Sunday, September 21

কোরবানির পশুর হাট হোক চাঁদাবাজ ও দালালমুক্ত


কাজী আবুল কালাম সিদ্দীক: মুসলিম মিল্লাতের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎসব ঈদুল আজহার দিন ঘনিয়ে আসছে। কোরবানির ঈদকে টার্গেট করে জাল টাকার সিন্ডিকেট, অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টি, চাঁদাবাজ, চোরাচালান ও দালাল চক্র সক্রিয় হয়ে ওঠে। এসব চক্র বিভিন্ন স্থানে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের রূপ নিয়ে সাধারণ জনগণকে সর্বস্বান্ত করে চলছে অহরহ। এ ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'হে মোমিনরা! তোমরা একে অপরের সম্পত্তি অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না।' (সূরা নিসা : ২৯)। একজন ব্যবসায়ীকে ব্যবসা ক্ষেত্রে অবশ্যই আল্লাহকে স্মরণে রাখতে হবে। কারণ ব্যবসা হলো জীবিকা অর্জনের একটি উপলক্ষ মাত্র। যখনই কোনো ব্যক্তির মাঝে এ ধরনের ধারণা লালিত হতে থাকে, তখন তার যাবতীয় কাজ আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা তথা শরিয়ত অনুযায়ী হতে বাধ্য। কারণ পৃথিবীর প্রতিটি অণু-পরমাণুসহ সব সৃষ্টি-জীবের কোনোকিছুই আল্লাহর দৃষ্টিকে ফাঁকি দিতে পারে না। প্রতিটি কথা, কর্মের জন্য তাঁর কাছে হিসাব দিতে হবে। এ মর্মে কোরআনুল কারিমে এসেছে, 'তোমরা যেখানেই থাকো না কেন তিনি তোমাদের সঙ্গে আছেন। তোমরা যা কিছু করো আল্লাহ তা দেখেন।' (সূরা হাদীদ : ৪)। অন্যত্র এসেছে, 'চক্ষুর অপব্যবহার ও অন্তরে যা গোপন আছে, সে সম্বন্ধে তিনি অবহিত।' (সূরা মোমিন : ১৯)। 'গরুর দালাল' আমাদের সমাজেরই একটি পরিচিত (নিন্দিত) নাম। ইসলামের পরিভাষায় প্রকৃত ক্রেতাকে ধোঁকায় ফেলে অধিক মুনাফা লাভের উদ্দেশ্যে নকল ক্রেতা সেজে পণ্যের উচ্চ মূল্য হাঁকানোকে নাজাশ বা দালালি বলে। এটি এক ধরনের প্রতারণা। তাই ইসলাম এটাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। আল্লামা তকী ওসমানী এর সংজ্ঞায় বলেন, 'কোনো ব্যক্তি ক্রয়ের উদ্দেশ্যে নয়, বরং অপরকে প্রতারিত করার জন্য এবং অধিক মূল্যে ক্রয়ে প্ররোচিত করা নিমিত্তে গ্রাহক সেজে দ্রব্যের চড়া মূল্য দেয়ার প্রস্তাব করাকে নাজাশ বলে।' (তাকমালাতু ফতহিল মুলহিম, খ. ১, পৃ. ৩৩০)। নবী করিম (সা.) এ ধরনের ক্রয়-বিক্রয় নিষেধ করেছেন এবং এটিকে প্রতারণা ও বিশ্বাসঘাতকতার নামান্তর বলেছেন। 'রাসূল (সা.) দালালি করতে নিষেধ করেছেন।' (সহিহ বোখারি : ২০৩৫)। বিক্রেতা ও ভোক্তাদের মাঝে দালাল বা গরফফষব সধহ এর অনুপ্রবেশের কারণে দ্রব্যের দাম কিছুটা বেড়ে যায়। এ কারণে রাসূল (সা.) এটাকে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন, 'কোনো ব্যক্তি মুসলমানদের লেনদেনে হস্তক্ষেপের মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণ ঘটালে কেয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা আগুনের হাড়ের ওপর তাকে বসিয়ে শাস্তি দেবেন।' (মুসনাদ আহমাদ, খ.৫ পৃ. ২৭)। মোটকথা, কোরআন ও হাদিসের সুস্পষ্ট ভাষায় দালালিকে এক ঘৃণ্য অপকর্ম হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে; যা অবশ্যই পরিত্যাজ্য। জীবিকা নির্বাহের উত্তম ও অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্য, তবে এটি অবশ্যই সৎ উপায়ে ইসলামী পন্থায় হতে হবে। এ মর্মে রাসূল (সা.) এর একটি বাণী প্রণিধানযোগ্য। 'হজরত রাফে' ইবনে খাদিজ (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূল (সা.) কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, সর্বোত্তম উপার্জন কোনটি? জবাবে তিনি বলেন, 'ব্যক্তির নিজস্ব শ্রমলব্ধ উপার্জন ও সততার ভিত্তিতে ক্রয়-বিক্রয়।' (মুসনাদে আহমাদ, খ. ৪ পৃ. ১৪১)। ন্যায়পরায়ণ ও সৎ ব্যবসায়ীর সুউচ্চ মর্যাদা ও মাহাত্ম্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে নবী করিম (সা.) ঘোষণা করেন, 'সৎ ও ন্যায়পরায়ণ ব্যবসায়ী (পরকালে) নবী, সিদ্দিকিন ও আল্লাহর পথে জীবন বিসর্জনকারী শহীদদের সঙ্গী হবে।'(তিরমিজি শরিফ, হাদিস নং-১২০৯)। আমরা মানুষ। আমাদের মধ্যে যেমন মানবিকতা আছে, তেমনি মন্দ স্বভাবও আছে। আর চাঁদাবাজি, দালালি, ছিনতাই, মানুষের ধন-সম্পদ অবৈধভাবে দখল করা, কারও অধিকার কেড়ে নেয়া ইত্যাদি হলো পশুর স্বভাব। পবিত্র কোরবানির ঈদে আমরা পশু কোরবানি করে থাকি; নিজের মধ্যে থাকা পশুর স্বভাব কোরবানি করি না। তাই আমাদের সমাজ থেকে অন্যায়-অবিচার দূর হয় না। যদি পশু কোরবানির সঙ্গে সঙ্গে আমরা পশুত্বের কোরবানি করতে পারি, তাহলে আমাদের সমাজ হবে সুখময়, শান্তিময় ও আনন্দময়। কোরবানির পশুর হাট এমনিতেই হয়ে যাবে চাঁদাবাজ ও দালালমুক্ত।--আলোকিত বাংলাদেশ

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়