ঢাকা: আর্জেন্টিনাকে ২-০ গোলে হারিয়ে দিল পাঁচবারের ফুটবল বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল। দু’টি গোলই করেছেন স্ট্রাইকার দিয়েগো তারদেল্লি। আর একটিমাত্র পেনাল্টির সুযোগ পেয়েও তা নষ্ট করেছেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক লিওনেল মেসি।
খেলার প্রথম ১৫ সেকেন্ডের মাথায়ই প্রথম গোল উদযাপনের সম্ভাবনা তৈরি করে আর্জেন্টিনা। কিন্তু ডি-বক্সের মাঝখান থেকে ডান পায়ে শট নিয়েও হতাশায় মুষড়ে পড়েন ম্যানচেস্টার সিটি তারকা সার্জিও আগুয়েরো।
ম্যাচের প্রথম ফাউলে অভিযুক্ত হন আর্জেন্টিনার এরিক লামেলা।
তিন মিনিটের মাথায় ডি-বক্সের বাইরে থেকে আর্জেন্টাইন উইঙ্গার ডি মারিয়া লম্বা শট নিলেও কোনো উদযাপনের সুযোগ পায়নি তার দল।
খেলার নয় মিনিটের মাথায় আবারও সুযোগ পেয়ে ব্যর্থ হন আগুয়েরো। ডি-বক্সের মাঝ থেকে ডান পায়ে শট নিয়ে সেটি গোলরক্ষকের মাথার ওপর দিয়ে পাঠিয়ে দেন তিনি।
মিনিট কয়েক পর ডেভিড লুইজের বাড়িয়ে দেওয়া বল নিয়ে একাই আর্জেন্টাইন জাল ভেদ করার প্রচেষ্টা চালান উইলিয়ান। কিন্তু কারও সহযোগিতা না পাওয়ায় গোলবারের ২৫ গজ কাছে গিয়েও বিপক্ষের ডিফেন্সের কাছে পরাস্ত হন তিনি।
এরপর বেশ কয়েকটি আক্রমণ পাল্টা আক্রমণ চলে। তবে ২৮ মিনিটের মাথায় উদযাপনের সুযোগ আসে ব্রাজিলের দ্বারে। কর্নার হয়ে আসা বল ডি-বক্সের বামপাশ থেকে দিয়েগো তারদেল্লির ডান পায়ের নেওয়া শটে গোল উদযাপন করে ব্রাজিল।
অবশ্য, কর্নার হয়ে আসা বলটি ক্লিয়ার করতে চেয়েছিলেন আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডার জাবালেতা ও ফার্নান্দেজ। কিন্তু তাদের বিভ্রান্তিতে ফেলে হাসেন শেষ পর্যন্ত তারদেল্লিই।
এরপর আবারও চলে আক্রমণ পাল্টা আক্রমণ। এরই মধ্যে ৪০ মিনিটের মাথায় বল নিয়ে ডি-বক্সের দিয়ে ছুটে যান ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড উইঙ্গার ডি মারিয়া। কিন্তু তাকে ফেলে দিয়ে হলুদ কার্ড হজম করেন দানিলা। আর এই ফাউলের সুবাদে পেনাল্টি পায় আর্জেন্টিনা।
কিন্তু তারদেল্লির গোল শোধ করতে পেনাল্টি পেলেও তা একেবারেই আনাড়ির মতো হাতছাড়া করে ফেলেন ‘বিস্ময়বালক’ মেসি। তিনি একেবারে গোলরক্ষকের হাতে তুলে দেন বল।
এ কারণে হতাশায় মুষড়ে পড়া আর্জেন্টিনাকে বিরতির আগ মুহূর্ত পর্যন্ত বেশ অগোছালো দেখা যায়।
বিরতি শেষে আর্জেন্টিনা সমতায় ফেরার লড়াইয়ে নামলেও জয়ের ব্যবধান বেশি করতে ব্রাজিলকে অনেক বেশি আক্রমণাত্মক খেলতে দেখা যায়।
