Tuesday, December 16

চসিক নির্বাচন : প্রচারণায় লুকোচুরি, মাঠে সবাই


চট্টগ্রাম: সময় খুব বেশি নেই। রয়েছে নির্বাচন কমিশনের বিধি-নিষেধও। তাই সুকৌশলে নিজের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক নেতারা। যার মধ্যে ব্যানার-পোস্টার সাঁটানোর পাশাপাশি মতবিনিময় সভার নামে চলছে লুকোচুরি খেলাও। নির্বাচনী খেলার মাঠে অনুসারীদের কাছে রাখতে কাড়ি কাড়ি টাকাও উড়াচ্ছেন নেতারা। ফলে দলাদলি ও গলাগলিতে সরগরম এখন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকা। অলি-গলিতে এখন আলাপ শুরু হয়ে গেছে যে শেষ পর্যন্ত কে বিজয়ী হবে নির্বাচনী লড়াইয়ে। এ ক্ষেত্রে নানা মত উঠে আসছে। এমনকি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে মতবিনিময় সভা ছাড়াও চলছে মিছিল সমাবেশও। রীতি মতো একটা প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে। প্রার্থীদের প্রধান অতিথি সাজিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সংগঠনের কার্যক্রমগুলোতেও। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন ওয়ার্ডের মসজিদে-মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায়, বিয়ে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণও বেড়ে গেছে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক নেতাদের। মা-বাবা বা পারিবারিক ঐতিহ্য হিসেবে মেজবানের আয়োজন করে ওয়ার্ডের হাজার-হাজার মানুষকে খাইয়ে সন্তুষ্ট রাখারও ছেষ্টাও চলছে সমান তালে। মূলত নির্বাচনী বিধি-নিষেধের কারণেই এমন লুকোচুরি চলছে। প্রার্থী হতে ইচ্ছুক চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাসির উদ্দিন, কোষাধ্যক্ষ ও সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুছ ছালাম, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাৎ হোসেন, মহানগর জাতীয় পার্টির বহিঃস্কৃত সভাপতি সোলায়মান আলম শেঠ লুকোচুরি প্রচারণার কথা স্বীকারও করেন। ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তারা বলেন, তফসিল ঘোষণার আগে নির্বাচন সংক্রান্ত যে কোনো প্রচার ও প্রচারণা চালানোর উপর নির্বাচন কমিশনের বিধি-নিষেধ রয়েছে। ফলে নির্বাচনী প্রচারণা নয়, স্বাভাবিক রাজনৈতিক কার্যক্রমের অংশের মতো জনগণের কাছে থাকছি আমরা। পোস্টার-ব্যানার সাঁটানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন, নির্বাচনের পক্ষে আমরা কোনো পোস্টার-ব্যানার সাঁটাইনি। অনুসারী নেতাকর্মীরা পছন্দের নেতার পক্ষে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে মাত্র। যেখানে নির্বাচনী কোনো প্রতীক ব্যবহার বা ভোট চাওয়া হয়নি। এসব প্রচারণা নির্বাচনী বিধি নিষেধের আওতায় পড়ে না। এ ব্যাপারে জাতীয় পার্টির নেতা সোলায়মান আলম শেঠ বলেন, ২০১০ সালের ১৭ জুন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সে হিসেবে চলতি সনের জুন মাসের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। যদি ডিসিসির মতো আজগুবি কোনো গজব চসিকের ওপর নেমে না আসে। তিনি বলেন, হিসেব মতে এপ্রিল বা মে মাসের মধ্যে চসিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। যা কষলে খুব বেশি সময় বাকি নেই। তফসিল ঘোষণার পর প্রচারণার জন্য ১৫ দিনও সময় পাওয়া যায় না। তাই আগে-ভাগে প্রচারণা না চালালে মানুষ সৎ ও যোগ্য প্রার্থী চিনতে ভুলও করতে পারেন। ফলে মানুষের কাছাকাছি থাকতে চেষ্টা করছি মাত্র। মহানগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ও সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুছ ছালাম বলেন, রাজনীতি করার পেছনে একটা লক্ষ্য থাকে। তারই অংশ হিসেবে চসিক নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করতেই পারি আমি। তবে তা নির্ভর করছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপর। তিনি যদি বলেন, তাহলে আমি অবশ্যই প্রার্থী হবো। আর এ ধরণের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে বলে আমি মনে করি। সে হিসেবে অন্য সবার মতো মানুষের কাছাকাছি থাকতে আমার দোষ কোথায়। তাছাড়া সিডিএ চেয়ারম্যান হিসেবে নগরীর উন্নয়ন কার্যক্রমে জনগণকে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে ওয়ার্ডে কেন, ঘরে-ঘরেও আমি মতবিনিময় সভা করতে পারি। যার অভাবে বিগত বছরগুলোতে চট্টগ্রামবাসী উন্নয়ন কি জিনিস চোখে দেখেনি। তিনি দাবি করেন, বর্তমান সরকারের আমলে উন্নয়ন দেখে চট্টগ্রামবাসী যেমন অভিভূত, তেমনি স্বার্থান্বেষী মহল শঙ্কিত। তাদের ভয় একটাই, আমি নির্বাচনে দাড়ালে তারা পরাজিত হবেই। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনী বিধি ভঙ্গ হয় এরকম নির্বাচনী কোনো প্রচারণা আমি চালাইনি। মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাৎ হোসেন ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ২০১০ সালের নির্বাচনে বিএনপির সমর্থন নিয়ে মঞ্জুর আলম মেয়র নির্বাচিত হন। এরপর যা করেছেন তাতে তিনি যে বিএনপি নেতা তা বলতেও লজ্জা হয়। তার ব্যর্থতা এবং বর্তমান সরকারের স্বৈরাচারী কর্মকাণ্ড জনগণের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করছি আমি। এক্ষেত্রে বিএনপি আমলের সুশাসন ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের প্রচারণা চালানো হচ্ছে বলে জানান ডা. শাহাদাৎ হোসেন। বর্তমান মেয়র মঞ্জুর আলম ওয়ার্ডে-ওয়ার্ডে সুধী সমাবেশ করার কথা স্বীকার করলেও তা নির্বাচনী প্রচারণা নয় বলে জানান। তিনি বলেন, নগরীর সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে নগরবাসীর সাথে মতবিনিময় করা হচ্ছে। প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মেয়র পদে নির্বাচনের প্রস্তুতি রয়েছে আমার। উল্লেখ্য, নির্বাচনকে সামনে রেখে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ব্যানার-পোস্টার ছাড়াও দুই মাসে দুটি এবং মহানগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ও সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুছ ছালাম কয়েকটি ওয়ার্ডে একাধিক মেজবান খাইয়েছেন। জাতীয় পার্টির নেতা সোলায়মান আলম শেঠও গত ১১ ডিসেম্বর নগরীর চকবাজারস্থ কার্যালয়ে মেজবান খাইয়েছেন। তারাসহ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন এবং বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাৎ হোসেন নগরীর বিভিন্ন অলি-গলিতে ব্যানার-পোস্টার ও বিলবোর্ড টাঙিয়ে মেয়র প্রার্থী হিসেবে ভোটারদের নজর কাড়ার চেষ্টা করছেন। ওয়ার্ডে-ওয়ার্ডে সভা-সমাবেশ করে তারা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা খোরশেদ আলম ঢাকাটাইমসকে বলেন, তফসিল ঘোষণার আগে নির্বাচনী প্রচারণা আচরণবিধির লঙ্ঘন। এ ব্যাপারে কোনো অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। এতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে চিঠি দিয়ে তাঁর পোস্টার, ব্যানার সরিয়ে নিতে বলা হবে। এরপরও যদি সরিয়ে না নেয়, তাহলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়