Thursday, August 22

ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দিতে পারেন অতনু!

:: আবদুল্লাহ মাহফুজ ::
অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাষ দেওয়া গেলেও ভূমিকম্পের বেলাতে তা সম্ভব হয় না৷ অর্থাৎ, আগমনী বার্তা ছাড়াই মানব সভ্যতাকে এই দুর্যোগের মোকাবিলা করতে হচ্ছে৷ বিজ্ঞানীরা বহুদিন ধরে ভূমিকম্পের আগমন টের পেতে চেষ্টা করছেন৷ তবে খুলনার এক যুবক দাবী করছেন তিনি ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দিতে পারেন!
নাহ এটা আধ্যাত্মিক ভাবে নয়, দীর্ঘ গবেষণার ফলেই তিনি নাকি ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দিতে পারছেন। বেশ জোড়ালো ভাবেই পরিবর্তনের কাছে এ দাবী জানিয়েছেন তিনি। এই বিস্ময়কর উদ্ভাবনের দাবীদার যুবকের নাম অতনু মন্ডল।
অতনুর ভাষ্যমতে, তার উদ্ভাবিত পদ্ধতি অবলম্বন করলে আগে ভাগেই জানা যাবে কোথায় ভূমিকম্প হবে। আগে ভাগে জেনে ফেলে সে অঞ্চলের মানুষ সরিয়ে ফেলা গেলে প্রাণহানীর ঘটনাও ঘটবে না।
খুলনার এক প্রত্যন্ত অঞ্চলে বাস করেণ অতনু। পাইকগাছা উপজেলার পাতড়াবুনিয়া ইউনিয়নের গড়ইখালী গ্রামে থাকেন তিনি। নিজ বাড়িতে বসেই ভূমিকম্প বিষয়ক গবেষণা করছেন তিনি। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা খুব বেশি দূর এগুননি। এসএসসি পাশ করার পর পড়াশুনা ছেড়ে দেন।
২০০৪ সাল থেকে ভুমিকম্পের পূর্বাভাস নিয়ে গবেষনা শুরু করেন তিনি। এরপর ২০০৮ সাল থেকে বিশ্বের বিভিন্ন স্থান বিশেষ করে এশিয়ার অনেকগুলো ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দিয়েছেন তিনি। সে পূর্বাভাস অনুয়ায়ি প্রায় সবকটিই সঠিক হয়েছে বলে তিনি দাবী করেন।
বিশ্বখ্যাত সংবাদ মাধ্যম বিবিসিকেও কয়েকটি পূর্বাভাসের খবর এসএমএস’র মাধ্যমে জানিয়েছেন তিনি। যার সবগুলোই সত্যি হয়েছে। উপজেলার স্থানীয় পত্রিকার সাংবাদিকদেরকেও কয়েকটি পূর্বাভাস দেন। যা সত্য হয়। এরপর স্থানীয় কয়েকটি পত্রিকায় অতনু মন্ডলের ভূমিকম্পের বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হয়।
অতনুর সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, “ভাই অনেকের কাছেই গিয়েছি বেশিরভাগ মানুষই আমার কথা ঠিক মতো বিশ্বাস করেনি। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালেয়র এক শিক্ষকের কাছে গিয়েছিলাম। তিনি আমার কাছে গবেষনা প্রকণ্পের থিওরি জানতে চেয়েছেন। কিন্তু আমি সরকার ছাড়া কারো কাছে থিওরি প্রকাশ করতে রাজি নই।”
পরিবর্তন ডট কমের সাথে আলাপকালে অতনু বলেন, “আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি, আমার উদ্ভাবিত পদ্ধতিতে ভূমিকম্পের পূর্বাভাস জানা সম্ভব। আমি সংবাদ সম্মেলন করারও পরিকল্পনা করেছি। আমি আনুষ্ঠানিকভাবেই আমার উদ্ধাবন নিয়ে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে চাই।”
কিভাবে এ ধরণের পূর্বাভাস জানা সম্ভব, তা প্রকাশ করতে রাজি নন তিনি। তার একটাই কথা তিনি সরকারের কাছে এই সূত্রটি জানাবেন। পরিবর্তন ডট কমের কাছে শুধু এটুকুই জানান, তিনি বাড়িতেই একটি ঘের করে প্রায় ৯ বছর যাবত এ গবেষণা করছেন।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দূর্যোগ প্রতিরোধ ও নগর নিরাপত্তা ইনষ্টিটিউটের শিক্ষক শাহীনুর রহমান জানান, এখনও পর্যন্ত পৃথিবীর কোথাও ভূমিকম্পের আগাম পূর্বাভাস জানার পদ্ধতি কিংবা পন্থা আবিস্কার হয়নি। জাপান কয়েকসেকেন্ড পূর্বে আভাস দিতে সক্ষম হলেও কয়েকদিন কিংবা কয়েক ঘন্টা পূর্বেও আভাস দিতে পারে না।
এ ব্যাপারে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও বিজ্ঞান অনুষদ বিভাগের প্রফেসর ড. দিলীপ দত্ত বলেন. "বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোন থেকে ভূমিকম্প একটি চলমান প্রক্রিয়া, ভূমিকম্প আঘাত হানার বিষয়টি ধারণা করা যেতে পারে, তবে আগাম পূর্বাভাস দেয়া সম্ভব নয়, যা এখনও পর্যন্ত সঠিকভাবে কেউ বলতে পারেনি।''
স্থানীয় সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর সমন্বিত সংগঠন গড়ইখালী ইউনিয়ন ইউনিটি’র সভাপতি আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, “অতনু আমাদের কাছে এসে তার এই গবেষণার কথা জানায়। তার দেযা তথ্য অনুয়ায়ি পূর্বাভাসগুলোও মিলে গেছে। আমরা এখন চেষ্টা করছি কি করে তার এই গবেষণাকে বাস্তবিকভাবে এগিয়ে নেয়া যায়।''
ভূপৃষ্ঠের টেকটোনিক প্লেটগুলোর একে অপরের সঙ্গে ধাক্কা লাগার কারণে ভূমিকম্প হয়ে থাকে৷ আর বর্তমান যুগে মাটির তলায় পারমাণবিক বোমার পরীক্ষাও অনেক ক্ষেত্রে ভূকম্পনের কারণ হয়৷
ভূপৃষ্ঠের ভেতরে একটি টেকটোনিক প্লেট আরেকটিকে আঘাত করার পর যে কম্পন তৈরি হয় তাকে বলা হয় সিসমিক ওয়েভ৷ ভূপৃষ্ঠের ভেতরের এই সিসমিক ওয়েভ যত বেশি প্রবল হয় মাটির ওপরে তত বেশি ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়৷ সমস্যা হলো, ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল থেকে এই সিসমিক ওয়েভ ভূপৃষ্ঠ পর্যন্ত পৌঁছতে অত্যন্ত কম সময় নেয়৷
 
