Tuesday, May 26

যে কারণে ভারতের কৃষকেরা আত্মহত্যা করে


কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক: বৃষ্টিতে চাষ করা তুলা ধ্বংস হয়ে যাবার পর এবছরের ফেব্রুয়ারিতে রাম রাও নারায়ণ পঞ্চলেনভর বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। মহারাষ্ট্র প্রদেশের এই কৃষক তার জমি থেকে আয়ের আশা হারিয়ে আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছিলেন। এনিয়ে টানা তৃতীয় বছরের মতো তার জমিতে ফসল হয়নি। প্রথম বছর খরার কারণে এবং পরবর্তী দুবছর অসময়ে বৃষ্টির কারণে। কৃষিকাজ এবং মেয়ের বিয়ের জন্য নেয়া প্রায় ৩৫ হাজার ডলারের সমান ঋণে এখন ডুবে আছেন পঞ্চলেনভর। জানেন না কিভাবে আবার নিজের পায়ে দাঁড়াবেন। তিনি আশায় আছেন, কর্তৃপক্ষ হয়তো তার মতো কৃষকদের সাহায্যে এগিয়ে আসবে। পঞ্চলেনভর বলেন, ‘সরকারের উচিত কৃষকদের ঋণ মওকুফ করে দেয়া। এখন আমরা যে ক্ষতিপূরণ পাচ্ছি তা তিনগুণ করা উচিত। সরকার যে দামে ফসল কিনে নেয়, সেই দামেই ফসল বিক্রি করতে তিনি বাধ্য। অন্তত তার আত্মহত্যার চেষ্টাটা ব্যর্থ হয়েছে, সবাই তার মতো ভাগ্যবান নয়।’ ভারতের অপরাধ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসেবে, গত ২০ বছরে দেশটিতে প্রায় ৩ লাখ কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। অসময়ে বৃষ্টি এবং শিলাবৃষ্টির কারণে গত কয়েক সপ্তাহে ভারতের বিভিন্ন অংশে অনেক ফসল ধ্বংস হয়েছে, দারিদ্র্যপীড়িত কৃষকরা পড়েছেন আরো হতাশায় এবং তাদের অনেকে নিজেকে ঠেলে দিয়েছেন মৃত্যুর মুখে। রাজ্য সরকারের হিসাবে, এবছরের প্রথম চার মাসেই মহারাষ্ট্রের ২৫৭ জন কৃষক নিজেদের জীবন কেড়ে নিয়েছেন। মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে এর পরের গ্রামটির বাসিন্দা, জানাবারি ঘোদাম সেই ব্যথা এখন টের পাচ্ছেন। তার স্বামী রমেশ ঘোদাম দুমাস আগে আত্মহত্যা করেছেন। ঘোদাম বলেন, অর্থচিন্তাই তার স্বামীকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে। তার প্রায় তিন হাজার ডলারের ঋণ ছিল এবং তার ফসলও নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। এখন অন্যের জমিতে দিনমজুরের কাজ করেই তাকে জীবন অতিবাহিত করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, আমার জীবনে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। জমির ফসল ধ্বংস হয়ে গেছে, এখন সেটি একটি শূন্য জমি এবং এ মৌসুমেও নতুন করে চাষ করা যাবে না। বাড়িতে রান্না করার মতো খাবার নেই বললেই চলে। ছেলে-মেয়েকে নিয়ে একা হয়ে পড়েছি আমি। এমনকি ঘোদামের ঘরটি অন্ধকার। গত দুমাস যাবত বিদ্যুৎ বিল দিতে না পারায় সংযোগও কেটে দেয়া হয়েছে। আর ২০ বছর বয়সী কন্যাসন্তানের বিয়ে দেয়ার মতোও কোন টাকা তার কাছে নেই। পঞ্চলেনভারের গ্রামে একদল কৃষক ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করছিলেন। এখানকার প্রধান কৃষিপণ্য তুলা, কিন্তু বিশ্ববাজারে তুলার দাম কমে যাওয়া এবং চীনের তুলার চাহিদার কারণে তাদের আশা খুব ক্ষীণ। সরকার এবং মিল মালিকদের বেঁধে দেয়া দামের বাইরে তাদের যাবারও উপায় নেই। ওই দলের একজন কৃষক, ভাস্কর দেওভালভার ব্যাখ্যা করে বলছিলেন যে, পুরো গ্রামটি নির্ভর করে কৃষিকাজের ওপরে। অধিকাংশ কৃষকই স্থানীয় মহাজনদের কাছে দেনাগ্রস্থ, যারা ২৫ শতাংশ সুদে ঋণ দিয়ে থাকে। তার স্বপ্ন এখন কলেজপড়ুয়া ছোট ছেলেকে নিয়ে। দেওভালভার প্রার্থনা করেন, তার পুত্র যেন পড়ালেখা করে শহরে একটি চাকরি পায়। তিনি বলেন, কৃষিকাজ করে কোন ভবিষ্যৎ নেই, অনেক বিনিয়োগ করেও কোন লাভ নেই এখানে। জমিতে কোন উৎপাদন নেই, অপরদিকে ব্যাংক এবং মহাজনদের চাপের মুখে কৃষকদের জন্য নিজেদের জীবন কেড়ে নেয়া ছাড়া কোন উপায় থাকে না।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়