Sunday, June 28

কানাইঘাটে টি.আর কাবিখা প্রকল্পে হরিলুট ॥ কাজ করার পূর্বে বিল উত্তোলনের হিড়িক



মো: মাহতাব আহমদ(সেলিম)
: কানাইঘাটে প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় গড়ে উঠা অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি ও সিন্ডিকেটের কারণে টি.আর কাবিখার চাল সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে অর্ধেক মূল্যে বিক্রি করতে বাধ্য করা হচ্ছে। সরকারী নির্ধারিত মূল্য উপেক্ষা করে এ সিন্ডিকেট চক্র টি.আর কাবিখা প্রতিটন ২৫ হাজার টাকার চাল ও গম ১৩ হাজার টাকায় ক্রয় করছে। ফলে সরকারের গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের জন্য নেওয়া টি.আর কাবিখা প্রকল্পের উদ্দেশ্যে কানাইঘাটে সফল হচ্ছে না। এসব কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি করা হচ্ছে। ২০১৩-২০১৪ অর্থ বছরে বরাদ্দকৃত টি.আর, কাবিখা প্রজেক্টের কাজে ব্যাপক অনিয়ম করা হয়। নাম মাত্র কাজ করে অধিকাংশ প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। বিশেষ করে ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ টি.আর বিশেষ ২য় পর্যায়ে ৯৭টি প্রজেক্টের অনুকূলে ২৯ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। উক্ত নগদ অর্থ প্রকল্পে নতুন সংযোজন, ৪৪টি প্রজেক্টের অনুকূলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, সামাজিক সংগঠন ও বাসা বাড়ীতে সৌর বিদ্যুতের সোলার প্যানেল স্থাপনে দলীয় অগ্রাধিকার সহ নানা অনিয়মের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। সৌর বিদ্যুৎ সোলার প্যানেল স্থাপনে অর্থ বরাদ্দে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সোলার প্যানেল স্থাপনের পূর্বে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে কাজের ডি.ও লেটার তোলার হিড়িক পড়েছে। আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাসা বাড়ীতে সোলার প্যানেল স্থাপনে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শীর্ষেন্দু পুরকায়স্থ পাতাকুঁড়ি নামক একটি সোলার প্যানেল কোম্পানীর সাথে আতাত করে রমরমা ব্যবসা করছেন। উক্ত সোলার প্যানেল কোম্পানী থেকে প্রকল্প সভাপতিদের সোলার প্যানেল কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে। ২০১৪-১৫ অর্থ বছরের গ্রামীণ অবকাঠামো, রক্ষণাবেক্ষণ টি,আর বিশেষ ২য় পর্যায়ের কাজের জন্য সোলার প্যানেল স্থাপনের অনুকূলে ৪৪টি এবং গ্রামীণ রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে ৫৩টি প্রজেক্টের মোট ২৯ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সরেজমিনে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় ঘুরে দেখা গেছে কাজ না করে ডিও লেটার তোলার হিড়িক পড়েছে। জাতীয় পার্টির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা সোলার প্যানেল স্থাপন সহ অর্থবরাদ্দের ডিও লেটার নিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া অভিযোগ রয়েছে সোলার প্যানেল স্থাপনের কাগজপত্র, মাষ্টার রুল তৈরি করতে টন প্রতি পিআইও অফিসে গুনতে হচ্ছে প্রকল্প সভাপতিদের ১-২ হাজার টাকা। কানাইঘাট উপজেলায় এমন পরিস্থিতিতে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জাতীয় পার্টির কয়েকজন নেতা এবং সিলেট-৫ কানাইঘাট-জকিগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য বিরোধী দলীয় হুইপ আলহাজ্ব সেলিম উদ্দিনের ব্যক্তিগত পিএস’কে নগদ অর্থ দিয়ে খুশি করতে গিয়ে পদে পদে বিপাকে পড়েছেন। কাজ সম্পন্ন করার পূর্বেই কাজের বরাদ্দকৃত টাকা নয় ছয় হয়ে যাচ্ছে। এমন অভিযোগ করেছেন, প্রকল্প সভাপতি ও সংশ্লিষ্ট কমিটির অনেকে। অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য টেস্ট রিলিফ (টি.আর) এবং গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কারের জন্য কজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) প্রকল্পের প্রতি টন চালের সকার নির্ধারিত দাম ৩৫ হাজার ৪৮১ টাকা। আর এক টন চালের বর্তমান বাজার মূল্য ২৫ হাজার টাকা। কিন্তু কানাইঘাটে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা টন প্রতি ১৪ হাজার টাকার বেশি দামে চাল ও গম কিনতে নারাজ। ব্যবসায়ীদের এ সিন্ডিকেটে যুক্ত আছেন স্থানীয় প্রভাবশালী মহল। স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব সেলিম উদ্দিন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে কাবিখা সাধারণ প্রথমে ১৭০ মে. ট্রন পরে ১৭০ মে. ট্রন, কাবিখা বিশেষ প্রথমে ১৫০ মে.ট্রন পরে ৭৪ মে.ট্রন মোট ৫৬৪ মে.ট্রন ও কাবিখা বিশেষ অর্থ ১৪ লক্স ৬০ হাজার টাকা, টি.আর সাধাঃ প্রথমে ১৪৬ মে. ট্রন চাল ও পরে নগদ অর্থ ২৯ লক্ষ ৩৩হাজার ৭৯টাকা এবং টি.আর বিশেষ প্রথমে ১৬২ মে. ট্রন চাল ও পরে নগদ অর্থ ২৯ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দ পান। আর এসব বরাদ্দকৃত চাল, গম ও নগদ অর্থের তালিকায় উপজেলা জুড়ে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দের তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করতে গিয়ে প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছ থেকে জাতীয় পার্টির কয়েকজন নেতা এক তৃতীয়াংশ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করার পূর্বেই। এমন অভিযোগ করেছেন, উপজেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলা উদ্দিন মামুনসহ দলের অনেকে। এতে উপজেলা আ’লীগের নেতৃবৃন্দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ পরিলক্ষিত হচ্ছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান সিলেট-৫ আসনের সাবেক সাংসদ আলহাজ্ব হাফিজ আহমদ মজুমদার কানাইঘাটে একটি অনুষ্ঠানে এলে উপজেলা আ’লীগের নেতৃবৃন্দ তাদের বক্তব্যে এম.পি সেলিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তিনি টি.আর, কাবিখা প্রকল্পে সর্বত্র দলীয়করন করছেন। আর এসব প্রকল্পে হরিলুট হচ্ছে। কোন কাজ করা হচ্ছে না। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শীর্ষেন্দু পুরকায়স্থের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ৩১ জুনের মধ্যে ২০১৪-১৫ অর্থ বছরের গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণা বেক্ষণ, টি.আর বিশেষ ২য় পর্যায় বরাদ্দকৃত নগদ টাকা আমাদের বিতরণ করতে হবে। সোলার প্যানেল স্থাপনে প্রজেক্টের কোন অনিয়মের আশ্রয় নেওয়া হচ্ছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ার পর স্থানীয় সাংবাদিকদের সরেজমিনে নিয়ে যাওয়া হবে। উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক বাবুল আহমদ বলেন, টি.আর, কাবিখা বিতরণে দলীয় নেতাকর্মীদের অগ্রাধিকার দেওযার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করে বলেন, তার জানামতে কেউ প্রজেক্ট অন্তর্ভুক্ত করতে গিয়ে টাকা নিচ্ছে না। উদ্দেশ্যে প্রণোদীত ভাবে অপপ্রচার করা হচ্ছে।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়