বুধবার আলোকিত বাংলাদেশে 'কন্যাশিশু জন্ম দেয়ায় গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যা' শিরোনামে একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে, যা পড়ে খুবই মর্মাহত ও বিস্মিত হলাম। বিজ্ঞানের চরম উৎতর্ষতার যুগেও এমন হীন ও লজ্জাজনক ঘটনা ঘটতে পারে, ভাবতেই হৃদয়পটে ভেসে উঠল জাহেলিয়া যুগের বর্বর চিত্র। সে যুগে কন্যাসন্তানের পিতা হওয়া ছিল ভীষণ লজ্জার। সমাজে তার মুখ দেখানো দায়। এমনকি আপন কন্যাসন্তানকে জীবিত দাফন করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা হতো না তাদের। জাহেলিয়া সমাজের চিত্র তুলে ধরে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, 'যখন তাদের কাউকে কন্যাসন্তান জন্মের সুসংবাদ দেওয়া হয়, তখন তার চেহারা মলিন হয়ে যায় এবং সে মনে মনে ব্যথিত হয়। (এ সুসংবাদকে সে অপমানকর মনে করে) সমাজের লোকজন থেকে লুকিয়ে বেড়ায় এবং এ চিন্তা করে যে, হীনতা ও অপমানকে সহ্য করে কন্যাসন্তানটিকে কি নিজের কাছেই রেখে দেবে নাকি তাকে মাটিতে পুঁতে ফেলবে। লক্ষ্য করো, তারা কত হীন ও নিকৃষ্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণ করত।' (সূরা নাহল : ৫৮-৫৯)। সম্প্রতি যে খবরটি প্রকাশিত হয়েছে তা যেন আইয়ামে জাহিলিয়াতকেও হার মানায়। জাহেলিয়া যুগে কন্যাসন্তানকে অপমানজনক মনে করা হলেও তার জন্মদানকারিণীকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা পাওয়া যায় না। আজ জাহেলিয়াত যেন আমাদের কাছে আরও আধুনিক ও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। আমরা কন্যাসন্তানকে লাঞ্ছনা ও অপমানের চিহ্ন মনে করেই থেমে থাকিনি, আরও একধাপ এগিয়ে তার জন্মদানকারিণীকেও হত্যা করছি। বিশ্বের আনাচে-কানাচে অনেক মা-ই কন্যা সন্তান জন্মদানের অপরাধে (!) নির্মম নির্যাতন ও অত্যাচারের শিকার হয়ে নীরবে-নিভৃতে চোখের পানি ফেলছেন, যা হয়তো কখনোই প্রকাশিত হবে না কোনো কাগজে। আমাদের এ প্রিয় মাতৃভূমি বাংলায় কারা যেন রটিয়ে দিয়েছে, 'কন্যাসন্তান জন্মের জন্য দায়ী তার মা।' অথচ মেডিকেল সায়েন্স বলে, সন্তান ছেলে হবে না মেয়ে হবে এ ক্ষেত্রে ৯০ শতাংশ ভূমিকাই থাকে বাবার। সন্তান আল্লাহর এক অপার নেয়ামত। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'নভোম-ল ও ভূম-লের রাজত্ব একমাত্র আল্লাহ তায়ালারই। তিনি যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন। যাকে ইচ্ছা কন্যাসন্তান এবং যাকে ইচ্ছা পুত্রসন্তান দান করেন।' (সূরা শূরা : ৪৯)। এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম কুরতুবি ও ইবনে কাসির (রহ.) বলেন, এখানে আল্লাহ তায়ালা প্রথমে কন্যা সন্তানের কথা উল্লেখ করায় একথা সাব্যস্ত হয়, কন্যাসন্তান আল্লাহর খুবই প্রিয়। যে দম্পতিকে আল্লাহ তায়ালা বেশি ভালোবাসেন তাদেরই তিনি প্রথম কন্যাসন্তান দান করেন। (তাফসিরে কুরতুবি ও ইবনে কাসির)। কন্যাসন্তানের লালন-পালন জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা পাওয়ার কারণ হবে। এ সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেছেন, কন্যাসন্তান জন্মের মাধ্যমে যে ব্যক্তিকে পরীক্ষার সম্মুখীন করা হয়েছে, সে যদি তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে তবে এটা তার জন্য জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষার কারণ হবে। (সহিহ বোখারি ও মুসলিম)। যার তিনটি কন্যা সন্তান রয়েছে, সে যদি তাদের জন্য সবর করে এবং তাদের উত্তমরূপে লালন-পালন করে তাহলে সে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা পাবে। (আদাবুল মুফরাদ)।
কন্যাসন্তানের লালন-পালনকারী রাসূল (সা.) এর সঙ্গে জান্নাতে থাকবে। এ প্রসঙ্গে রাসূল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি দুটি কন্যা লালন-পালন করবে আমি এবং সে জান্নাতে এভাবে থাকব। এ বলে তিনি নিজের আঙুলগুলো মিলিয়ে ধরলেন। (মুসলিম)। যার কন্যাসন্তান আছে কিন্তু সে তাকে জীবিত কবর দেয়নি এবং তাকে দীনহীন ও লাঞ্ছিতও করেনি, আল্লাহ তাকে জান্নাতে স্থান দেবেন। (আবু দাউদ)।---আলোকিত বাংলাদেশ
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়