Sunday, May 12

রহমতের ছায়ায় ঢেকে দাও আমায় হে খোদা!

হাবীবুল্লাহ সিরাজ:

অশেষ রহমতের মাস রমজান, ইবাদতের মাস, আল্লাহকে পাবার মাস। এই মাসের অফুরন্ত রহমতের বর্ণনা পাওয়া যায় হজরত সালমান ফার্সি বর্ণিত একটি দীর্ঘ হাদীস থেকে।

তিনি বলেন- যখন শাবান মাস শেষ হওয়ার দ্বারপ্রান্তে তখন হজুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে বিশেষ উপদেশ দিতেন যে, তোমাদের নিকট এমন একটি মাস আসছে যা অত্যন্ত মর্যাদাসম্পন্ন ও বরকতময়। শুধু তাই নয়, এই মাসে এমন একটি রজনী আছে যা হাজার মাস হইতে উত্তম। আল্লাহ তায়ালা এই মাসে  তোমাদের ওপর রোজাকে ফরজ করেছেন এবং এই মাসের রাত্রিগুলোতে নামাজ (তারাবি) পড়াকে সওয়াবের কাজ বানিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় এই মাসে একটি নফল আদায় করবে সে অন্য মাসের ফরজের সওয়াব পাবে। আর যে ব্যক্তি এই মাসে একটি ফরজ আদায় করবে সে অন্য মাসের সত্তরটি ফরজ আদায়ের সওয়াব পাবে।
রাসূল আমাদেরকে আরো উপদেশ দেন- এই মাস ধৈর্যের মাস। সুতরাং এই মাসের যে ধৈর্য ধারণ করবে আল্লাহ তাকে ধৈর্যের বিনিময়ে জান্নাত দেবেন। তিনি আরো বলেন এটা মানুষের প্রতি সহানুভুতির মাস। এটা রিযিক প্রশস্তির মাস। এই মাসে মানুষকে রিযিক বাড়িয়ে দেয়া হয়। এই মাসে যে অন্যকে ইফতার করাবে তার গোনাহ মাফ করে দেয়া হবে। শুধু গোনাহ মাফ করা হবে এমন, তার জাহান্নাম থেকে মুক্তির কারণও হবে। এবং সে সেই রোজাদারের সওয়াবের ভাগি হবে, কিন্তু রোজাদারের সওয়াব একটুও কমবে না। এই কথা শুনে সাহাবায়ে কেরাম বলে উঠলেন যে, হে নবী আমাদের মাঝে তো সবাই অন্যকে ইফতার করানোর সমর্থ রাখে না? এর জবাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- ( পেট ভরে খাওয়াতে হবে না) এই সওয়াব একটি খেজুর বা একটি ঢোক পানি বা দুধ পান করিয়েও অর্জন করা যাবে।
তিনি আরো উপদেশ দিয়ে বলেন- এটা এমন মাস যার প্রথম অংশে আল্লাহর রহমত নাযিল হয়, দ্বিতীয়াংশে গোনাহ মাফ হয় আর তৃতীয়াংশে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়া যাই। যে ব্যক্তি এই মাসে আপন গোলাম বা কর্মচারীর ওপর কাজের দায়িত্ব হালকা করে দিবে; আল্লাহ তাকে মাফ করে দেবেন এবং জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দিবেন।
তিনি আরো উপদেশ দিয়ে বলেন- এই মাসে তোমরা চারটি কাজ বেশি বেশি করবে। দুটি আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিলের জন্য। আর দুটি এমন যা না করে তোমাদের কোনো উপায় নেই। প্রথম দুটি কাজের একটি হলো বেশি থেকে বেশি কালিমা তাইয়িবা ও ইস্তেগফার পড়বে। অন্য দুটি হলো আল্লাহর কাছে জান্নাত লাভের দোয়া করা ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির দোয়া করা। সবশেষে একটি উপদেশ দেন; যে ব্যক্তি রোজাদারকে পানি পান করাবে আল্লাহ তাকে কাল কিয়ামতের ময়দানে হাউজে কাউসারের পানি পান করাবে। (তারগীব, ইবনে হিব্বান, বাইহাকি) 
