Wednesday, October 1

একনজরে কোরবানির মাসায়েল


মুফতি আল আমীন: কার ওপর কোরবানি ওয়াজিব প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন প্রত্যেক মুসলিম নর-নারী, যে ১০ জিলহজ ফজর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবে, তার ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব। টাকা-পয়সা, সোনা-রুপা, অলঙ্কার, বসবাস ও খোরাকির প্রয়োজন আসে না এমন জমি, ব্যবসায়িক পণ্য ও অপ্রয়োজনীয় সব আসবাবপত্র কোরবানির নিসাবের ক্ষেত্রে হিসাবযোগ্য। আর নিসাব হলো, সোনার ক্ষেত্রে সাড়ে সাত ভরি বা ৮৫ গ্রাম, রুপার ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন ভরি বা ৫৯৫ গ্রাম, টাকা-পয়সা ও অন্যান্য বস্তুর ক্ষেত্রে নিসাব হলো এর মূল্য সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার মূল্যের সমপরিমাণ হওয়া। আর সোনা বা রুপা কিংবা টাকা-পয়সা এগুলোর কোনো একটি যদি পৃথকভাবে নিসাব পরিমাণ না থাকে কিন্তু প্রয়োজন অতিরিক্ত একাধিক বস্তু মিলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার মূল্যের সমপরিমাণ হয়ে যায়, তাহলেও তার ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব। (আলমুহিতুল বুরহানি : ৮/৪৫৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া : ১৭/৪০৫)। নিসাবের মেয়াদ কোরবানির নিসাব পুরো বছর থাকা জরুরি নয়; বরং কোরবানির তিন দিনের মধ্যে যে কোনো দিন থাকলেই কোরবানি ওয়াজিব হবে। (বাদায়েউস সানায়ে : ৪/১৯৬, রদ্দুল মুহতার : ৬/৩১২)। কোরবানির সময় তিন দিন কোরবানি করা যায়। জিলহজের ১০, ১১ ও ১২ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত। তবে সম্ভব হলে জিলহজের ১০ তারিখেই কোরবানি করা উত্তম। (মুয়াত্তা মালেক : ১৮৮; বাদায়েউস সানায়ে : ৪/১৯৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ৫/২৯৫)। প্রথম দিন কখন থেকে কোরবানি করা যাবে যেসব এলাকার লোকদের ওপর জুমা ও ঈদের নামাজ ওয়াজিব তাদের জন্য ঈদের নামাজের আগে কোরবানি করা জায়েজ নয়। অবশ্য বৃষ্টিবাদল বা অন্য কোনো ওজরে যদি প্রথম দিন ঈদের নামাজ না হয়, তাহলে ঈদের নামাজের সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর প্রথম দিনেও কোরবানি করা জায়েজ। (সহিহ বোখারি : ২/৮৩২; কাজিখান : ৩/৩৪৪; আদ্দুররুল মুখতার : ৬/৩১৮)। কোরবানির উদ্দেশ্যে ক্রয়কৃত পশু সময়ের পর জবাই করলে কোরবানির দিনগুলোতে যদি জবাই করতে না পারে তাহলে খরিদকৃত পশুই সদকা করে দিতে হবে। তবে যদি (সময়ের পরে) জবাই করে ফেলে তাহলে পুরো গোশত সদকা করে দিতে হবে। এক্ষেত্রে গোশতের মূল্য যদি জীবিত পশুর চেয়ে কমে যায় তাহলে যে পরিমাণ মূল্য হ্রাস পেল তা-ও সদকা করতে হবে। (বাদায়েউস সানায়ে : ৪/২০২; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২০-৩২১)। কোন কোন পশু দ্বারা কোরবানি করা যাবে উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা দ্বারা কোরবানি করা জায়েজ। এসব গৃহপালিত পশু ছাড়া অন্যান্য পশু যেমন হরিণ, বন্যগরু ইত্যাদি দ্বারা কোরবানি করা জায়েজ নয়। (কাজিখান : ৩/৩৪৮; বাদায়েউস সানায়ে : ৪/২০৫)। কোরবানির পশুর বয়সসীমা উট কমপক্ষে ৫ বছরের হতে হবে। গরু ও মহিষ কমপক্ষে ২ বছরের হতে হবে। আর ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা কমপক্ষে ১ বছরের হতে হবে। তবে ভেড়া ও দুম্বা যদি ১ বছরের কিছু কমও হয়, কিন্তু এমন হৃষ্টপুষ্ট হয় যে, দেখতে ১ বছরের মতো মনে হয় তাহলে তা দ্বারাও কোরবানি করা জায়েজ। অবশ্য এক্ষেত্রে কমপক্ষে ৬ মাস বয়সের হতে হবে। উল্লেখ্য, ছাগলের বয়স ১ বছরের কম হলে কোনো অবস্থাতেই তা দ্বারা কোরবানি জায়েজ হবে না। (কাজিখান : ৩/৩৪৮; বাদায়েউস সানায়ে : ৪/২০৫-২০৬)। এক পশুতে শরিকের সংখ্যা একটি ছাগল, ভেড়া বা দুম্বা দ্বারা শুধু একজনই কোরবানি দিতে পারবে। এমন একটি পশু কয়েকজন মিলে কোরবানি করলে কারোটাই সহিহ হবে না। আর উট, গরু, মহিষে সর্বোচ্চ সাতজন শরিক হতে পারবে। সাতের অধিক শরিক হলে কারও কোরবানি শুদ্ধ হবে না। (সহিহ মুসলিম : ১৩১৮; কাজিখান : ৩/৩৪৯, বাদায়েউস সানায়ে : ৪/২০৭-২০৮)। শরিক নিতে হুশিয়ার কেউ আল্লাহর হুকুম পালনের জন্য কোরবানি না করে শুধু গোশত খাওয়ার নিয়ত করলে তার কোরবানি সহিহ হবে না। তাকে অংশীদার বানালে শরিকদের কারও কোরবানি হবে না। তাই সতর্কতার সঙ্গে শরিক নির্বাচন করুন। (বাদায়েউস সানায়ে : ৪/২০৮; কাজিখান : ৩/৩৪৯)।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়