Sunday, February 25

মেসির এমন ফ্রি–কিক শেষ কবে দেখেছেন?

0a4e8ca99223d25a6700937e7ba4d04e-5a929a5f38e4f.jpg

কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক :
ফুটবল গতির খেলা, পরতে পরতে উত্তেজনা। সারাক্ষণই তো এতে কী হয়, কী হয় ব্যাপার! কিন্তু রেফারি বক্সের আশপাশে ফ্রি-কিকের বাঁশি বাজালেই সবকিছু কেমন যেন ঠান্ডা হয়ে আসে। ওটা আসলে চাপা উত্তেজনা। রক্তনালির নাচন আটকে দর্শকেরা তৈরি হন ‘বিশেষ’ কিছু দেখতে। লিওনেল মেসির কাছ থেকে সেই ‘বিশেষ’ নিশ্চয়ই দেখেছেন গতরাতে!

জিরোনার বিপক্ষে ততক্ষণে ২-১ গোলে এগিয়ে বার্সেলোনা। একটি করে গোল করেছেন লুইস সুয়ারেজ ও মেসি। ৩৬ মিনিটে জিরোনার ডি বক্সের বাইরে ফ্রি-কিকের বাঁশি বাজান রেফারি। শটটা কে নেবেন তা বোঝাই যাচ্ছিল। মেসিই এগিয়ে এলেন ফ্রি-কিকটা নিতে। জিরোনার খেলোয়াড়েরাও মানবদেয়াল বানিয়ে তৈরি। কিন্তু মেসি সেই মানবদেয়ালকেই ফাঁকি দিলেন কী অসাধারণ কেতায়!

ফ্রি-কিকের ক্ষেত্রে ৯৬ শতাংশ সময়েই ‘মানবদেয়াল’-এর ভাবনা থাকে বলটা তাঁদের মাথার ওপর দিয়ে মারা হবে। এ কারণে ফ্রি-কিক নেওয়ার সময় ‘মানবদেয়াল’-এ দাঁড়ানো খেলোয়াড়েরা স্বাভাবিকভাবেই লাফ দেন, যেন বলটা তাঁদের মাথায় লেগে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। ফ্রি-কিক মারা এবং ঠেকানোর এটাই প্রথাগত চিন্তা। কিন্তু ‘জিনিয়াস’ হলে ভিন্ন কথা। মেসি করলেন কী, শট নিলেন জিরোনা ‘মানবদেয়াল’-এর নিচ দিয়ে!

জিরোনার খেলোয়াড়েরা যে লাফ দেবেন এটা তো মেসি আগেই জানতেন। তাই মাটি কামড়ানো শটে তাঁদের পায়ের তল দিয়ে বল পাঠিয়েছেন জালে। গোলরক্ষক ডান প্রান্তে ঝাঁপিয়ে পড়লেও বেশি কিছু করতে পারেননি।
অনেক খেলোয়াড় যেখানে গোটা ক্যারিয়ারেই এমন একটা গোল করতে পারলেই বর্তে যান, সেখানে মেসির স্মিত উল্লাস দেখে খটকা লাগতেই পারে। এমন গোল মেসি আগেও করেছেন। সে কারণেই এই আত্মনিয়ন্ত্রণ? নাকি কিছুদিন আগে নানা মারা যাওয়ার প্রভাব? সে যা-ই হোক না কেন, জিরোনার বিপক্ষে এই গোলটি দিয়ে মেসি কিন্তু ফুটবলরসিকদের স্মৃতিকাতর করে তুলেছেন।

বার্সেলোনার হয়ে মেসির এমন গোল এই প্রথম। আর্জেন্টিনার জার্সিতে এর আগে ‘ফ্রি-কিক আন্ডার দ্য ওয়াল’ থেকে গোল করেছেন ২০১৪ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে; উরুগুয়ের বিপক্ষে। তবে বার্সার ‘নস্টালজিক’ সমর্থকেরা কিন্তু কাল রাতে মেসির গোলটি দেখে মনে মনে ফিরে গিয়েছিলেন তাঁর পূর্বসূরির কাছে—রোনালদিনহো!

২০০৬, ভেরডার ব্রেমেন! মনে পড়ে? ম্যাচের ১৩ মিনিটে ফ্রি-কিক পেয়েছিল বার্সা। জার্মান ক্লাবটির ‘মানবদেয়াল’-এর সবাই যে লাফ দিয়েছিলেন তা নয়। কিন্তু যাঁরা লাফ দিয়েছিলেন তাঁদের পায়ের তল দিয়েই ‘রোনি’ বল পাঠিয়েছিলেন জালে। এর ছয় বছর পর ব্রাজিলিয়ান ক্লাব অ্যাটলেটিকো মিনেইরোয় থাকতেও ফিগুইরেনেসোর বিপক্ষে একইভাবে গোল করেছিলেন রোনালদিনহো। মজার ব্যাপার হলো, ‘রোনি’র সেই গোলের পরদিনই সিয়েনার বিপক্ষে ফ্রি-কিক থেকে গোল করেন আন্দ্রে পিরলো। কীভাবে? সেই ‘আন্ডার দ্য ওয়াল’!

বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে উরুগুয়ের বিপক্ষে সেই গোলের পর মেসি কিন্তু স্মরণ করেছিলেন রোনালদিনহোসহ আরেকজনকে—তিনি ইতালিয়ান ফুটবলে ‘আর্কিটেক্ট’ এবং জুভেন্টাসে ‘মোৎজার্ট’খ্যাত আন্দ্রে পিরলো। মেসির ভাষ্য ছিল, ‘দেয়ালের নিচ দিয়ে ফ্রি-কিক? রোনালদিনহো এবং পিরলো সম্প্রতি এভাবে গোল করেছে। আমি পারব কি না তা নিয়ে মনের মধ্যে একটু সন্দেহ থাকলেও শেষ পর্যন্ত বাজিটা ধরে জিতেছি।’

‘আন্ডার দ্য ওয়াল’ ফ্রি-কিক আসলেই একধরনের বাজি। প্রতিপক্ষ ‘মানবদেয়াল’-এর খেলোয়াড়দের লাফ দেওয়ার সঙ্গে শট নেওয়ার টাইমিং নিখুঁত হতে হয়। এ ছাড়া গোলরক্ষকের পজিশন দেখে শট নেওয়াও ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। মেসির মতো ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোও এ কাজে পারঙ্গম। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে থাকতে নিউক্যাসল ইউনাইটেডের বিপক্ষে এমন গোল রয়েছে রোনালদোর। রিয়াল মাদ্রিদে আসার পর একইভাবে ফাঁকি দিয়েছেন বায়ার্ন মিউনিখকেও।

রোনালদিনহো ‘আন্ডার দ্য ওয়াল’ ফ্রি-কিকে সম্ভবত সবচেয়ে বেশি পরিচিত এবং সফলও। ২০১১ সালে সান্তোসের বিপক্ষেও একইভাবে গোল করেছিলেন সাবেক এ ব্রাজিলিয়ান। তাঁরই একসময়কার জাতীয় দল সতীর্থ রিভালদো বার্সেলোনায় থাকতে এসি মিলানের বিপক্ষে গোল করেছিলেন ‘মানবদেয়াল’-এর নিচ দিয়ে।

ভীষণ খ্যাতিমানদের বাইরে এই পথে হেঁটেছেন জাভি আলোনসো, কাইল ওয়াকার এবং কেভিন ডি ব্রুইনও। কিন্তু কাল মেসি সেই একই পথে যেভাবে হাঁটলেন, তা নিকট অতীতে শেষ কবে দেখেছেন? প্রথমআলো

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়