বিজ্ঞানীরা অনেকদিন ধরে চেষ্টা করছেন এই সিসমিক ওয়েভের পূর্বাভাষ বোঝার জন্য৷ গত প্রায় ১০০ বছর ধরেই বিজ্ঞানীরা এই পরাজয়ের গ্লানি কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করে চলেছেন৷ একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে জন্তু জানোয়ারের অস্বাভাবিক আচরণ বা চাঁদের প্রতি নজর দেওয়া হতো। বর্তমানে বিশেষজ্ঞরা মাটির গভীরে গর্ত করে আগেভাগেই ভূমিকম্পের আভাস পাওয়ার চেষ্টা করছেন৷ এই জন্য চিলিতে বসানো হয়েছে আন্তর্জাতিক গবেষণাগার যার নাম ইন্টিগ্রেটেড প্লেট বাউন্ড্রি অবজার্ভেশন চিলি বা সংক্ষেপ আইপক৷ 
 
অতনুর দেয়া তথ্য অনুযায়ি সত্যিই যদি এমন উদ্ভাবন সে করতে পারে তাহলে সেটা শুধু বিস্ময়করই নয় অভাবনীয় এক উদ্ভাবন হবে। এখন দেখার বিষয় কতটা কার্যকরী তার এই আবিস্কার এবং তিনি কতদূর যেতে পারেন তার ওই অপ্রকাশিত ফর্মুলা নিয়ে।---পরিবর্তন

শেয়ার করুন

1 comment:

  1. আব্দুল্লাহ-আল-মামুন,শাবিAugust 23, 2013 at 10:53 AM

    সরকারী ভাবে উনাকে সহযোগিতা করা হোক

    ReplyDelete

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়