Wednesday, October 24

অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা বন্ধে হার্ডলাইনে সরকার

দেশে অবৈধ ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রটোকল (ভিওআইপি) ব্যবসা বন্ধে হার্ড লাইনে সরকার। কারণ অবৈধ ভিওআইপির মাধ্যমে প্রতিদিনই আন্তর্জাতিক কল আদান-প্রদানের মাধ্যমে শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে অসাধু প্রভাবশালী চক্র। দীর্ঘদিন ধরেই দেশে এ অবস্থা চলে আসছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন অভিযানে বিপুলসংখ্যক অবৈধ ভিওআইপি যন্ত্রপাতি উদ্ধার ও আটক করা হলেও এখনো দেশে এ ব্যবসা ওপেন সিক্রেট। গতবছর এসময়ে প্রতিদিন বৈধ পথে সাড়ে ৫ থেকে সাড়ে ৬ কোটি মিনিট আন্তর্জাতিক কল দেশে আসতো। কিন্তু বর্তমানে তা নেমে দাঁড়িয়েছে ৩ থেকে সাড়ে ৩ কোটি মিনিটে। আর বাকি প্রায় সাড়ে ৩শ� কোটি মিনিট আন্তর্জাতিক কলই দেশে আসছে অবৈধ পথে। এ পরিস্থিতিতে দেশে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা বন্ধে মাঠে নেমেছে বিটিআরসি। এজন্য সব আইজিডব্লিউ, মোবাইল অপারেটর, আইসিএক্স, বিটিসিএল, এসটিএম-১ এর সার্কিটগুলো নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষণ করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিটিআরসি দেশে অবৈধ ভিওআইপি বন্ধে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে। এক্ষেত্রে আইসিএক্স অপারেটরদের সময় দেয়া হয়েছে ৩ দিন, আইএসপিগুলোতে ৭ দিন এবং বিটিসিএলকে ১৪ দিন। কেউ বিটিআরসির এ নির্দেশ অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইতিমধ্যে ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইজিডাব্লিউ), মোবাইল অপারেটর, ইন্টারকানেকশন এক্সচেঞ্জ (আইসিএক্স), বিটিসিএল, আইএসপিসহ (ইন্টার সার্ভিস প্রোভাইডর) বিভিন্ন ধরনের ইন্টারনেট সার্ভিস প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি বিটিআরসি অবৈধ ভিওআইপি বন্ধে অব্যাহতভাবে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। বিটিআরসির এ অবস্থানের কারণে সম্প্রতি অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা কিছুটা কমে এসেছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে দ্রুততম সময়ের মধ্যেই দেশের অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে বলেই সংশ্লিষ্ট আশাবাদী।

সূত্র জানায়, বর্তমানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় দেশ থেকে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা একেবারে বন্ধ করার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। আর এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর মন্ত্রণালয়। এজন্য অবৈধ ভিওআইপি কল মনিটর করার জন্য মনিটরিং সিস্টেম স্থাপন করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে এ কাজ পর্যায শেষ পর্যায়ে পৌঁছে। এর ফলে সহজেই কেউ অবৈধ ভিওআইপি ব্যবহার করতে পারবে না। এদেশে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার সাথে মূলত প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তি জড়িত। এ ব্যবসার মাধ্যমে তারা রাতারাতি টাকার পাহাড় গড়ে তুলেছে। কিন্তু সরকার বঞ্চিত হয়েছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে। ইতিপূর্বে বিটিআরসি দেশ থেকে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবহার বন্ধ করতে নানা উদ্যোগ নিয়েও সফল হয়নি। সর্বশেষ গতবছরের ডিসেম্বও মাসে অবৈধ ভিওআইপি বন্ধে শক্তিশালী অবৈধ ভিওআইপি অনুসন্ধান নামে তদন্ত কমিটিও গঠন করে বিটিআরসি। ওই কমিটি দীর্ঘ ৩ মাস বিটিসিএল ও টেলিটকের তদন্ত শেষে ১৩টি কারণ খুঁজে পেয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে পূর্ণাঙ্গ ইন্টারকানেকশন এক্সচেঞ্জ (আইসিএক্স), অত্যাধুনিক সফটওয়্যার, রেডিও লিং ব্যবহার, কললিস্ট মুছে ফেলাসহ নানা কারসাজি। ইতিমধ্যে ওই তদন্ত কমিটি অবৈধ ভিওআইপির উ ঘাটিত কারণগুলো সুপারিশ আকারে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। তদন্ত কমিটি সদস্যরা মনে করছেন, তদন্তে উ ঘাটিত কারণগুলো বন্ধ হলে দেশে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবহার বহুগুণ কমে আসবে।

