Thursday, August 16

লোভাছড়া ভ্রমণ: প্রিয়তমার নাগালে স্মৃতির জোনাকি


মো. আব্দুল বাছিত:
ভ্রমণ করতে কার না ভালো লাগে? ভ্রমণে আনন্দের মাত্রা আরো বেড়ে যায় যদি, ভ্রমণের জায়গাটি অত্যন্ত প্রিয় হয়। কবিতার মতই বলতে হয়, প্রিয়জনের সবকিছুই সুন্দর, যদি সুন্দর হৃদয় দিয়ে অবলোকন করা যায়। প্রিয়জন যেখানে থাকেন, তাঁর আশে পাশ দিয়ে গেলেই প্রিয়জনকে অনুভব করা যায়। মনের মাধুরী, প্রিয়জনের চাহনি আর ভালোবাসা কল্পনার রঙে মিশে যায়। স্বচ্ছ পানির আবছায়া আলোয় অনুভব হয় প্রিয়তমার প্রিয় মুখটি। আবছায়া আলোয় উজ্জ্বল আলোর ঝলকানিতে প্রিয়তমার মিশে যাওয়া পথের বাঁকে আমরা ছুঁটে চললাম কয়েকজন ভ্রমণপিপাসু বন্ধু। সেদিন ছিল ২০ জুন, ২০১৮, রোজ বুধবার। সিলেট জেলার কানাইঘাট উপজেলার স্বনামধন্য বিদ্যাপীঠ, আমার কৈশোরের প্রেম অর ভালোবাসা চরিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের এসএসসি ২০১৩ ব্যাচের বন্ধুমহল ছুটলাম প্রিয়তমেষুর স্বচ্ছ পানির গোধূলী বাঁকে আর প্রাকৃতিক সুনসান পরিবেশের এক নৈসর্গিক মনোলোভা দেশের উত্তর-পূর্ব সীমান্তের কানাইঘাট উপজেলায় ব্রিটিশ আমলে চালু হওয়া চা বাগান এবং নানা দর্শনীয় স্থান ঘিরেই অবস্থিত লোভাছড়ায়। ছোট-বড় পাহাড়-টিলা, নদী-নালা ও খাল-বিল পরিবেষ্টিত প্রাকৃতিক ও নৈসর্গিক সৌন্দর্যে ভরপুর এক দর্শনীয় স্থান লোভাছড়া। প্রায় ৫০ বছর আগে নির্মিত টিলাবাবু আর ম্যানেজারের আকর্ষণীয় বাংলো আজো পর্যটকদের বিমোহিত করে। আমরা ও তাই বারবার বিমোহিত হই। অত্যন্ত কাছে থেকেও বারবার ফিরে যাই ভালোবাসার আবেশে। বারবার গেলেও এর যেন আমেজ আমাদের কাছে কমে না। আবেদনময়ীর মত পর্যটক বারবার আকৃষ্ট হয় লোভাছড়ার রুপ দেখে। সেই অভিপ্রায় থেকে সকাল ১১টায় নৌকাযোগে সুরমার তীরবর্তী লোভারমুখ বাজার থেকে এক সাথে ছুটে চললাম আমরা সবাই সুনসান নীরবতা, নিস্তব্ধতার মাঝে। যদিও সেদিনের পরিবেশ খুব একটা নীরবতায় ঢাকা ছিল না। প্রচ- রোদ এবং দাবদাহ গরম উপেক্ষা করে নৌকায় আনন্দ উল্লাসে শামিল হলো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ঘনিষ্ট বন্ধু কামরুল ইসলাম, এমসি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের বন্ধু ইসমাঈল আলী যাকে আমরা স্কুল লাইফে শোয়েব বলেই ডাকতাম, এমসিতে ইতিহাস পড়া জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সুমন, স্কুলে সে ছিলো সকলের মামু, মদনমোহন কলেজের অর্থনীতির ছাত্র ইসফাক হোসেন ফজল, ফজল নামটি সবার ডাকায় একসময় ফুজেল হিসেবে পরিগণিত হল এবং সবশেষে আমাদের সকলের কাছে কমেডি খ্যাত মারজান আহমদ মাহের। আড্ডায় তাঁর অনুপস্থিতি আমাদেরকে বেদনাহুত করতো, আবার তার উপস্থিতিতে আমাদের আড্ডা হয়ে উঠত জমজমাট। হঠাৎ করে কোথাও থেকে একটা কথা আমদানী করে সকলকে হাসানোই তাঁর চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। যাই হোক, আনন্দ উল্লাসে নৌকা ছেড়ে দিয়ে মাতাল হাওয়ায় ভেসে যেতেই নৌকা ভিড়ল সুরমার