Sunday, August 2

‘তোর বউকে পুলিশ দিয়ে গণধর্ষণ করাবো’


সিলেট, রবিবার, ০২ আগস্ট ২০১৫ :: আমাকে গণধর্ষণের হুমকি দেন ওসি আসাদুজ্জামান। স্বামী গেদার সামনে নিয়ে গিয়েও বলেন, আবু সাঈদের খুনের ঘটনা স্বীকার কর। নইলে তোর বউকে কনস্টেবলদের দিয়ে গণধর্ষণ করাবো। তোর সন্তানদের মেরে ফেলবো। এরপর বাধ্য হয়েই গেদা আদালতে খুনের ঘটনা স্বীকার করে।’ সিলেটের স্কুলছাত্র আবু সাঈদ অপহরণ ও হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত র‌্যাব-এর সোর্স আতাউর রহমান গেদাকে নির্দোষ দাবি করেন তার স্ত্রী নূরজাহান বেগম। একই সঙ্গে পুলিশ সম্পর্কে এ মন্তব্য করেন। শনিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এ দাবি করেন। এ সময় বলেন, ‘ওসি আসাদুজ্জামান থানা হাজতে আমার সামনেই গেদাকে উলঙ্গ করে। নিম্নাঙ্গে ইলেকট্রিক শক ও মলদ্বারে গরম পানি ঢুকিয়ে সম্পূর্ণ ঝলসে দেয়।’ সিলেটের শিশু আবু সাঈদ খুনের সময় সোর্স গেদার স্ত্রী নূরজাহান সম্পর্কে নানা বিতর্কিত অভিযোগ করেছিলেন এলাকাবাসী। অভিযোগ খণ্ডন করে নূরজাহান বেগম বলেন, ‘আমি কাউকে বিনা দোষে হয়রানি করিনি। এলাকাবাসীর কেউ কেউ আমার বিরুদ্ধে ওঠেপড়ে লেগেছিল। এ কারণে আমি অভিযোগ দায়ের করলে পুলিশ তদন্তে আসে।’ সিলেটের শিশু রাজন খুনের ঘটনার আগে ১১ই মার্চ লোমহর্ষক আরও একটি অপহরণ ও খুনের ঘটনা ঘটেছিল। ওই ঘটনাটিও নাড়া দিয়েছিল গোটা সিলেটবাসীকে। নগরীর শাহী ঈদগাহের শাহ্‌মীর (রহঃ) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে মুক্তিপণের দাবিতে অপহরণ করে পুলিশের সোর্স আতাউর রহমান গেদা, ওলামালীগের জেলা সেক্রেটারি আবদুর রকিব ও পুলিশ সদস্য এবাদুর রহমান। অপহরণের তিনদিন পর এলাকাবাসী ঘটনাটি জানে। পরবর্তীতে গেদাসহ গ্রেপ্তারকৃত তিনজন আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়ে অপহরণ ও খুনের দায় স্বীকার করে। লোমহর্ষক এই খুনের ঘটনা সোর্স গেদাকে কেন্দ্র করেই ঘটেছিল বলে আদালতে জবানবন্দির সূত্রে জানা গিয়েছিল। গেদা, এবাদুর ও রকিব শিশু আবু সাঈদকে গলাটিপে খুন করেছিল বলে আদালতে তারা নিজেরাই জানিয়েছে। কিন্তু ঘটনার সাড়ে ৪ মাস পর সংবাদ সম্মেলন করলেন গেদার স্ত্রী নূরজাহান। সংবাদ সম্মেলনে নূরজাহান বেগম বলেন, ‘এলিট ফোর্স র‌্যাব ‘ইনফরমার’ হিসেবে কিছু লোককে কাজে লাগিয়ে থাকে। এদের একজন ছিলেন আমার স্বামী আতাউর রহমান গেদা। তিনি র‌্যাব-৯ কে অপরাধীদের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করতেন বলে তাকে ‘ব্যাবের সোর্স’ বলে অভিহিত করা হতো। বিভিন্ন সময় অপরাধী ও অসাধু পুলিশের অপকর্মের তথ্য দিয়ে র‌্যাব’র সহযোগিতা করাই আমার স্বামীর জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। অপরাধী ও তাদের সঙ্গে নানা অপরাধ-অপকর্মে জড়িত কতিপয় পুলিশ সদস্যের কাছে আমার স্বামী চক্ষুশূল হয়ে ওঠেন এবং এজন্য অপরাধী ও অসাধু পুলিশ সদস্যরা আমার স্বামীকে স্তব্ধ করে দেয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে।’ তিনি বলেন, ‘১৪ই মার্চ এসএমপি’র কনস্টেবল এবাদুর রহমান পুতুলকে গ্রেপ্তার করে পরে তার ঝর্ণারপাড়স্থ বাসা থেকে আবু সাঈদের বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করে। ওইদিন রাতে কোতোয়ালি থানার এসআই সঞ্জয় আমার স্বামীকে ফোন দিয়ে থানায় যেতে বললে আমার স্বামী আমাকে ফোন দিয়ে তা জানান। থানায় যাওয়া মাত্র গেদাকে আটক করা হয়। পরে পুলিশ এসে তিন সন্তানসহ আমাকে আটক করে নিয়ে যায়। তখন স্বীকারোক্তিমূলক মিথ্যে জবানবন্দি আদায়ের উদ্দেশ্যে পুলিশ সন্তানাদিসহ আমাকে আটক রাখে এবং আমার স্বামীর উপর অমানুষিক নির্যাতনের পাশপাশি তার সামনে আমার ও আমার সন্তানের উপরও নিপীড়ন চালায়। রিমান্ডে নির্যাতনকালে সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানার তৎকালীন ওসি আসাদুজ্জামান, মামলার আইও (প্রথম) এসআই ফজলে আজিম পাটোয়ারী ও অন্যান্য কর্মকর্তারা আমার স্বামীকে অস্ত্র উদ্ধারের নাম করে বাইরে নিয়ে ক্রসফায়ারে মেরে ফেলার ভয় দেখায়। এতেও আমার স্বামী অবিচল থেকে স্বীকারেক্তিমূলক মিথ্যে জবানবন্দি দিতে রাজি হননি।’ তিনি দাবি করেন, ‘দ্বিতীয় দফায় রিমাণ্ডে থাকাবস্থায় আমার স্বামী মিথ্যা জবানবন্দি দিতে রাজি না হওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওসি আসাদুজ্জামান ও আইও এসআই আজিম পাটোয়ারীসহ কর্মকর্তারা আমার স্বামীর সামনে কনস্টেবলদের দিয়ে আমাকে গণধর্ষণ ও আমার সন্তানদের হত্যা এবং গুম করার হুমকি দেন। এরপর আমার স্বামী বাধ্য হয়েই জবানবন্দি দেন।’ পুলিশের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ তুলে নূরজাহান জানান, রিমান্ডকালে থানা পুলিশ আমার স্বামীকে ক্রসফায়ারে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে আমার কাছ থেকে ২০ হাজার টাকাও আদায় করে। এখানেই শেষ নয়, মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায়ের উদ্দেশ্যে অবুঝ সন্তানাদিসহ পুলিশ আমাকে রাস্তায় নামিয়ে দিয়ে আমাদের ভাড়া করা বাসাটি দীর্ঘ ২১ দিন তালা দিয়ে রাখে। পরে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ থানা পুলিশ আমার কাছ থেকে তিন হাজার টাকা নিয়ে বাসা খুলে দিলে আমি আসবাবপত্র সরিয়ে নিতে সক্ষম হলেও পুলিশের ভয়ে অবুঝ সন্তানদের নিয়ে এখনও ভবঘুরে দিনযাপন করছি।’ সংবাদ সম্মেলনে নূরজাহান বেগম তার স্বামীকে নির্দোষ দাবি করে তার নিঃশর্ত মুক্তি চান।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়