Saturday, August 29

ব্লগার অনন্ত হত্যায় কানাইঘাটে গ্রেফতারকৃত দুই ভাইকে নিয়ে এলাকায় তোলপাড়


নিজস্ব প্রতিবেদক: সিলেটের সুবিদবাজারে ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ হত্যাকান্ডে জড়িত সন্দেহে কানাইঘাট উপজেলার পূর্ব ফালজুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা হাফিজ মাওঃ মঈন উদ্দিনের দুই পুত্র হাফিজ আব্দুল মান্নান ইয়াহিয়া (২৫) ও হাফিজ আব্দুল মোহাইমিন নোমান (১৯) কে গ্রেফতার নিয়ে এলাকায় জনমনে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। গত শুক্রবার ভোর রাতে পুলিশের অপরাদ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এই দুই সহোদরকে তাদের নিজ বাড়ী থেকে গ্রেফতার করে। উগ্রবাদী ধর্মীয় গোষ্ঠীর সাথে তাদের সম্পৃক্ততা রয়েছে এবং বিজ্ঞান মনস্ক লেখক অনন্ত বিজয় দাস হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত সন্দেহে এ দুই সহোদরকে গ্রেফতার করা নিয়ে এলাকায় জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। গ্রেফতারকৃত দুই সহোদর ভাইয়ের নামে ফেইসবুকে একাধিক আইডি রয়েছে। এরমধ্যে হাফিজ আব্দুল মান্নান ইয়াহিয়ার নামে ইবনে মঈন, মান্নান রাহি নামে ফেইসবুক আইডি রয়েছে, অপর ভাই হাফিজ আব্দুল মোহাইমিন নোমানের নামে এ.এম রুমান নামে একটি ফেইসবুক আইডি রয়েছে। উক্ত আইডিগুলোতে তারা নিয়মিত ধর্মীয় লেখালেখি সহ বিভিন্ন পোস্ট এবং ধর্মীয় উগ্রবাদী জঙ্গী সংগঠনগুলোর সাথে যোগাযোগ রাখত বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। শনিবার সরেজমিনে কানাইঘাট উপজেলা সদর থেকে অন্তত ৩৫ কিলোমিটার দূরে সুরমা নদীর তীরবর্তী পূর্ব ফালজুর গ্রামসহ আশপাশ এলাকার নানা শ্রেণি পেশার মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, ফালজুর গ্রামের মৃত তাহির আলীর পুত্র ফালজুর জামে মসজিদের ইমাম এবং এলাকায় অবস্থিত আশরাফুল উলূম কৌমি মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মুহতামিম দাখিল পাশ মাদ্রাসা পড়ুয়া সরকারী ভাতা প্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা হাফিজ মঈন উদ্দিন (৫৫) এর গ্রেফতারকৃত দুই পুত্রের মধ্যে বড় ছেলে হাফিজ আব্দুল মান্নান ইয়াহিয়া (২৫) প্রথমে কৌমি মাদ্রাসায় লেখাপড়া করে পরবর্তীতে স্থানীয় ঝিঙ্গাবাড়ী ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসা থেকে দাখিল এবং একই মাদ্রাসা থেকে আলিম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। ছোট ছেলে হাফিজ আব্দুল মোহাইমিন নোমান (১৯) একই মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাশ করে। সরেজমিনকালে গ্রেফতারকৃত দুই সহোদরের পিতা হাফিজ আব্দুর রহিম নিজেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা দাবী করে তার মুক্তিবার্তা, পরিচয়পত্র দেখিয়ে বলেন তিনি এলাকার একমাত্র ভাতা প্রাপ্ত একজন মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালে যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বৃহত্তর সিলেটের বিভিন্ন রণাঙ্গনে তিনি সরাসরি যুদ্ধ করেছেন। নিজেকে স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি ও আওয়ামীলীগের একজন নিবেদিত কর্মী দাবী করে বলেন, তিনি রাজাগঞ্জ ইউপির ৯নং ওয়ার্ড আ’লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক। এলাকায় জামায়াত-শিবির ও জঙ্গিবাদী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তিনি সব সময় সোচ্চার ছিলেন এবং নিজ এলাকায় সকলের সহযোগিতায় আশরাফুল উলুম কৌমি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠাতা মুহতামিম এবং গ্রামের জামে মসজিদের ৩৫ বছর ধরে ইমামতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন। গ্রেফতারকৃত তার দুই ছেলে কোন ধরনে উগ্রবাদী জঙ্গী গোষ্ঠীর সাথে জড়িত রয়েছে এমন কোন তথ্য তিনি জানেননা এবং কোন রাজনৈতিক দলের সাথে তাদের সম্পৃক্ততা নেই। গ্রেফতারকৃত তার বড় ছেলে হাফিজ আব্দুল মান্নান @ ইয়াহিয়া আলিম পাশ করে কুমিল্লা ময়নামতি কলেজে ইংলিশ (অনার্স) কিছুদিন অধ্যয়নরত থাকার পর পরবর্তীতে সিলেট শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে একই বিভাগে ভর্তি হয়ে ৪র্থ সেমিস্টারে অধ্যয়নরত একজন নিয়মিত শিক্ষার্থী। পাশাপাশি সে বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। গ্রেফতারকৃত অপর ছেলে হাফিজ আব্দুল মোহাইমিন নোমান (১৯) ঝিংঙ্গাবাড়ী ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাশ করে সিলেট এম.সি কলেজে রাষ্ট্র বিজ্ঞানের একজন নিয়মিত অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী। তার দুই পুত্র বিজ্ঞান মনস্ক লেখক অনন্ত বিজয় দাস হত্যাকান্ডের সাথে কোন অবস্থায় জড়িত নয়। অনন্ত হত্যাকান্ডের পূর্বে ও পরে তার দুই পুত্র নিজ বাড়ীতে ছিল। হত্যাকান্ডের সাথে তাদের তার পুত্রদের নূন্যতম সম্পৃক্ততা নেই এবং তারা স্ব স্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত থেকে মাঝে মধ্যে বাড়ীতে আসা যাওয়া করত। তবে তার গ্রেফতারকৃত দুই পুত্র যে, ফেইসবুকে নিয়মিত লেখালেখি করতঃ এ বিষেয় তিনি কিছু জানেনা বলে জানান। সরেজমিনে গ্রেফতারকৃত দুই সহোদরের বাড়ীতে গেলে সেখানে স্থানীয় সাংবাদিকরা উপস্থিত হয়েছেন এমন খবরে এলাকার নানা শ্রেণি পেশার মানুষ ভীড় জমান। এসময় নানা জনের সাথে কথা বলে জানা যায়, গ্রেফতারকৃত দুই সহোদর মাঝে মধ্যে তাদের নিজ বাড়ীতে আসত। কারো সাথে তেমন মিশত না তারা। নিয়মিত নামায পড়তো, এলাকায় কোন ধরনের জঙ্গীবাদের কর্মকান্ডের সাথে তাদের সম্পৃক্ততার রয়েছে এমন কিছুই তারা জানেন না। তাদের পিতা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা বলে উপস্থিত স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ সহ এলাকার লোকজন জানান। গত শুক্রবার গভীর রাতে সিআইডির স্পেশাল ব্রাঞ্চের সদস্যরা ইয়াহিয়া ও নোমানের সাথে তাদের নবম শ্রেণি পড়ুয়া ভাই মামুন ও স্কুল পড়ুয়া ভাগ্না তানভীরকে ধরে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে স্কুল পড়ুয়া দুই জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। আবার এলাকার অনেকে জানিয়েছেন গ্রেফতারকৃত দুই সহোদর ইসলামী ছাত্র মজলিশের কর্মী। রাজাগঞ্জ ইউপি আ’লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক বিকাশ দাস বলেন, গ্রেফতারকৃতদের পিতা হাফিজ মঈন উদ্দিন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ৯নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক। তার গ্রেফতারকৃত দুই পুত্র এলাকায় কোন ধরনের সাম্প্রদায়িক বিরোধী বা জঙ্গী সংগঠনের সাথে জড়িত রয়েছে এ ধরনের কোন কিছু তাদের জানা নেই। তিনি বিষয়টি অধিকতর তদন্ত করে জঙ্গী সংগঠনের সাথে তাদের সম্পৃক্ততা থাকলে বিচার করা হউক দাবী করে বলেন, নির্দোশ হলে তাদের যেন হয়রানী না করা হয়। একই কথা বলেছেন স্থানীয় আ’লীগ নেতা ইউপি সদস্য ফখর উদ্দিন, রফিক আহমদ, আব্দুল কাদির, আব্দুল মন্নান, ফারুক আহমদ, আহমদ আলী, ছাত্রলীগ নেতা ইমরান আহমদ, মঞ্জুর ইসলাম, লিটন চন্দ্র দাস, রুপক দাস সহ বিভিন্ন পেশার সাধারণ মানুষ।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়