Sunday, July 3

'আমি বেঁচে আছি', বাবাকে ছেলের ফোন

'আমি বেঁচে আছি', বাবাকে ছেলের ফোন

কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক: শুক্রবার রাতে গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় কয়েকজন বন্দুকধারী ঢুকে দেশি ও বিদেশি নাগরিকদের জিম্মি করেছে—এমন খবর শুনেই ঘটনাস্থলে ছুটে যান আফতাব গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার খান। তার ছেলে তাহমিদ খান (২২) কানাডা থেকে শুক্রবার দুপুরে ঢাকায় আসেন।

শাহরিয়ারই একমাত্র ব্যক্তি যিনি মোবাইলে এই একটি মাত্র ফোন পান। আর সেই ফোন পেয়েই কান্না শুরু করলেন ফজলে রহিম খান শাহরিয়ার। এরপর সেজদায় পড়লেন মাটিতে। কাঁদতে কাঁদতে শুরু করলেন মোনাজাত।

শুক্রবার রাত পৌনে নয়টার দিকে জিম্মি সংকট শুরুর পর পাশের একটি ভবনে প্রহর গুনতে শুরু করেন শাহরিয়ার খান। ছটফট করতে করতে তিনি নানাজনের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলছিলেন। ছুটে যাচ্ছিলেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের কাছে। কিন্তু সারা রাতেও কেউ তাকে ছেলের খোঁজ দিতে পারেনি।

এর মধ্যেই ওই রেস্তোরাঁ ঘিরে শুরু হয় অভিযানের প্রস্তুতি। অভিযান হলে ছেলে বাঁচবেন কি না এমন প্রশ্নও তিনি বারবার করছিলেন। তবে সকাল পৌনে আটটার দিকে হঠাৎ তার মুঠোফোনে একটি কল আসে অচেনা নম্বর থেকে। সেই ফোন পেয়েই কাঁদতে শুরু করেন তিনি।

এরপর সিজদায় বসে দুই হাত তুলে আল্লাহর দরবারে মোনাজাত করেন।

এরপর শাহরিয়ার বলেন, 'আমার ছেলে বেঁচে আছে। ওই ফোন করেছে'। ও ভালো আছে। এরপরই আবার কাঁদতে শুরু করেন তিনি। পরিবারের অন্যরা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, তাহমিদ বেঁচে আছে।

শাহরিয়ার খান জানান, তাহমিদ শুক্রবার রাত সাড়ে আটটার দিকে ওই রেস্তোরাঁয় খাবার কিনতে যান। অর্ডার দিয়ে তিনি খাবারের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এ সময়ই সন্ত্রাসীরা সেখানে হামলা করে।

তিনি বলেন, 'রাত ১০টার দিকে ছেলের সঙ্গে আমার সর্বশেষ কথা হয়'। সে নিরাপদে আছে বলে আমাকে জানিয়েছিল। কিন্তু পরে আর যোগাযোগ করা যায়নি। সকালে ফোন পেয়ে নিশ্চিত হই ও বেঁচে আছে।

অবশ্য শাহরিয়ার খানের উদ্বেগ তখনো শেষ হয়নি। ছেলের ফোন পাওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই শুরু হলো সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযান। এরপর মুহুর্মুহু গুলি আর বিস্ফোরণের শব্দে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। এ সময় শাহরিয়ার খানসহ সব স্বজন আবার কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, 'এ কী হলো? ওরা কি এখন বেঁচে থাকবে'?

সকাল সাড়ে আটটায় অভিযান শেষ হওয়ার কথা জানায় সেনাবাহিনী। এরপর অভিযান চালানো সেনা ও সোয়াট সদস্যরা ফিরে আসতে থাকেন। এক পর্যায়ে শাহরিয়ার খান তাদের অনেকের কাছে গিয়ে তাহমিদের খবর জানতে চান। মুঠোফোন থেকে তিনি তাহমিদের ছবিও দেখান। এ সময় সোয়াটের একজন সদস্য বলেন, এই ছবিটি আগেই তাদের দেখানো হয়েছিল। আর সে কারণেই তাহমিদ বেঁচে গেছে।

অভিযানে থাকা একটি বাহিনীর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সদস্য বলেন, 'আমরা যখন ওই রেস্তোরাঁয় অভিযান চালাতে যাই, জঙ্গিরা সাধারণ কয়েকজনের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছিল'। আমরা যখন গুলি চালাতে যাব, তখন তাহমিদকে দেখতে পাই। তখন আমরা আর তাকে গুলি করিনি। ফলে অল্পের জন্য বেঁচে যায় তাহমিদ।

উত্তর শুনে আবারও কাঁদতে শুরু করেন শাহরিয়ার খান। রাতভর রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষার পর সকালে সন্তানকে জীবিত ফিরে পাওয়ার চেয়ে বড় আনন্দ আর কী হতে পারে?

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়