সূত্র আরো জানায়, বিআরটিসির শক্তিশালী তদন্ত কমিটি বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে এদেশে কর্মরত বেসরকারি মোবাইল অপারেটরগুলো আন্তর্জাতিক কল আদান-প্রদান পরীক্ষা করতে পারেনি। কারণ বিটিসিএল ও টেলিটকের অনিয়ম খুঁজে বের করতেই কমিটির অনেক সময় লেগে যায়। মূলত তাদের কাছ থেকে পূর্ণাঙ্গ কোনো তথ্য না পাওয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ফলে তদন্তের সময় সংস্থাগুলোর অসহযোগিতার কারণে ঠিক কী পরিমাণ অবৈধ ভিওআইপি হচ্ছে তা নির্ণয় করতে পারেনি তদন্ত কমিটি। যদিও বিটিসিএল ও টেলিটককে তাদের কললিস্ট ও আইসিএক্স বসানোর জন্য প্রায় ১৯ বার চিঠি দেয়া হয়েছে। কিন্তু ওসব চিঠির কোনো জবাবই দেয়নি তারা। বরং সবচেয়ে বেশি অবৈধ ভিওআইপি হচ্ছে টেলিটক ও বিটিসিএলর মাধ্যমে। সাধারণ গ্রাহকরাও এ অভিযোগ করছে। এর কারণ হিসেবে গ্রাহকরা বলছে, দেশের বাইরে থেকে বেশিরভাগ কলই আসছে টেলিটক নাম্বারে। আইজিডব্লিউ ও আইসিএক্স�র ব্যবহৃত সুইচ বা গেটওয়ে স্থাপনের সাথে বিলিং প্লাটফরম না থাকায় তদন্ত কমিটি সঠিকভাবে আন্তর্জাতিক কলের পরিমাণ ও বিল বিশ্লেষণ করতে পারেনি।

এদিকে তদন্ত হওয়া বিটিসিএল ও টেলিটকের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, অবৈধ ভিওআইপি কল অনুসন্ধানে গঠিত কমিটিতে কোনো বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী ছিল না। কিন্তু এ অভিযোগ মানতে রাজি নয় বিটিআরসি। তাদের মতে, অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের দিয়েই অবৈধ ভিওআইপি কল অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হবে। তবে লোকবলের অভাবে কমিটিতে সদস্য সংখ্যা বাড়ানো যায়নি। বেশিসংখ্যক লোকবল কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা গেলে অবৈধ ভিওআইপি কলের পূর্ণাঙ্গ চিত্র বেরিয়ে আসতো। তদন্ত কমিটি ৩ মাস ধরে বিটিসিএল ও টেলিটকের ভিওআইপি কল কিভাবে হয় তার কারণ খুঁজে দেখে। এরপর তারা সুপারিশ মালা তৈরি করে। মন্ত্রণালয় এ সুপারিশের ভিত্তিতেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

অন্যদিকে বিটিআরসি সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র মতে, দেশে অবৈধ ভিওআইপি শনাক্ত করা এখন খুবই কঠিন। কারণ এক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রেই মুছে ফেলা হচ্ছে কললিস্ট। তাছাড়া অবৈধ কলের জন্য নানা ধরনের আধুনিক সফটওয়্যার ব্যবহার হচ্ছে। কিন্তু এক্ষেত্রে অবৈধ ভিওআইপি পরিচালনাকারীদেও তুলনায় বিটিআরসির হাতে ওই পরিমাণ আধুনিক যন্ত্রপাতি বা সফটওয়্যার নেই। এ কারণে অবৈধ ভিওআইপি ধরা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া এখনো তো এদেশে কর্মরত বেসরকারি মোবাইল অপারেটরদেও অবৈধ ভিওআইপি কলের ব্যাপারে কোনো তদন্তই শুরু হয়নি। মূলত লোকবল ও সময়ের অভাবে তাদেও কললিস্ট পরীক্ষা করা যাচ্ছে না।ফেয়ার নিউজ






শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়