তীরবর্তী দক্ষিণ লক্ষ্মীপ্রসাদ গ্রামের পাশেই। সেখানে দাঁড়ানো ছিল আমাদের আরেক সহপাঠী বন্ধু রুহুল আমিন, ইদানিংকালে রুহুল আমিন এলাকায় মাস্টার হিসেবে বিশাল খ্যাতি অর্জন করেছে বলে লোকমুখে শোনা যায়। অবশ্যই এর আগে তাঁর সাথে এলাকায় ঘুরে বুঝেছি, রুহুলের মধ্যে একটা মাস্টার মাস্টার ভাব বজায় আছে, যার কারণে সবাই স্যার হিসেবে বিবেচনা করতে ভালোবাসে। রুহুলের সাথে আমাদের আড্ডায় যোগ হল আমাদের আরেক বন্ধু আফজাল আহমদ। আমাদের নৌকা ছুটে চলল লোভা নদীর শরীর বেয়ে চির সুন্দর আর প্রাকৃতিক মোহমায়ায় আচ্ছাদিত প্রাকৃতিক লেক এবং স্বচ্ছ পানির ঝরণাধারার দিকে। যেখানে নিত্য ঘটছে পাহাড়, মেঘ আর আকাশের মিতালি। স্রোতের ছলাৎ ছলাৎ শব্দ। নীলাকাশে সাদা বকের উড়াউড়ি। বেসুরো গলায় মাঝির মরমি-মুর্শিদি গান। ঢেউয়ের দোলায় ছন্দময় দুলুনি। চোখ জুড়ানো সবুজের আস্ফালন। চারদিক থেকে ধেয়ে আসা বিশুদ্ধ হাওয়া, আমাদের সবাইকে আপন করে টানছিলো প্রিয়তমার রুপবৈচিত্র্য দেখার মত লোভাছড়ার দিকে এগিয়ে যেতে। জায়গায় পৌঁছার আগেই যদি এত রুপ আস্বাদন করে ফেলি তাহলে থাকলোই বা? শুধু কী তাই? নৌকা চলার কয়েক মিনিট পর থেকেই নিজস্ব সত্ত্বাকে হারিয়ে গিয়েছিলাম আমরা। ইঞ্জিন নৌকার বটবট শব্দ, নৌকার ঝাঁকুনি, ঢেউয়ার দোলায় অবাক ছন্দে উপর-নিচ দোল খাওয়া, সীমাহীন আকাশের ক্ষণে ক্ষণে রূপ পাল্টানো রং, ঝাকঝাক সাদা বকের দলের হাওয়ার সাথে উড়াউড়ি- এসবকিছুই আমাদের মনকে নিজদের অজান্তেই টেনে নিয়ে যায় ভাবনার উন্নাসিক এক জগতে। এ এক অন্যরকম আনন্দ। ভালো লাগা।
বিশাল নদীর দু’পাড় দিয়ে গরু-মহিষ নিয়ে কৃষকের চলাচল, নদীর চরে গরু-মহিষের জলকেলি, পাহারারত দুরন্ত কিশোর-কিশোরী আর নদীর দু’ধারের চর যেন গভীর নদী থেকে ক্রমে ক্রমে উঠে গিয়ে মনে হচ্ছে মিশে গেছে ওই আকাশের সাথে!
নদীর স্রোতে ইঞ্জিনহীন ডিঙ্গি নৌকার ভেসে চলা কিংবা পাথর নিয়ে গন্তব্যে ছুটে চলা বিশালাকারের স্টিমার, সেইসাথে স্টিমারকে ঘর-বাড়ি বানিয়ে ফেলা শ্রমিকদের জীবনচিত্র- বড় বড় স্টিমারের ছুটে চলার পথ বেয়ে নদীজলের আস্ফালন, বিশাল সব ঢেউ বুকে অদ্ভূত শিহরণ বইয়ে দেয়। তখন বারবার মুগ্ধ হচ্ছি আর আবৃত্তি করছি কবি গুরু রবী ঠাকুরের কবিতা-
“বহু দিন ধরে বহু ক্রোশ দূরে
বহু ব্যয় করি বহু দেশ ঘুরে
দেখিতে গিয়েছি পর্বতমালা,
দেখিতে গিয়েছি সিন্ধু ।
দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া
ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া
একটি ধানের শিষের উপরে
একটি শিশির বিন্দু ।।”
সত্যিই তো নিজের বাড়ির পাশে সৌন্দর্যের আধার পড়ে আছে। কিন্তু সেইসব সৌন্দর্য অবলোকন করে নিজেদেরকে সমৃদ্ধ করার মত মানসিকতা আমরা হারিয়ে ফেলছি দিনে দিনে। অবাধ তথ্য-প্রযুক্তির ছোঁয়ায় জীবনের একঘেয়েমিটাকে ভালোভাব দূর করতেও পারছি না।

