ঢাকা : নির্বাচনের সময় সর্বদলীয় মন্ত্রিসভা গঠনের ঘোষণা দিয়ে বিরোধীদলের সদস্যদের নাম চাইলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শুক্রবার জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে তিনি বলেন, “আমরা সকল দলকে সঙ্গে নিয়েই জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে চাই। এ বিষয়ে বিরোধীদের কাছে পরামর্শও চেয়েছেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, “বিরোধীদলের কাছে আমার প্রস্তাব, নির্বাচনকালীন সময়ে আমরা সকল দলের সমন্বয়ে সরকার গঠন করতে পারি। আমাদের লক্ষ্য অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন। শান্তিপূর্ণ নির্বাচন।”
এ জন্য বিরোধী দলের সদস্যদের নাম চেয়ে তিনি বলেন, “তাই আমি বিরোধী দলের কাছে প্রস্তাব করছি যে, বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকেও আপনারা নাম দিতে পারেন যাদেরকে আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে মন্ত্রিসভায় সদস্য করে সর্বদলীয় সরকার গঠন করতে পারি।
“নির্বাচনে যাতে কারো কোন সন্দেহ না থাকে, সকল সন্দেহ দূর করে আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে পারি যে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ ভোট দিয়ে তাদের মনমতো সরকার গঠন করতে পারবে।”
বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়া তার এই প্রস্তাবে ইতিবাচক সাড়া দেবেন বলেও আশাপ্রকাশ করেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “আমি বিরোধী দলের নেতাকে অনুরোধ করছি যে, তিনি আমার এই ডাকে সাড়া দিবেন। আমার এ অনুরোধ তিনি রক্ষা করবেন এবং আমাদের যে সদিচ্ছা সেই সদিচ্ছার মূল্য তিনি দিবেন।”
এক এগারোর মতো কোনো অসাংবিধানিক শাসনের পুনরাবৃত্তি জনগণ চায় না বলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দাবি করেছেন।
সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে প্রধানমন্ত্রীর এই ভাষণ সম্প্রচার করা হয়।
ভাষণের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশ্যে ঈদ ও পূজা ও প্রবারণা পূর্ণিমার শুভেচ্ছা জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার গণতন্ত্রকে একটি সুদৃঢ় এবং প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তির উপর দাঁড় করাতে বদ্ধপরিকর। গণতন্ত্র তখনই শক্তিশালী হবে যখন তা সাংবিধানিক ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হবে, জনগণের ভোটে নির্বাচিত গণপ্রতিনিধিরা রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন।”
২০০৭ সালের সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ের কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “১/১১-এর মতো কোনো তত্ত্বাবধায়ক সরকার যখন জগদ্দল পাথরের মতো জনগণের বুকের উপর চেপে বসে তখন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, শিক্ষক-ছাত্র-পেশাজীবী, ব্যবসায়ীসহ সবার উপর নেমে আসে নির্মম নির্যাতন। এধরণের অসাংবিধানিক শাসনের পুনরাবৃত্তি আর কখনোই হবেনা- এটাই সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা।”
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের বড় এক পট পরিবর্তনে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি দেশে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। সেনা সমর্থন নিয়ে ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ প্রধান হিসাবে দায়িত্ব নেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফখরুদ্দীন আহমদ।
তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থাকলেও ওই সরকার ক্ষমতায় থাকে দুই বছর। সে সময় দুর্নীতির মামলায় বহু রাজনৈতিক নেতা ও ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এক পর্যায়ে গ্রেপ্তার হন শীর্ষ দুই নেত্রী শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াও।
শেষ পর্যন্ত ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে দেশে গণতন্ত্র ফেরে।
