Thursday, July 21

আমাজান বিজয়ী দুঃসাহসী নাটালি কার্মারের গল্প

আমাজান বিজয়ী দুঃসাহসী নাটালি কার্মারের গল্প
কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক: নাটালি কার্মার অ্যন্ডারসনের জীবন বদলে দিয়েছে নদী-পাহাড়-ঝরনা আর গভীর বনাঞ্চল। তিনি তার জীবন দিয়ে বুঝতে পেরেছেন “গাছ পৃথিবীর ফুসফুস; আর নদী হলো গাছের জীবনকাঠি।” সেই নদী আর বৃক্ষের কাছে যেতে আফ্রিকার ভয়ঙ্কর আমাজান রেইন ফরেস্টে অভিযানে নেমেছিলেন ব্রিটিশ কলম্বিয়ার অধিবাসী এই ৩০ বছর বয়সী তরুণী। তার সমস্ত অ্যাডভেঞ্চারের উদ্দেশ্য নদীকে দূষণ এবং ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা। আজ জানব গতানুগতিক পুরুষ অভিযাত্রীর বাইরে একজন নারী অভিযাত্রীর অভিজ্ঞতার কথা। ন্যাশনাল জিওগ্রাফির সাথে একান্ত সাক্ষাতকারে নাটালি কথা বলেছেন, প্রকৃতি, নদী, অভিযান এবং নারীদের অগ্রযাত্রা নিয়ে। পাঠকদের জন্য সেই সাক্ষাতকার অনুবাদ করেছেন সত্যজিৎ কাঞ্জিলাল।

কীভাবে আপনি নদীকে ভালবেসে ফেললেন?

আমি যখন ছোট তখন থেকেই আমার প্রকৃতি ভাল লাগত। আমার বাবা-মা আমাকে গাড়িতে বসিয়ে নিয়ে যেতেন নদীর পাড়ে। আমাদের পুরো পরিবার নদীর সান্নিধ্যে যেন হারিয়ে যেতাম। এভাবেই নদীর সঙ্গে আমার বন্ধন সৃষ্টি হয়। আমি বুঝতে পারি পৃথিবীতে মানুষকে বেঁচে থাকতে হলে নদীকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।

কেন নদীর প্রতি মানুষের আরও বেশী গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ?

নদী আমাদের সুপেয় পানি সর্বরাহ করে। চাষাবাদের জন্য পানির যোগান আমরা নদী থেকেই পাই। সুতরাং নদীকে পরিস্কার রাখতে হবে। নদীকে দূষণমুক্ত রাখলে আখেরে মানুষেরই লাভ।

সারবিশ্বে নদীর জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি কি?

সারাবিশ্বে নানান অজুহাতে বাঁধ দেওয়া আমি নদীর জন্য বড় হুমকি মনে করি। কৃষি এবং শিল্পকারখানার দূষণ অবশ্যই বড় কারণগুলোর অন্যতম। আরও বড় সমস্যা হলো এগুলোকে বেশীরভাগ মানুষই কোন সমস্যাই মনে করে না। কিংবা তারা এসব বিষয়ে অজ্ঞ। মানবজাতির বেঁচে থাকার স্বার্থেই যে নদীকে বাঁচিয়ে রাখা দরকার সেটা তারা বুঝতেই চান না।

পেরুর ম্যারানন অভিযানে আপনি কী বুঝতে পেলেন?

ম্যারানন নদীর দূষণ মাত্রা অতিক্রম করেছে। এর প্রধাণ পানির উৎস বরফগলা পানি এখন লুপ্তপ্রায়। যা একসময়ের এই প্রলয়ঙ্করী  নদীকে হত্যা করছে। এজন্য বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, অপরিকল্পিত শিল্পায়ন এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধি পুরোপুরিভাবে দায়ী। এই নদী রক্ষায় এখনই মানুষকে সচেতন করা ব্যতীত কোন উপায় নেই।

কোন বিষয়টি আপনার সবচেয়ে অদ্ভুত লেগেছিল?

এই অভিযানে বিজ্ঞানীদের সবাই নারী ছিলেন। সেখানে আমি অনেক বড় বড় বিজ্ঞানীদের সান্নিধ্যে আসতে পেরেছি। তাদের কাজ দেখেছি, সহযোগিতা করেছি। এবং তাদের পাশাপাশি নিজের গবেষণাও চালিয়ে গেছি। আমি কখনই নারী পুরুষের পার্থক্য করিনা; তাই এই অভিযান বিশ্বের কাছে বড় একটা উদাহারণ হিসেবে মনে করি।

মা হওয়ার পর একজন নারী অভিযাত্রী অনেকক্ষেত্রেই অভিযান ত্যাগ করেন। যদিও সন্তানের প্রতি একজন পুরুষেরও একই দায়িত্ব হওয়া উচিৎ। বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখেন?

আমরা আমাদের বাচ্চার সম্পর্কে ভাবি। আমি ভাবি, প্রকৃতি নিয়ে আমার গবেষণা এবং প্রচারণা সারা বিশ্বের জন্য মঙ্গলজনক হবে। এক্ষেত্রে আমার স্বামী পদার্থবিদ্যার শিক্ষক লিফ অ্যান্ডারসন আমাকে প্রচুর সহযোগিতা এবং উৎসাহ প্রদান করেন। আমার মনে হয় পুরুষতান্ত্রিক সমাজে আধুনিক পুরুষের মনোভাবের পরিবর্তন হচ্ছে। নারীদের অগ্রগতির ক্ষেত্রে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মা হওয়া মানে অবশ্যই বিশেষ কিছু। তবে সেটা এমন নেতিবাচক অর্থে নয় যে আপনাকে সবকিছু ত্যাগ করতে হবে। সন্তানের প্রতি বাবা-মা উভয়ের দায়িত্ব থাকে। সুতরাং পারস্পরিক সহযোগিতামূলক মনোভাবই এই সমস্যার সমাধান করতে পারে।

অভিযানের বাইরের দিনগুলোতে সাধারণত আপনি কী করেন?

আমি আমার কাজের মাঝেই ডুবে থাকি। যেমন এই সপ্তাহে আমি আমার এক বন্ধুর গাড়িতে ঘুমাতে ঘুমাতে চলে গেলাম স্যালমন নদীতে। নদীর উপর ভাসতে ভাসতে আমার প্রিয় ল্যাপটপে গবেষণা প্রতিবেদন তৈরি করি।

অভিযানকে সাধারণ মানুষ উচ্চাকাঙ্খা হিসেবে গণ্য করে থাকে। কিন্তু অভিযানের বৃহত্তর উদ্দেশ্য হিসেবে আপনি কোন বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে চান?

আপনি যখন নিজেকে নিজের বৃত্তের বাইরে নিয়ে আসবেন তখন আপনার অভিজ্ঞতার ভান্ডার সমৃদ্ধ হতে থাকবে। এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আপনি প্রকৃতি, নদী, পাহাড় আর বনাঞ্চলকে রক্ষা করায় ভূমিকা রাখতে পারবেন যা পৃথিবীর জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে।

আপনার প্রিয় নদী কোনটি?

ক্যালিফর্নিয়ার ক্যাল স্যালমন আমার প্রিয় নদী। এই নদীটি যেন আমার সঙ্গে কথা বলে। এখানে আসলে আমি খুবই রিলাক্স হই। এমনকী আমি এই স্যালমন নদীর তীরেই বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হই।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়