এভাবেই প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং নদীপাড়ের মানুষের জীবনচিত্র দেখতে দেখতে আমরা পৌঁছে গেলাম আমাদের কাঙ্খিত স্থানে। লোভাছড়া পাথর কোয়ারি। এই অংশটাও লোভাছড়ার অধীনে। নদীর বুক থেকে শত শত শ্রমিক নীরবেই তুলে চলেছে টন টন পাথর। এ যেন সাগর সেঁচে মুক্তো তোলা! এ যেন পাথরের শহর। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই পাথর পাঠানো হয়। এটা একেবারে নিদ্বির্ধায় বলা যা, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তৈরী পাঁকা বাড়ি-ঘর গুলোর সাথে মিশে লোভাছড়ার পাথরের ঘ্রাণ। আমাদের নৌকা ছুটে চলেছে মন্থর গতিতে গতিতে। দু’ধারের আকাশসম সবুজ পাহাড় দেখে এবং নৌকায় চড়ে নদীর পাড়ের অবারিত সৌন্দর্য অবলোকন করতে করতে, পাথরের শহরের মায়ায় আচ্ছন্ন হয়ে নদীর তীরবর্তী সতিপুর গ্রামে আমাদের নৌকা ভিড়ালাম। সেখানে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলো আমাদের সকলের অত্যন্ত প্রিয় বন্ধু, যাকে সবাই ব্যাচের লিজেন্ড বলে আখ্যায়িত শাবিপ্রবিতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল এন্ড প্রডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং(আইপিই) বিভাগে অধ্যয়নরত বন্ধু তারেকুল ইসলাম। এর মাঝে আমরাও কয়েকজন বন্ধু তীরে নেমে পাথরে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে লাগলাম। সকলের মধ্যে আনন্দ উচ্ছ্বাস দেখে মনে হয়েছিলো অনেকদিন পরে সবাই একত্রিত হতে পেরে পুরনো দিনগুলো ফিরে পেয়েছিল। তীরে নেমে প্রিয়তমেষুর জন্মস্থানে পা রাখতেই কেন যেন আমার বিষণ্ন মনটাও এক মুহূর্তে ভালো হয়ে গেলো। এই সুযোগকে হাতছাড়া করতে চাইলাম না। কয়েকটি ছবি তুলে ফেললাম। নিজের এলাকা হলেও আবার যে কবে আসতে পারবো সেটা ভেবেই স্মৃতিগুলো কাজে লাগবে বলে ধরে নিলাম। তারেককে সাথে নৌকা করে নদীর অপর তীরে আমাদের আরেক ঘনিষ্ট বন্ধু, ম্যাটসে অধ্যয়নরত সুহেল আহমদকে নৌকায় আমাদের মাঝে শামিল করলাম। সম্প্রীতি এলাকায় সে ডাক্তার সোহেল নামেই সর্বধিক পরিচিত। আমরাও সবাই তাকে হবু ডাক্তার বলেই সম্বোধন করি। অত্যন্ত কাছে এসেও আনন্দঘন এই পরিবেশে আমরা মিস করতে লাগলাম আরেক বন্ধু এমসিতে বিএসসিতে অধ্যয়নরত, একই গ্রামের রাসেল আহমদকে। অত্যন্ত সাদা মনের এবং নীরবতা প্রিয় রাসেল আমাদের সাথে এলে আরো আড্ডা হত এটাই ভাবলাম। যাই হোক নৌকায় ইচ্ছেমতো সবাই আনন্দে মেতে উঠল। যে যার মত ছবি তুলতে লাগলো। সেলফি তুলে এই অপার আনন্দের সময়গুলোকে স্মৃতির ফ্রেমে আবদ্ধ করে নিলো। আমাদের নৌকা ক্রমেই এগিয়ে চললো সীমান্তের ওপারে মেঘালয়ের পাহাড়ের কাছে। পাহাড়গুলোকে দেখে মনে হয়েছিল আমাদের সবাইকে যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে। কিন্তু বিধি-নিষেধ থাকায় আমরা খুব কাছে যেতে পারলাম না। একটু দূরে থেকেই প্রকৃতি প্রিয়তমার রুপ- বৈচিত্র্য আস্বাদন করতে লাগলাম। একটু সামনে গেলেই সুন্দরভাবে দেখা যায় ভারত-বাংলাদেশকে বিভক্তকারী অত্যন্ত সরু ঝুলন্ত ব্রিজটি। যেটা জনসাধারণের কাছে ভারত-বাংলাদেশ জিরো পয়েন্ট বলে বিবেচিত। দূর থেকে দেখলে মনে হয় কেন