আমরা এই দীর্ঘ হাদীসের আলোকে বলতে পারি রমজানের সারাটা জুড়েই রহমত আর রহমত। রহমত সম্পর্কিত আরেকটি হাদিস বর্ণনা করছি-  عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، قَالَ : " أُعْطِيَتْ أُمَّتِي خَمْسَ خِصَالٍ فِي رَمَضَانَ لَمْ تُعْطَهُ أُمَّةٌ قَبْلَهُمْ : خُلُوفُ فَمِ الصَّائِمِ أَطْيَبُ عِنْدَ اللَّهِ مِنْ رِيحِ الْمِسْكِ ، وَتَسْتَغْفِرُ لَهُمُ الْمَلائِكَةُ حَتَّى يُفْطِرُوا ، وَتُصَفَّدُ فِيهِ مَرَدَةُ الشَّيَاطِينِ ، فَلا يَخْلُصُونَ إِلَى مَا كَانُوا يَخْلُصُونَ فِيهِ إِلَى غَيْرِهِ ، وَيُزَيِّنُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ فِيهِ فِي كُلِّ يَوْمٍ جَنَّتَهُ ، ثُمَّ يَقُولُ : يُوشِكُ عِبَادِيَ الصَّالِحُونَ أَنْ يُلْقُوا عَنْهُمُ الْمُؤْنَةَ وَالأَذَى ، وَأَنْ يَصِيرُوا إِلَيَّ ، وَيُغْفَرُ لَهُمْ فِي آخِرِ لَيْلَةٍ ، قِيلَ : يَا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ! هِيَ لَيْلَةُ الْقَدْرِ ؟ قَالَ : " لا ، وَلَكِنْ إِنَّمَا يُوَفَّى الْعَامِلُ أَجْرَهُ إِذَا قَضَى عَمَلَهُ
অর্থাৎ হজরত আবু হুরায়রা (রাযি.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- আমার উম্মতকে রমজানের বিষয়ে পাঁচটি বিশেষ বৈশিষ্ট দান করা হয়েছে যা পূর্ববর্তী আর কোনো নবীর উম্মতকে দান করা হয়নি। ১. রোজাদারের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর কাছে মেশকাম্বরের চেয়ে সুঘ্রাণ যুক্ত ২. রোজাদারের জন্য নদীর মাছও ইফতার পর্যন্ত একটানা দোয়া করতে থাকে ৩. প্রতিদিন রোজাদারের জন্য জান্নাতকে সাজানো হয়। আর আল্লাহ তাদেরকে বলতে থাকেন অতিসত্তর আমার প্রিয়বান্দারা দুনিয়া কষ্ট ছেড়ে তোমাদের এখানে আসবে। ৪. এই মাসে দুষ্ট ও অবাধ্য শয়তানকে বন্দি করে রাখা হয়, ফলে মানুষজন খারাপ কাজ থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখতে পারে। ৫. রমজানের সর্বশেষ রাত্রিতে রোজাদারদেরকে মাফ করে দেয়া হয়। এই কথা শুনে সাহাবায়ে কেরাম বলেন- সেই রাত কী শবে কদর? রাসূল বলেন- না, বরং নিয়ম হলো কাজ হলে শ্রমিকের পারিশ্রমিক দিয়ে দেয়া। (তারগীব আহমদ বায়হাকী)
উল্লিখিত দু’টি হাদিস থেকে রমজান রোজা ও রোজদার সম্পর্কে অশেষ রহমতের আলাপ শুনলাম। আমাদের মাঝে এখন এই রমজানই উপস্থিত। রহমতের বৃষ্টিতে নিজের ভেজাতে এখনই সময়। এখনই লুফে নিতে হবে রহমতের বরকত। সেহরিগুলোতে নিয়মিত হাজিরা দিতে হবে। হাদীস শরিফে আসছে তোমরা সেহরি খাও, কেননা সেহরিতে বরকত রয়েছে। দিনের রোজাকে সুন্দর করে রাখতে হবে। বেহুদা ফাহেশা অনর্থ কোনো কাজে রোজা অবস্থায় জড়ানো যাবে না। সাহাবায়ে কেরাম যেভাবে সারাদিন পবিত্রতার সঙ্গে সিয়াম পালন করেছেন ঠিক সেইভাবে আমাদের সিয়াম পালন করতে হবে। দিনটা যখন শেষ হয়ে যাবে, ক্লান্ত হয়ে পড়বে তখন ইফতারের সময় হলে ইফতার প্রস্তুত করতে থাকা। সামনে ইফতার নিয়ে অপেক্ষাও বিরাট সওয়াব ও নেকির কাজ।
হাদীস শরিফে আসছে- ওই অবস্থাটা আল্লাহর কাছে প্রিয়। তখন আল্লাহর তার ফেরেস্তাদের বলতে থাকেন দেখ, খাবার সামনে তবুও আমার ডরে ভয়ে খাচ্ছি। তোমারা সাক্ষি থাকো, আমি তাদেরকে মাফ করে দিলাম। ইফতারে পরেই প্রস্তুতি নিয়ে এশা পরবর্তী সালাতুত তারাবির জন্য। এভাবে যদি আমরা আমাদের রোজাগুলো পালন করতে পারি; তাহলে আল্লাহর দরবারে আশা করা যায় যে, হাদীসে বর্ণিত অফুরন্ত রহমতের ঘোষণা আমাদের জীবনেও পাবো। ইনশাল্লাহ!

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়