কানাইঘটি নিউজ ডেস্ক:
রাজধানীর খিলগাঁওয়ে সুপারশপ স্বপ্ন’র এক আউটলেট থেকে নিজের বাচ্চার জন্য দুধের কৌটা চুরি করেছিলেন একজন বাবা। দুধ চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে গণধোলাইয়ের শিকার হয়েছিলেন বাবা। একপর্যায়ে প্রকৃত ঘটনা জানতে পেরে ওই বাবাকে বাঁচাতে এগিয়ে যান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের খিলগাঁও জোনের এসি জাহিদুল ইসলাম।
এসি জাহিদুল ইসলামের কাছে নিজের অসহায়ত্বের
বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, স্যার, তিনমাস হল চাকরি নেই, বেতন নেই। ঘরে ছোট
বাচ্চা, দুধ কেনার টাকা নেই। তাই বাধ্য হয়ে চুরি করেছি। এমন কথা শুনে যেন
মনের মধ্যে একটা নাড়া দিয়ে উঠল এই পুলিশ কর্মকর্তার। ওই বাবার অসহায়ত্ব
বুঝে তাৎক্ষণিকভাবে দুধের দাম দিয়ে দেন তিনি।
সন্তানের জন্য দুধ চুরি করা সেই বাবাকে মোবাইল অ্যাক্সেসরিজ
ডিপার্টমেন্টে সোর্সিং এক্সিকিউটিভ পদে চাকরি দিয়েছে স্বপ্ন কর্তৃপক্ষ।
রোববার সন্ধ্যায় স্বপ্নের প্রধান কার্যালয়ে সেই বাবার হাতে নিয়োগপত্র তুলে
দেন স্বপ্নের নির্বাহী পরিচালক সাব্বির হাসান নাসির।
স্বপ্নের হেড অফ মার্কেটিং তানিম করিম বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই
বাবার চুরির বিষয়টি ভাইরাল হওয়ার পর তা নজরে আসে স্বপ্নের নির্বাহী
পরিচালক সাব্বির হাসান নাসিরের। পরে তার নির্দেশে সেই বাবা ও সন্তানের
দায়িত্ব নেয়ার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে স্বপ্ন কর্তৃপক্ষ।
তানিম করিম আরো বলেন, 'হৃদয়বিদারক এ ঘটনা জানতে পেরে আমাদের কোম্পানি
সেই বাবাকে চাকরি দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। তবে, এমন ঘটনা
আমরা প্রায়ই মুখোমুখি হই, তাই ঘটনার সত্যতা না যাচাই করে আমরা এখনি
নিশ্চয়তা দিচ্ছি না।'
বিষয়টি ভাইরাল হলে স্বপ্নের নির্বাহী
পরিচালক সাব্বির হাসান নাসিরের নজরে আসে। তার নির্দেশে ওই বাবা ও সন্তানের
দায়িত্ব নেওয়ার পদক্ষেপ নেয় স্বপ্ন কর্তৃপক্ষ।
এসি জাহিদুল ইসলাম বলেন, সন্তানের ক্ষুধার
যন্ত্রণা সইতে না পেরে স্বপ্ন থেকে দুধ চুরি করেছিলেন যিনি তাকে ডেকে আনা
হয়েছে। স্বপ্ন কর্তৃপক্ষকেও ডাকা হয়েছে। তার জন্য একটি চাকরির ব্যবস্থা
করেছে স্বপ্ন কর্তৃপক্ষ।
তিনি বলেন, চাকরির নিয়োগপত্র ওই বাবাকে তুলে
দিয়েছেন স্বপ্নের কর্মকর্তারা। তাকে অফিসে নিয়ে গেছে স্বপ্ন কর্তৃপক্ষ।
সেখানে তার একটি ইন্টারভিউ নেয়া হবে। এরপর তার যোগ্যতা অনুযায়ী পদ ও বেতন
নির্ধারণ করবে স্বপ্ন কর্তৃপক্ষ।
খিলগাঁও জোনের এসি জাহিদুল ইসলাম ঘটনার
বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে নিজের ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন। পাঠকদের জন্য
ফেসবুকে দেয়া পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হল।
‘গতকাল রাত আনুমানিক ৮.৪৫ মিনিট। বাকি সড়কে
চেকপোস্ট ডিউটি তদারকি করছিলাম। হঠাৎ এক জায়গায় মানুষের হট্টগোল দেখতে
পেলাম। ঘটনা কি তা দেখার জন্য আমার এক সাব-ইন্সপেক্টরকে পাঠালাম। কিছুক্ষণ
পর বেশ কিছু লোক ২৫-৩০ বছর বয়সী একজন লোককে টেনে-হিঁচড়ে আমার সামনে নিয়ে
আসলো। ঘটনা জানতে চাইলাম।’
একজন বলল, ‘স্যার, লোকটা চোর, চুরি করে
পালাচ্ছিল।’ পাশে লোকটাকে শক্ত করে ধরে রাখা এক সিকিউরিটি গার্ড আমাকে বলল,
‘স্যার, লোকটা স্বপ্ন সুপার শপ থেকে চুরি করে পালাচ্ছিল।’
‘আমি জিজ্ঞেস করলাম, কি চুরি করেছে?
সিকিউরিটি গার্ড বলল, ‘স্যার, সে এক প্যাকেট দুধ চুরি করে পালাচ্ছিল।’ আমার
খটকা লাগল, আমি জিজ্ঞেস করলাম ‘দুধ’? তখন সিকিউরিটি গার্ড অতি উৎসাহ নিয়ে
বলল, ‘স্যার বাচ্চাদের ন্যান দুধের প্যাকেট।’
‘আমি লোকটার দিকে তাকালাম। আমার বয়সেরই
হবে। দেখতে ভদ্রলোকই মনে হলো। তাকে জিজ্ঞেস করলাম, চুরি করলেন কেন? সে
কেঁদে ফেললো। তারপর বললো, ‘স্যার, তিন মাস হলো চাকরি নাই, বেতন নাই। ঘরে
ছোট বাচ্চা, দুধ কেনার টাকা নাই।’
‘সঙ্গে সঙ্গে আমার ছেলের চেহারা মনে পড়লো।
মনে হলো কতটা নিরুপায় হলে একজন বাবা এই কাজ করতে পারে। ওর জায়গায় আমি
থাকলেও হয়তো একই কাজ করতাম।’
‘সিকিউরিটি গার্ডকে জিজ্ঞেস করলাম, দুধের
প্যাকেটের দাম কত? সে বলল, ৩৯০ টাকা স্যার। আমি তাকে ৫০০ টাকা দিয়ে বিল
রাখতে বললাম এবং লোকটিকে ছেড়ে দিতে বললাম।’
তিনি শেষে লিখেন, ‘আজ আমাদের দেশের এক অসহায়
বাবা তার বাচ্চার জন্য দুধ চুরি করে…কত মানুষ বেকারত্বের অভিশাপ ঘোচাতে
অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে…হয়তো আমি ভালো চাকরি করে আজ ভাল আছি, কিন্তু সমাজের কত
মানুষ আজ এই বাবার মত নিরুপায়!!! এর দায়ভার কার??!!’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসুবকে পোস্টটি
ভাইরাল হয়। ভাইরাল হওয়ার পর ঘটনাটি নজরে আসে অনেকের। ভাইরাল এই পোস্টটি
দেখে সুপার শপ স্বপ্নের নির্বাহী পরিচালকসহ আরো অনেকেই ওই বাবাকে সহযোগিতা
করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এরই মধ্যে সেই বাবাকে সাহায্যের বিষয়ে অনেকে এসি
জাহিদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়