Friday, June 28

আগস্টে সাত জেলার ২ হাজার ৮শ’ পরিবার বায়োগ্যাস প্ল্যান্টের আওতায় আসছে

ঢাকা : আগস্ট মাস নাগাদ দেশের ৭টি জেলায় ২ হাজার ৮শ’টি পারিবারিক বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট (৩ ঘন মিটার) ও ২৮ হাজার উন্নত চুলা স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হবে। এতে ব্যয় হবে প্রায় ১০ কোটি টাকা। ১০টি বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে এগুলো বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

নির্ধারিত সময়ের দুই মাস আগেই এই প্রকল্পের ৯২ ভাগ কাজ সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে। আগামি আগস্টের মধ্যে বাকি কাজ সম্পন্ন হবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন। এই প্রকল্প বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও কার্বন নিঃসরণ হ্রাসে ব্যাপকভাবে অবদান রাখবে।
প্রকল্পটির নাম ‘বায়োগ্যাস ও উন্নত চুলা সম্প্রসারণের মাধ্যমে কার্বন নিঃসরণ, হ্রাস ও বিকল্প জ্বালানি ব্যবহার বৃদ্ধিকরণ প্রকল্প’। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর)’র জ্বালানি গবেষণা ও উন্নয়ন ইন্সটিটিউট (আইএফআরডি) এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এটি পরিচালনা করছেন দুই তরুণ জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও গবেষক মোহাম্মদ শাহ জামাল এবং এস এম আছাদুজ্জামান সুজন।

প্রকল্পের পরিচালক শাহ জামাল ও সহকারী পরিচালক আছাদুজ্জামান জানান, ইতোমধ্যে প্রকল্পের ৯২ ভাগ কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে। অবশিষ্ট সময়ের মধ্যে বাকি কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে বলে তারা জোর আশাবাদী। বাস্তবায়নকারী সংস্থার সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ, কঠোর পরিদর্শন, তদারকি ও পর্যবেক্ষণের কারণেই এই সাফল্য অর্জিত হয়েছে বলে তারা জানান। ধান লাগানো ও ধান কাটা মৌসুমে গ্রামের লোকজনকে বাড়িতে সময়মত না পাওয়া এবং এ বছর প্রচণ্ড শীতের কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নে কিছুটা বিঘিœত হয়েছে।

বাংলাদেশের জন্য এটি একটি অত্যন্ত সময়োপযোগী এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। একদিকে বাংলাদেশ একটি দ্রুত উন্নয়নশীল দেশ। অন্যদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হলো বাংলাদেশ। দুটো ক্ষেত্রেই এই প্রকল্প দেশের উন্নয়নে ব্যাপকভাবে অবদান রাখতে পারে।
প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ শাহ জামাল জানান, একবিংশ শতাব্দির কোন দেশের উন্নয়নের সূচক হচ্ছে সে দেশের মাথাপিছু জ্বালানির ব্যবহার। যে দেশ যত বেশি উন্নত, সে দেশের মাথাপিছু জ্বালানির ব্যবহার তত বেশি। ইউরোপের দেশগুলোর উন্নত, তাই সেখানে মাথাপিছু জ্বালানির ব্যবহার সর্বাধিক। অন্যদিকে বাংলাদেশে মাথাপিছু জ্বালানির ব্যবহার এশিয়ার দেশগুলোর তুলনায় প্রায় সর্বনিম্ন। আমরা যতই উন্নয়নের পথে অগ্রসর হবো, ততই আমাদের জ্বালানি চাহিদা বাড়তে থাকবে। এই ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা পূরণের জন্য জীবাশ্ম জ্বালানির পাশাপাশি নবায়নযোগ্য জ্বালানি তথা বায়োগ্যাস ও উন্নত চুলা প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। দেশের পরিবেশ, কাঁচামালের সহজলভ্যতা ও গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর আর্থিক সামর্থ্যতার বিচারে বায়োগ্যাস ও উন্নত চুলা প্রযুক্তি এ দেশের জনসাধারণের কাছে সবচেয়ে সহজলভ্য, গ্রহণযোগ্য ও টেকসই নবায়নযোগ্য প্রযুক্তি হিসাবে সমাদৃত। এছাড়া সারাবিশ্বে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের মাধ্যমে বৈশ্বিক উষ্ণতা হ্রাস ও বনজ সম্পদ রক্ষা তথা পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য এবং ক্লিন ডেভেলপমেন্ট মেকানিজম (সিডিএম)-এর মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে বায়োগ্যাস ও উন্নত চুলা প্রযুক্তির গুরুত্ব অপরিসীম।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে। ভবিষ্যতে জ্বালানি সংকট মোকাবেলায় বিকল্প ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি হিসেবে বায়োগ্যাস ও উন্নত চুলা প্রযুক্তি এই সমস্যার সমাধানে বিশেষ অবদান রাখতে পারে এবং নিশ্চিত করতে পারে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ, উন্নত মানের জৈব সার, পরিচ্ছন্ন জ্বালানি এবং উন্নত গ্রামীণ জীবনযাত্রা।
সহকারী প্রকল্প পরিচালক আছাদুজ্জামান সুজন জানান, এই প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে শুধুমাত্র ২ হাজার ৮শ’টি বায়োগ্যাস প্লান্টের মাধ্যমে প্রতিবছর প্রায় ৪২ হাজার ৫৫০ দশমিক ৮৩ টন কার্বন-ডাই অক্সাইড নির্গমন হ্রাস পাবে, ১ লাখ ৩৪ হাজার ৪শ’ মণ জ্বালানি (বায়োমাস) সাশ্রয় হবে ও ৪৯ হাজার ৫২৬ দশমিক ৮৫ টন জৈব সার উৎপাদিত হবে, যা থেকে দেশ প্রতি বছর প্রায় ৩৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে। অন্যদিকে ২৮ হাজার উন্নত চুলা স্থাপনের ফলে বছরে প্রায় ৩৫ হাজার ৪০ টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমন হ্রাস পাবে এবং ২১ হাজার ৯শ’ টন জ্বালানি সাশ্রয় হবে, যা থেকে দেশ প্রতি বছর প্রায় ১২ কোটি ১২ লাখ টাকা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে। এছাড়া গ্রীন হাউজ গ্যাস নির্গমন প্রশমনের ফলে বিশ্ব উষ্ণায়ন হ্রাস পাবে। ফলে কৃষি প্রধান বাংলাদেশ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন বন্যা, খড়া, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড় ইত্যাদির বিষাক্ত ছোবল থেকে অনেকাংশে রক্ষা পাবে।
এই প্রকল্প বাস্তবায়নকারী একটি সংস্থা বাংলাদেশ সেন্টার ফর ভিলেজ ডেভেলপমেন্ট (বিসিভিডি)-এর প্রোগ্রাম অফিসার মোজাফফর হোসেন বলেন, শ্রম ও আর্থিক সাশ্রয় এবং স্বাস্থ্যসম্মত হওয়ায় এই প্রকল্পের উন্নত চুলা প্রযুক্তির প্রতি গ্রামগঞ্জের মহিলাদের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে।
সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন অব্যাহত থাকলে একদিকে যেমন নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদা হ্রাস পাবে অন্যদিকে গ্রীন হাউজ গ্যাস নির্গমন হ্রাসের ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।(ডিনিউজ)

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়