
হে প্রিয় শহীদ প্রেসিডেন্ট!
সব পর্যায়ে, সব ময়দানে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার যোগ্যতা ছিল আপনার। আপনি সব জায়গায় স্বাধীন দেশের সত্যিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজেকে প্রমাণিত করেছেন। পরিকল্পিত প্রচারণার মাধ্যমে আপনাকে বিপ্লববিরোধীরা একটি দলের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করলেও আপনি ছিলেন সব মিসরির প্রেসিডেন্ট। মৃত্যুর পরে তারা আপনাকে ইখওয়ানের দুই মুরশিদের পাশে কবর দেওয়ার মাধ্যমে চেষ্টা করেছে, আপনি শুধু মিসরের একজন জাতীয় নেতা। না, বরং আপনি মানবতার প্রতীক ও বিশ্ব নেতা। নেলসন ম্যান্ডেলা জেল থেকে বেরিয়ে প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। কিন্তু হে প্রিয় শহীদ প্রেসিডেন্ট! আপনি প্রেসিডেন্ট অবস্থায় জেলে প্রবেশ করেছেন এবং শহীদ হয়ে জেল থেকে মুক্ত হয়েছেন। মানব-ইতিহাসে জন্মভূমির ইজ্জত ও দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য লড়াই এবং স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার ও সমানাধিকারের জন্য শাহাদতের থেকে মর্যাদার আর কী আছে!
প্রিয় শহীদ প্রেসিডেন্ট!
আমার মনে পড়ছে আপনার দৃঢ়তা ও বুদ্ধিবৃত্তির কথা! আপনাকে যখন জান্তা আটকে রাখে, তখন আন্তর্জাতিক সমাজের প্রতিনিধি ক্যাথেরাইন অ্যাস্টান আপনার সঙ্গে দেখা করে বিদ্যমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ছাড় দিতে এ যুক্তি দেয় যে, দেখুন! ময়দানে ৫০ হাজার মানুষ আপনার বিদায় চায়! তখন আপনি বলেছিলেন, ওখানে ৫০ হাজার মানুষ থাকলে আপনি আমার কাছে আসতেন না। পরবর্তী সময়ে অ্যাস্টান বলেছিল, আপনি খুবই ধীমান মানুষ।
প্রিয় শহীদ প্রেসিডেন্ট!
শাহাদতের পর আপনি দৃঢ়তার উদাহরণ হয়ে থাকবেন। আপনার পবিত্র রক্ত থেকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম স্বাধীনতার লড়াইয়ে পাথেয় নেবে।
প্রিয় শহীদ প্রেসিডেন্ট!
আমি আপনাকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আপনার মৃত্যুর পূর্ণাঙ্গ তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত আমার অন্তর স্থির হবে না। আপনার প্রকৃত হত্যাকারীদের আমরা চিনি। আজ হোক কাল হোক আসমানে তাদের বিচারের আগে দুনিয়ায় তাদের বিচার হবেই ইনশাআল্লাহ।
 আলজাজিরা আরবি থেকে অনুবাদ
মুজাহিদুল ইসলাম

সূত্র: আলােকিত বাংলাদেশ।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়