যেন দুটি পারের মধ্যে একটি সরু দড়ি সংযুক্ত করে দিয়েছে। নদীর দুইপাড়ে অবস্থিত মায়াবী সবুজাভ পাহাড়ের সৌন্দর্য আমাদের সবার হৃদয়কে মোহিত করে তুলল। আমারা নদীর পাড়ে সবুজ ঘাসে নেমে সময়গুলোকে স্মৃতির ফ্রেমে আটকে ফেললাম। সবুজ ঘাস ছাড়া বিভিন্ন রকমের রকমারী উদ্ভিদ পাড়ের সৌন্দর্যকে আরো বাড়িয়ে তুলল। এদিকে রোদের প্রচ- উত্তাপ আমাদের মাথার ওপরে পড়ে মাথা গরম করে দিয়েছিল। বেশ কিছুক্ষণ থাকা এখানে সমীচিন মনে হল না। বেশ কিছুক্ষণ ফটোসেশন করে সবুজ পাহাড়ের সৌন্দর্য অবলোকন করতে করতে লোভাছড়ার সৌন্দর্য হৃদয়ে শিহরিত করতে লাগলো। আনন্দে উদ্বেলিত হল আমাদের সবার হৃদয়।
তারপর আমরা সবাই চলে গেলাম মুলাগুলের বিখ্যাত বাজার, ‘নয়াবাজার’-এ। সেখানে জোহরের নামাজ আদায় করে বন্ধু তারেক এবং সুহেলের আন্তরিকতায় নাস্তার ব্যবস্থা হলো। এর মাঝে ফোন দিলাম আমার কলেজের বন্ধু, এমসি কলেজে বিএসসিতে অধ্যয়নরত মিজানুর রহমানকে। সে ও এসে আমাদের সাথে যোগ দিলো। সকলের সাথে পরিচিত হয়ে পরিবেশে অন্যরকম ভালো লাগার ক্ষণ সৃষ্টি হলো। এবার নৌকা যোগে লোভাছড়া চা বাগান এবং ঝুলন্ত ব্রিজ দেখার পালা। বন্ধু মিজানকে আমাদের সাথে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করলাম। নানারকম টালবাহানা শুরু করলো সে যাবে না বলে। অবশেষে আমাদের সবার দাবীর কাছে হার মানতে বাধ্য হল। কাছে অবস্থিত তার বাড়ী থেকে রেডি হওয়ার জন্য সবাইকে বললো। এই সুযোগে তার সাথে তার বাড়ি চলে গেলাম। অনেক ঘনিষ্ট বন্ধু হওয়া সত্ত্বেও ব্যস্ততায় কোনো দিন তার বাড়ি যাওয়া হয়নি। সুযোগটি হাতছড়া করতে চাইলাম না। তার সাথে চলে গেলাম। বাড়িতে গিয়ে অল্প সময়ে তার আতিথেয়তা আমাকে মুগ্ধ করলো। হুটহাট করে অনেক কিছু রেডি করে ফেললো। খেতে না চাইলেও খেতে হল। বন্ধু বলে কথা! এদিকে বন্ধুদের অতকির্ত ফোনের হামলায় আমি ঘায়েল। প্রচণ্ড রোদের মাঝে ছাদবিহীন নৌকায় বন্ধুদের অবস্থা কাহিল হয়ে যাচ্ছিল। বন্ধুর বাড়ি এসে খাওয়া শুরু করে দিয়েছি জানলে তারা মাইন্ড করবে এটা ভাবতেই তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে বের হলাম। এক নজর দেখে ফেললাম অদেখা অনেককিছু। কাছ থেকে প্রচণ্ড এক শূন্যতা এবং বুকের মধ্যে চিনচিনে ব্যথা নিয়ে আমি আর মিজান নৌকায় উঠলাম।
পাথরের সিড়ি বেয়ে। নৌকা ভিড়ল নদীর পাশেই লোভাছড়া চা বাগানের কোলঘেষে। দেখলাম পাহাড়ের কোলজুড়ে সবুজ গাছপালার ঘন রঙে আচ্ছাদিত হয়ে আছে লোভাছড়া চা বাগান। আমরা সব বন্ধু মাটির রাস্তা ধরে যতই এগিয়ে যাচ্ছি, চোখে পড়ছে ছোট-বড় নানা ধরনের গাছপালা। চা বাগানের মাঝে গাছগুলো সারি সারি সাজানো। এর সৌন্দর্য যে কাউকে মুগ্ধ করবে। আমরা সবাই বারবার মুগ্ধ হচ্ছি। মুগ্ধ না হয়ে উপায় আছে? প্রিয় বন্ধুদের অনেকেই প্রায় সময় গেলেও তাদের যেন বিরক্তি আসেনা জায়গাটার প্রতি। কী সুন্দর লোভাছড়া! মনে মনে শোকরিয়া আদায় করলাম মহান সৃষ্টিকর্তার। এমন একটি সৌন্দর্যময় এলাকায় জন্ম