Friday, August 2

প্রিয় নবী (সা.) এর প্রথম জুমার নামাজ ও খুতবা

গাজী মো. রুম্মান ওয়াহেদ::

প্রিয় নবী (সা.) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করার পর সোমবার, মঙ্গলবার, বুধবার এবং বৃহস্পতিবার এই চার দিন কুবায় অবস্থান করেন। কুবার অধিবাসীরা তাদের জন্য মসজিদ নির্মাণ করলেন।

জুমার দিন তিনি (সা.) কুবা থেকে বের হলেন। বনি সালেম বিন আওফ গোত্রের নিকট আসতেই জুমার নামাজের সময় হয়ে গেল। সেখানের উপত্যকায় অবস্থিত মসজিদেই রাসূল (সা.) জুমার নামাজ পড়লেন। এটি ছিল মসজিদে নববি নির্মাণ করার পূর্বের জুমা আদায় এবং খুতবা প্রদান।

ওই মসজিদটি ‘মসজিদে বনু সালেম বিন আওফ’ হিসেবে বিখ্যাত। এখানেই সর্ব প্রথম জুমার নামাজ আদায় করা হয়।
প্রথম খুতবা:
ইবনে ইসহাক বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বপ্রথম যেই খুতবাটি দিয়েছিলেন তা আমার নিকট আবু সালামা বিন আব্দুর রাহমানের সূত্রে পৌঁছেছে। তিনি মুসলমানদের সামনে দাঁড়িয়ে সর্বপ্রথম আল্লাহর প্রশংসা করলেন এবং তাঁর গুণাগুণ বর্ণনা করলেন।
অতঃপর তিনি বললেন-
হে লোক সকল! তোমরা নিজেদের মুক্তির জন্য আমল কর। আল্লাহর শপথ! তোমরা তখন অবশ্যই (পরকালের উদ্দেশ্যে আমল করার গুরুত্ব সম্পর্কে) জানতে পারবে যখন তোমাদের কেউ (শিঙ্গায় ফুঁক দেয়ার আওয়াজ শুনে) বেহুঁশ হয়ে যাবে। সে তার ছাগলের পালকে রাখাল বিহীন অবস্থায় ছেড়ে চলে যাবে, অতঃপর তার প্রভু তার সঙ্গে কথা বলবেন, তার মাঝে ও তার প্রভুর মাঝে কোনো দোভাষী থাকবে না (সরাসরি কথা হবে) এবং তার মাঝে ও তার প্রভুর মাঝে কোনো পর্দা থাকবে না।
তিনি বলবেন, তোমার কাছে কী আমার রাসূল এসে আমার হুকুম-আহকাম পৌঁছে দেয় নি? আমি তোমাকে দুনিয়ার সম্পদ দিয়েছিলাম এবং তোমার ওপর অনুগ্রহ করেছিলাম। সুতরাং তুমি নিজের জন্য কী প্রেরণ করেছ?
তখন সে ডান দিকে তাকাবে, বাম দিকে তাকাবে। কিন্তু সে কিছুই দেখতে পাবে না। অতঃপর সামনে তাকাবে। কিন্তু সে জাহান্নাম ছাড়া কিছুই দেখতে পাবে না।
সুতরাং যে ব্যক্তি এক টুকরা খেজুর দান করার বিনিময়ে হলেও জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার সামর্থ্য রাখে সে যেন জাহান্নাম থেকে নিজেকে আত্মরক্ষা করে। আর যে ব্যক্তি তারও ক্ষমতা না রাখে, সে যেন উত্তম কথা বলার মাধ্যমে হলেও জাহান্নাম থেকে বাঁচার চেষ্টা করে। কেননা এর বিনিময়েও নেকির সংখ্যা এক থেকে দশ গুণ আর দশ থেকে সাত শত গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। ওয়াস সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
দ্বিতীয় খুতবা:
‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, আমি তাঁর প্রশংসা করছি, তাঁর কাছেই সাহায্য চাই, আমরা আমাদের নফসের অকল্যাণ থেকে এবং খারাপ আমল থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই। তিনি যাকে হেদায়াত করেন কেউ তাকে গোমরাহ করতে পারে না। আর যাকে তিনি পথভ্রষ্ট করেন কেউ তাকে সঠিক পথ দেখাতে পারে না। আমি এই সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া সঠিক কোনো উপাস্য নেই। তিনি এক, তার কোনো শরিক নেই।
নিশ্চয়ই সর্বোত্তম কথা হচ্ছে আল্লাহর কিতাব। নিশ্চয়ই ওই ব্যক্তি সফল হবে, যার অন্তুরকে আল্লাহ তায়ালা কোরআনের মাধ্যমে সৌন্দর্য মণ্ডিত করেছেন এবং কুফরিতে লিপ্ত হওয়ার পর তাকে ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় দিয়েছেন।
সুতরাং মানুষের কথাগুলো বাদ দিয়ে সে আল্লাহর কালামকে বেছে নিয়েছে। কেননা আল্লাহর কথাই হচ্ছে সর্বোত্তম কথা ও তাঁর বাণীই হচ্ছে সর্বোচ্চ বাণী। আল্লাহ যা ভালোবাসেন তোমরা তাই ভালোবাস এবং তোমাদের অন্তরসমূহকে আল্লাহর ভালোবাসা দিয়ে ভরে দাও।
আল্লাহর কালামকে পাঠ করতে এবং আল্লাহকে স্মরণ করতে তোমরা ক্লান্তিবোধ কর না। তোমাদের অন্তর যেন কোরআন থেকে (কোরআন ছেড়ে দিয়ে) পাষাণ না হয়ে যায়। নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা সকল সৃষ্টি থেকে উত্তমটিই বাছাই করেন এবং তা নিজের জন্য নির্বাচন করেন।
আল্লাহ তাঁর বান্দাদের আমলসমূহ থেকে কোরআন তেলাওয়াতকে সর্বোত্তম আমল হিসেবে উল্লেখ করেছেন, বান্দাদের আমল থেকে তা পছন্দ করেছেন, তাকে সর্বোত্তম বাণী বলে ঘোষণা করেছেন এবং তার মাঝে মানুষের জন্য সকল হালাল ও হারাম বিষয় বর্ণনা করেছেন।
সুতরাং তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর। তাঁর সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক কর না এবং তাঁকে যথাযথভাবে ভয় কর। তোমরা মুখ দিয়ে যে সমস্ত কথা উচ্চারণ করে থাক, তা থেকে সর্বোত্তম কথার মাধ্যমে আল্লাহর সত্যতার ঘোষণা প্রদান কর।
আল্লাহর রহমতের মাধ্যমে পরস্পর ভালোবাসার বন্ধন রচনা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর সঙ্গে কৃত ওয়াদা ভঙ্গকারীকে মোটেই পছন্দ করেন না। ওয়াস সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। (যাদুল মাআ’দ থেকে সংগৃহীত)।
মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা মুসলিম উম্মাহকে মদিনায় প্রদান করা বিশ্ব নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রথম জুমার খুতবাকে নিজেদের জীবনের পাথেয় হিসেবে গ্রহণ করার তাওফিক দান করুন। আল্লাহুম্মা আমিন।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়