এই আক্রমণাত্মকভাবে ব্রাজিলকে ৬৪ মিনিটের মাথায় দিয়ে দেয় আরেকটি সুযোগ। এবারও উদযাপনের উপলক্ষ্য তৈরির কারিগর সেই তারদেল্লি। অস্কারের নেওয়া কর্নার কিক সরাসরি দুর্দান্ত হেডে আর্জেন্টাইন জালে পাঠিয়ে উদযাপনে মেতে ওঠেন তিনি।
দুই গোলে পিছিয়ে পড়ার পর আর্জেন্টিনা দল আরও বেশি এলোমেলো হয়ে পড়ে। আর এই সুযোগে আক্রমণের পর আক্রমণে ম্যাচের পুরো নিয়ন্ত্রণ নিতে থাকে ব্রাজিল।
খেলার ৭৯ মিনিটের মাথায় ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্স ভেদ করে বল নিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে যেতে উদ্যত হন মেসি। তবে তার আগেই ব্রাজিলিয়ান এলিয়াস তাকে ফাউল করে ফেলে দেন। এতে ফ্রি-কিক পায় আর্জেন্টিনা। কিন্তু তা থেকে কোনো ফায়দা হাসিল করতে পারেননি মেসি।
শনিবার বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টা ০৫ মিনিটে বেইজিংয়ের অলিম্পিক স্টেডিয়াম খ্যাত বার্ড নেস্টে মেসি-নেইমারদের এ প্রীতি দ্বৈরথ শুরু হয়।
এখন পর্যন্ত ৯৫ বার লড়াই হয়েছে দুই ফুটবল পরাশক্তির। এর মধ্যে ৩৬ বার শেষ হাসি হেসেছে আর্জেন্টিনা, আর ৩৫টিতে জিতেছে ব্রাজিল। ড্র হয়েছে ২৪টি ম্যাচ।
৫০টি প্রীতি ম্যাচের মধ্যে ব্রাজিল জিতেছে ১৯ বার, আর আর্জেন্টিনা জিতেছে ১৭ বার। বাকি ১৪টি ম্যাচ হয়েছে ড্র। বিশ্বকাপে দু’দলের চারবারের লড়াইয়ে দু’বার জিতেছে ব্রাজিল, আর একবার জিতেছে আর্জেন্টিনা। একটি ম্যাচ থেকেছে ড্র। কোপা আমেরিকায় আর্জেন্টিনা জিতেছে ১৫ বার, আর ব্রাজিল জিতেছে ৯ বার।
আর্জেন্টিনা একাদশ: সার্জিও রোমেরো (গোলরক্ষক), পাবলো জাবালেতা, মার্টিন ডেমিচেলিস, ফেদেরিকো ফার্নান্দেজ, মার্কোস রোহো, জাভিয়ের মাসেরানো, রবার্তো পেরেইরা, অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া, লিওনেল মেসি, সার্জিও আগুয়েরো, এরিক লামেলা।
কোচ: জেরার্ডো মার্টিনো
ব্রাজিল একাদশ: জেফারসন (গোলরক্ষক), দানিলো, মিরান্দা, ডেভিড লুইজ, ফিলিপ লুই, লুইজ গুস্তাভো, এলিয়াস, অস্কার, নেইমার, দিয়েগো তারদেল্লি, উইলিয়ান।
কোচ: কার্লোস দুঙ্গা
উল্লেখ্য, বেইজিংয়ে মাত্রাতিরিক্ত ধোঁয়ার কারণে ম্যাচ অনুষ্ঠিত হওয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছিল। অতিরিক্ত ধোঁয়ার কারণে জারি করা হয়েছে ‘অরেঞ্জ পলিউশন অ্যালার্ট’। বেইজিংয়ের বাতাস স্বাভাবিকের থেকে অন্তত আঠারো গুন বেশি দূষিত বলে জানানো হয়েছে। কিন্তু সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে খেলাটি শুরু হয় নির্ধারিত সময়েই।
খবর বিভাগঃ
খেলাধুলা
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়