দিয়েছেন বলে। যেদিকে তাকাই শুধু সবুজের সমারোহ। এক অপার আনন্দে মনটা বারবার নেচে উঠতে লাগলো। পাথর শোভিত রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতে দেখা পাওয়া গেলো আমাদের আরেক বন্ধু নন্দন কালোয়ারের সাথে। সেই এই বাগানেই থাকে। বাগান এবং বাগানের মানুষের সাথে তাঁর গভীর মিতালী। সেই ২০১৩ সালে এসএসসি পাস করার পর তার সাথে আর দেখাই হয়নি। সে একটু কাজ শেষ করে আসার কথা বললো। অনেক দিন পর তাকে পেয়ে আমাদের আবেগে জোয়ার এসে গেলো। বন্ধুরা মিলে সবাই মিলে আনন্দ করতে লাগলো। উল্লেখ্য, এই বাগানে থাকতো আমাদের আরো দুইজন বন্ধু, বন্ধু সন্তুষ চন্দ্র দাশ এবং নুসরাত জাহান শশি । সন্তুষ শহরে থাকায় আমাদের সাথে যোগ দিতে পারেনি। আর শুনেছি বছর দুয়েক আছে নুসরাত জাহান শশি তাঁর বাবার চাকরী বদলির সূত্রে স্বপরিবারে হবিগঞ্জ চলে গিয়েছে। তাঁর জন্য আমাদের সবার মনটা একটু খারাপ হয়ে গেলো। এ যে আমাদের একজন কাছের বন্ধু থেকে দূরে থাকার জন্য। যে মায়া-মমতায় আমরা জড়িয়ে পড়েছিলাম, আমাদের চোখ অশ্রুসজল হয়ে উঠেছিল। জীবনে মায়া-মমতার বন্ধনকে অস্বীকার করা যায় না। চিরদিন থেকে যায় হৃদয়ের গভীরে, তা আবারো প্রমাণিত হল।বন্ধুরা পাথরের রাস্তা ধরে এগুতে লাগলো চা বাগানের দিকে। সবাই মিলে চাবাগানের সৌন্দর্য উপভোগ করার পাশাপাশি স্মৃতির ফ্রেমে আবদ্ধ করতে ভুল করলো না। চারিদিকে বিশালাকারের ডালপালা নিয়ে স্বগর্বে দন্ডায়মান বটবৃক্ষকে ঘিরে চা শ্রমিকদের চা পাতা নিয়ে কাজকারবার দেখতে দেখতে আমাদের সবাই অনুধাবণ করতে পারলাম, এ দেশের খেঁটে খাওয়া মানুষের জীবনচিত্র কতটা কষ্টকর এবং সংগ্রামী। একমুঠো ভাত আর কাপড়ের জন্য তাদের অভিরাম সংগ্রাম আমাদের মনকে নাড়া দিল। আমরা হাঁটছি আর হাঁটছি, হারিয়ে যাচ্ছি সবুজ নিসর্গের মাঝে। অনেক সময় দেখা যায় একটি হাতিকে মাহুত নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু দুভার্গ্য আমরা সেটা মিস করলাম। সারি সারি চা গাছ, মুকুলসহ চায়ের পাতা, ঘন নিবিড় বন থেকে ভেসে আসা পাখ-পাখলির গুঞ্জন আমাদের মনকে বিমোহিত করে তুলল। লোভাছড়ার বাসিন্দাদের অদ্ভূত নির্মাণশৈলীর ছোট ছোট কুটি। কুটির থেকেই চেয়ে থাকা ছোট্ট শিশু-কিশোরদের মায়াবী চাহনি দেখে মনে হয় এমন চাহনি কতোদিন যে দেখা হয় না। কিছুক্ষণ হাঁটার পর আমরা ঢুকে গেলাম লোভাছড়া চা বাগান এলাকার কাছে। এখানে উল্লেখ করা দরকার, লোভাছড়ার অবস্থান কানাইঘাট উপজেলার লক্ষ্মীপ্রসাদ ইউনিয়নে। সীমান্তবর্তী লোভাছড়া নদীর পাশে ব্রিটিশ আমলে প্রায় ১৮৩৯ একর জমির ওপর ইংরেজ মালিকানায় গড়ে ওঠে ‘লোভাছড়া চা বাগান’। সামনে দেখা গেলো মনোলোভা চা বাগান আর সুদর্শন বাংলো তথা জমিদার বাড়ির গেইট। একটু টিলার উপরেই বাংলোটি অবস্থিত। কর্তৃপক্ষের অনুমতি না পাওয়ায় বাংলোর ভেতরের অনেক কিছুই দেখা বঞ্চিত হলাম আমরা বন্ধুমহল। তবে জানতে পারলাম, ১৯০৯ সালে একজন ইংরেজ এখানে এসে জমিদারীর গোড়াপত্তন করেন। বর্তমানে সেখানে তার উত্তরসূরী