Monday, March 31

ফ্লাডলাইট লজ্জায় সাঙ্গ হল চট্টগ্রামের বিশ্বকাপ

চট্টগ্রাম: ‘চার ছক্কা হৈ হৈ বল গড়াইয়া গেল কই’ এমন জম্পেশ গানের সঙ্গে জনসম্মুখে যখন তখন ‘ফ্ল্যাশ মব’ এর হৈ হুল্লোড় আর উন্মাদনার সাঙ্গ হচ্ছে আজ। শ্রীলংকা-নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার অনুষ্ঠিত ম্যাচটি দিয়ে পর্দা নামছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ চট্টগ্রাম পর্বের। এরই মধ্য দিয়ে ১২ মার্চ প্রস্তুতি ম্যাচ দিয়ে শুরু হওয়া দেশী-বিদেশী খেলোয়াড় দর্শক ও সাংবাদিকদের মিলনমেলাও ভাঙলো। সেই সাথে ভাঙলো রঙ্গিন পোষাকের ২২ গজের ক্রিকেট যুদ্ধ, সমর্থকদের আনন্দ উল্লাস আর হৈ হুল্লোড়। চিন্তার বলিরেখা মুক্ত হলো আইসিসি-বিসিবিসহ স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা। হাফ ছেড়ে বাঁচার উপায় পাচ্ছেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরাও। তবে সফল আয়োজনে কালিমা লাগিয়েছে বারবার ম্যাচ চলাকালে ফ্লাড লাইট নিভে যাওয়ার লজ্জা।
বিশ্বকাপের বাংলাদেশ দলের পয়মন্ত ভেন্যু চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে মুশফিকরা এবার দর্শকদের আনন্দ জোয়ারে ভাসাতে না পারলেও ওই মাঠে খেলা অন্য দেশগুলোর খেলায় মুগ্ধ হয়েছেন চট্টগ্রামের দর্শকরা।

প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের নেপালের বিপক্ষে বিশাল জয়ের আনন্দ দু’দিনের মাথায় মিলিয়ে যায় হংকং লজ্জায়। হংকংয়ের সঙ্গে পরাজয়ে বেদনাহত করেছে দর্শকদের। তবু চট্টগ্রাম থেকেই বাংলাদেশ মূল পর্বের টিকিট পেয়েছিল এটিই একমাত্র সান্ত্বনা।

এরপরও এই কদিন বিশ্বকাপে বুঁদ হয়ে ছিল নগরবাসী। ১৫ দিনের বিশ্বকাপ পর্বের বাছাই পর্বেও ম্যাচ নেপাল ও হংকং এর ম্যাচ দিয়ে উৎসবের আমেজ হয়ে শেষটা হয় মূল পর্বের শ্রীলংকা আর নিউজিল্যান্ডের ম্যাচের মধ্যে দিয়ে। এরই সাথে সাঙ্গ হল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ বাংলাদেশ এর চট্টগ্রাম অধ্যায়।

তবে বিশ্বকাপের চট্টগ্রাম পর্বের অর্জনের খাতায় ফ্লাড লাইট লজ্জায় চট্টগ্রামবাসীকে ডুবালেও কিছু কিছু ক্রিকেটীয় রেকর্ড রেকর্ড বুকে স্থান করে দেবে চট্টগ্রামকে। সিলেটে কমলা রং ছড়িয়ে কোন এক ডাচ রূপকথার জন্ম দেওয়া নেদারল্যান্ডস চট্টগ্রামে এসে শ্রীলঙ্কান থাবায় ভূপাতিত হওয়া, ইংলিশ ব্যাটসম্যান অ্যালেক্স হেলসের রেকর্ড গড়া শতক, আহসান মালিকের পাঁচ উইকেট। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হল্যান্ড ৩৯ রানে অলআউট হয় এই মাঠেই।

ইংল্যান্ড-শ্রীলঙ্কা ম্যাচে শ্রীলঙ্কার দেয়া ১৮৯ রান তাড়া করতে গিয়ে প্রথম ওভারে দুই উইকেট হারিয়ে ফেলা ইংলিশরা চার বল বাকি থাকতেই ম্যাচটি জিতে যায়। সেটি অ্যালেক্স হেলসের ব্যাটে ভর করে। তিনি এই বিশ্বকাপের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান। ৬৪ বলে অপরাজিত ১১৬ ইনিংসটি তাঁর ব্যক্তিগত প্রথম শতকও। এটি হয়েছে এই জহুর আহমেদে চৌধুরী স্টেডিয়ামে।

আর ডেইল স্টেইনের গতির ঝড় তোলা সেই ম্যাচটির কথা তো মনে রাখবেই ক্রিকেটামোদীরা। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ ওভারে অবিশ্বাস্য বোলিংয়ের কথা। শেষ ওভারে পাঁচ ইউকেট হাতে নিয়ে সাত রান দরকার ছিল কিউইদের। এই অবস্থায় দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে বল হাতে গতির ঝড় তুললেন ডেইল স্টেইন।  আর প্রথম তিন বলে কোনো রান দিলেন না তিনি। তিনটি উইকেটও গেল ওই ওভারে। শেষ পর্যন্ত চার রান তুলতে সক্ষম হলো নিউজিল্যান্ড। গতির ঝড় তুলে জিতিয়ে দিল দলকে। এসব উত্তেজনাকর মুহূর্তই তো ক্রিকেটের প্রাণ। এই কারণেই কি স্মরণীয় হয়ে থাকবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ক্রিকেটের চট্টগ্রাম পর্ব?

