Thursday, June 20

ঘাস দিয়ে তৈরি করা হয়েছে যে সেতু!

কোনো আধুনিক যন্ত্রপাতি ছাড়া শুধুমাত্র ঘাস আর মানবশক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে সেতু।
পেরুর কুজকো রাজ্যের পাশ ঘেষে বয়ে গেছে আপুরিমাক নদী। এই নদীর অববাহিকায় বাস করছে হাজার বছরের পুরানো ইনকা সভ্যতার উত্তরসূরীরা। নদীর ওপরে চলাচলের জন্য যে সেতু ব্যবহার করেন। সেটা তারা তৈরি করেন ঘাস দিয়ে।
কোয়েসওয়াচাকা নামের সেতুটি মূলত ইনকা সভ্যতার দড়ির সেতুর সর্বশেষ নিদর্শন। হাতে বোনা এই সেতুটি গত ৬০০ বছর ধরে ইনকা অধিবাসীরা তৈরি করে আসছে। প্রতিবছর আগের বছরের সেতুটি ফেলে দিয়ে নতুন আরেকটি সেতু স্থাপন করা হয়।
ইনকা অধিবাসীদের মধ্যে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে এই সেতু তৈরির প্রথা চলে আসছে। নদীর দুই পাড়ের মানুষেরাই এতে অংশগ্রহণ করে।
প্রথা অনুযায়ী কেবল পুরুষেরা মূল সেতু তৈরির কাজ করে, আর নারীরা উপরের দিকের ছোট দড়ি বোনার কাজটি করে থাকে।
সেতু বানানোর প্রথম দিনে পুরুষেরা পুরনো সেতুর কাছে জড়ো হয় ও ছোট দড়িগুলো বুনে বড় দড়ি বানানো শুরু করে। সেতুটির মূল অবলম্বন হচ্ছে তিন স্তর বিশিষ্ট ছয়টি বড় দড়ি যা প্রায় ১ ফুট পুরু। প্রতিটি দড়িতে থাকে প্রায় ১২০টি চিকন দড়ি।
প্রতিটি পরিবার এই দড়ি তৈরির কাজে অংশ নেয়। বিশেষ প্রজাতির এই ঘাস বেশ শক্ত, স্থানীয়ভাবে যাকে বলা হয় ‘কয়া ইচু’। ঘাসগুলোকে নমনীয় করতে প্রথমে গোলাকৃতির কিছু পাথর দিয়ে পেটানো হয়; তারপর ভেজানো হয় পানিতে।
সবাই যখন কাজে ব্যস্ত থাকে, আশে পাশের গ্রাম থেকে অনান্যরা তাদের জন্য রান্না করে নিয়ে আসে। সেই রান্নায় থাকে মুরগী, “কাই” (গিনিপিগ) আর ট্রাউট নামে পেরুর আপুরিম্যাক নদীর এক মাছ। সবগুলোই আলু দিয়ে রান্না করা হয়।
পুরনো সেতুটি কেটে নিচে ফেলে দেয়া হয়। নিচের ছড়ার পানিতে তা ভেসে যায়। ঘাস দিয়ে তৈরি হওয়ার কারণে তা পচেও যায় খুব দ্রুত।
সেতু তৈরির তৃতীয় দিনে কয়েকজন পুরুষ সেতুতে ওঠে ও ছোট ছোট কিছু দড়ি রেলিং থেকে সেতুর মেঝে পর্যন্ত বেঁধে দেয়। এটি বেড়ার মতো কাজ করে যেন সবাই নিরাপদে সেতু পার হতে পারে।
ছয়টি বড় দড়ির চারটি থাকে হাঁটার জন্য। আর দুই পাশে বাকি দুটি লাগানো হয় হাত দিয়ে ধরার রেলিং হিসেবে।
সেতু নির্মাণের এই পুরো প্রক্রিয়ায় কোন আধুনিক সরঞ্জাম বা যন্ত্র ব্যবহার করা হয়না। এখানে ব্যবহৃত হয় শুধুমাত্র ঘাস আর জনশক্তি।
কিউএসওয়াচাকা নামের এই সেতুটি বছরে একবার পুনঃনির্মাণ করা হয়। সেতু বানানো শেষে আয়োজন করা হয় খাবার দাবার আর সংগীতানুষ্ঠানের। মূলত ৪দিন ধরে চলে এই সেতু বানানোর আনুষ্ঠানিকতা। ৪র্থ দিনেই উৎসব করা হয়। এবং প্রতিবছর দোশরা জুন তাদের এই উৎসবের দিনটা পড়ে যায়।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়