লিও ফার্গুসন নানকা নামে সাবেক এক ব্রিটিশ নাগরিক এই বাগানের মালিক। স্থানীয়দের অনেকে এ বাগানকে নানকার বাগানও বলে থাকে। মি. নানকা এখানকার স্থানীয় ইউনিয়নের বর্তমান নির্বাচিত চেয়ারম্যান এবং পূর্বেও বেশ ক’বার চেয়ারম্যান ছিলেন। বাগান এলাকায় তিনি বেশ জনপ্রিয়। চারিদিকে পরিপাটি সবুজাভ চায়ের বাগানের মাঝখানে বাংলোটি দর্শকদের অন্যতম আকর্ষণ। সকলের নজর কাড়ে বাংলোটি। ছন দিয়ে আবৃত বাংলোর ছাদটিতে গ্রামবাংলার প্রতিচ্ছবি বহন করে। সামনে সবুজে আচ্ছাদিত বিশালাকার উঠোন। বাগানের একপাশে দেখা যায় একটা প্রাচীন স্থাপনা। স্থাপনাটি ছিল চায়ের ফ্যাক্টরি। একসময় চা প্রক্রিয়াজাত এখানে করা হলেও বর্তমানে বাগান থেকে চা পাতা তুলে এনে সিলেট শহরে প্রক্রিয়াজাত করা হয়। লোকমুখে শোনা যায়, মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকবাহিনীর তা-বে এই বাগানের নিজস্ব ফ্যাক্টরি ধ্বংস হয়ে যায়। তাই এখানে গেলে কোনো চা প্রক্রিয়াজাতকরণ পদ্ধতি দেখা যাবে না বটে, তবে ধ্বংসাবশেষ চা ফ্যাক্টরি আপনার আমার অভিজ্ঞতার ঝুলিকে সমৃদ্ধ করবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। স্থানীয়দের সাহায্যে এই তথ্যটুকু উদ্ধার করে একটু কষ্ট নিয়ে ফিরলাম অন্যতম আকর্ষণ লোভাছড়ার ঝুলন্ত ব্রিজের দিকে।
এখানকার পাহাড়ের মধ্যবর্তী ঢালু উপত্যকায় রয়েছে অনেক প্রাকৃতিক লেক। পরিচর্যা করলে এ লেকগুলো হয়ে উঠতে পারে আরো আকর্ষণীয়। আয়তনের দিক দিয়ে ছোট হলেও লেকগুলোর স্বচ্ছ পানি দেখে মন জুড়িয়ে যায়। এখানকার ঝরনার পানির ছল ছল শব্দ শুনে পর্যটকদের মন আনন্দে নেচে ওঠে। কিন্তু সময় আমাদের সবাইকে বারবার তাড়া দিতে লাগলো। তাই এতসব সৌন্দর্য উপভোগ না করেই হাঁটতে লাগলাম পাথর শোভিত রাস্তা ধরে।
চারপাশের মনমাতানো সবুজের শ্যামলীমায় মুগ্ধ হয়ে আমরা হাঁটছি ক্লান্তিহীনভাবে। সবুজাভ পাহাড়ের গায়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার দেখেই আমরা সবাই পৌঁছে গেলাম লোভাছড়ার বিখ্যাত সেই ঝুলন্ত ব্রিজে। লোভাছড়ার পাশ দিয়ে ভারত সীমান্তে হারিয়ে যাওয়া ‘নুনগাঙ। ‘নুনগাঙ’ প্রায় নদীর মতো হলেও এটি আসলে ঘোলা পানির একটি খাল যা লোভাছড়া নদী থেকে উৎপন্ন হয়েছে। খালের ওপর বেশ পুরনো, তবে এখনো মজবুত স্টিলের তৈরি আকর্ষণীয় সেই ঝুলন্ত ব্রিজটি অবস্থিত। সড়ক পথে লোভাছড়ায় আসার পথে পাওয়া ব্রিজটিকে গ্রামের ভাষায় অনেকেই লটকনির পুল হিসেবে আখ্যায়িত করে। ব্রিজটির গায়ে খোদাই করে লেখা রয়েছে- ‘ব্রিজটি নির্মিত হয় ১৯২৫ সালের এপ্রিল মাসে!’ ৩ টন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন এই ঝুলন্ত ব্রিজ আমাদের সবাইকে মাতিয়ে তুলল। সত্যিই এই ব্রিজে দাঁড়িয়ে থেকে প্রকৃতির অপরুপ রুপ- বৈচিত্র্য উপভোগ সত্যিই অসাধারণ। এর মাঝে আমরাও পড়ে গেলাম ঘোরের মাঝে যে, সেই আমলে এই বনভূমিতে ৩ টন ধারণক্ষমতার কোন যানবাহন চলতো? এটা চিন্তা করে। কারা বসবাস করতো এখানে? