Thursday, December 4

দেশবাসীকে পুতিন বললেন, সামনে কঠিন সময়


কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক : রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দেশটির জনগনকে আসন্ন অর্থনৈতিক মন্দায় ধৈর্য্য ধারণ এবং আত্মনির্ভরশীলতার প্রস্তুতি নেওয়ার আগাম আহবান জানিয়েছেন। রাশিয়ার পর্লামেন্টে জাতির উদ্দেশে দেওয়া বার্ষিক ভাষণে তিনি এ আহবান জানান। এসময় পুতিন পশ্চিমা দেশগুলোর বিরুদ্ধে রাশিয়ার উপর নতুন করে কঠোর অবরোধ আরোপের পাঁয়তারা করছে বলেও অভিযোগ করেন। সম্প্রতি সৌদি আরবের কারসাজির ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমে যাওয়া এবং ইউক্রেনে আগ্রাসনের জবাবে পশ্চিমা দেশগুলোর অর্থনৈতিক অবরোধের ফলে রাশিয়ার অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সিরিয়া ও ইরানকে জব্দ করার জন্য সৌদি আরব ওপেকভুক্ত দেশগুলোকে অতিরিক্ত তেল উদপাদন করে বিশ্ব বাজারে তেলের দাম কমিয়ে রাখার কৌশল গ্রহণ করছে গত কয়েকবছর ধরেই। সম্প্রতি অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় অনুষ্ঠিত ওপেকের নভেম্বর সম্মেলনে সৌদি আরবের এই কারসাজি ফাঁস হয়ে পড়ে। ইরান ওই সম্মেলনে তেল উৎপাদন কমানোর প্রস্তাব দিলে সৌদি আরব এর তীব্র বিরোধীতা করে। ওদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও সম্প্রতি আভ্যন্তরীণ তেল উৎপাদন বাড়িয়ে দিলে পরিস্থিতি আরও সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে। ইরাকের তেলক্ষেত্রগুলো ইসলামি জঙ্গি সংগঠন আইএস এর দখলে চলে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের তেল উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। দেশবাসীকে পুতিন বললেন, সামনে কঠিন সময় রাশিয়া সৌদি আরবের আল সৌদ রাজপরিবারের প্রতিদ্বন্দী সিরিয়ার আসাদ সরকারকে সহায়তা করায় রাশিয়ার অর্থনীতি দূর্বল করাও সৌদি আরবের লক্ষ্য ছিল। এই পরিপ্রেক্ষিতে রাশিয়ার সরকার হুঁশিয়ারি জারি করেছে যে আগামি বছরই তারা প্রবল অর্থনৈতিক মন্দার কবলে পড়তে যাচ্ছে। মন্দার কবল থেকে অর্থনীতিকে রক্ষার জন্য পুতিন অবশ্য কয়েকটি পরিকল্পনার কথাও প্রকাশ করেছেন। বিদেশে পাচার হওয়া কালো টাকা দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য তিনি সব ধরনের দায়মুক্তি দেওয়ার ঘোষণা করেছেন। উল্লেখ্য, শুধু চলতি বছরই রাশিয়া থেকে প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়ে গেছে। পুতিন প্রতিজ্ঞা করেন, পাচার হওয়া পুঁজি দেশে ফিরিয়ে আনলে রাজস্ব বিভাগ বা জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনীগুলো কোনও ধরনের বাধা সৃষ্টি করবে না। পুতিন বলেন, বিদেশে বসবাসকারী ব্যবসায়ীরা দেশে ফিরে আসতে চাইলে তাদেরকে কোনও ধরনের বাধা দেওয়া হবে না। আর আমি বিশ্বাস করি সাইপ্রাস ঘটনার পর একটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, বিদেশে আমাদের ব্যবসায়িক স্বার্থের অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে সবচেয়ে ভালো সমাধান হল ব্যবসায়ীদেরকে