তার পাঁচ বছর পর দশম সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উদ্বেগ আশঙ্কার মধ্যেই জাতির উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রীর এই ভাষণ।
তার এই ভাষণে সরকারের গত পাঁচ বছরের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক পদক্ষেপের পাশাপাশি আগামী নির্বাচন নিয়ে দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নব্বই দিনের মধ্যে যাতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় সেজন্য সকল দলের সাথে, বিশেষ করে মহাজোটের সাথে পরামর্শ করে রাষ্ট্রপতিকে যথাসময়ে লিখিত পরামর্শ দেওয়ার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “এক্ষেত্রে আমি বিরোধী দলের কাছেও পরামর্শ আশা করি।”
সংবিধান অনুযায়ী ২৫ অক্টোবর থেকে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথাও তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী সংবিধানের ৭২(১) অনুচ্ছেদ পড়ে শোনান।
এছাড়াও তিনি সংবিধানে ১২৩(৩) অনুচ্ছেদও উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে জয়লাভ করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি সরকার গঠন করে। ২৫ জানুয়ারি বর্তমান সংসদের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সংবিধানের ১২৩ (৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ২৫ অক্টোবর থেকে নব্বই দিনের হিসাব শুরু হবে।
সংবিধানের ৭২ অনুচ্ছেদের ১ দফা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির কাছে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া লিখিত পরামর্শ অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথাও বলেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, “মানুষের কল্যাণ, সমৃদ্ধি ও উন্নত জীবনই আমার জীবনের একমাত্র কাম্য। আসুন, সংঘাতের পথ পরিহার করে সমঝোতার মাধ্যমে মানুষের কল্যাণ করি। তাই, শান্তির পথে আসুন।”
বিরোধীদলকে উদ্দেশ্য করে শেখ হাসিনা আরো বলেন, “তাই আসুন, দেশ ও জাতির কল্যাণের স্বার্থে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে আরো সুদৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করি।”
“যাতে আমাদের তরুণ প্রজন্ম একটি সুন্দর সমাজ পায়। একটি সুন্দর সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ আমরা সকলে মিলে গড়ে তুলতে পারি।”
বিরোধীদলীয় নেতাকে ধ্বংসাত্মক রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসার আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বোমা মেরে, আগুন জ্বালিয়ে জনগণের জান-মালের ক্ষতি করবেন না। কোরান শরীফ পুড়িয়ে, মসজিদে আগুন দিয়ে ইসলাম ধর্মের অবমাননা করা বন্ধ করুন। মাদ্রাসায় বোমা তৈরির কাজে ব্যবহার করতে এতিম বাচ্চাদের লাশ বানানো বন্ধ করুন।”
ইসলামকে শান্তির ধর্ম হিসাবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “ইসলাম কখনোই সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের অনুমোদন দেয়না। যারা নির্দোষ মানুষকে ধর্মের নামে হত্যা করে তাদের চূড়ান্ত ঠিকানা হবে দোজখ।”
“কাজেই, ছুরি, দা, খুন্তা, কুড়াল নিয়ে মানুষ মারার নির্দেশ প্রত্যাহার করার জন্য আমি বিরোধীদলীয় নেতার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি”, যোগ করেন সরকার প্রধান।
বিরোধীদলের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন, “জনতার উপর আস্থা রাখুন, সন্ত্রাসের পথ পরিহার করুন। আপনারা কি চান তা সংসদে এসে বলুন। আলোচনা করুন। আলোচনার দরজা সবসময় আমাদের পক্ষ থেকে উন্মুক্ত আছে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বিরোধীদলীয় নেত্রীকে আমি সংলাপে ডেকেছিলাম। দুঃখের বিষয় তার জবাবে তিনি আলটিমেটাম দিয়ে বললেন, ৪৮ ঘন্টার মধ্যে আমাকে ক্ষমতাচ্যুত ও দেশছাড়া করবেন।”
নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে জাতীয় সংসদে বিএনপি’র মূলতবী প্রস্তাব দিয়েও তা প্রত্যাহার করে দেওয়ার কথাও প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় উল্লেখ করেন বলেন, “প্রয়োজনে আবারো মুলতবী প্রস্তাব দিন জাতীয় সংসদে এবং সুস্পষ্টভাবে বলুন আপনারা কি চান?”