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আমদেরকে ইতিহাসের আশ্রয় নিতে হবে বলে সেখানে আর এসব নিয়ে ভাবলাম না। সবাই মিলে স্মৃতির ফ্রেমে বন্দী করতে লাগলাম আনন্দময় পরিবেশটাকে। ঝুলন্ত ব্রিজের চারপাশে উঁচু উঁচু আকাশছোয়া পাহাড়সাড়ি দেখে আমাদের মন সৌন্দর্যের মাঝে আচ্ছন্ন হয়ে গেলো। আমরা আরো মুগ্ধ হলাম একটু দূরেই ভারত সীমান্তে পাহাড়ের সাথে মেঘ আর আকাশ মিশে খেলা করছে দেখে! এক অপার আনন্দে মনটা ভরে গেলো। আমাদের হৃদয় থমকে যায়! পাহাড়-মেঘ-আকাশ-সবুজারণ্য এমন করে মিতালির দৃশ্য দেখে মুখ থেকে এমনিই একটি শব্দ গড়িয়ে আসে- অপূর্ব! মনে মনে সৃষ্টিকর্তার শোকরিয়া আদায় করতে বিলম্ব করলাম না। যে নদীর বুক চিরে আমরা এখানে পৌঁছেছি, সেটাকে মনে হচ্ছে হাতবাড়ানো দূরত্বে দাঁড়িয়ে থাকা পাহাড়সারি থেকে নেমে এসেছে যেন! নদীর তীরে মিহি কণার বালুচরে নেমে আমাদের হৃদয়ে ছুটে যেতে চাইছিল ওই পাহাড় আর মেঘের কাছে। কিন্তু সীমান্তের আমাদেরকে বেঁধে দিল সীমানা। হয়তো গোধূলী লগ্নে এই দৃশ্যটা আরো মনোহরিণী হয়ে দেখা দিতো আমাদের মাঝে। এখানে আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন, লোভাছড়ার দক্ষিণ পাশে সুরমা নদী তীরবর্তী মূলাগুল বাজারের পূর্ব পাশে অবস্থিত একটি টিলার ওপর রয়েছে হযরত শাহজালাল (র.)-এর সঙ্গী ৩৬০ আউলিয়ার মধ্যে অন্যতম ওলি হযরত মীরাপিং শাহ (র.)-এর মাজার। মাজারটি দেখার জন্য এখানে প্রতিদিন অনেক ভক্ত এসে ভিড় জমান। ভক্তদের ভালোবাসার শুভ্রতা ছড়িয়ে পড়ে মাজার সংলগ্ন এলাকায়। কিন্তু সময়ের অভাবে আমরা সবাই একসাথে সেই শুভ্রতার পরিবেশ উপভোগ থেকে বঞ্চিত হলাম। এছাড়া লোভাছড়ার সৌন্দর্য দেখতে গিয়ে আরো অনেক দর্শনীয় স্থানের উপভোগ করা যায়। এখানকার অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে মোগল রাজা-রানির পুরাকীর্তি, প্রাচীন দীঘিসহ আরো দৃষ্টিনন্দন স্থান রয়েছে। লোভাছড়া সীমান্তে মোগল সাম্রাজ্যের রাজা-রানিদের অনেক পুরাকীর্তি রয়েছে। চোখাটিলা নামক একটি পাহাড়ের পাদদেশে একটি ঝরনার পাশে রয়েছে প্রাচীনকালের দুটি পাথর। এ পাথর দুটিতে বসে রাজা-রানিরা খেলতেন। পাথরে বসে রাজা-রানিরা লোভাছড়ার সৌন্দর্য নিবিড়ভাবে অবলোকন করতেন বলে লোকমুখে প্রচলিত আছে। এছাড়া চা বাগানের পাশে রয়েছে একটি বিশাল দীঘি। এককালে দীঘিতে অনেক অলৌকিক জিনিসপত্র যেমন, থালা-বাসন, রৌপ্যমুদ্রা ইত্যাদি পানিতে ভেসে উঠত বলে লোকমুখে বিভিন্ন মুখরোচক কাহিনী প্রচার হয়ে আসছে। সুরমা নদীর পূর্ব প্রান্তজুড়ে রয়েছে সুবিশাল পাথরের খনি। এখান থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার শ্রমিক পাথর উত্তোলন করে। এখান থেকে আহরিত পাথর সারা দেশে সরবরাহ করা হয়। যা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। আরো অনেক সৌন্দর্যের আধার লুকিয়ে আছে লোভাছড়ায়। বিভিন্ন ধরনের বন্য-প্রজাতির প্রাণীর বসবাস আছে বলে এলাকার মানুষজন বলে থাকেন। হয়তো বা রাতে থাকলে বন্য-প্রাণীর গর্জন শোনা যেত। প্রকৃতির সৌন্দর্যের অনেক বিষয় অজানা এবং অদেখা থেকে গেলেও আমাদের ফেরার তাড়া সবার মাঝে, সময় যে সবার বেঁধে রাখা। সবাইকে ফিরতে হবে। বাড়িতে।
