Saturday, June 6

ঈমান সবচেয়ে বড় সৌভাগ্য


মাওলানা সোলাইমান নূমানী: আল্লাহর রাসুল (সা.) এর ভাষ্য মতে, যে ব্যক্তি মনেপ্রাণে, ঈমান-একিনে একবার কালেমা শরিফ পাঠ করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। একজন মানুষের জন্য চিরস্থায়ী জীবনে অনন্তকালের জন্য জান্নাত লাভের চেয়ে বড় আর কিছু হতে পারে না। তাই ঈমান বড় দৌলত। ঈমান ভাগ্যের বিষয়, কপালের জিনিস। মুসলমান হতে পারা ভাগ্যের ব্যাপার। এ গর্বের কথাই ধ্বনিত হয়েছে কোরআনে কারিমের এ আয়াতে ‘... এবং সে বলে আমি তো মুসলমান।’ (সূরা হা-মিম সিজদা : ৩৩)। মুসলমান হওয়া মানে দুনিয়াতে সফলতা, কবরে শান্তি, আখেরাতে নাজাত এবং সবশেষে চিরশান্তির ঠিকানা জান্নাতের গ্যারান্টি। একজন মোমিনের দাম এ দুনিয়া ও তাতে যা কিছু আছে সবকিছু থেকেই বেশি। একজন মোমিন যত দিন এ দুনিয়াতে বেঁচে থাকবে তত দিন এ পৃথিবী, এ কুলকায়েনাতের সব নেজাম-এন্তেজাম ঠিক থাকবে। পৃথিবী টিকে থাকবে, ধ্বংস হবে না। ঈমানের প্রথম অংশ ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। এ কথা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করা, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, কোনো মাবুদ নেই। তিনি একক, অদ্বিতীয়। তাঁর কোনো অংশীদার নেই। তিনি সব পারেন, সব করেন। সব ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব একমাত্র তাঁরই অধীন। তিনি সব ধরনের দুর্বলতা, ত্রুটি থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত ও পবিত্র। সামান্য থেকে সামান্যতম বিষয়েও কেউ তাঁর অমুখাপেক্ষী নয়, আর তিনি কারও মুখাপেক্ষী নন- এ বিশ্বাস ও ধারণা মনেপ্রাণে স্থাপন করা। দ্বিতীয় অংশ ‘মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’। হজরত মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসুল। তিনি সর্বশেষ নবী। খাতামুন্নাবিয়্যিন। মানুষের হেদায়েতের জন্য মহান আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত সর্বশেষ পয়গম্বর। তাঁর পর আর কোনো নবী অথবা রাসুল আসবেন না- এ কথাও মনেপ্রাণে বিশ্বাস করা এবং মেনে নেয়া। কেউ যদি এ কথা অবিশ্বাস করে, অস্বীকার করে অথবা উম্মতের সর্বসম্মত ব্যাখ্যা ভিন্ন এ কথায় অন্য কোনো ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণে প্রয়াসী হয়, তাহলে সে যতই ঈমানের লেভেল লাগাক, সে ঈমানদার থাকবে না। মুসলমান থাকবে না। যে ঘরে ধনদৌলত থাকে সেই ঘরে চোরের নজর পড়ে। সেই ঘরে চুরিই শুধু নয়; ডাকাতিও হয়। আর যে ঘরে ধনদৌলত নেই, সম্পদ নেই, বিরান ঘর; সে ঘরে চুরি তো দূরের কথা, সেখানে কোনো চোর ভয়েও প্রবেশ করে না। মুসলমানের কাছে ঈমানের ধন আছে, কালেমার সম্পদ আছে। তাই এ সম্পদ নষ্ট এবং ধ্বংস করার জন্য