Tuesday, December 20

সার্টিফিকেট আনতে গিয়ে আর ফিরে এলেন না কেউ

সার্টিফিকেট আনতে গিয়ে আর ফিরে এলেন না কেউ
কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক: ভোররাতে আগুন, আগুন চিৎকারে ঘুম ভাঙে স্বামী সৈয়দ হোসেন ও স্ত্রী নাহিদা সুলতানার। দুই বছরের ছেলে আদিয়াত হোসেনকে নিয়ে দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন তারা। বাইরে এসে দেখেন, পাশের বাড়িতে আগুন জ্বলছে। ছেলেকে একজনের কাছে রেখে স্বামী-স্ত্রী দুজনেই আগুন নেভানোর কাজে নেমে পড়েন। এর মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পড়ে তাদের একতলা বাড়ির সামনের অংশেও।

বেশ কিছুক্ষণ পর আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে মনে করে নিজের ঘরে ঢোকেন নাহিদা। অন্যদের বলে যান শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদগুলো আলমারি থেকে বের করে নিয়ে আসবেন। কিন্তু অনেকটা সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও স্ত্রী বের হচ্ছেন না দেখে ঘরে ছুটে যান স্বামীও। শেষ পর্যন্ত দুজনেরই কেউ আর ঘর থেকে জীবিত বের হয়ে আসতে পারেননি।

গত রোববার ভোরে চট্টগ্রাম নগরের বলিরহাট এলাকার শাহজীপাড়ার দুলা সারেংয়ের বাড়িতে এ দুর্ঘটনা ঘটে। আগুনের ধোঁয়ায় দমবন্ধ হয়ে মারা যান সৈয়দ হোসেন ও তার স্ত্রী।

দুই বছরের শিশু সন্তান আদিয়াতকে নিয়ে ওই ঘরে থাকতেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন পরিচালিত মেমন মাতৃসদন হাসপাতালের হিসাব বিভাগের কর্মী সৈয়দ হোসেন ও সরকারি সিটি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী রীনা।

সৈয়দের ঘরের আশপাশে আরও কয়েকটি ঘরে তার ভাইরা থাকতেন। সৈয়দের বড় ভাই নূর হোসেনের ছেলের বিয়ের আয়োজন ঘিরে উৎসব চলছিল পরিবারে, এখন তাতে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

সৈয়দের বড় ভাই নূর হোসেন, মেজ ভাই মঞ্জুর আলমের পাশাপাশি তাদের প্রতিবেশী এছহাক, জাকির হোসেন, আনোয়ার, সেকান্দারের ঘরও পুড়েছে।

মঞ্জুর আলম জানান, পাশের ঘরে যখন আগুন জ্বলছিল তখন ছেলেকে ঘরের বাইরে এনে এক স্বজনের হাতে দিয়েছিলেন রীনা। তারপর সবার সঙ্গে ছাদে গিয়ে পানিও ছুড়ছিলেন রীনা-সৈয়দ দুজনই।

“রীনা নিজের পরীক্ষার সনদ এবং স্বামীর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিতে পুনরায় বাসায় ঢোকেন। তিনি ফিরে না আসায় ঢোকেন সৈয়দ। আগুন পুরোপুরি নেভার পর ঘরের ভেতর খাটের ওপর দুজনকে নিথর অবস্থায় পাওয়া যায়। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ফাঁড়ি পুলিশের নায়েক মো. হামিদ জানান, সৈয়দ আহমেদ ও তার স্ত্রী রিনাকে ভোরের দিকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা।

পরীক্ষার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন জানিয়ে হামিদ বলেন, “ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে তাদের মৃত‌্যু হয়েছে।”

সকালে অগ্নিকাণ্ডস্থলে বাবা-মা হারানো নাতি আদিয়াতকে কোলে নিয়ে বিলাপ করতে দেখা যায় সৈয়দের ষাটোর্ধ্ব মা নূর বানুকে। কোলে থাকা আদিয়াতও কাঁদছিল ‘মা মা’ বলে। স্বজনরা ব্যস্ত ছিল আদিয়াতের কান্না থামাতে।

পোড়া ঘরের বারান্দায় বিলাপ করছিলেন নিহত সৈয়দ হোসেনের মা নূর বানু। কাঁদতে কাঁদতে একপর্যায়ে নির্বাক হয়ে পড়েন তিনি। এ সময় ভিড়ের মধ্যে কেউ একজন আদিয়াতকে দাদির কোলে তুলে দেয়। নাতিকে দেখে আবার আর্তনাদ করে কেঁদে ওঠেন তিনি। আহাজারি করতে থাকেন, ‘ও পুত তুই হন্ডে গেলি। আঁরে ফেলাই ক্যানে গেলিগুই। তোর পোয়ার কী অইবু। তারে হনে চাইবু’ (ও ছেলে, তুই কই গেলি। আমাকে ফেলে কেমন করে চলে গেলি। তোর ছেলের কী হবে? তাকে কে দেখবে?)। দাদির আহাজারি শুনেই হয়তো চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করে আদিয়াতও। নূর বানুকে সান্ত্বনা দিতে আসা স্বজন ও প্রতিবেশীরাও আর নিজেদের সামলে রাখতে পারেননি। তখন সবার চোখে পানি, কেউ আড়ালে চোখ মুছছেন, কেউ নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে ভিড় থেকে একটু আড়ালে চলে যান।

দুই ভাই দুই বোনের সবার ছোট ছিল রীনা। তার বড় বোন পারুল বলেন, সাড়ে তিন বছর আগে বিয়ে হয় রীনার। “গতকাল (শনিবার) সকালেও আমি এসেছিলাম এ বাসায়, ছিলাম বিকাল পর্যন্ত। একসাথে খাওয়া দাওয়া করলাম, আজ সে নেই।” পারুল জানান, আগামী জানুয়ারিতে ছিল রীনার মাস্টার্স পরীক্ষা। সে জন্য তিনি প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।

সৈয়দের ছোটভাই আকবর হোসেন বলেন, “আগামী ২২ ডিসেম্বর আমাদের বড় ভাইয়ের ছেলের বিয়ে। সে উপলক্ষে কেনাকাটা হয়েছিল। আগুনে সব শেষ।”

সূত্র--বিডিলাইভ 

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়