Thursday, August 29

স্তন ক্যান্সারের কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ডেস্ক  ::

স্তন ক্যান্সার এখন সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও নারীদের ক্যান্সারের মধ্যে শীর্ষস্থান দখল করে আছে। স্তন ক্যান্সার এক ঘাতক ব্যাধি। প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে রোগী ভালো হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশেই বেড়ে যায়। তবে দেরি হলেই বাড়ে বিপদ। তাই চলুন জেনে নেয়া যাক স্তন ক্যান্সার কাদের হয়, এর লক্ষণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে-     

স্তন ক্যান্সারের প্রকোপ বাড়ার কারণ
* প্রথমত এর জন্য দায়ী আমাদের জীবনযাত্রার আমূল পরিবর্তন। যেমন আজকাল আমরা প্রচুর ফাস্ট ফুড খাই, সবুজ শাকসবজি খুবই কম খাই, কম শারীরিক পরিশ্রম করি- যার ফলে আমরা অতিরিক্ত স্থূলতায় ভুগছি। অতিরিক্ত স্থূলতা স্তন ক্যান্সারের এক অন্যতম প্রধান কারণ।
* দেরিতে বাচ্চা নেয়া।
* বাচ্চাকে বুকের দুধ দিতে অনীহা বা অপারগতা (যেমন চাকরিজীবী নারীরা এ সমস্যায় ভোগেন বেশি)।
* বেশি বয়স, গড় আয়ু বেড়ে যাওয়াতে এ রোগের প্রকোপ বাড়ছে।
স্তন ক্যান্সারের লক্ষণ
মানুষ সচেতন বলে আগেই ডাক্তারের শরণাপন্ন হচ্ছে রোগ আছে কিনা জানার জন্য। ফলে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ ধরা পড়ছে। তবে এর কিছু লক্ষণ আছে। যদি ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়ে তাহলে যেখানে ছড়িয়ে পড়েছে তার উপসর্গ দেখা দেয় যেমন-
* বগলে চাকা দেখা দেয়া।
* যকৃতে ছড়ালে পেটে ব্যথা বা জন্ডিস দেখা দেয়।
* ফুসফুসে ছড়ালে কাশি হওয়া এমনকি কাশির সঙ্গে রক্তও যেতে পারে।
* হাড়ে ছড়ালে সেখানে তীব্র ব্যথা হওয়া।
* স্তনে চাকা দেখা দেয়া।
* স্তনের চামড়ার রং পরিবর্তন হওয়া বা চামড়া মোটা হওয়া। (কমলালেবুর খোসার মতো)
* নিপল বা স্তনের বোঁটা ভেতরে দেবে যাওয়া।
* নিপল দিয়ে রক্ত বা পুঁজ পড়া।
ডায়াগনোসিস বা শনাক্তকরণ পরীক্ষা
প্রথমেই বিশেষজ্ঞরা রোগীর শারীরিক পরীক্ষা করেন। বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে স্তন ক্যান্সার শনাক্ত করা হয়। রোগীর বয়সের সঙ্গে সামাঞ্জস্য রেখেই বিশেষজ্ঞরা তা দিয়ে থাকেন। যেমন- ম্যামোগ্রাফি, আলট্রাসনোগ্রাফি, এমআরআই, এফএনএসি- চাকা থেকে,বায়োপসি/মাংস পরীক্ষা।
স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসা
প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে শতকরা ৯০-৯৫ ভাগ রোগী সুস্থ হওয়ার স্বপ্ন দেখতে পারেন। এ ক্যান্সারের চিকিৎসা প্রধানত কয়েকভাগে বিভক্ত- সার্জারি, কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি, হরমোন থেরাপি, টার্গেটেড থেরাপি।
সার্জারি
স্তন ক্যান্সরের যেকোনো পর্যায়েই রোগীর সার্জারি করা প্রয়োজন হতে পারে। সার্জারি করা যাবে কিনা বা কী ধরনের সার্জারি হবে তাই প্রাথমিক বিবেচ্য বিষয়। সিদ্ধান্ত নেবেন সার্জন এবং ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ দু’জনে মিলে। অনেক সময় শুধু টিউমার কেটে ফেলা হয়। অনেক সময় পুরো স্তনই ফেলে দেয়া হয়।
কেমোথেরাপি
প্রায় সব রোগীকেই কেমোথেরাপি নিতে হয়। সার্জারির আগে বা পরে এমনকি রোগ শরীরের অন্য অংশে ছড়িয়ে পড়লেও কেমোথেরাপি কাজ করে। যদিও কেমোথেরাপিতে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে তবুও রোগীকে সুস্থ করে তোলার জন্য কেমোথেরাপির বিকল্প নেই। রোগীর শারীরিক অবস্থা, কেমোথেরাপির কার্যকারিতা, রোগীর আর্থিক অবস্থা ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়েই ক্যান্সার বিশেষজ্ঞরা উপযুক্ত পরামর্শ দেন। কেমোথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যাতে কম হয় তারও ব্যবস্থাপত্র দেন চিকিৎসকরা।
রেডিওথেরাপি
বিশেষ ধরনের মেশিনের মাধ্যমে রোগীদের রেডিওথেরাপি চিকিৎসা দেয়া হয়। এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তুলনামূলকভাবে অনেক কম। সাধারণ কেমোথেরাপির পরই রেডিওথেরাপি দেয়া হয়। শুধু স্তনে নয়, যদি ক্যান্সার হাড়েও ছড়িয়ে পড়ে তাহলেও সেখানে রেডিও থেরাপি দিয়ে হাড়ের ভাঙন বা ফ্র্যাকচার রোধ করা যায়।
হরমোন থেরাপি
সব স্তন ক্যান্সারের রোগীর জন্য হরমোনের দরকার নেই। ক্যান্সার বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমেই হরমোনের চিকিৎসা কাদের লাগবে তা শনাক্ত করেন।
টার্গেটেড থেরাপি
এ থেরাপি রোগীদের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে। ক্যান্সার প্রতিরোধের জন্য স্তন ক্যান্সার স্ক্রিনিং জরুরি। ক্যান্সার বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ ব্যাপারে সবারই জানা উচিত এবং এই প্রোগ্রামের আওতায় আসা উচিত। তাহলে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ ধরা পড়বে এবং রোগী দ্রুত সুস্থ হবে। আমাদের সুশৃঙ্খল জীবনযাত্রা এবং জীবনযাত্রার কিছু পরিবর্তন হলে (যা ক্যান্সার রোগের কারণ) এ রোগের প্রকোপ অনেকাংশেই কমে আসবে এবং আমাদের সমাজে সুস্থ-সুন্দর জীবনের অধিকারী মানুষের অবস্থান সুদৃঢ় হবে।
কারা স্তন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে আছেন
বয়স্ক নারী, যাদের স্তন ক্যান্সারের পারিবারিক ইতিহাস আছে, যেসব নারীরা বাচ্চাকে বুকের দুধ পান করাননি, ব্র্যাক-১,ব্র্যাক-২ নামক জিনের মিউটেশনের কারণে, অল্প বয়সে মাসিক শুরু হওয়া, দেরিতে মাসিক বন্ধ হওয়া, মদ্যপান করলে, স্তনের কিছু অসুখ থাকলে, অন্য কোনো ক্যান্সার যেমন- কোলন, ডিম্বাশয়ে ক্যান্সার হলে।
সুত্র: সহযোগী অধ্যাপক, রেডিওথেরাপি বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়