ইউক্রেনের দিনিপ্রো শহরে সম্প্রতি মাঝারি পাল্লার যে নতুন হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালানোর কথা স্বীকার করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, সেটি আসলে কতটা বিধ্বংসী বা কতটা শক্তিশালী; তা নিয়ে চলছে আলোচনা।
সংবাদমাধ্যম বিবিসি লিখেছে, মস্কোর দেওয়ার তথ্য অনুযায়ী নতুন এই ক্ষেপণাস্ত্রের নাম ‘ওরেশনিক’ রেখেছে তারা।
যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সরবরাহ করা ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার মূল ভূখণ্ডে ইউক্রেনের হামলা চালানোর উত্তর দিতে শব্দের চেয়ে দ্রুত গতিতে চলতে সক্ষম এই ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন রাশিয়ায় হামলায় ইউক্রেনকে মার্কিন দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়ার পর যুদ্ধে নতুন উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে; এর সঙ্গে অবধারিতভাবে যুক্ত হয়ে পড়ে ওয়াশিংটন।
ক্রেমলিনের দেওয়ার তথ্য অনুযায়ী সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা জানিয়েছে, লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানা ওরেশনিকের পরীক্ষা সফল হয়েছে। আধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থাও ওরেশনিককে এর লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানা থেকে ঠেকাতে পারবে না; এটা সম্ভভ নয়।
মার্কিন প্রতিরক্ষা সদর দফতর পেন্টাগন বলেছে, পারমাণবিক অস্ত্রের ঝুঁকি হ্রাসে নিয়োজিত চ্যানেলগুলোর মাধ্যমে রাশিয়ার ওই ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করার বিষয়টি জেনেছে তারা।
রাশিয়ার এই হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নেয়া যাক:
নতুন ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ওরেশনিক কী
ওরেশনিক, রাশিয়ায় যার অর্থ ‘হ্যাজেল ট্রি’ (বিশেষ ধরনের একটি বৃক্ষ) এক নতুন মাঝারি পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। এটি পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম। বিষয়টি জনসমক্ষে আগে কখনো প্রকাশ করা হয়নি।
পেন্টাগন বলেছে, ‘আরএস–২৬ রুবেজ’ নামের আন্তমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের (আইসিবিএম) ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে ওরেশনিক।
হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলো শব্দের চেয়ে অন্তত পাঁচ গুণ গতিতে ছুটতে পারে। আবার পথিমধ্যে পারে কৌশল বদলাতে। এ কারণে এগুলো শনাক্ত করা ও আটকে দেওয়া অধিকতর কঠিন।
তবে গতকাল শুক্রবার এক টেলিভিশন ভাষণে পুতিন বলেন, ওরেশনিক ক্ষেপণাস্ত্র শব্দের চেয়ে ১০ গুণ গতিতে ছুটে যায়। এ ক্ষেপণাস্ত্রের উৎপাদন চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
ওরেশনিক, রাশিয়ায় যার অর্থ ‘হ্যাজেল ট্রি’ (বিশেষ ধরনের একটি বৃক্ষ) এক নতুন মাঝারি পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। এটি পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম। বিষয়টি জনসমক্ষে আগে কখনো প্রকাশ করা হয়নি।
সামরিক বিশেষজ্ঞ ভিক্টর বারনেটস কমসোমলস্কায়া প্রাভদা পত্রিকায় লিখেছেন, এ ক্ষেপণাস্ত্রের তিন থেকে ছয়টি ওয়ারহেড (ক্ষেপণাস্ত্রের মুখ বা যে অংশ বিস্ফোরক থাকে) আছে।
মস্কোভিত্তিক সাময়িকী ন্যাশনাল ডিফেন্সের সম্পাদক ইগর কোরোশেঙ্কো রুশ সরকারি বার্তা সংস্থা তাসকে বলেন, রাশিয়া ওরেশনিক দিয়ে ইউক্রেনে যে হামলা চালিয়েছে, তার ভিডিও ফুটেজ দেখে বোঝা যায়, এর বেশ কয়েকটি ওয়ারহেড আছে; যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত।
বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়া এখন প্রতিশোধ গ্রহণের মনোভাবে রয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে তিন বছর ধরে চলা যুদ্ধে এবারই প্রথম নিজেদের দেওয়া দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইউক্রেনকে রুশ ভূখণ্ডে হামলা চালানোর অনুমতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। পরে কিয়েভ ওই ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ায় হামলাও চালায়। এরপরই নিপ্রোতে ওরেশনিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে মস্কো।
রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে দূরপাল্লার ওই ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার অনুমতি দেওয়ার আগে ওয়াশিংটন কিয়েভের ওপর থেকে এমন ক্ষেপণাস্ত্র (আর্মি ট্যাকটিক্যাল মিসাইল সিস্টেমস বা এটিএসিএমএস) ব্যবহার করার নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়।
রাশিয়া ওরেশনিক দিয়ে ইউক্রেনে যে হামলা চালিয়েছে, তার ভিডিও ফুটেজ দেখে বোঝা যায়, এর বেশ কয়েকটি ওয়ারহেড আছে; যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত।
মস্কো বলেছে, কিয়েভ গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্র নির্মিত ছয়টি এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ায় হামলা চালিয়েছে। এর দুদিন পর বৃহস্পতিবার রাশিয়ায় যুক্তরাজ্যের ‘স্টর্ম শ্যাডো’ ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ও যুক্তরাষ্ট্রের ‘হিমার্স’ ক্ষেপণাস্ত্রের হামলা চালায় ইউক্রেন।
মস্কো বলেছে, নিজেদের সরবরাহ করা দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ায় হামলার অনুমতি দেওয়ার মধ্য দিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো এ যুদ্ধে সরাসরি অংশ নিচ্ছে। গতকাল শুক্রবার ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, এ ব্যাপারে মস্কোর ‘কোনো সন্দেহ নেই’ যে নিপ্রোতে ওরেশনিক দিয়ে হামলা একটি সতর্কবার্তা—ওয়াশিংটন তা বুঝেছে।
পেসকভ বলেন, ‘ওরেশনিক ছুড়ে মূলত এ বার্তাই দেওয়া হচ্ছে যে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি এবং তা ইউক্রেনে সরবরাহ ও রাশিয়ায় হামলায় ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার পশ্চিমা দেশগুলোর বেপরোয়া সিদ্ধান্ত ও কর্মকাণ্ডে মস্কো জবাব না দিয়ে থাকবে না।’
ওরেশনিক দিয়ে হামলা প্রসঙ্গে পুতিন কী বলছেন?
টেলিভিশনে গত বৃহস্পতিবার দেওয়া অনির্ধারিত এক বক্তব্যে প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেছেন, নিপ্রোতে ওরেশনিক ছোড়ার মধ্য দিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়ার মাঝারি পাল্লার আধুনিকতম ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার পরীক্ষা চালানো হয়েছে।
পুতিন বলেন, ওই হামলায় অপারমাণবিক হাইপারসনিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালানো হয়। পরীক্ষা ছিল সফল এবং তা নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে। আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ওরেশনিককে ঠেকাতে পারেনি।
তিনি আরো বলেন, ‘আধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা এমন ক্ষেপণাস্ত্র আটকাতে পারবে না। এটা অসম্ভব। এখন পর্যন্ত এমন অস্ত্রকে পাল্টা আঘাত করার মতো কোনো ব্যবস্থা নেই।’
‘যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্রদের কর্মকাণ্ডের ওপর ভিত্তি করে এ ধরনের মাঝারি ও স্বল্পপাল্লার আরো ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করা হবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত নেবে রাশিয়া’, বলেন পুতিন।
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়