Wednesday, October 12

জলপাই পাতার রসের ৭টি স্বাস্থ্য উপকারিতা

জলপাই পাতার রসের ৭টি স্বাস্থ্য উপকারিতা
কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক: জলপাই তার নানাবিধ স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্য সুপরিচিত এবং এটি রান্নায় ও সৌন্দর্য কাজে ব্যবহার করা হয় ব্যাপক ভাবে। কিন্তু জলপাই পাতা উপেক্ষিতই থেকে গেছে। প্রাচীন মিশরে ঔষধ হিসেবে প্রথম ব্যবহার করা হয় জলপাই পাতা এবং জলপাই পাতা ছিল স্বর্গীয় শক্তির প্রতীক। ১৮০০ শতকের গোড়ার দিকে  জলপাই পাতার রস জ্বর কমাতে ব্যবহার করা হত।

১৮০০ শতকের মধ্যভাগে ম্যালেরিয়া নিরাময়ে চায়ের সাথে ব্যবহার করা হত এই রস। ১৯০০ শতকের প্রথম দিকে এর অ্যান্টিফাঙ্গাল, অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিভাইরাল উপাদানের জন্য মনোযোগ আকর্ষণ করে। বিভিন্ন গবেষণায় জলপাই পাতার ঔষধি গুনাগুণ প্রমাণিত হয়েছে।

জলপাই পাতায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিইনফ্লামেটরি, অ্যান্টিফাঙ্গাল ও অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান থাকে। এই ৪টি কারণে জলপাই পাতার রস আপনার ত্বককে স্বাস্থ্যকর, তরুণ ও সুন্দর করে। জলপাই পাতার স্বাস্থ্য উপকারিতাগুলো হচ্ছে:

১। চুলের জন্য উপকারী:
জলপাই এর রসের মতোই জলপাই পাতার রস ও চুলকে মসৃণ এবং উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। এই রস চুলের গোড়ার ফলিকলের মধ্যে প্রবেশ করে চুলকে আর্দ্র রাখতে ও দীপ্তিময় করতে সাহায্য করে।

২। সূর্যের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে ত্বককে রক্ষা করে:
যদি আপনাকে দীর্ঘক্ষণ সূর্যরশ্মির সংস্পর্শে থাকতে হয় তাহলে সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মির প্রভাবে আপনার ত্বক স্থিতিস্থাপকতা হারায় এবং ত্বকের পুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। গবেষণায় দেখা গেছে যে জলপাই পাতার নির্যাসে ওলিউরোপেইন নামক উপাদান থাকে। এটি ত্বকের পুরো হয়ে যাওয়া প্রতিরোধ করে এবং মেলানিনের উৎপাদনকে ধীরগতির করে।

৩। ক্ষত ভালো করে:
২০১১ সালে মেডিসিনাল প্ল্যান্ট নামক জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানা যায় যে জলপাই পাতার নির্যাস সাধারণ অয়েন্টমেন্টের চেয়ে দ্রুত ক্ষত নিরাময়ে সাহায্য করে। কারণ এতে উচ্চমাত্রার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। ছোট কোন কাটা ছেঁড়া ও ফুসকুড়ির মধ্যে জলপাই পাতার নির্যাস দিলে দ্রুত ভালো হয়ে যায়।

৪। অ্যান্টি এজিং উপাদান আছে:
যেহেতু জলপাই পাতার রস ত্বক পুরো হয়ে যাওয়া ও ত্বকের ইলাস্টিসিটি নষ্ট হওয়া রোধ করতে পারে সেহেতু ত্বকের অকালবার্ধক্য প্রতিরোধে ও বলিরেখা দূর করতেও অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা রাখে জলপাই পাতার রস। কারণ এতে উচ্চমাত্রার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে।

৫। ক্যান্সাররোধক হিসেবে কাজ করে:
গবেষণায় দেখা গেছে যে জলপাই পাতার রস ক্যান্সার কোষের প্রজননকে ধীর গতির করার মাধ্যমে ত্বকের টিউমারের বৃদ্ধি কমতে সাহায্য করে। অন্য একটি গবেষণায় দাবী করা হয়েছে যে জলপাই পাতার রস ব্রেস্ট ক্যান্সার কোষের কার্যকারিতা কমাতে পারে।

৬। রোগ নিরাময়ে সাহায্য করে:
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে বলে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে জলপাই পাতার রস ব্যবহার হয়ে আসছে। এটি শুধু কার্ডিওভাস্কুলার সিস্টেমকেই স্বাস্থ্যকর রাখতে সাহায্য করেনা বরং সাধারণ ঠান্ডা ও জ্বরের উপসর্গ কমতেও সাহায্য করে।

গবেষণায় দেখা গেছে যে বয়স জনিত রোগ যেমন- ডিমেনশিয়া ও আলঝেইমার্স এর উপসর্গ কমতে সাহায্য করে জলপাই পাতার নির্যাস। আরথ্রাইটিসের প্রাকৃতিক প্রতিকার হিসেবে কাজ করে জলপাই পাতার রস। এছাড়াও জলপাই পাতার নির্যাস রক্তচাপ কমায় ও খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমতে সাহায্য করে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

জলপাই পাতা সংগ্রহ করে ভালোভাবে ধুয়ে নিয়ে ১৫০ বা তার নীচের তাপে বেক করে নিন। তারপর এগুলোকে গুঁড়া করে ছেঁকে রাখুন। এক কাপ গরম পানিতে ১ টেবিলচামচ শুকনা জলপাই পাতার রস মিশিয়ে ১০ মিনিট জ্বাল দিন। উপকারিতা লাভের জন্য প্রতিদিন এক কাপ জলপাই পাতার রসের চা পান করুন। স্বাদ যদি তিক্ত মনে হয় তাহলে এর সাথে মধু বা লেবু মিশাতে পারেন।

সতর্কতা :
সাধারণত জলপাই পাতার রস নিরাপদ এবং কোন মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়না। তবে যারা প্রেগনেন্ট ও ব্রেস্ট ফিডিং করান তারা জলপাই পাতার রস গ্রহণ করার পূর্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নেবেন। এছাড়া ডায়াবেটিক ও ব্লাড  প্রেশারের রোগীরা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া জলপাই পাতার রস গ্রহণ না করাই ভালো।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়