জাতীয়ভাবে সহায়তা করা। উল্লেখ্য, সাইপ্রাস রাশিয়ার বৈদেশিক বাণিজ্যের কেন্দ্রে পরিণত হয় ১৯৯০’র দশকে। কিন্তু ২০১৩ সালে দেশটির দেউলিয়া হয়ে পড়া ব্যাংকগুলোর জন্য যে জরুরি বেইল আউট প্রকল্প নেওয়া হয় এতে রাশিয়ার বাণিজ্যিক স্বার্থ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পুতিন রাশিয়ার ব্যবসা বাণিজ্যের গতি বাড়ানোর জন্য চার বছরের জন্য আয়কর আর না বাড়ানোর প্রস্তাবও করেছেন। এদিকে সোমবার বিশ্ব বাজারে রাশিয়ার মুদ্রা রুবলের দাম আরও কমে গেছে। ১৯৯৮ সালের পর এটাই রুবলের সবচেয়ে বড় দরপতনের ঘটনা। মার্কিন ডলারের বিপরীতে রুবলের দামে আরও ৯ শতাংশ পতন ঘটেছে। দেশবাসীকে পুতিন বললেন, সামনে কঠিন সময় ইউক্রেন সংকটকে কেন্দ্র করে রাশিয়ার প্রতি পশ্চিমা দেশগুলোর আচরণের সমালোচনা করে পুতিন বলেন, পশ্চিমা দেশগুলো এমনিতেই কোনোনা কোনও ছুতায় রাশিয়ার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হতোই। তবে আসন্ন সংকট মোকাবেলায় ব্যায়বহুল কোনও সামরিক প্রতিযোগিতায় রাশিয়ার জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও নাকচ করে দেন পুতিন। রাশিয়া বরং আত্মরক্ষামূলক কৌশল অবলম্বন করবে বলে নিশ্চিত করেন পুতিন। আর নিজেদের রক্ষা করার মতো যথেষ্ট ক্ষমতা, ইচ্ছা এবং সাহস রাশিয়ানদের আছে বলেও মন্তব্য করেন পুতিন। অর্থনীতি রক্ষায় পুতিন বৈদেশিক বিনিয়োগ এবং ভিনদেশের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগের জন্য রাশিয়ার দ্বার পুরোপুরি উম্মুক্ত করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এছাড়া রাশিয়ার জনগনকেও নিজ নিজ জায়গা থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার আহবান জানিয়েছেন পুতিন। আর রাশিয়ার উপর পশ্চিমাদের অর্থনৈতিক অবরোধকে নেতিবাচকভাবে না দেখে বরং ইতিবাচকভাবে দেখার আহবান জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আমাদের এক বিশাল আভ্যন্তরীন বাজার ও প্রাকৃতিক সম্পদের উৎস রয়েছে। এছাড়া যোগ্যতা সম্পন্ন এবং বুদ্ধিমান জনগোষ্ঠীও রয়েছে। রাশিয়ার জনগনকে বিকশিত হওয়ার সুযোগ করে দিলে তারা অসাধ্য সাধন করতে পারবে।’ বিশ্ব বাজারে তেলের দাম কমে যাওয়ায় রাশিয়ার রপ্তানি আয় কমে গেছে। কারণ দেশটির অর্থনীতির বিশাল অংশ জ্বালানি রপ্তানি আয়ের উপর নির্ভরশীল। অন্যদিকে পশ্চিমাদের অবরোধের ফলে দেশটির আভ্যন্তরীণ অর্থনীতিও সমস্যাগ্রস্ত হচ্ছে। রাশিয়ার অর্থমন্ত্রী আন্তোন সিলুয়ানোভ জানান, বিশ্ব বাজারে তেলের দাম কমে যাওয়ায় রাশিয়া প্রতি বছর অন্তত ১৪০ বিলিয়ন ডলার ক্ষতির শিকার হচ্ছে। গত বছর মার্কিন ডলারের বিপরীতে রাশিয়ার মুদ্রা রুবলের দরপতন হয়েছে ৪০ শতাংশ। এর ফলে আগামী বছরের শুরুতেই মূল্যস্ফীতির হার ১০ শতাংশে পৌঁছাবে। তবে এতোকিছুর পরও প্রেসিডেন্ট পুতিনের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি। সম্প্রতি এক জরিপে দেখা গেছে দেশটির ৭২ শতাংশ মানুষই পুতিনের প্রতি তাদের সমর্থন ও আস্থা জ্ঞাপন করেছেন।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়