Saturday, November 1

ডিজিটাল পন্থায় সংগঠিত হচ্ছে জামায়াত শিবির!


চট্টগ্রাম : ব্যস্ত রাস্তায় ভাঙচুর, সন্ত্রাস কিংবা মিটিং-মিছিলের মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান জানান দেওয়ার পন্থা থেকে সরে এসেছে জামায়াত শিবির। গ্রেফতার এড়াতে প্রকাশ্য কার্যক্রম থেকে দূরে থেকে ডিজিটাল পন্থায় মোবাইলে সাঙ্কেতিক কোড ব্যবহার করে নতুনভাবে সংগঠিত হচ্ছে শিবিরের নেতাকর্মীরা। মোবাইল কোডের মাধ্যমে নেতাকর্মীদের উজ্জিবিত রাখার নানা কৌশলও অবলম্বন করেছে শিবির নেতারা। আড়ালে থেকে ডিজিটাল পন্থায় সংগঠিত হওয়ার গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। সম্প্রতি চট্টগ্রামে গ্রেফতারকৃত কয়েকজন শিবির নেতার স্বীকারোক্তি ও মোবাইল হিস্টোরি থেকে এসব তথ্য পাওয়া যায়। জামায়াত শিবিরের এই নতুন কৌশল সম্পর্কে পুলিশ তথ্য পাওয়ার পর এ ব্যাপারে বিশেষ সতর্কতা নিয়ে অভিযানে নেমেছে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ। চট্টগ্রাম নগর পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, প্রকাশ্যে সন্ত্রাস ও ধারাবাহিক সহিংসতা ঘটিয়ে কোনঠাসা হয়ে পড়া শিবির এখন বিকল্প পথেই সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে বলে তাদের কাছে বেশ কিছু তথ্য রয়েছে। গ্রেফতারকৃত চট্টগ্রামের কয়েকজন শিবির নেতাকর্মীর মোবাইল হিস্টোরি যাছাই করে জানা গেছে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য। শিবিরকর্মীরা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তাদের নানা ডিজিটাল কার্যক্রমের কথা জানিয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, জামায়াত শিবির গ্রেফতার এড়াতে নতুন নতুন কৌশল গ্রহণ করছে। চট্টগ্রাম নগরী ও জেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রকাশ্যে মিছিল সমাবেশের পরিবর্তে বিনোদন স্পটে ট্যুর, ধর্মীয় অনুষ্ঠান, মাদ্রাসা, মসজিদ ও ঘরোয়া বৈঠকের মাধ্যমে দলের নেতা-কর্মীদের উজ্জীবিত করে পরবর্তী আন্দোলন কর্মসূচির জন্য সংগঠিত হচ্ছে শিবির। দলীয় কার্যালয়, মেস, কলেজ, মাদ্রাসায় প্রশাসনের নজরদারি বৃদ্ধির কারণে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে তারা। আগের মতো এখন আর মোবাইলে কথোপকোথন বা টেক্সট ম্যাসেজ ব্যবহার করছে না শিবির নেতা-কর্মীরা। বেশিরভাগ নেতা-কর্মী এখন ফেসবুক, স্কাইপি, ইমেইলসহ আধুনিক সব প্রযুক্তি ব্যবহার করে পারস্পরিক যোগাযোগ বৃদ্ধি করছে। এ ছাড়াও সাংগঠনিক কাজে কিছু নতুনত্ব আনা হয়েছে বলেও একাধিক শিবির কর্মীর কাছ থেকে তথ্য পেয়েছে পুলিশ। চট্টগ্রামে শিবিরের সাংগঠনিক কার্যক্রম সম্পর্কে অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা গেছে, সাংগঠনিক কাজের পাশাপাশি শিবির নেতাকর্মীদের মেধা অনুযায়ী ভবিষ্যতে শিক্ষক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিকঅঙ্গনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষ করে তোলার উদ্যোগ নেওয়অ হয়েছে। এজন্য সাংগঠনিক পরিচয়ের বাইরে ভিন্ন নামে প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে প্রশিক্ষণমূলক ও লাভজনক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। সংগঠনের খবরাখবর প্রচারণার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে নিজস্ব ওয়েবসাইট। সূত্রমতে, চট্টগ্রাম জুড়ে বিভিন্ন সহিংস আন্দোলনের কারণে প্রশাসনের রোষানলে পড়ার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের সমর্থন হারিয়েছে শিবির। এমনকি গ্রেফতার-নির্যাতনের ভয়ে অনেক কর্মী-সমর্থক বর্তমানে নিস্ক্রিয় হয়ে গেছে। এজন্য সহিংসতা পরিহার করে ইতিবাচক কর্মসূচির মাধ্যমেই জনসম্পৃক্ততা বাড়িয়ে সবার আস্থা ফিরিয়ে আনতে ভিন্ন কৌশলে এগুচ্ছে তারা। জরুরি কোনো ইস্যু ছাড়া রাজপথে না নামারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিবিরের নেতাকর্মীরা। কঠোর গোপনীয়তা ধরে রাখতে পরীক্ষিত, অপরিচিত ও নতুন মুখ নিয়ে আবারো সুসংগঠিত হচ্ছে শিবির। পুলিশের তালিকায় থাকা ও কারাগারে আটকদেরকেও বাদ দেওয়া হচ্ছে নতুন সংগঠনে। এ ছাড়া এবং আত্মগোপনে থাকা নেতা কর্মীদের আরো সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে ওপর মহল থেকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চট্টগ্রাম নগর পুলিশের এক কর্মকর্তা ডিনিউজকে জানান, গত ২৯ অক্টোবর দুপুরে চট্টগ্রামের হালিশহর থানা পুলিশ নগর ছাত্রশিবির দক্ষিণ শাখার সেক্রেটারি রাফিজুল হাসান বাপ্পিসহ সংগঠনটির ৭ নেতা-কর্মীকে আটক করে । হালিশহর থানার ছোটপুল কাঁচাবাজারের সামনে ঝটিকা মিছিলের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় তাদের আটক করা হয়। আটককৃত নগর ছাত্রশিবির দক্ষিণ শাখার সেক্রেটারি রাফিজুল হাসান বাপ্পির কাছ থেকে উদ্ধারকৃত মোবাইল ফোনে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া যায় বলে পুলিশের এই কর্মকর্তা নিশ্চিত করে বলেন, ‘দলীয় কার্যালয়ে বা মাদ্রাসায় বসে শিবিরের নেতাকর্মীরা এখন গোপন বৈঠক করছে না। বিভিন্ন পর্যটন স্পটে ভ্রমণের নামে এবং পাঞ্জাবী ছেড়ে ভিন্ন পোষাকে একত্রিত হয়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এ ছাড়া পুলিশ ও গোয়েন্দাদের চোখ ফাঁকি দিতে সভায় মোটরসাইকেল ব্যবহার না করারও নির্দেশনা রয়েছে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে শিবিরকর্মীরা স্বীকার করেছে- সাংগঠনিক কাজে কিছু নতুনত্ব আনা হয়েছে। শিবিরের কোনো নেতার ফোন সহজে রিসিভ না করে ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করা, ফোন রিসিভকরার পর অপর প্রান্ত থেকে কি ধরনের বার্তা আসে তা বিবেচনা করে উত্তর দেওয়া এবং নেতাকর্মীদের অবস্থান ও মোবাইল ফোন পরিবর্তন করে প্রয়োজনে নতুন নতুন সাংকেতিক কোড ব্যবহার করার উদ্যোগ নিয়েছে শিবির।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়