Friday, April 24

মহানবীর আগমনের উদ্দেশ্য


মুফতি শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী: আল্লাহ তায়ালা মানুষ সৃষ্টি করেছেন ইবাদতের জন্য; মানুষকে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন খলিফা হিসেবে। রহমাতুলি্লল আলামিন, আখেরি নবী ও রাসুল, বিশ্বনবী, সৃষ্টির সেরা মহামানব হজরত মুহাম্মদ মুস্তফা আহমদ মুজতবা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দুনিয়ায় পাঠানোর উদ্দেশ্য সম্পর্কে মহাগ্রন্থ কোরআনুল কারিমে বলেছেন, 'তিনি (মহান আল্লাহ) যিনি পাঠিয়েছেন তাঁর প্রেরিত (রাসুল) কে হেদায়েত (পথনির্দেশ) ও সত্য দ্বীন (জীবন বিধান) সহকারে; যাতে বিজয়ী করতে পারেন দ্বীন (ইসলামকে) সব দ্বীন (বিধান) এর ওপর; আর সাক্ষী-সাহায্যকারী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট।' (সূরা ফাতাহ : ২৮)। মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দুনিয়ায় পাঠানোর উদ্দেশ্য ব্যক্ত করে মহাগ্রন্থ কোরআনুল আজিমে বিভিন্ন সূরা ও আয়াতে আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন, 'নিশ্চয়ই আমি আপনাকে পাঠিয়েছি সত্যসহ, সুসংবাদদাতা ও সাবধানকারী হিসেবে।' (সূরা বাকারা : ১২৯)। 'আমি আপনাকে সুসংবাদ প্রদানকারী ও সতর্ককারীরূপে পাঠিয়েছি।' (সূরা ইসরা-বনি ইসরাঈল ১০৫ ও সূরা ফোরকান : ৫৬)। 'হে নবী! নিশ্চয়ই আমি আপনাকে সাক্ষী, শুভ সংবাদ প্রদানকারী ও সতর্ককারী হিসেবে প্রেরণ করেছি।' (সূরা আহজাব : ৪৫)। 'অবশ্যই আপনাকে আমি সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী হিসেবে প্রেরণ করেছি।' (সূরা ফাতির : ২৪)। 'নিশ্চিতরূপে আপনাকে আমি সাক্ষী, শুভ বার্তাবাহক ও সাবধানকারী হিসেবে পাঠিয়েছি।' (সূরা ফাতাহ : ৮)। এসব আয়াতে নবীজি (সা.) এর আগমনের উদ্দেশ্যের সঙ্গে সঙ্গে তার দাওয়াতি কর্মপদ্ধতি সম্পর্কেও নির্দেশনা রয়েছে। তা হলো অসুন্দর, অন্যায়, অপরাধ ও মন্দ কাজের অশুভ পরিণতি সম্পর্কে মানুষকে সতর্ক করা এবং সুন্দর, ন্যায়, পরোপকারী, কল্যাণকামিতা ও সৎ কাজের শুভ পরিণতি সম্পর্কে মানুষকে অবহিত করে মঙ্গলের প্রতি উদ্বুদ্ধ করা। যাতে মানুষ চির মুক্তি, চির শান্তি, চির কল্যাণ ও চির মঙ্গল লাভ করতে পারে। এ প্রসঙ্গে প্রিয় নবী (সা.) বলেন, 'আমি প্রেরিত হয়েছি মানবজাতির চারিত্রিক উৎকর্ষ সাধনের নিমিত্তে।' (তিরমিজি)। এজন্য প্রয়োজন ষড়রিপু (কাম, ক্রোধ, লোভ, মদ, মোহ, মাৎসর্য) দমন করা। তাই তো বলা হয়, ষড়রিপু দমন হলে, সবাই তাকে মোমিন বলে। প্রিয় নবী (সা.) আরও বলেন, 'আমি আসলে শিক্ষকরূপেই প্রেরিত হয়েছি।' (মুসলিম)। তাই তিনি হলেন বিশ্ব শিক্ষক। বিশ্ব নবী (সা.) কে আল্লাহ শুধু সংক্ষিপ্ত দুই-চারটি উদ্দেশ্য নিয়ে দুনিয়ায় পাঠাননি; বরং বিশ্বমানবতার পরিপূর্ণ কল্যাণের জন্যই মহানবী (সা.) কে পাঠানো হয়েছে। কোরআন মজিদে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ঘোষণা দিয়েছেন, 'হে নবী (সা.) আমি আপনাকে বিশ্বজগতের জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছি।' (সূরা আম্বিয়া : ১০৭)। মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিশেষ কোনো জাতি-গোষ্ঠীর জন্য প্রেরিত হননি; তিনি কোনো বিশেষ দেশ বা অঞ্চলের জন্যও প্রেরিত হননি; তিনি প্রেরিত হয়েছেন সমগ্র জগতের জন্য। রাব্বুল আলামিন বলেন, 'আর আমি আপনাকে পাঠিয়েছি সমগ্র মানবতার জন্য সুসংবাদদাতা ও সাবধানকারী হিসেবে; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না।' (সূরা সাবা : ২৮)। এ অর্থে সব মানুষই নবীজির উম্মত। কোরআন ও হাদিসের আলোকে আমরা জানতে ও বুঝতে পারি ইমামুল আম্বিয়া, সাইয়েদুল মুরসালিন, খাতামুন নাবিয়্যিন মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হলেন আল্লাহর প্রিয় হাবিব, প্রিয় বন্ধু। আল্লাহর ভালোবাসা বা বন্ধুত্ব পেতে হলে প্রিয় নবীজির আনুগত্য করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'বলুন! তোমরা যদি আল্লাহর ভালোবাসা পেতে চাও, তবে আমার (নবী সা.) এর অনুসরণ কর; তবেই আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন।' সহজে বলা যায়, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এসেছিলেন আল্লাহ ও বান্দার মাঝে সেতুবন্ধ তৈরি করতে। এ বিষয়ে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, 'আমি আল্লাহর অতি প্রিয় বন্ধু; গৌরব করি না।' (বোখারি)। প্রিয় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রহমত ও দয়া-করুণার আধার ও মাধ্যম; তিনিই আল্লাহর রহমত বণ্টনকারী। এ মর্মে তিনি বলেন, 'আমি বণ্টনকারী, আল্লাহ, দাতা।' (তিরমিজি)। তিনি শাফায়াতে কুবরার অধিকারী। সে মর্মে তিনি ঘোষণা দেন, 'আমার উম্মতের বড় বড় গোনাহগারের জন্যও আমি সুপারিশ করব।' (বোখারি)। সুপারিশ লাভের উপায় সম্পর্কে তিনি বলেন, 'যে আমার রওজা শরিফ জিয়ারত করল তার জন্য সুপারিশ করা আমার ওপর ওয়াজিব হয়ে গেল।' (বোখারি ও মুসলিম)। আল্লাহর প্রিয় হাবিব, মানবতার মহান বন্ধু, সুহৃদ সংস্কারক, কৌশলী সমাজবিজ্ঞানী, দক্ষ রাষ্ট্রনায়ক, আদর্শ সমাজ ও কল্যাণ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা আখেরি নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুনিয়ায় এসেছিলেন মানবতার মুক্তির জন্য। কেয়ামত পর্যন্ত আগত সমগ্র মানবজাতির দুনিয়ার শান্তি ও পরকালীন মুক্তি নিশ্চিত করতেই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তাঁর প্রিয় বন্ধুকে এ ধরাধামে প্রেরণ করেছিলেন। তাই আমাদের উচিত এ ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধ, অশান্ত পৃথিবীতে স্বর্গীয় শান্তির সুবাতাস আনয়নের স্বার্থে মহানবীর জীবনদর্শন অনুশীলন করা ও তাঁর আচার-আচরণ অনুসরণ করা; এজন্য প্রয়োজন তাঁর জীবনচরিত তথা কর্মময় জীবনের ব্যাপক অধ্যয়ন ও বিপুলভাবে চর্চা করা। লেখক : সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

শেয়ার করুন

1 comment:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়