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের সময়ে জাতীয় সংসদের উপ-নির্বাচন থেকে শুরু করে স্থানীয় সরকার পর্যায়ে হয়ে যাওয়া পাঁচ হাজার ৭৭৭টি নির্বাচনের কথাও শেখ হাসিনা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সে সকল নির্বাচনে বিরোধীদলের অনেক প্রার্থী জয়লাভ করেছে।
“আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনও অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে ইনশাল্লাহ”, যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার সুশাসন প্রতিষ্ঠা করেছে। কঠোর হাতে জঙ্গীবাদ দমন করেছে। দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করেছে। আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির উন্নয়ন করেছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছে।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের শাসনামলে সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি’র নেতৃত্বে চারদলীয় জোট সরকারের আমলে দেশজুড়ে হত্যা-সন্ত্রাস-ধর্ষণ-লুটপাট-দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি দেশকে অন্ধকারের পথে ঠেলে দিয়েছিল।”
“সেই দুঃসহ দহন-জ্বালার আতংক মানুষকে এখনো তাড়া করে ফেরে। হাওয়া ভবন নামে সরকারের ভিতরে আরেকটি সরকার এদেশের মানুষ ভুলে যায়নি”
বিএনপির অপকর্মের কারণেই ১/১১ এসেছিলো বলেও প্রধানমন্ত্রী বলেন।
হত্যা-যজ্ঞের নির্দেশ প্রত্যাহার করে শান্তি ও ঐক্যের পথে আসতে বিরোধী দলীয় নেতার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “বোমা মেরে, আগুন জ্বালিয়ে জনগণের জান-মালের ক্ষতি করবেন না। কোরান শরীফ পুড়িয়ে, মসজিদে আগুন দিয়ে ইসলাম ধর্মের অবমাননা করা বন্ধ করুন। মাদ্রাসায় বোমা তৈরির কাজে ব্যবহার করতে এতিম বাচ্চাদের লাশ বানানো বন্ধ করুন। নিরীহ পথচারী আর গরিব বাস ড্রাইভারকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারা বন্ধ করুন। মানুষকে শান্তিতে থাকতে দিন।”
নির্দলীয় সরকার পদ্ধতি পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলনরত বিএনপি নেতারা ২৪ অক্টোবরের পর দেশ অচল করে দেয়ার হুমকি দিয়ে আসছেন।
এ দাবিতে ২৫ অক্টোবর রাজধানীতে জনসভার ঘোষণা দিয়ে সেদিন দা, কুড়ালসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে দলীয় কর্মীদের প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকা। বিরোধী দলীয় নেতাও ওই জনসভা করার সিদ্ধান্তে অনড়।
পাশাপাশি ‘সময় থাকতে’ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে দেশে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ তৈরি করার দাবি জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
আলোচনায় বসার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাষণে বলেন, বিএনপি’র পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কথা বলা হচ্ছে।
তিনি বলেন, “বিএনপির পক্ষ থেকে জাতীয় সংসদে মুলতবি প্রস্তাব দিলেন। যখন আলোচনায় আমরা রাজি হলাম সেই প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নিলেন। একবার বলছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, আরেকবার নির্দলীয়, আবার বলছেন হাসিনামুক্ত। নানা অবাস্তব কথা বলে যাচ্ছেন। মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন।”
সুস্পষ্ট প্রস্তাব দেয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “প্রয়োজনে আবারো মুলতবি প্রস্তাব দিন জাতীয় সংসদে এবং সুস্পষ্টভাবে বলুন আপনারা কি চান।”---ডিনিউজ
শুক্রবার জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে তিনি বলেন, “আমরা সকল দলকে সঙ্গে নিয়েই জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে চাই। এ বিষয়ে বিরোধীদের কাছে পরামর্শও চেয়েছেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, “বিরোধীদলের কাছে আমার প্রস্তাব, নির্বাচনকালীন সময়ে আমরা সকল দলের সমন্বয়ে সরকার গঠন করতে পারি। আমাদের লক্ষ্য অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন। শান্তিপূর্ণ নির্বাচন।”
এ জন্য বিরোধী দলের সদস্যদের নাম চেয়ে তিনি বলেন, “তাই আমি বিরোধী দলের কাছে প্রস্তাব করছি যে, বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকেও আপনারা নাম দিতে পারেন যাদেরকে আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে মন্ত্রিসভায় সদস্য করে সর্বদলীয় সরকার গঠন করতে পারি।
“নির্বাচনে যাতে কারো কোন সন্দেহ না থাকে, সকল সন্দেহ দূর করে আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে পারি যে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ ভোট দিয়ে তাদের মনমতো সরকার গঠন করতে পারবে।”
বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়া তার এই প্রস্তাবে ইতিবাচক সাড়া দেবেন বলেও আশাপ্রকাশ করেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “আমি বিরোধী দলের নেতাকে অনুরোধ করছি যে, তিনি আমার এই ডাকে সাড়া দিবেন। আমার এ অনুরোধ তিনি রক্ষা করবেন এবং আমাদের যে সদিচ্ছা সেই সদিচ্ছার মূল্য তিনি দিবেন।”
এক এগারোর মতো কোনো অসাংবিধানিক শাসনের পুনরাবৃত্তি জনগণ চায় না বলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দাবি করেছেন।
সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে প্রধানমন্ত্রীর এই ভাষণ সম্প্রচার করা হয়।
ভাষণের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশ্যে ঈদ ও পূজা ও প্রবারণা পূর্ণিমার শুভেচ্ছা জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার গণতন্ত্রকে একটি সুদৃঢ় এবং প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তির উপর দাঁড় করাতে বদ্ধপরিকর। গণতন্ত্র তখনই শক্তিশালী হবে যখন তা সাংবিধানিক ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হবে, জনগণের ভোটে নির্বাচিত গণপ্রতিনিধিরা রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন।”
