Wednesday, May 15

রমজানের মূল লক্ষ্য তাকওয়া অর্জন

তাকওয়া অর্জনের সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম হলো দোয়া, মুত্তাকিদের সহবত, হিম্মত ও আল্লাহর ভালোবাসা- এ চারটি বিষয়। আমরা ধোঁকায় পড়ে রই, গাফেল হয়ে থাকি; এজন্য আমাদের কাছে সবই কঠিন মনে হয়। কিন্তু যদি চিন্তা করা হয় তা হলে দেখা যাবে এ চারটার মধ্যে সবচেয়ে কঠিন হলো হিম্মত। আবার হিম্মতের চেয়ে কঠিন হলো ধারাবাহিক চেষ্টা করা। সবার আগে আমাদের হিম্মত ও মনের তীব্র ইচ্ছাকে কাজে লাগাতে হবে।
পবিত্র রমজান হলো সেই সুবর্ণ সুযোগের মাস- যে মাসে কেউ চাইলে অন্য সময়ের চেয়ে সহজেই হিম্মতকে কাজে লাগিয়ে তাকওয়া অর্জনের পথে দ্রুত এগিয়ে যেতে পারেন; নিজেকে নিবেদিত করতে পারেন মহান প্রভুর দরবারে। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেছেন, হে ইমানদাররা! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল, যেন তোমরা খোদাভীতি অর্জন করতে পার। (সুরা বাকারা)। এই খোদাভীতি, এই তাকওয়া অর্জন করাই হলো রমজানের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
তাকওয়া কী? এর ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য হজরত ওমর (রা) একবার হজরত ইবনে মাসউদকে (রা) অনুরোধ করেন। ইবনে মাসউদ (রা) বলেন, আপনি কি কখনো কাঁটাঘেরা পথ অতিক্রম করেছেন? ওমর (রা) বললেন, হ্যাঁ। ইবনে মাসউদ (রা) বললেন, তখন আপনি কী করতেন? ওমর (রা) বললেন, আমি খুব সতর্কতার সঙ্গে সে পথ অতিক্রম করতাম। ইবনে মাসউদ (রা) বলেন, এ সতর্কতাই হলো তাকওয়া।
রমজান হলো তাকওয়া অর্জনের সুবর্ণ মাস। রব্বুল ইজ্জত এ মাসে তার বান্দাদের শয়তানের ধোঁকা থেকে বাঁচানোর জন্য, গুনাহ থেকে বাঁচানোর জন্য শয়তানকে কয়েদ করে রাখেন। বান্দারা যেন তওবা করে নিজেদের গুনাহ থেকে পাকসাফ করতে পারে, সে জন্য তিনি উন্মুক্ত করে রেখেছেন ক্ষমার দুয়ার। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, আর তিনিই তার বান্দাদের তওবা কবুল করেন এবং পাপগুলো ক্ষমা করে দেন। (সুরা আশ্শুরা)।
মাগফিরাতের এই দশকে গফুরুর রাহিম, দয়াময় রবের অধিক নিকটবর্তী হয়ে তার মাগফিরাত লাভের জন্য কায়োমনোবাক্যে প্রার্থনা করতে হবে। বেশি বেশি এস্তেগফার আদায় করতে হবে। রাসুল (স) এরশাদ করেছেন, এই মাসে চারটি কাজ অবশ্যকরণীয়। দুটি কাজ তো এমন যে, তার দ্বারা তোমাদের রব সন্তুষ্ট হন। আর অবশিষ্ট দুটি এমন, যা ছাড়া তোমাদের কোনো গত্যন্তর নেই।
এই চারটির মধ্যে একটি হলো কালেমায়ে শাহাদত পাঠ করা, আর দ্বিতীয়টি হলো অধিক পরিমাণে এস্তেগফার বা ক্ষমা প্রার্থনা করা। এই দুটি কাজ আল্লাহর দরবারে অতিপছন্দনীয়। আর তৃতীয় ও চতুর্থটি হলো জান্নাত লাভের আশা করা ও জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণের জন্য দোয়া করা। এ দুটি এমন বিষয়, যা তোমাদের জন্য একান্ত জরুরি। (ইবনে খুজাইমা)।
রোজাসংক্রান্ত মাসআলা রোজা অবস্থায় শরীর থেকে রক্ত বের হলে বা ইনজেকশন ইত্যাদি দ্বারা রক্ত নেওয়া হলে রোজা ভাঙবে না। তবে ইচ্ছাকৃতভাবে এ পরিমাণ রক্ত বের করা মাকরুহ, যার দ্বারা রোজাদার খুব দুর্বল হয়ে যায়। সাবেত আলবুনানি (রহ) বলেন, হজরত আনাসকে (রা) জিজ্ঞেস করা হলো- রোজার হালতে শিঙ্গা লাগানোকে আপনারা কি মাকরুহ মনে করতেন? তিনি বলেন, ‘না। তবে এ কারণে দুর্বল হয়ে পড়লে তা মাকরুহ হবে।’ (সহি বোখারি)।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়