Wednesday, February 12

মাছ ও সব্জী চাষে সফল উদ্যমী এক নারীর গল্পগাঁথা

আমতলী (বরগুনা): বছরটা ১৯৯৭। নাজমীনের বিয়ে হয় আমতলী উপজেলার চলাভাঙ্গা গ্রামের হাবিব চৌকিদার এর সাথে। বিয়ের ৪ বছরের মাথায় তাদের সংসারে আসে একটি পুত্রসন্তান। স্বামী হাবিব চৌকিদার পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত জমিতে হাল চাষ করে যে ফসল পান তাতে তাদের সংসার চলে না।
বাড়ির যৌথ পুকুরে মাছ চাষ হয় না। ফলে পরিবারের আয় বৃদ্ধির জন্য ২০০৮ সনে রাস্তার পাশের নিজস্ব ২৬ শতক জমিতে পুকুর খনন করে মাছ চাষের উদ্যোগ নেন। সাথে সাথে স্বামীকে দিয়ে পুকুর পাড়ে একটি দোকান করে ক্ষুদ্র ব্যবসা শুরু করেন। 
পাড়া প্রতিবেশীর কাছ থেকে শুনে ও নিজের ধারণা অনুযায়ী পুকুরে মাছ আর পাড়ে সীমিত আকারে সব্জী চাষ  করেন। ভেবেছিলেন পুকুরে অনেক মাছ হবে-নিজে খাবেন, আতœীয়-স্বজন কে দিবেন, বেশী হলে বাজারে বিক্রিও করবেন। কিন্তু না সব্জী মোটামুটি হলেও মাছের স্বাদ তেমন একটা নিতে পারেন নাই। এভাবে চলে ৩-৪ বছর। কোডেকের মাধ্যমে ২০১২ সনে ইউএসআইডি এর অর্থায়নে এআইএন প্রকল্পের বাণিজ্যিক প্রদর্শনী চাষী হিসাবে অন্তর্ভুক্ত হয়ে নাজমীন  তার স্বামী হাবিব চৌকিদার কে নিয়ে নিয়মমাফিক পুকুরে মাছ ও পাড়ে সব্জী চাষ শুরু করেন।
 প্রকল্প থেকে ওয়ার্ল্ডফিশের কারিগরি বিশেষজ্ঞগণের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় এবং বলা হয় যে সকল কাজ অবশ্যই সঠিকভাবে করতে হবে, কোন কাজে অবহেলা করা যাবে না। নাজমীনের  প্রত্যয় ছিল মাছ ও সব্জী চাষের কোন কাজই প্রকল্পের পরামর্শের বাইরে করবেন না। কারণ নিজের মতে মাছ ও সব্জী চাষ করে কোন সফলতার মুখ দেখছিলেন না।
 অতএব এবার তার আন্তরিক ইচ্ছা ছিল যে কোন প্রকারেই হোক সফল তাকে হতেই হবে।
ওয়ার্ল্ডফিশ ও কোডেকের উন্নয়ন কর্মীদের পরামর্শ মোতাবেক পোনা ক্রয়, পরিবহন, মজুদ ও খাদ্য প্রদান ইত্যাদি সকল কাজই যথারীতি করেছেন নাজমীন আপা। শুরুতেই গুণগতমানের ও বড় সাইজের পোনা মজুদ করেছেন, পোনা ক্রয় করেছিলেন এআইএন প্রকল্পের নার্সারার জব্বার প্যাদার নিকট থেকে-সিলভার, কাতলা, রুই, মৃগেল, গ্রাসকার্প, মিরর কার্প ও পুঁটি এই ৭ প্রজাতির পোনা মজুদ করেছিলেন- এআইএন প্রকল্পের নার্সারার জব্বার প্যাদার পোনাগুলিও ছিল নাজমীনের জন্য এক আর্শীবাদ। মাসে একবার কিছু মাছের ওজন নিয়ে নমুনায়ন করে খাবার নির্ধারণ করেছেন ও সে অনুপাতে সকাল বিকাল খাবার প্রদান করেছেন। এসব কিছুই ছিল তার কাছে নতুন-মাছ চাষ করতে এত নিয়মকানুন মানতে হয় তা তার মোটেই জানা ছিল না।
 সব্জী চাষের ক্ষেত্রেও ছিল তার ব্যাপক সতর্কতা। বীজের জাত ও বীজ নির্বাচন থেকে শুরু করে মাদা তৈরি, বীজ রোপন, পরিচর্যা সকল কাজই তিনি করেছেন প্রকল্পের পরামর্শ মাফিক। মাত্র ৮ মাসে ২৬ শতাংশের পুকুর থেকে ১২৯৯ কেজি মাছ আহরণ করেন নাজমীন আপা যা কখনও তিনি কল্পনাও করতে পারেন নাই। অথচ এই পুকুরটিতেই ৩-৪ বছর মাছ চাষ করেছেন নিজের মত করে আর তখন উৎপাদন পেয়েছেন মাত্র ২০০-৩০০ কেজি। মাছ ও সব্জী চাষে ১,১৫,০০০- টাকা খরচের বিপরীতে ৬৫,০০০ টাকার সব্জী এবং ১,৯৮,০০০ টাকার মাছ বিক্রি করেন। মোটের উপর লাভ হয় ১,৪৮,০০০ টাকা।
২০১৩ সনেও নাজমীন তার পুকুরে মাছ চাষ করছেন এআইএন প্রকল্পের তত্ত্বাবধানে। নাজমীনের আশা এ বছর তিনি গতবারের চেয়েও বেশী উৎপাদন পাবেন। মাছ চাষের লাভ দিয়ে স্বামী হাবিব চৌকিদার গতবছর তাকে বেশ কিছু জমিও কিনে দিয়েছেন। আর সাথে সাথে স্বামীর দোকানখানাও বড় করেছেন। তিন ছেলে সাইফুল, মেহেদী ও নাফি কে নিয়ে সুখেই আছেন নাজমীনও তার পরিবার ।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়