Sunday, July 22

পুলিশ কর্তৃক পাইপগান উদ্ধার কানাইঘাটের রাজাগঞ্জে স্বামী-স্ত্রী’র মধ্যে ঝগড়া গুলিবর্ষণের ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক আহত ২

স্বামী-স্ত্রী’র মধ্যে ঝগড়াকে কেন্দ্র করে কানাইঘাট উপজেলার ৯নং রাজাগঞ্জ ইউনিয়নের প্রত্যন্ত হাওর বেষ্টিত ছোট মির্জারগড় গ্রামের আব্দুর রশিদের বাড়ীতে গত ১০জুলাই গভীর রাতে একদল দুর্বৃত্ত কর্তৃক সন্ত্রাসী হামলা, ভাংচুর, গুলি বর্ষণ এবং দু’জনকে গুরুতর আহত এবং স্থানীয় জনসাধারণের বাঁধার মুখে হামলাকারীদের ফেলে যাওয়া একটি পাইপগান কানাইঘাট থানা পুলিশ কর্তৃক উদ্বারের ঘটনায় এলাকায় তোলপাড় চলছে। সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয় লোকজনদের সাথে কথা বলে জানা যায় মির্জারগড় গ্রামের আব্দুর রশিদের পুত্র সিদ্দিক আহমদ (৩০) গত ১০জুলাই সকালে তার স্ত্রী ২ সন্তানের জননী রশনা বেগম (২৫) এর সাথে পারিবারিক বিরোধ নিয়ে উভয়ের মধ্যে ঝগড়া হয়। ঝগড়ার বিষয়টি রশনা বেগম তার বড়ভাই একই ইউনিয়নের নয়াগ্রাম (খালরপার) গ্রামের মাওঃ ফরিদ উদ্দিন (৩৫)কে মোবাইল ফোনে অবহিত করেন। মাওঃ ফরিদ উদ্দিন বোনের ফোন পেয়ে তাঁর শ্বাশুড়ী খাদিজা বেগমকে ৩বার মোবাইল ফোনের মাধ্যমে হুমকি দিয়ে বলেন, আমার বোনকে কেন নির্যাতন করা হল এর পরিণাম খুব ভাল হবে না, তোদের বাড়ীর সবাইকের্ যাব ও পুলিশ দিয়ে গ্রেফতার করে নিয়ে যাব এমনও হুমকি দেন বলে রশনা বেগমের শাশুড়ী খাদিজা বেগম ও বাড়ীর লোকজন জানান। স্বামী-স্ত্রী’র মধ্যে ঝগড়ার বিষয়টি উভয় পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে নিষ্পত্তি করা হলেও ঐদিন রাত ৯টায় মাওঃ ফরিদ উদ্দিন ও তার ছোট ভাই আলী হোসেন (২৫) এর নেতৃত্বে ৪/৫জন লোক বোন রশনা বেগমের শ্বশুড়বাড়ীতে হানা দিয়ে তাকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে এবং বাড়ীর লোকজনদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে চলে যায়। রশনা বেগমের শ্বশুড় আব্দুর রশিদ ও শ্বাশুড়ী খাদিজা বেগম জানান, বাড়ীর সবাই যখন গভীর ঘুমে মগ্ন তখন রাত অনুমানিক আড়াইটায় বসত ঘরের দরজা ভাঙ্গার শব্দ এবং তাঁর ছেলে ফিরুজ আহমদ (২৮)এর চিৎকার শুনে বাড়ীতে ডাকাত হানা দিতে পারে বলে সুরচিৎকার দেন। এরই মধ্যে পুত্র বধূ রশনা বেগমের ভাই মাওঃ ফরিদ উদ্দিনের নেতৃত্বে বাড়ীতে আশা স্বশস্ত্র লোকজন হামলা চালিয়ে আব্দুর রশিদের পুত্র ফিরুজ আহমদ (২৫) কে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথায় আঘাত উপর্যুপরি আঘাত করে গুরুতর জখম করে। হামলাকারীদের বন্ধুকের গুলির আঘাতে ফিরুজ আহমদের বড় বোন রাজিয়া বেগম (৩৫) হাতে গুলিবিদ্ধ হন। এসময় গুলির আওয়াজ ও বাড়ীর লোকজনদের আর্তচিৎকারে আশপাশ এবং পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন গ্রামের লোকজন ঘুম থেকে জেগে উঠে আব্দুর রশিদের বাড়ীতে জড়ো হলে হামলাকারীরা ৩ রাউন্ড গুলি বর্ষণ করে একটি দেশীয় তৈরী পাইপগান ফেলে বাড়ীর পার্শ্ববর্তী ফতেগঞ্জ হাওর এলাকা দিয়ে ইঞ্জিল নৌকা যুগে হরিপুরের দিকে পালিয়ে যায় বলে স্থানীয় লোকজন জানান। সাথে সাথে বিষয়টি এলাকার কয়েকজন কানাইঘাট থানা পুলিশকে মোবাইল ফোনে অবহিত করলে ঘটনার ২০মিনিট পর রাজাগঞ্জ এলাকায় টহলরত থানার এস.আই আকিক হোসেন একদল পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে হামলাকারীদের ফেলে যাওয়া পাইপাগানটি জব্দ করেন। পুলিশ গুলিবিদ্ধ রাজিয়া বেগম এবং গুরুতর আহত ফিরুজ আহমদকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। ওসমানী হাসপাতালে ৩ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর বর্তমানে নিজ বাড়ীতে চিকিৎসাধীন আহত ফিরুজ আহমদ ও বাড়ীর লোকজন কান্না জড়িত কন্ঠে স্থানীয় সাংবাদিকদের আরো জানান, তুচ্ছ ঘটনার সূত্র ধরে মাওঃ ফরিদ উদ্দিন তাদের উপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য গভীর রাতে স্বশস্ত্র ভাড়াটিয়া ১০/১২ লোকজনদের নেতৃত্বে বাড়ীতে হামলা, ভাংচুর গুলি বর্ষণের মত জগন্য সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়েছে। আব্দুর রশিদ বলেন, এলাকার লোকজন এগিয়ে না আসলে হামলাকারীরা তার দুই মেয়েকে ধরে নিয়ে যেত। বর্তমানে প্রাণের ভয়ে তারা থানায় মামলা করতেও সাহস পাচ্ছেন না। স্থানীয় এলাকার বাসিন্দা মাষ্টার ইকবাল আহমদ, ওলিউর রহমান, আহমদ আলী, সিরাজ উদ্দিনসহ আরো অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, স্বামী-স্ত্রী’র মধ্যে ঝগড়া নিয়ে এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে এলাকার মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। তারা হামলাকারী ও পুলিশ কর্তৃক উদ্ধারকৃত অস্ত্র বাজদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানিয়েছেন, থানা প্রশাসনের কাছে। এ ব্যাপারে অস্ত্র উদ্ধারকারী থানার এস.আই আকিক হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, স্বামী-স্ত্রী’র মধ্যে ঝগড়া নিয়ে এ ঘটনা ঘটেছে। আমি খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে রশিদ উদ্দিনের বাড়ী থেকে হামলাকারী কর্তৃক ফেলে যাওয়া দেশীয় তৈরী একটি পাইপগান উদ্ধার করেছি। অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় থানায় জিডি হয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করা হবে বলে তিনি জানান।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়