Saturday, February 27

চুল কি বেশি পড়ছে, জেনে নিন সমাধান

চুল কি বেশি পড়ছে, জেনে নিন সমাধান

কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক: চুল পড়া অত্যন্ত সাধারণ একটি সমস্যা। এই সমস্যা প্রায় সবারই কমবেশি থাকে। মানুষের চুল পড়ার স্বাভাবিক মাত্রা কত?

উত্তরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগের অধ্যাপক কর্নেল মো. আব্দুল ওয়াহাব বলেন, চুল পড়ার সমস্যাকে আমরা প্রধানত মাথার সমস্যা মনে করি। তবে চুল তো অনেক জায়গায় থাকে। মাথায় থাকে, চোখে থাকে, শরীরে থাকে। তবে আমরা সাধারণত সচেতন থাকি মাথার চুলের সমস্যা নিয়ে। আমরা আনুমানিক ধরে নিয়েছি মাথায় এক লাখ চুল থাকে।

এখান থেকে প্রতিদিন যদি ১০০ থেকে দেড়শ চুল পড়ে। চুলের একটি চক্র আছে, এটি কিন্তু পূরণ হতে হয়। অনেকে আমাদের কাছে এসে বলেন, 'স্যার আমার সব চুল পড়ে গেল'। আমি বলি, 'কয়টি পড়ে বলেন তো’? বলে, 'স্যার একশটার মতো পড়ে'। আসলে একশ চুল পড়া তো স্বাভাবিক। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসার প্রয়োজন নেই।

প্রশ্ন : চুল পড়ার সমস্যা নিয়ে রোগীরা যখন আপনাদের কাছে আসে, তখন আপনাদের কী পরামর্শ দিয়ে থাকেন?

উত্তর : প্রথমে আমরা জিজ্ঞেস করি আপনার কতগুলো চুল পড়ে। এরপর তার বয়স, তার ছেলে মেয়ে কতজন, সিস্টেমিক কোনো রোগ আছে কি না, কোনো ওষুধ খায় কি না—এগুলো জিজ্ঞেস করি। যে কারণে চুল পড়ছে সেটি নির্ণয় করার চেষ্টা করি। অনেকে দেখা যায় যে চুলে অতিরিক্ত সাবান মাখে, প্রতিদিন শ্যাম্পু করে। অনেকে দিনে ২-৩ বারও শ্যাম্পু করে। কারো হয়তো জ্বরের জন্য এমন হয়, চুল পড়ে, কারো হয়তো ক্যানসার রোগ রয়েছে। কারো হয়তো বংশগত কারণে পড়ে। চুল পড়ার কিন্তু বিভিন্ন কারণ রয়েছে।

চুল পড়ার বিভিন্ন ধরন রয়েছে। আমরা সাধারণত চুল পড়ার ধরনকে দুই ভাগে ভাগ করি। একটি নন স্কারিং, আরেকটি স্কারিং। চুলের উপরের অংশকে হেয়ার শেপ বলি। তবে মূল হচ্ছে হেয়ার ফলিকল, এটি ত্বকের ভেতর থাকে।

কিছু রোগী আসে এমন রোগ নিয়ে যে জায়গায় জায়গায় কিছু কিছু চুল উঠে গেছে। এটি মাথায় হতে পারে। দাঁড়িতে হতে পারে। অন্য জায়গায়ও হতে পারে। এগুলোর অনেক কারণ রয়েছে। এগুলোকে সাধারণত আমরা অটো ইমিউন রোগ বলি। এগুলোর ভালো চিকিৎসা রয়েছে। সেটি আমরা অহরহ করছি। এগুলোর সেরে যাওয়ার হার খুবই ভালো।

প্রশ্ন: এই যে জায়গায় জায়গায় চুল পড়ে যাচ্ছে, এর কী ধরনের চিকিৎসা আপনারা করে থাকেন?

উত্তর: প্রথমে আমরা রোগীকে মানসিকভাবে বোঝাই। এটি কোনো সমস্যা নয়, এখানে চিকিৎসা সম্ভব। এই সমস্যা যেকোনো বয়সেই হতে পারে। তবে তরুণদের এই সমস্যা বেশি হয়। এভাবে পরামর্শ দেওয়ার পর আমরা ওষুধ শুরু করাই। প্রথমে আমরা এক ধরনের স্টেরয়েড দেই। এটি প্রতিদিন দুইবার করে লাগাতে দেই, আক্রান্ত স্থানে লাগানোর জন্য। ভালো চিকিৎসা হলো এখানে ইনজেকশন দেওয়া। তবে মানুষ মাথায় ইনজেকশন দিতে ভয় পায়। তবে কার্যকারিতার দিক থেকে ইনজেকশন ভালো। এটি মাসে একটি করে দেই।

প্রশ্ন : এই চুলটা কতদিনে আবার আসতে পারে?

উত্তর : সাধারণত দুই থেকে তিনটি ইনজেকশন দেওয়া লাগে। তবে অনেক সময় দেখা যায়, যেখানে ইনজেকশন দেওয়া হচ্ছে সেখানে চুল উঠছে। তবে আশপাশে আবার চুল পড়ে যাচ্ছে। সেগুলোতেও আবার ইনজেকশন দেওয়া লাগে। তখন আবার চুল উঠে। আমার যত দূর ধারণা যদি সারা মাথায় সমস্যাটি হয় সেই ক্ষেত্রে চুল উঠতে হয়তো কঠিন হয়। তবে জায়গায় জায়গায় যদি হয় এর চিকিৎসা কিন্তু আশানুরূপ ভাবে করা যায়।

প্রশ্ন : প্রতিকারে আমরা অপচিকিৎসকের কিছু বিজ্ঞাপন দেখি? এসব জায়গায় গিয়ে খুব কী লাভবান হতে পারে?