তবে পুলিশ প্রশাসন ও বিসিবি, সেনাবাহিনী, সিটি কর্পোরেশনসহ বিভিন্ন সেবাধর্মী সংস্থার অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে বিশ্বকাপ চট্টগ্রামপর্ব সম্পন্ন হলেও  হুটহাট ফ্লাড লাইট নিভে যাওয়ার লজ্জায় ডুবিয়েছে চট্টগ্রামকে।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আয়োজনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে আলোকিত করার প্রচেষ্ঠায় বারাবার বাধা হয়ে দাড়াচ্ছে চট্টগ্রামের জহরু আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম। সফল বিশ্বকাপ আয়োজনের পথে এগিয়ে চলা আলোকিত বাংলাদেশকে অন্ধকার গলিতে নিয়ে যাচ্ছে বারবার ফ্লাড লাইটের বিদ্যুৎ বিভ্রাট। আর এই কাজে মূল ভিলেনের ভূমিকায় কাজ করছে বিসিবি’র প্রভাবশালী দু’কর্মকর্তাদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের সরবরাহকারী একটি জেনারেটর! প্রতিষ্ঠানটির নাম হচ্ছে ওমনি পাওয়ার। আর এটির সত্ত্বাধিকারী হচ্ছেন বিসিবি’র পরিচালক আকরাম খান ও প্রধান নির্বাচক ফারুক খান। এমনি পাওয়ারের চেয়ারম্যান হচ্ছেন আকরাম খানের স্ত্রী সাবিনা আকরাম আর পরিচালক হচ্ছেন নির্বাচক ফারুক খান।

শনিবার অনুষ্ঠিত দিনের দ্বিতীয় ম্যাচ ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটি অল্প সময়ের ব্যবধানে দুই বার ফ্লাড লাইট নিভে গেলে প্রায় ২৫ মিনিট খেলা বন্ধ রাখতে হয়। বার বার মাঠ ছেড়ে সাজঘরে ফেরেন মরণপণ যুদ্ধে নামা দুই দলের খেলোয়াড়রা এবং আম্পায়াররাও।
  
এর আগে একই ভেন্যুতে শ্রীলঙ্কা ও নেদারল্যান্ডসের মধ্যকার ম্যাচটিও একই দুর্ঘটনা কবলিত হয়। খেলা বন্ধ রাখতে হয় প্রায় ১০ মিনিট। তারও আগে এর আগে গত ১২ মার্চ আফগানিস্তান-নেদারল্যান্ডসের প্রস্তুতি ম্যাচ চলাকালীন দু’দফা বিদ্যুৎ বিভ্রাটের বন্ধ হয়ে যায় ফ্লাডলাইট। এর মধ্যে দ্বিতীয় দফায় দিনের আলো কম থাকায় প্রায় ২০ মিনিট খেলা বন্ধ রাখা হয়।

সফররত অনুর্ধ্ব ১৯ ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দলের টিম হোটেলের সামনে ককটেল আতঙ্কের কারণে সফর বাতিল করে দেশে ফিরে যাওয়ার লজ্জা থেকে বাঁচাতে এবার বিশ্বকাপে ক্রিকেটারদের যাতায়াতের রাস্তাসহ স্টেডিয়ামকে ঘিরে গড়ে তোলা হয়ে ছিল পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা বলয়। ফলে টানা ষোল দিন নগরী ছিলো অতিরিক্ত নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে।

নগর পুলিশের সিনিয়র সহকারি কমিশনার দীপক জ্যোতি খাসী বলেন, ‘খেলা উপলক্ষে পুরো নগরী ছিলো নিরাপত্তা বলয়ে আবদ্ধ। সাথে ছিল এন্টি-টেরোরিজম ইউনিট সোয়াতের প্রশিক্ষিত পুলিশ বাহিনী। নগরজুড়ে বিশ্বকাপ উপলক্ষে মোতায়ন ছিল আড়াই হাজার সদস্য।’

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, খেলার আয়োজনকে ঘিরে নগর পুলিশের উপ-কমিশনার পদ মর্যাদার ৬ জন, অতিরিক্ত উপ-কমিশনার পদমর্যাদার ১১ এবং সহকারী পুলিশ কমিশনার পদমর্যাদার ১৫ জন কর্মকর্তা নিরাপত্তার নেতৃত্বে দেন। পুরো বিষয়টি মনিটরিং করেছেন নগর পুলিশের দু’জন অতিরিক্ত কমিশনার।

বাংলামেইল২৪ডটকম/

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়