ঢাকা: সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সরকার দলীয় নেতারা আইনলঙ্ঘন করলেও নির্বাচন কমিশন নীরব ভূমিকা পালন করছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।
দলটির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রধানমন্ত্রীর পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচনে বাড়তি সুবিধা দিতে সামান্য ত্রুটি দেখিয়ে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আবদুল আউয়াল মিন্টুর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।
মঙ্গলবার বিকালে বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনি স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান এসব অভিযোগ করেন।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘দেশের প্রচলিত আইনে সিটি করপোরেশনের মেয়রসহ স্থানীয় সরকারের কোনো পদে নির্বাচনের জন্য কোনো রাজনৈতিক দল কাউকে মনোনীত করতে পারে না এবং সরকারি পদধারী গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিগণ এসব নির্বাচনে কোনো প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে পারেন না। অথচ দেশবাসী অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করেছেন যে, মন্ত্রিসভার বৈঠকে দেশের প্রধানমন্ত্রী ঢাকা মহানগর উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে জনাব আনিসুল হকের প্রতি তার সমর্থন ঘোষণা করেছেন। পরবর্তীতে তার সরকারি বাসভবনে অনুষ্ঠিত দলীয় সভায় তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে মেয়র প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘এসব বিষয় নিয়ে পত্র-পত্রিকা ও টেলিভিশনের টকশোতে পর্যালোচনা ও সমালোচনা হলেও প্রাসঙ্গিক বিষয়ে অনিয়ম পর্যবেক্ষণ ও প্রতিরোধের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাচন কমিশন না শোনা, না জানা ও না বোঝার ভান করে নিন্দা কুড়ালেও লজ্জিত হয়েছে বলে মনে হয় না।”
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘নামে স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হলেও বর্তমান নির্বাচন কমিশন ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনী প্রহসনে ফরমায়েসি প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা পালন করে বিশ্বব্যাপী নিন্দিত হয়েছে-এবারও তারই পুনরাবৃত্তি শুরু করেছে।’
মিন্টুর মনোনয়ন বাতিলের সমালোচনা করে বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, “যেদিন মিন্টুর মনোনয়নপত্রে সমর্থনকারীর বিষয়ে প্রশ্ন তুলে মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে সেই একই দিনে মনোনয়নপত্রের ছোট খাট ভুল সংশোধনের জন্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসার প্রার্থীদের কয়েক ঘণ্টা সময় দিয়েছেন। তেমন সুযোগ দিলে মিন্টু ওই নির্বাচনী এলাকার লাখ লাখ সমর্থকের মধ্য থেকে একজনকে সমর্থক হিসাবে দেখাতে পারতেন।’
তার অভিযোগ, ‘পরবর্তীতে মিন্টু প্রয়োজনীয় সব প্রমাণ হাজির করলেও আপিল নিষ্পত্তির দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তা তা আমলে না নিয়ে মনোনয়নপত্র বাতিলের সিদ্ধান্ত বহাল রাখায় তাকে (মিন্টু) উচ্চ আদালতে যেতে হয়েছে।’
নজরুল ইসলাম খান অভিযোগ করে বলেন, “বিরোধী দল সমর্থক বহু প্রার্থীকে সরকারের বিভিন্ন বাহিনী ও সরকার দলীয় সন্ত্রাসীরা নমিনেশন পেপার কিনতে বাধা দিয়েছে, নমিনেশন পেপার কেনার অপরাধে হেনস্ত করেছে এবং নমিনেশন পেপার জমা না দেয়ার জন্য অন্যায়ভাবে চাপ দিয়েছে।”
তার দাবি, “এ ধরণের কর্মকান্ডের উদ্দেশ্য হলো সরকার দলীয় প্রার্থীদের যে কোনোভাবে বিজয়ী করা। এসব ব্যাপারেও নির্বাচন কমিশন স্বজ্ঞানে নিশ্চুপ হয়ে আছে।”
বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, “মিথ্যা অভিযোগে গ্রেপ্তার, গুলি করে পঙ্গু, গুম করে নেতাকর্মীদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করার সুযোগে সরকার শুন্য মাঠে গোল দেয়ার উদ্দেশ্যে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু ২০ দলের কৌশলী সিদ্ধান্তের ফলে গোটা পরিস্থিতি তাদের বিপক্ষে চলে যাওয়ায় এখন আজ্ঞাবহ প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনকে মাঠে নামিয়েছে।”
নজরুল ইসলামের দাবি, ছয় সিটি করপোরেশন নির্বাচনে শোচনীয় পরাজয় প্রমাণ করেছে যে জনগণ মোটামুটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ পেলে সরকার সমর্থক প্রার্থীদের ভোট দেবে না। সেকারণেই সরকার বিরোধী দলের প্রার্থীদের ওপর অত্যাচার করে, মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে এবং সর্বশেষ জনাব মিন্টুর মনোনয়নপত্র বাতিলের হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে নতুন করে সংকট ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চায়।”
অবিলম্বে এসব ‘অপতৎপরতা’ থেকে বিরত হওয়ার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “অন্যথায় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচনী নাটক করার যেকোনো প্রচেষ্টা জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করবে।”
খবর বিভাগঃ
রাজনীতি
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়