উত্তর : না। অপচিকিৎসা যেটির হয়, সেটি আসলে বংশগত। সামনের দিকে চুল উঠে গেছে বা পেছনের দিকে চুল উঠে গেছে। এই রোগগুলো যাদের অল্প বয়সে হয়, ধরেন ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সে, বিয়ে হয়নি। এরা বিভিন্ন জায়গায় যায়। কবিরাজি, হোমোপ্যাথি ইত্যাদি।

আমাদের অনেক চিকিৎসা আছে আমরা টপিক্যাল থেরাপি দিচ্ছি, ট্যাবলেট দিচ্ছি। না পারলে আলগা চুল পরার পরামর্শ দিচ্ছি। আমাদের দেশে কিন্তু এখন হেয়ার ট্রান্সপ্লেন্টও শুরু হয়েছে।

প্রশ্ন : হেয়ার ট্র্যান্সপ্ল্যান্ট আপনারা কীভাবে করছেন? এবং কখন করছেন?

উত্তর : রোগী হয়তো চুলপড়া নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় রয়েছে। তাকে দ্রুত চুলপড়া বন্ধ করতে হবে, তখন আমরা হেয়ার ট্র্যান্সপ্ল্যান্ট করি। অন্য ওষুধগুলোতে দেরি করে সমাধান হয়। অনেক ক্ষেত্রে আবার কাজেও লাগে না। সেই ক্ষেত্রে হেয়ার ট্র্যান্সপ্ল্যান্ট ভালো। এগুলো অনেকভাবে করা হচ্ছে, ২-৩ পদ্ধতিতে করা হচ্ছে।

আপনি দেখবেন মানুষের টাক হয়, তবে পেছনের দিকে টাক হয় না। ওই চুল নিয়ে আমরা যখন সামনে লাগাচ্ছি, তখন চুল পড়ার আশঙ্কা খুব কম।

প্রশ্ন : আর যদি পেছনেও চুল না থাকে, সে ক্ষেত্রে কী করা হয়?

উত্তর : সেক্ষেত্রে তো আর চুল পাওয়া যাচ্ছে না। ইদানীং অবশ্য এক্সিলা ও বিয়ার থেকে নিয়ে কিছু করা হচ্ছে। তবে এসব জায়গায় আর কতটুকু চুল থাকে? কাজেই পেছনের স্কাল্পে যদি চুল না থাকে সেক্ষেত্রে সমস্যা হয়ে যায়।

প্রশ্ন : কতটুকু সফল হচ্ছেন আপনারা এই ক্ষেত্রে?

উত্তর : আমাদের প্রায় ২-৩টি কেস করা হয়েছে। এদের ফলাফল ভালো। আর এটি বেশ উপকার দিচ্ছে। আমি সম্প্রতি ভারতে একটি কোর্স করে এলাম। তারা কিন্তু এই বিষয়ে খুবই সফল। তারা দিনে দুটো করেও এটি করছে। তবে আমাদের দেশে এখনো এই বিষয়ে তেমন বিশেষজ্ঞ তৈরি হয়নি। আমরা আশা করব অদূর ভবিষতে এটি আরো ভালো করে করা যাবে।

এই ক্ষেত্রে তরুণ চিকিৎসকরা কিন্তু ভালো করছেন। আমাদের তো বয়স হয়ে গেছে। তরুণদের আমরা এই বিষয়ে প্রশিক্ষণের জন্য বাইরে পাঠাচ্ছি। ভবিষ্যতে এ দেশে এগুলো খুব উন্নতি করবে বলে আমার বিশ্বাস।

প্রশ্ন : চুলপড়া প্রতিরোধে করণীয় কী?

উত্তর : চুলপড়ার কারণগুলো আমরা যদি নির্ণয় করতে পারি তাহলে কারণ জানা যায়। যেমন, অতিরিক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করা। অনেকে দিনে দু্ইবারও শ্যাম্পু ব্যবহার করে। এসব ঠিক নয়।

অনেকের মাথায় খুশকি থাকে। এই কারণেও চুল পড়ে। মেয়েদের ক্ষেত্রে কিন্তু ক্রাশ ডায়েটিংয়ের কারণে আমরা চুলপড়া বেশি পাই। এ ছাড়া চুলে অযথা কিছু তেল ব্যবহার করে এর কারণেও হয়।

চুলের যত্ন অবশ্যই নিতে হবে। যেটা দরকার সেভাবে চলতে হবে। এতে চুল ভালো থাকবে।

প্রশ্ন : রোদে বেশি গেলে কী চুল পড়ে?

উত্তর : না, রোদের সঙ্গে চুলপড়ার কোনো সম্পর্ক নেই। চুলের কিছু কিছু কানেকটিভ রোগ রয়েছে, সেক্ষেত্রে আমরা রোদে যেতে নিষেধ করি। তবে চুল পড়বে, এই কারণে রোদে যেতে খুব নিষেধ করি না।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়