২০০৭ সালের সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ের কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “১/১১-এর মতো কোনো তত্ত্বাবধায়ক সরকার যখন জগদ্দল পাথরের মতো জনগণের বুকের উপর চেপে বসে তখন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, শিক্ষক-ছাত্র-পেশাজীবী, ব্যবসায়ীসহ সবার উপর নেমে আসে নির্মম নির্যাতন। এধরণের অসাংবিধানিক শাসনের পুনরাবৃত্তি আর কখনোই হবেনা- এটাই সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা।”
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের বড় এক পট পরিবর্তনে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি দেশে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। সেনা সমর্থন নিয়ে ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ প্রধান হিসাবে দায়িত্ব নেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফখরুদ্দীন আহমদ।
তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থাকলেও ওই সরকার ক্ষমতায় থাকে দুই বছর। সে সময় দুর্নীতির মামলায় বহু রাজনৈতিক নেতা ও ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এক পর্যায়ে গ্রেপ্তার হন শীর্ষ দুই নেত্রী শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াও।
শেষ পর্যন্ত ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে দেশে গণতন্ত্র ফেরে।
তার পাঁচ বছর পর দশম সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উদ্বেগ আশঙ্কার মধ্যেই জাতির উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রীর এই ভাষণ।
তার এই ভাষণে সরকারের গত পাঁচ বছরের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক পদক্ষেপের পাশাপাশি আগামী নির্বাচন নিয়ে দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নব্বই দিনের মধ্যে যাতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় সেজন্য সকল দলের সাথে, বিশেষ করে মহাজোটের সাথে পরামর্শ করে রাষ্ট্রপতিকে যথাসময়ে লিখিত পরামর্শ দেওয়ার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “এক্ষেত্রে আমি বিরোধী দলের কাছেও পরামর্শ আশা করি।”
সংবিধান অনুযায়ী ২৫ অক্টোবর থেকে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথাও তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী সংবিধানের ৭২(১) অনুচ্ছেদ পড়ে শোনান।
এছাড়াও তিনি সংবিধানে ১২৩(৩) অনুচ্ছেদও উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে জয়লাভ করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি সরকার গঠন করে। ২৫ জানুয়ারি বর্তমান সংসদের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সংবিধানের ১২৩ (৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ২৫ অক্টোবর থেকে নব্বই দিনের হিসাব শুরু হবে।
সংবিধানের ৭২ অনুচ্ছেদের ১ দফা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির কাছে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া লিখিত পরামর্শ অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথাও বলেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, “মানুষের কল্যাণ, সমৃদ্ধি ও উন্নত জীবনই আমার জীবনের একমাত্র কাম্য। আসুন, সংঘাতের পথ পরিহার করে সমঝোতার মাধ্যমে মানুষের কল্যাণ করি। তাই, শান্তির পথে আসুন।”
বিরোধীদলকে উদ্দেশ্য করে শেখ হাসিনা আরো বলেন, “তাই আসুন, দেশ ও জাতির কল্যাণের স্বার্থে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে আরো সুদৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করি।”
“যাতে আমাদের তরুণ প্রজন্ম একটি সুন্দর সমাজ পায়। একটি সুন্দর সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ আমরা সকলে মিলে গড়ে তুলতে পারি।”
বিরোধীদলীয় নেতাকে ধ্বংসাত্মক রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসার আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বোমা মেরে, আগুন জ্বালিয়ে জনগণের জান-মালের ক্ষতি করবেন না। কোরান শরীফ পুড়িয়ে, মসজিদে আগুন দিয়ে ইসলাম ধর্মের অবমাননা করা বন্ধ করুন। মাদ্রাসায় বোমা তৈরির কাজে ব্যবহার করতে এতিম বাচ্চাদের লাশ বানানো বন্ধ করুন।”
ইসলামকে শান্তির ধর্ম হিসাবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “ইসলাম কখনোই সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের অনুমোদন দেয়না। যারা নির্দোষ মানুষকে ধর্মের নামে হত্যা করে তাদের চূড়ান্ত ঠিকানা হবে দোজখ।”
“কাজেই, ছুরি, দা, খুন্তা, কুড়াল নিয়ে মানুষ মারার নির্দেশ প্রত্যাহার করার জন্য আমি বিরোধীদলীয় নেতার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি”, যোগ করেন সরকার প্রধান।
বিরোধীদলের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন, “জনতার উপর আস্থা রাখুন, সন্ত্রাসের পথ পরিহার করুন। আপনারা কি চান তা সংসদে এসে বলুন। আলোচনা করুন। আলোচনার দরজা সবসময় আমাদের পক্ষ থেকে উন্মুক্ত আছে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বিরোধীদলীয় নেত্রীকে আমি সংলাপে ডেকেছিলাম। দুঃখের বিষয় তার জবাবে তিনি আলটিমেটাম দিয়ে বললেন, ৪৮ ঘন্টার মধ্যে আমাকে ক্ষমতাচ্যুত ও দেশছাড়া করবেন।”
নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে জাতীয় সংসদে বিএনপি’র মূলতবী প্রস্তাব দিয়েও তা প্রত্যাহার করে দেওয়ার কথাও প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় উল্লেখ করেন বলেন, “প্রয়োজনে আবারো মুলতবী প্রস্তাব দিন জাতীয় সংসদে এবং সুস্পষ্টভাবে বলুন আপনারা কি চান?”
