Tuesday, February 14

কানাইঘাটে মাদ্রাসা ছাত্র ও এলাকাবাসীর মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ॥ আহত ২৫

কানাইঘাট সড়কের বাজার আহমদিয়া আলিম মাদ্রাসার সুপার মাওঃ আব্দুস সমি কর্তৃক মাদ্রাসার ওয়াকফ্ এস্টেট ও বিভিন্ন ফান্ডের প্রায় অর্ধ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিক্ষোব্ধ হয়ে উঠেছেনু এলাকাবাসী। আব্দুস সমির অনিয়ম দূর্নীতি দামাচাপা দিতে গতকাল মাদ্রাসার ছাত্ররা তার পক্ষ নিয়ে এলাকাবাসীর বিরুদ্ধে সড়কের বাজারে ঝাড়– মিছিল কে কেন্দ্র করে এলাকাবাসী ও মাদ্রাসার ছাত্রদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ২৫জন আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস.এম সোহরাব হোসেন ও কানাইঘাট থানার ওসি রফিকুল হোসেইন অতিরিক্ত পুলিশ ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন। সংঘর্ষ এড়াতে সড়কের বাজারে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বিক্ষুব্ধ শত শত লোকজন মাদ্রাসার সুপার আব্দুস সমির অবিলম্বে অপসারাণ দাবী করে তার কুশপুত্তলিকা দাহ এবং তাকে সড়কের বাজারে অবাঞ্চিত ঘোষনা করেন। স্থানীয় লোকজনদের কাছ থেকে জানা যায়, সড়কের বাজার মাদ্রাসার ওয়াকফ্ এস্টেটের সম্পত্তির লক্ষ লক্ষ টাকা আব্দুস সমি কর্তৃক দীর্ঘদিন ধরে আত্মসাতের ঘটনায় তার বিরুদ্ধে স্থানীয় লোকজনদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষোভ বিরাজ করছিল। সম্প্রতি তিনি বেপরোয়াভাবে অনিয়ম দূর্নীতিতে জড়িয়ে পড়লে তার সাথে মাদ্রাসার এডহক কমিটির সভাপতি ও এলাকাবাসীর বিরোধ সৃষ্টি হয়। গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর মাদ্রাসার এডহক কমিটির সভাপতি ব্যাংক কর্মকর্তা ওলিউর রহমান সমির বিরুদ্ধে মাদ্রাসার অর্থ আত্মসাৎ সহ নানা অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসক বরাবরে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কানাইঘাট সমির বিরুদ্ধে আনিত দুর্নীতির তদন্ত শুরু করেন। গত শনিবার আব্দুস সমি কর্তৃক মাদরাসার ওয়াকফ এস্টেটের অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি স্থানীয় এলাকাবাসীকে অবহিত করার জন্য সড়কের বাজারে এক জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বক্তব্য রাখেন, উপজেলা চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মুমিন চৌধুরীর মাদ্রাসার এডহক কমিটির নেতৃবৃন্দ এলাকার বিভিন্ন স্থরের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। সভায় আব্দুস সমিকে দূর্নীতিবাজ আখ্যায়িত করে মাদ্রাসা থেকে তার অপসারন এবং আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানিয়ে বাজারে একটি মিছিল বের হয়। স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন এর জের ধরে আব্দুস সমির নির্দেশে গতকাল সকাল সাড়ে ১১টায় বহিরাগত বিভিন্ন মাদ্রাসার ছাত্র সহ সড়কের বাজার আলিম মাদ্রাসার ছাত্ররা মাদ্রাসা এডহক কমিটির সভাপতি, উপজেলা চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী ও ইউপি চেয়াম্যান মুমিন চৌধুরীসহ আরো কয়েকজনের নাম উলে¬খ করে অশ¬ীল ¯ে¬াগান দিয়ে সড়কের বাজারে একটি ঝাড়– মিছিল বের করলে বিক্ষোব্ধ এলাকাবাসী ও সড়কের বাজারের ব্যবসায়ীরা মিছিলটি প্রতিরোধের চেষ্টা করলে মাদ্রাসার ছাত্রদের সাথে এলাকাবাসীর সংঘর্ষ বেধে যায়। প্রায় ঘন্টাব্যাপী উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও বৃষ্টির মতো ইট পাটকেল উভয় পক্ষের ২৫জন আহত হয়। এসময় বাজারে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে ভয়ে ব্যবসায়ীরা দোকান পাট বন্ধ করে ফেলেন। সংঘর্ষের সময় প্রায় ঘন্টা খানেক জকিগঞ্জ-সিলেট রোডে সব ধরনের যানবাহান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ লোকজন মাদ্রাসা সুপার আব্দুস সমি কে ধরার জন্য