গোপালগঞ্জ: কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে থাকা বঙ্গবন্ধুর দণ্ডপ্রাপ্ত খুনীদের দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা অব্যাহত থাকলেও ‘কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় ধীরগতি’র কারণে তা বিলম্বিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।
শুক্রবার জাতীয় শোক দিবসের সকালে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধে শ্রদ্ধা জানানোর পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে একথা বলেন তিনি।
একই অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর খুনীদের দেশে ফিরিয়ে আনতে জাতিসংঘের মহাসচিব বানকি মুনের সহায়তা চেয়েছেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম।
সৈয়দ আশরাফ বলেন, “বঙ্গবন্ধুর খুনীদের ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা আমাদের পক্ষ থেকে অব্যাহত আছে। ডিপ্লোমেসিতে অনেক কিছু ধীর গতিতে হয়। তবে আমরা সময়মত তাদের হাতের নাগালে পাব।”
যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা বঙ্গবন্ধুর খুনীদের ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে ‘দ্বৈতনীতি’ গ্রহণ করেছে মন্তব্য করেন দলের এই মুখপাত্র।
“আমেরিকা ও কানাডা মানবতার দোহাই দিয়ে অনেক সময় অনেক কিছু বলে। আপনারা জানেন, আমেরিকায় নিয়মিত মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হচ্ছে।
“আপনারা শুনেছেন, কয়দিন আগে আড়াই ঘণ্টা ধরে একজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশের বেলায় মানবতা, গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের কথা বলে তারা হস্তক্ষেপ করছে। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনীদের তারা আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছে।”
শেখ ফজলুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, “এতবড় জঘন্য হত্যাকাণ্ড পৃথিবীর আর কোনো দেশে হয়নি। সেদিন বঙ্গবন্ধুর সাথে শিশু ও মহিলাদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল।
“ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড যারা ঘটিয়েছে তাদের কারোরই আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া উচিত না। যারা গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিয়ে বড় বড় কথা বলে তারাই তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছে।”
যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার প্রতি ইঙ্গিত করে সেলিম বলেন, “তারা গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসন রক্ষার কথা বলে খুনীদের রক্ষা করছে।
“আমেরিকা ও কানাডা যদি সত্যিকারের গণতন্ত্র ও মানবাধিকারে বিশ্বাস করে তাহলে অবিলম্বে তাদের দেশে থাকা বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করা উচিত।”
১৯৭৫ সালের এই দিনে সেনাবাহিনীর একদল কর্মকর্তা ও সৈনিকের হাতে সপরিবারে জীবন দিতে হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতা ও তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবকে। ঘাতকের গুলি থেকে রেহাই পায়নি তার পরিবারের ছয় বছরের শিশু থেকে শুরু করে অন্তঃসত্ত্বা নারীও।
৩৯ বছর আগে সেই রাতে ঘাতকরা বঙ্গবন্ধু ছাড়াও স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব, তিন ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেল, শেখ কামালের স্ত্রী সুলতানা কামাল, শেখ জামালের স্ত্রী রোজী জামাল, বঙ্গবন্ধুর ছোট ভাই শেখ নাসেরকে হত্যা করে।
সেই রাতেই নিহত হন বঙ্গবন্ধুর বোনের স্বামী আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার ছেলে আরিফ, মেয়ে বেবী ও শিশুপৌত্র সুকান্ত বাবু; বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে যুবনেতা শেখ ফজলুল হক মণি, তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মণি, নিকটাত্মীয় শহীদ সেরনিয়াবাত ও রিন্টু।
ধানমণ্ডির বাড়িতে পুলিশের বিশেষ শাখার সাব ইন্সপেক্টর সিদ্দিকুর রহমান ও নিরাপত্তা কর্মকর্তা কর্নেল জামিলকেও গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়।
নানা চড়াই-উৎড়াই পেরিয়ে আইনি প্রক্রিয়া শেষে ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি আপিল বিভাগে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের খুনীদের মৃতুদণ্ডের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। পরদিন খুনী সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, মুহিউদ্দিন আহমদ (আর্টিলারি), বজলুল হুদা ও একেএম মহিউদ্দিনের (ল্যান্সার) ফাঁসির রায় কার্যকর হয়।
মৃত্যুদণ্ড পাওয়া বাকি সাতজনের মধ্যে এম রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে, এস এইচ এম বি নূর চৌধুরী কানাডায় আছেন। আব্দুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম, মোসলেমউদ্দিন ও আব্দুল মাজেদ অবস্থান পরিবর্তন করে বিভিন্ন দেশে আছেন। আর আব্দুল আজিজ পাশা পলাতক অবস্থায় জিম্বাবুয়েতে মারা গেছেন।
(ঢাকাটাইমস/
খবর বিভাগঃ
রাজনীতি

0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়