এরই মাঝে নুনগাঙ খাল দিয়ে নৌকা নিয়ে মাঝি ভাই চলে আসলেন। না চাইতেও আমাদেরকে সৌন্দর্যের বাধন ছেড়ে, আনন্দ-স্মৃতি নিয়ে নৌকায় উঠলাম। নৌকা দিয়ে নুনগাঙ-এর মধ্যে আসার সময় মনে হয়েছিল আমরা যেন প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যাচ্ছি। খালের দুই পাড়ে সবুজে সবুজে মিশে আছে প্রকৃতির নৈসর্গিক সৌন্দর্য। নৌকার মধ্যেও চলল সেলফি তথা ছবি তুলার হিড়িক। কেউ মিস করতো চাইলো না প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের ছুটে চলা নৌকার মধ্যে টুকরো স্মৃতি। বহমান জীবনের মত ভাসমান নৌকায় বন্ধুদের উচ্ছ্বাসপূর্ণ আড্ডা মনের মুকরে সারাজীবনের জন্য কাটা দাগ সৃষ্টি করলো। এ দাগ ভালোবাসার বন্ধনের, বন্ধুত্বের। এর মাঝে ঘটলো আরেক কাণ্ড। ডাক্তার সাহেব নাকি তাঁর নানার বাড়িতে আমাদের সবার খাওয়ার ব্যবস্থা করেছে। যেতেই হবে। কিন্তু আমাদের সবার মধ্যে ফেরার তাড়া। এদিকে আমাদের সবার পেটে ক্ষুধা চোঁ চোঁ করছে। এ মূহুর্তে মনে খাই খাই একটা ভাব সবার মধ্যে চলে এসেছে। তাছাড়া সোহেলের নানার বাড়ির মানুষ কষ্ট পাবেন জেনে আমরা আর না করলাম না। নৌকা ছুটে চলল তার নানার বাড়ির ঘাটে। ঘাটে নৌকা ভিড়িয়ে বাড়িতে উঠলাম।
সেখানে নানু, মামা-মামীর আদর-যত্ম আর আতিথেয়তা আমাদের সবাইকে মুগ্ধ না করে পারলো না। অল্প সময়ে এত মানুষের জন্য খাবার রেডি করে তারা যে ভালোবাসা এবং স্নেহের দৃষ্টান্ত দেখালেন তা আমাদের সবার হৃদয়ে স্মৃতি হয়ে থাকবে। সারাদিনের ক্লান্তির পর নানা মুখরোচক খাদ্য খেয়ে পেটকে শান্তি করে আমাদের ক্লান্তি কমে এলো। এবার ফেরার পালা। সোহেলের নানার বাড়ির সকলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নদীর পাড়ে চলে এলাম। এই এক ঘণ্টা আগে এই বাড়িতে এসে মনে হয়েছে তারা আমাদের কত আপন, কত প্রিয়জন! তবুও মায়ার বন্ধন স্থগিত রেখেই ফিরতে হবে, নিজের ঘরে। নৌকায় উঠলাম। সোহেল রয়ে গেলো তার নানার বাড়িতে। শেষবারের মত নৌকা ভিড়ালাম, প্রিয়তমেষুর দৃষ্টিসীমার অন্দরে পদস্পর্শে সিক্ত মুলাগুলের নয়াবাজারে। বন্ধু মিজান আর তারেক নেমে গেলো। থাকার তাগিদে। আমরা রয়ে গেলাম নৌকায়। নৌকা চলতে লাগলো। গোধূলীর সময় কাটিয়ে আবছা আঁধারে ঝিরঝিরে বাতাসের মধ্য দিয়ে নৌকা চলতে লাগলো প্রিয় জায়গা চরিপাড়ার দিকে। ছলাৎ ছলাৎ ঢেউয়ের মাঝে রেখে দিলাম বুকের এক দাগ শূন্যতা! স্মৃতিগুলো বুকে নিয়ে সামনে চলতে লাগলাম। এ চলার শেষ নেই! মনে পড়ল প্রিয় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘বিদায় স্মরণে’ কবিতার প্রথম চরণ-
‘পথের দেখা এ নহে গো বন্ধু
এ নহে পথের আলাপন।
এ নহে সহসা পথ-চলা শেষে
শুধু হাতে হাতে পরশন।
লেখক: কবি, সাংবাদিক, প্রাবন্ধিক।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়