চারদিকে চেষ্টা ও প্রচেষ্টার কমতি নেই। মুসলমানদের এ ধনদৌলত ধ্বংস করার জন্য চারদিকে নানা দল-উপদলে, ফেতনা-ফাসাদের জন্ম হয়েছে। তাই এ ধনদৌলতকে রক্ষা করতে হবে চোর ও ডাকাতের হাত থেকে। খুবই সতর্ক থাকতে হবে। কোরআনের ভাষায় ‘মিনাল জিন্নাতি ওয়ান্নাস’ মানুষ ও জিন উভয় ধরনের শত্রু থেকেই সতর্ক থাকতে হবে। ঈমান কাকে বলে জানতে হবে। জানতে হবে কোন বিষয়গুলো ঈমানবিধ্বংসী। কী কী কাজ করলে ঈমান হারিয়ে যায় এবং ঈমান চলে যায়। আর কোন কাজের মাধ্যমে ঈমান থাকে এবং আরও মজবুত হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ইহুদি সম্প্রদায় ৭১ দলে বিভক্ত হয়েছিল। নাসারা সম্প্রদায় ৭২ দলে বিভক্ত হয়েছিল। আর শিগগিরই আমার উম্মত হবে ৭৩ দলে বিভক্ত। একটি দল মাত্র নাজাত পাবে, আর বাকি সবাই জাহান্নামে যাবে। জিজ্ঞেস করা হলো, নাজাতপ্রাপ্ত সেই একটি দল কারা হবে? ইয়া রাসুলুল্লাহ! রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, আমি এবং আমার সাহাবারা যে পথে আছি সেই পথের যারা অনুসারী হবে, সেই পথকে যারা অনুসরণ করবে, তারাই হবে মুক্তিপ্রাপ্ত সেই জামাত।’ (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)। সুতরাং আল্লাহর রাসুল (সা.) এবং তাঁর সাহাবার রেখে যাওয়া পথই এ উম্মতের একমাত্র মুক্তির পথ। নাজাতের পথ। এছাড়া যত মত-পথের উদ্ভব হবে, আবির্ভাব ঘটবে, সবকিছুকেই মিলিয়ে দেখতে হবে এ মাপদন্ডেের সঙ্গে। এ কষ্টিপাথর দিয়ে। কোরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে থাকতে হবে। অনুসরণ করতে হবে সাহাবাদের সুমহান জামাতকে। তাহলেই বাঁচা যাবে শত বিভ্রান্তি থেকে। রাসুল (সা.) আমাদের সতর্ক করে গেছেন এমন একটি যুগ সম্পর্কে, যে যুগে এমন বিভক্তি দেখা দেবে। ফেতনা-ফ্যাসাদ প্রবল হবে। দাঙ্গাহাঙ্গামা বেড়ে যাবে। অশ্লীলতা, নির্লজ্জ বেহায়াপনা ব্যাপক আকার ধারণ করবে। সবকিছুই এখন আমাদের মধ্যে দৃশ্যমান। সবকিছুই অক্ষরে অক্ষরে আমরা আমাদের সমাজে প্রতিফলিত হতে দেখছি। অশ্লীলতা সমাজে ব্যাপক আকার নিয়েছে। নির্লজ্জ আর বেহায়াপনায় বিশ্ব ছেয়ে গেছে। চারদিকে অন্যায়-অশ্লীলতার যেন কোনো সীমা-পরিসীমা নেই। ঈমানের ওপর টিকে থাকা একজন মোমিনের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থায় অধিকতর সতর্ক না হলে, সাধবান না হলে ঈমান অক্ষত রেখে চলা ও বেঁচে থাকা বেশ কঠিন। নানামুখী ফেতনা-ফ্যাসাদ ও বিভ্রান্তিতে পড়ে ঈমান হারানো কিংবা ঈমানের দিক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রবল। তাই আল্লাহর দরবারে প্রতিনিয়ত এ মর্মে প্রার্থনা করা দরকার, আল্লাহ যেন আমাদের ঈমানের সৌভাগ্য থেকে আমৃত্যু বঞ্চিত না করেন। শ্রুতিলিখন : ইনায়েতুল্লাহ

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়