Monday, October 7

আমবশ্যা-পূর্ণিমায় বিদ্যালয়টি অঘোষিত বন্ধ থাকে


ফেনী: জোয়ার আইলে আন্ডা ইস্কুলে কেলাশ অয়না। ইস্কুলের মাডে হানি উডে, খেইলতাময় হারিনা। ছারেরা ইস্কুলে আইয়ে- আবার ছলি যায়। (জোয়ার আসলে আমাদের স্কুলে ক্লাস হয়না। স্কুলের মাঠে পানি ওঠে, খেলতেও পারি না, স্যারেরাও স্কুলে আসেন- আবার চলে যায়)। ফেনীর সোনাগাজী উপজেলা উত্তর পশ্চিম চর দরবেশ কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র আনোয়ার হোসেন এভাবেই তাদের বিদ্যালয়ের চিত্র তুলে ধরেন।
আমবশ্যা আর পূর্ণিমায় প্রবল জোয়ারের ¯্রােতের পানিতে শুধু বিদ্যালয়ের মাঠ নয়, মাঝে মাঝে বিদ্যালয়ের শ্রেণি কক্ষেও পানি ঢোকে। সে কারনে প্রতি আমবশ্যা ও পূর্ণিমার জোয়ারের সময় বিদ্যালয়টি অঘোষিত ভাবে বন্ধ থাকে। বৃষ্টিতে টিনের ফুটোর ভেতর দিয়ে শ্রেণি কক্ষে পানি পড়ে। তাছাড়া বিদ্যালয়ের দরজা-জানালা ভাঙ্গা, আসবাবপত্রের সল্পতাসহ নানা সংকট  রয়েছে। 
ফেনীর সোনাগাজীতে সমুদ্র উপকুলীয় চর দরবেশ ইউনিয়নের উত্তর পশ্চিম চর দরবেশ কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি স্থাপনের পর গত ১৮ বছর এভাবেই শিক্ষক শিক্ষার্থীরা প্রকৃতির সাথে সংগ্রাম করে নিজেদের জয়ের প্রতাশায় মেতে উঠেছে। গত জানুয়ারিতে বিদ্যালয়টি বেসরকারী থেকে সরকারী করন করা হয়েছে। 
বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার চর দরবেশ ইউনিয়নের উত্তর পশ্চিম চর দরবেশ গ্রামের দুর্গম চরাঞ্চলে হতদরিদ্র মানুষের শিশুদের শিক্ষা বিস্তারের লক্ষে ১৯৯৫ সালে স্থানীয় বিদ্যুৎসাহী ব্যাক্তি দার বক্স মিয়া এলাকায় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহন করেন। তিনি বিদ্যালয়ের জন্য ৩৩ শতাংশ জমি দান করেন। সমাজের শিক্ষানুরাগী লোকজনের সহযোগীতায় তিন লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে সেখানে একটি আধাপাকা টিনসেড ভবন নির্মান করা হয়। একজন প্রধান শিক্ষকসহ চারজন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয় । বর্তমানে  বিদ্যালয়টিতে ১২৫ জন শিক্ষার্থী লেখাপড়া করে। গত জানুয়ারিতে বিদ্যালয়টি বেসরকারী থেকে সরকারী করন করা হয়েছে। 
বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী বিবি কুলসুম জানায়, বৃষ্টির সময় টিনের ফুটা দিয়ে পানি পড়ে বইখাতা নষ্ট হয়ে যায়। 
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনোজ কান্তি রায় বলেন, বিদ্যালয়ের ফলাফলও ভাল। গত বছর পিএসসি (প্রাথমিক স্কুল সার্টিফিকেট) পরীক্ষায় অংশ নিয়ে শত ভাগ পাশ করেছে।  মাঠে ও শ্রেণি কক্ষে জোয়ারের পানি ওঠা বন্ধ হলে নিয়মিত পাঠদানে কোন সমস্যা থাকবেনা।  
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মাহবুবল হক বলেন, উপকুলীয় অঞ্চলে এটি একমাত্র বিদ্যালয়। কিন্তু দীর্ঘ দিন বিদ্যালয়টিতে উন্নয়নের ছোয়া লাগেনি।  
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মহি উদ্দিন বলেন, তিনি জোয়ারের সময় পানি ওঠার বিষয় অবগত আছেন। ঝুকিপূর্ন  ভবনটি ভেঙ্গে সেখানে একটি নতুন ভবন নির্মানের জন্য সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষ বরাবরে চিঠি দেওয়া হয়েছে।---ডিনিউজ

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়