Thursday, May 31

আর কত রক্ত ঝরলে শান্তি ফিরবে নারাইনপুরে

নিজাম উদ্দিন: কানাইঘাট ঝিংগাবাড়ী ইউপির আগফৌদ নারাইনপুর উপজেলার মধ্যে একটি ঐতিহ্যবাহী গ্রাম। এ গ্রামকে নিয়েই একটি ওয়ার্ড গঠিত। বিভিন্ন সময়ে গ্রামটিতে গোষ্ঠি প্রথা নিয়ে নানা ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে থাকে। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে নতুন করে গ্রামটিতে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে লড়াই শুরু হয়েছে। ঘটে গেছে বেশ কয়েকটি দুঃখজনক সংর্ঘষের ঘটনা। এতে অনেকে আহত হয়েছেন। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য বাড়ি-ঘরে আগুন, রাস্তাঘাটে চোরাগুপ্ত হামলার কারণে গ্রামের নিরীহ মানুষ নিজ বাড়িতে একরকম বন্দী জীবন-যাপন করছেন। গ্রামের বর্তমান ইউপি সদস্য শরীফ উদ্দিন ও সাবেক ইউপি সদস্য ইয়াহিয়া গংদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে এ বিরোধ চলে আসছে। উভয়পক্ষের লোকজন রাস্তাঘাটে প্রতিপক্ষ পেলে ঝাপিয়ে পড়ে। গ্রামের সার্বিক শান্তি শৃংখলা বজায় রাখতে কানাইঘাট থানা পুলিশ আমার জানামতে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। যখনই এ গ্রামের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে থাকে তখনই এলাকায় ছুটে যায় পুলিশ। এমনকি এলাকায় মারামারির সময় সার্বক্ষণিক ভাবে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে বর্তমানে উভয়পক্ষের মধ্যে ১০টি মামলা চলছে। অনেক ক্ষেত্রে এসব মারামারির মামলা পুলিশ নিতে বাধ্য হয়। নারাইনপুর গ্রামের চলমান বিরোধ নিরসনের জন্য অনেকবার পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা,উপজেলা প্রশাসন, থানা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধিরা উদ্যোগ গ্রহণ করলেও কোন পক্ষের কারণে প্রশাসনিক চেষ্টা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না, সেটা আগে খোঁজে বের করতে হবে। গ্রামে শান্তি শৃংখলা ফিরিয়ে আসলে এলাকার কাদের মাতব্বরী চলে যাবে এটা প্রশাসনকে খতিয়ে দেখতে হবে। আসলে পরগনা প্রথা ও গাছবাড়ী এলাকার কিছু মুখ চেনা মাতব্বররাই নারাইনপুর গ্রামে এ বিরোধ লাগিয়ে রেখেছে বলে এলাকার অনেক সচেতন মহলের সাথে কথা বলে আমরা জানতে পেরেছি। এখন আসি মূল কথায়,গত ২৮ মে সর্বশেষ গ্রামে দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে কয়েকজন আহত হলে খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক থানা পুলিশ এলাকায় ছুটে গিয়ে বড় ধরনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ থেকে গ্রামবাসীকে রক্ষা করেন। পুলিশ উভয়পক্ষের চিহ্নিত লোকজনের বাড়িতে হানা দেয়। একপক্ষের শরীফ উদ্দিন মেম্বারের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তার দুই স্ত্রীকে পুলিশ গ্রেফতার করে। পুলিশের দাবী শরীফ উদ্দিনের বাড়িতে অভিযানের সময় তার স্ত্রীসহ পরিবারের লোকজন তাদের উপর চড়াও হয় এবং খারাপ আচরণ করে। কিন্তু এ নিয়ে গত বুধবার গ্রামে একপক্ষের কিছু নারী ও শিশুদের দিয়ে কথিত মানববন্ধনের নামে কানাইঘাট থানার ওসি আব্দুল আহাদের বিরুদ্ধে যে সকল অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে তার সাথে একজন সংবাদকর্মী হিসাবে আমি ভিন্ন মত পোষণ করছি। পুলিশের বিরুদ্ধে ঢালাও অভিযোগ কতটুকু সত্য এটা এলাকার সাধারণ মানুষই বলে দিতে পারবেন। নারাইপুর গ্রামের ঘটনাটি কোন ধরনের রাজনৈতিক বিষয় নয়। এটি একটি গ্রাম কেন্দ্রিক আধিপত্য বিস্তারের ঘটনা। মানববন্ধনে ওসি আব্দুল আহাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক যে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ আনা হয়েছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য রাজনৈতিক ভাবে কোন ঘটনার রং দেওয়া অশুভ উদ্দেশ্য। এ থেকে আমাদের সবাইকে বিরত থাকতে হবে। কোনটি সত্য আর কোনটি মিথ্যা মানুষ সবই বুঝে। পুলিশের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা রেকর্ড করার যে অভিযোগ উঠেছে তা একেবারেই সত্য নয়। একধরনের অপপ্রচার আমি বলব। দুইপক্ষের মধ্যে ঘটে যাওয়ার ঘটনারই জন্য থানায় মামলা হয়েছে। একজন সংবাদকর্মী হিসাবে বলতে চাই সত্য সংবাদ প্রকাশ করা হচ্ছে সংবাদকর্মীদের কাজ। কোন ঘটনার সঠিক তদন্ত ছাড়া সংবাদ প্রকাশ করা হলে এলাকায় সাংবাদিকদের নিয়ে একধরনের নেতিবাচক ধারনা তৈরী হয় মানুষের মধ্যে। আইন শৃংখলা বাহিনীর কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। আসুন আমরা সবাই মিলে গাছবাড়ী নারাইনপুর গ্রামের মানুষের মধ্যে শান্তি সম্প্রীতি ফিরিয়ে আনতে আওয়াজ তোলি, যাতে করে প্রশাসন ও কানাইঘাটের বিশিষ্টজন, জনপ্রতিনিধিরা ও রাজনৈতিক মহল এগিয়ে আসেন নারাইনপুর গ্রামের দুইপক্ষের মধ্যে বিরোধ নিরসন করে জনমনে শান্তি ফিরিয়ে আনতে।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়