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের সময়ে জাতীয় সংসদের উপ-নির্বাচন থেকে শুরু করে স্থানীয় সরকার পর্যায়ে হয়ে যাওয়া পাঁচ হাজার ৭৭৭টি নির্বাচনের কথাও শেখ হাসিনা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সে সকল নির্বাচনে বিরোধীদলের অনেক প্রার্থী জয়লাভ করেছে।
“আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনও অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে ইনশাল্লাহ”, যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার সুশাসন প্রতিষ্ঠা করেছে। কঠোর হাতে জঙ্গীবাদ দমন করেছে। দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করেছে। আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির উন্নয়ন করেছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছে।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের শাসনামলে সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি’র নেতৃত্বে চারদলীয় জোট সরকারের আমলে দেশজুড়ে হত্যা-সন্ত্রাস-ধর্ষণ-লুটপাট-দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি দেশকে অন্ধকারের পথে ঠেলে দিয়েছিল।”
“সেই দুঃসহ দহন-জ্বালার আতংক মানুষকে এখনো তাড়া করে ফেরে। হাওয়া ভবন নামে সরকারের ভিতরে আরেকটি সরকার এদেশের মানুষ ভুলে যায়নি”
বিএনপির অপকর্মের কারণেই ১/১১ এসেছিলো বলেও প্রধানমন্ত্রী বলেন।
হত্যা-যজ্ঞের নির্দেশ প্রত্যাহার করে শান্তি ও ঐক্যের পথে আসতে বিরোধী দলীয় নেতার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “বোমা মেরে, আগুন জ্বালিয়ে জনগণের জান-মালের ক্ষতি করবেন না। কোরান শরীফ পুড়িয়ে, মসজিদে আগুন দিয়ে ইসলাম ধর্মের অবমাননা করা বন্ধ করুন। মাদ্রাসায় বোমা তৈরির কাজে ব্যবহার করতে এতিম বাচ্চাদের লাশ বানানো বন্ধ করুন। নিরীহ পথচারী আর গরিব বাস ড্রাইভারকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারা বন্ধ করুন। মানুষকে শান্তিতে থাকতে দিন।”
নির্দলীয় সরকার পদ্ধতি পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলনরত বিএনপি নেতারা ২৪ অক্টোবরের পর দেশ অচল করে দেয়ার হুমকি দিয়ে আসছেন।
এ দাবিতে ২৫ অক্টোবর রাজধানীতে জনসভার ঘোষণা দিয়ে সেদিন দা, কুড়ালসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে দলীয় কর্মীদের প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকা। বিরোধী দলীয় নেতাও ওই জনসভা করার সিদ্ধান্তে অনড়।
পাশাপাশি ‘সময় থাকতে’ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে দেশে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ তৈরি করার দাবি জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
আলোচনায় বসার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাষণে বলেন, বিএনপি’র পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কথা বলা হচ্ছে।
তিনি বলেন, “বিএনপির পক্ষ থেকে জাতীয় সংসদে মুলতবি প্রস্তাব দিলেন। যখন আলোচনায় আমরা রাজি হলাম সেই প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নিলেন। একবার বলছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, আরেকবার নির্দলীয়, আবার বলছেন হাসিনামুক্ত। নানা অবাস্তব কথা বলে যাচ্ছেন। মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন।”
সুস্পষ্ট প্রস্তাব দেয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “প্রয়োজনে আবারো মুলতবি প্রস্তাব দিন জাতীয় সংসদে এবং সুস্পষ্টভাবে বলুন আপনারা কি চান।”---ডিনিউজ
খবর বিভাগঃ
সারাদেশ
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়