নিজাম উদ্দিন:
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-৫ (কানাইঘাট-জকিগঞ্জ) আসনে কে পাচ্ছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত মহাজোট ও বিএনপি সমর্থিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী এ নিয়ে উভয় শিবিরের নেতাকর্মীদের মধ্যে নানা ধরনের আলোচনা সর্বত্র চলছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাকর্মীরা নিজ নিজ দল থেকে প্রার্থী দেওয়ার জন্য কেন্দ্রের নেতৃবৃন্দের প্রতি জোরালো দাবি জানিয়ে আসলেও এ আসন থেকে শেষ পর্যন্ত জোটের সমীকরণে মহাজোট থেকে মনোনয়ন নিশ্চিত করতে পারেন জাতীয়পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা বর্তমান সাংসদ বিরোধীদলীয় হুইপ আলহাজ্ব সেলিম উদ্দিন। সর্বশেষ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে দেখা যায় মহাজোটের প্রার্থী তালিকায় চূড়ান্ত ভাবে সেলিম উদ্দিন এমপির নাম এ আসনের প্রার্থী তালিকায় রাখা হয়েছে। অপর দিকে নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী কে হচ্ছেন নিয়ে বিএনপি, জামায়াত ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের টেনশন বিরাজ করছে। বিগত ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-৫ আসন থেকে চারদলীয় জোটের প্রার্থী জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক সাংসদ অধ্যক্ষ মাওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী ঐক্য ফ্রন্টের প্রার্থী হচ্ছেন এমন গুঞ্জন জোরালু হচ্ছে। জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় তিনি স্বতন্ত্র ভাবে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মজাজোটের প্রার্থী জাপা সমর্থিত সেলিম উদ্দিন ও ঐক্যফ্রন্ট সমর্থিত জামায়াত নেতা ফরিদ চৌধুরী চূড়ান্তভাবে মনোনীত করা হলে কপাল পোড়তে পারে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত মনোনয়ন প্রত্যাশীদের। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সাথে কথা হলে তারা বলেন, দলের প্রার্থী চাই অন্য কোন দলের প্রার্থীকে জোটের মনোনয়ন দেওয়া হলে নেতাকর্মীদের মধ্যে বড় ধরনের হতাশা তৈরী হবে। এক্ষেত্রে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ থেকে কেউ বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে দাড়ালে সব হিসাব নিকাশ পাল্টে যেতে পারে। বিশেষ করে সিলেট-৫ আসনে বিএনপি ও জামায়াত এবং জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম তাদের সমর্থিত প্রার্থীদের ঐক্য ফ্রন্টের মনোনয়ন দেওয়ার জন্য কেন্দ্রে জোর লভিং চালিয়ে যাচ্ছেন। বিএনপি চাচ্ছে তাদের প্রার্থী অপর দিকে সিলেট বিভাগের ১৯ টি আসনের মধ্যে এ আসন থেকে জামায়াত দলীয় ভাবে তাদের দলের সাবেক সাংসদ অধ্যক্ষ ফরিদ চৌধুরী কে প্রার্থী দেওয়ার জন্য অনঢ় রয়েছে। র্দীঘদিন ধরে নির্বাচনী মাঠে তৎপর জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হেফাজত নেতা মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক কে এ আসন থেকে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী দেওয়ার জন্য দলের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাকর্মীরা সোচ্চার রয়েছেন। সিলেট-৫ আসনে কওমী সমর্থিত আলেম উলামাদের ভোট ব্যাংক রয়েছে। এ ক্ষেত্রে মাওলানা ওবায়দুল্লাহ ফারুককে ঐক্যফ্রন্টের মনোনয়ন দেওয়া হলে কওমী মাদ্রাসার ছাত্র শিক্ষক ও ধর্মপ্রান মানুষ তাকে ভোট দিয়ে বিপুল ভোটে জয়যুক্ত করবেন বলে জমিয়তের নেতা কর্মীরা মনে করেন। তাদের দাবি ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী জামায়াত নেতা ফরিদ চৌধুরীকে করা হলে এর মাশুল জোটকে দিতে হবে। কারণ সিলেট-৫ আসনে কওমী মাদ্রাসা পন্থীদের বড়ধরনের ভোট ব্যাংক রয়েছে। তারা নীতিগত ভাবে জামায়াত বিরোধী। বিএনপি নেতাকর্মীরা অনঢ় রয়েছেন তাদের দলীয় প্রার্থী কে জোটের মনোনয়ন দেওয়ার জন্য। কারন ৯৬ এর নির্বাচনের পর বিএনপি জোটের কারণে বার বার এ আসন থেকে দলীয় প্রার্থী দিতে বঞ্চিত হচ্ছে। এবার তারা ধানের শীষের প্রার্থী দাবি করছেন। অপর দিকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এবারের নির্বাচনে এ আসন জাতীয় পার্টিকে ছাড় দিতে নারাজ। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিএনপি জোট বর্জন করলে এ আসনে জাপা সমর্থিত প্রার্থী সেলিম উদ্দিন কে মনোনয়ন দেওয়া হলে তিনি বিনা প্রতিদন্ধিতায় নির্বাচিত হন। এ আসন থেকে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ৭ জন প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনে অনেকে মনোয়ন পত্র জমা দিয়েছেন। গণভবনে প্রার্থীদের সাক্ষাৎকারে দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দল ও জোট থেকে যাকে প্রার্থী দেওয়া হবে তার পক্ষে কাজ করার জন্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের নির্দেশ দিয়েছেন। তারপরও মহাজোট ও ঐক্যফ্রন্টের চুড়ান্ত প্রার্থী তালিকা এখনো জোটগত ভাবে প্রকাশ না করায় উভয় জোটের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ঢাকায় অবস্থান করে কেন্দ্রীয় ভাবে মনোনয়ন ভাগিয়ে আনার জন্য জোর লভিং চালিয়ে যাচ্ছেন। শেষ পর্যন্ত কে হচ্ছেন সিলেট-৫ আসন থেকে মহাজোট ও ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী তা ২/১ দিনের মধ্যে চুড়ান্ত হবে বলে সূত্রে জানা গেছে। জাপা সমর্থিত নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, মহাজোটের প্রার্থী সেলিম উদ্দিন এমপি হচ্ছেন এটা নিশ্চিত। জোটের স্বার্থে তাকে প্রার্থী অবশ্যই মনোনীত করা হবে। তবে মহাজোট থেকে বর্তমান সাংসদ সেলিম উদ্দিন ও ঐক্য ফ্রন্টের প্রার্থী জামায়াত নেতা সাবেক সাংসদ ফরিদ চৌধুরী কে চুড়ান্ত ভাবে জোটগত মনোনয়ন দেওয়া হলে এ আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে বিদ্রোহী প্রার্থী স্বতন্ত্রভাবে নিবার্চনে অংশ নিতে পারেন এ ধরনের গুঞ্জন নির্বাচনী মাঠে বিরাজ করছে। আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৩৫ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আলহাজ্ব ফয়জুল মুনির চৌধুরী গত ২দিন থেকে নির্বাচনী মাঠে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তার কয়েকজন সমর্থক জানিয়েছেন মহাজোট থেকে জাপা নেতা সেলিম উদ্দিন কে পুণরায় মনোনয়ন দেওয়া হলে মুনির চৌধুরী স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন। বিএনপি ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের অনেক নেতাকর্মীদের সাথে আলাপ করে জানা যায় জামায়াত নেতা ফরিদ চৌধুরী কে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী করা হলে তারা বিকল্প প্রার্থী দিয়ে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে লড়বেন। জামায়াত শিবিরের নেতাকর্মীরা জানান, ফরিদ চৌধুরী কে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হচ্ছেন কেন্দ্র থেকে এক ধরনের চুড়ান্ত করা হয়েছে। জোটের স্বার্থে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলের নেতাকর্মীরা তাকে বিজয়ী করবেন।
প্রসঙ্গত যে, সিলেট ৫ (কানাইঘাট-জকিগঞ্জ) আসন থেকে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পত্র কিনেছেন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী পরে দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে মনোয়ন প্রত্যাহারকারী সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, সাবেক সাংসদ শিল্পপতি আলহাজ্ব হাফিজ আহমদ মজুমদার, কেন্দীয় যুবলীগ নেতা অর্থনীতিবিদ ড. আহমদ আল কবির, বঙ্গবন্ধু আইনজীবি পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক ছাত্র নেতা এ্যাডঃ মস্তাক আহমদ, কৃষকলীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা আলহাজ্ব আব্দুল মুমিন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ধর্ম বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ফয়সল আহমদ রাজ।
বিএনপি থেকে মনোনয়ন কিনেছেন কানাইঘাট উপজেলা পরিষদের বার বার নির্বাচিত চেয়ারম্যান সিলেট জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আশিক উদ্দিন চৌধুরী, ৯০দশকের তুখোড় ছাত্রনেতা চাকসু সাবেক আপ্যায়ন সম্পাদক বিশ্ষ্টি ব্যবসায়ী জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও কানাইঘাট উপজেলা বিএপির সভাপতি মামুন রশিদ, জকিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জেলা বিএনপি নেতা ইকবাল হোসেন, কেন্দ্রীয় ছাত্র দলের সাবেক সহ-সভাপতি ছিদ্দিকুর রহমান পাপলু, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বিএনপি নেতা শরীফ উদ্দিন লষ্কর, জাতীয় পার্টি থেকে দলীয় ভাবে মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন বর্তমান সাংসদ আলহাজ্ব সেলিম উদ্দিন, জাপার কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জকিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ছাব্বির আহমদ, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য যুক্তরাজ্য প্রবাসী এম জাকির হোসেন, সিলেট জেলা জাপার যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুদ্দীন খালেদ, জাপা নেতা আলহাজ্ব আব্দুল মতিন চৌধুরী।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম থেকে দলীয় ভাবে মনোনয়ন কিনেছেন দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক ও স্বতন্ত্রভাবে মনোনয়ন পত্র কিনেছেন সাবেক সাংসদ কেন্দ্রীয় জামায়ত নেতা মাওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী বলে জানা গেছে।
কানাইঘাট নিউজ ডটকম/ নিউ/এম আর/ ১৬ নভেম্বর ২০১৮ ইং
খবর বিভাগঃ
প্রতিদিনের কানাইঘাট
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়