মাদ্রাসায় প্রবেশের চেষ্টা করলে তিনি অবস্থা বেগতিক দেখে বোরকা পরে পালিয়ে যান বলে প্রত্যেক্ষদর্শী জানিয়েছেন। মাদ্রাসা ছাত্ররা কর্তৃক এলাকাবাসীর বিরুদ্ধে ঝাড়– মিছিলের খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে শত শত লোকজন সড়কের বাজারে জড়ো হয়ে দফায় দফায় বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। খবর পেয়ে নির্বাহী কর্মকর্তা, থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন এবং ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে বিক্ষোব্ধ লোকজন শান্ত হন। এক পর্যায়ে উপজেলা চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী ঘটনাস্থলে ছুটে এসে স্থানীয় লোকজনদের দাবীর সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে আব্দুস সমির বিরুদ্ধে এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকান্ড এবং মাদ্রাসার কোমলমতি ছাত্রদের তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর বিরুদ্ধে মিছিল মিটিংয়ে লেলিয়ে দেওয়ার ঘটনায় আব্দুস সমির বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানান প্রশাসনের কাছে। আশিক চৌধুরী জানান, দূর্নীতিবাজ অধ্যক্ষ আব্দুস সমি মাদ্রাসার বিভিন্ন ফান্ডের অর্থ আত্মসাত করেছে। এতে এলাকাবাসী তার অপসারনের জন্য যখন সোচ্চার ঠিক তখনই নিজেকে রক্ষার জন্য ছাত্রদের লেলিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করছে। এডহক কমিটির সভাপতি ওলিউর রহমান বলেন, অধ্যক্ষ আব্দুস সমি মাদ্রাসার ৫০লক্ষাধিক টাকা আত্মসাৎ করেছে। যে কোন মূল্যে এলাকাবাসীকে সাথে নিয়ে মাদ্রাসা ফান্ডের আত্মসাতকৃত টাকা উদ্ধার করা হবে। তার বিরুদ্ধে পূর্বে বিভিন্ন অনিয়ম দূর্নীতির অভিযোগ যখনি উঠেছে তখন আব্দুস সমি আমাদের ছেলেদের এলাকাবাসীর বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়ে বার বার তার অসৎ উদ্দেশ্যে বাস্তবায়ন করেছে। কিন্তু এবার এলাকাবাসী তার বিরুদ্ধে জেগে উঠেছেন সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করে পার পাবেন না। অপরদিকে মাদ্রাসা সুপার আব্দুস সমি বলেন, মাদ্রাসার সব সম্পত্তি ও বেতন ভাতার হিসাব রেজুলেশনের মাধ্যমে সংশি¬ষ্ট সব কমিটিকে অবগত করা আছে এবং রেজুলেশন ও বেতন ভাতার বিলে এডহক কমিটির সভাপতি ওলিউর রহমান, উপজেলা চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী ও তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুর রউফ এর স্বাক্ষর রয়েছে। সামাজিকভাবে তাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য একটি মহল তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে বলে তিনি জানান। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস.এম.সোহরাব হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের তদন্ত চলছে। গতকালকের সৃষ্ট অনাকাঙ্খিত ঘটনা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য তিনি কানাইঘাট থানার ওসি রফিকুল হোসেইনকে বলেছেন বলে জানান। এদিকে মাদ্রাসার এডহক কমিটির পক্ষ থেকে গতকালকের ঘটনায় আব্দুস সমি সহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। সব ধরনের অপৃতিকর ঘটনা এড়াতে সড়কের বাজারে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। উভয় পক্ষের আহতদের মধ্যে রয়েছেন মাদ্রাসা শিক্ষার্থী আব্দুর রহমান, কালাম আহম, জুবায়ের আহমদ, ছাবিলা বেগম, মাহবুবুর রহমান, নাজিম উদ্দিন, ইছহাক আহমদ, মাহফুজুর রহমান, ফরিদ উদ্দিন, হাবিবুর রহমান, আব্দুল করিম, কলিম উদ্দিন, স্থানীয় লোকজনদের মধ্যে আহত হলেন, জয়নাল আবেদীন, রাসেল আহমদ, সুজন উদ্দিন, আব্দুল লতিফ, আজির উদ্দিন, মামুন আহমদ, আম্বিয়া, মাসুক উদ্দিন, আলী হোসেন কাজল, রুহিন চৌঃ, আব্দুস সবুর, কুতুব উদ্দিন, মাহবুবুর রহমান।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়