Friday, August 15

আমি প্রধানমন্ত্রী নয়, প্রধান সেবক: মোদি


কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক: প্রতিবেশীদের প্রথম দিন থেকেই গুরুত্ব দিয়ে আসছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আজ ১৫ আগস্ট শুক্রবার ভারতের ৬৮তম স্বাধীনতা দিবসে লাল কেল্লা থেকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেওয়া প্রথম ভাষণে সেই গুরুত্বের নজির রেখে তিনি বলেন, ‘সার্কের সবাই মিলে আমরা অন্তত দারিদ্র্য দূরীকরণের চেষ্টা করতে পারি। এই সমস্যা আমাদের সবার।’ তিন দিন আগে কাশ্মীর গিয়ে পাকিস্তানের উদ্দেশে মোদি বলেছিলেন, সম্মুখ সমরে জিততে পারবে না বলেই ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তান ছায়া যুদ্ধ করছে। আজ নাম না করে সেই পাকিস্তানের উদ্দেশে বললেন, সংঘাতে না গিয়ে শান্তির পথে থাকাই শ্রেয়। মোদি বলেন, ‘সংঘাত কেন? আমরা তো একই সঙ্গে স্বাধীনতার লড়াই লড়েছি।’ পূর্বসূরিদের তুলনায় মোদির এই ভাষণ অনেক দিক থেকেই ছিল অন্য রকম। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর পর মোদির এই ভাষণ দ্বিতীয় দীর্ঘতম। এই প্রথম কোনো প্রধানমন্ত্রীকে লিখিত ভাষণ পাঠ করতে দেখল না দেশবাসী। ইন্দিরা গান্ধী নিহত হওয়ার পর লাল কেল্লায় প্রধানমন্ত্রীকে তিন দিক দিয়ে ঘিরে রাখা হতো একটি বুলেটপ্রুফ ঘেরাটোপ দিয়ে। মোদি তা হটিয়ে দিলেন। ফি বছর এই অনুষ্ঠানে শুধু আমন্ত্রিতরাই আসতেন। মোদির নির্দেশে সাধারণকেও আসার অনুমতি দেওয়া হলো এই প্রথমবার। এলেন অন্তত ১০ হাজার আম আদমি। মোদির পরনে ছিল হাফ হাতা ক্রিম রঙের পাঞ্জাবি ও পায়জামা। সেই সঙ্গে পরেছিলেন গেরুয়া রঙের একটা প্রিন্টেড পাগড়ি, যার নিচের দিকটায় ছিল সবুজ প্রিন্ট। অর্থাৎ, সচেতনভাবেই মোদির শরীরে এদিন ছিল তে-রঙার ছাপ। ভোটের পরে তিনি বারবার যে কথা বলে এসেছেন, আজ সে কথাই তিনি মনে করিয়ে দেন। বলেন, ‘আমি সবাইকে নিয়ে ঐকমত্যের ভিত্তিতে দেশ চালাতে চাই। মানুষ আমাদের পক্ষে রায় দিয়েছেন বলে নিজের ইচ্ছেমতো দেশ চালাব না।’ আর বলেন, ‘আমি নিজেকে দেশের প্রধানমন্ত্রী মনে করি না। মনে করি আমি দেশের প্রধান সেবক।’ মোদি-রাজত্বে দেশের বিভিন্ন অংশে সাম্প্রদায়িকতা মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় জাতির প্রতি ভাষণে গতকাল বৃহস্পতিবার তার উল্লেখও করেন। তিনি বলেছিলেন, যত উন্নতিই হোক, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি না থাকলে দেশ এগোতে পারবে না। মোদির ভাষণে তারই প্রতিফলন দেখা গেল। বললেন, জাতি ও সম্প্রদায়ের দাঙ্গা বন্ধ রাখার সময় এসেছে। দেশের যোজনা কমিশনের (পরিকল্পনা কমিশন) দিন যে ফুরিয়েছে, স্পষ্ট করে সে কথাও জানিয়ে দিয়ে তিনি বললেন, যোজনা কমিশনের জায়গায় নতুন একটা সংস্থা শিগগিরই জন্ম নেবে। গ্রামীণ উন্নয়নের মধ্য দিয়ে দেশের উন্নতিতে তিনি সাংসদদের নতুন দায়িত্ব দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। সেই দায়িত্ব হলো প্রত্যেক সাংসদকে নিজেদের নির্বাচনী এলাকায় একটি করে আদর্শ গ্রাম তৈরি করতে হবে। পরে এই দায়িত্ব বিধায়ক স্তরেও ছড়িয়ে দেওয়া হবে। দেশের প্রত্যেক মানুষের জন্য ব্যাংক অ্যাকাউন্ট দেওয়ার প্রয়োজনীয়তাও তিনি উপলব্ধি করেছেন। এই প্রকল্পের নাম দিয়েছেন ‘জন ধন প্রকল্প’। ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যেতে উন্নত দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনারা এ দেশে আসুন। উৎপাদন করুন। যেখানে খুশি বেচুন। আমাদের দক্ষ ও প্রতিভাবান শ্রমিক রয়েছে।’ প্রধানমন্ত্রীর এই ভাষণে অবশ্য দুর্নীতি নিয়ে একটি শব্দও উচ্চারিত হয়নি। যদিও তিন দিন আগে কাশ্মীরে গিয়ে নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, ‘না ম্যায় খাউঙ্গা, না কিসিকো খানে দুঙ্গা।’ অর্থাত্, ‘নিজে দুর্নীতি করব না, কাউকে করতেও দেব না।’

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়