Tuesday, June 23

“এখনকার আওয়ামী লীগ অনেক কৌশলী”


ঢাকা: তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের বিভিন্ন গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের জন্য ১৯৪৩ সালের ২৩ জুন পুরান ঢাকার কে এম দাস লেনের রোজ গার্ডেনে প্রতিষ্ঠিত হয় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ। পরবর্তীতে অসম্প্রদায়িক চেতনায় ১৯৫৫ সালের কাউন্সিলে মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়ে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ করা হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দলটি পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের দাবী বিভিন্ন আদায়ে সংগ্রাম করে। এ কারণে রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের শিকারও হতে হয়েছে দলটির নেতা-কর্মীদের। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দীর্ঘসময় এই দলটি সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন করে জনগণের মধ্যে আস্থার স্থান তৈরি করে। ১৯৬৬ সালে ছয় দফা দেন বঙ্গবন্ধু যাকে বাঙালির মুক্তির সনদ করা হয়। ছয় দফার ভিত্তিতেই ৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে। কিন্তু ৭০ নির্বাচনে বিজয়ী হয়েও ক্ষমতা গ্রহণ করতে পারেনি দলটি। ১৯৭১ সালে এই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই শুরু হয় বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম। কারাবন্দি বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর অভ্যূদয় ঘটে বাংলাদেশের। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, গণতান্ত্রিকভাবে গণমানুষের দাবি আদায়ের জন্য প্রতিষ্ঠা হয়েছিল দলটি। কিন্তু বর্তমান সময়ে দলটি তাদের সে মূলনীতি থেকে সরে গিয়েছে। তারা বলেন, দেশের গণতন্ত্রের ধারক বাহক আওয়ামী লীগের গায়ে কালিমা লাগে ৫ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচন। নির্বাচনের পর সমালোচনা অবশ্য কিছুটা কমে আসতে শুরু করে। কিন্তু তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ আবারও ‍দুর্নাম লাগে দলটির গায়ে। তবে একতরফা নির্বাচনের দায় নিজের ঘাড়ে না নিয়ে বর্জনকারী বিএনপি-জামায়াত জোটের ওপর দিতে চান নেতারা। আবার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিদ্যুৎ, সড়ক অবকাঠামো, শিক্ষা, কৃষি, স্বাস্থ্য, সামাজিক উন্নয়ন, দারিদ্র বিমোচন, জঙ্গিবাদ দমনে সরকারের নেয়া নানা পদক্ষেপ প্রশংসা কুড়িয়েছে দেশে-বিদেশে। এই উন্নয়নই এখন আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় স্লোগান। এসব অগ্রগতিতে উৎফুল্লা আ্ওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিম এখন সোজাসাপ্টাই ‘উন্নয়নের স্বার্থে সরকারের সীমিত গণতন্ত্রে বিশ্বাসের’ কথা বলেন। এর আগেও বিভিন্ন আলোচনায় আওয়ামী লীগ নেতারা উন্নয়নের কথা বার বার সামনে নিয়ে এসেছেন। ২০ দলীয় জোটের টানা তিন মাসের অবরোধের সময়ে এক সংসদ সদস্য ঢাকার রাস্তায় পোস্টারে পোস্টারে জুড়ে দিয়েছিলেন ‘আগে উন্নয়ন পরে গণতন্ত্র’। আওয়ামী লীগের দলীয় ফোরামের বৃহৎ পরিসরে আলোচনা সভায় ‘আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী, তবে বেশি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি না’ মোহাম্মদ নাসিমের এমন বক্তব্য আলোচনার ঝড় তোলে। শাসক দলের নেতারা বলছেন, দেশের উন্নয়নের স্বার্থে সরকারের ধারাবাহিকতা দরকার। সরকারবিরোধীরা অনেকে সরকারের উন্নয়নকে স্বীকার করতে চাচ্ছে না। তবে আওয়ামী লীগ নেতাদের এমন বক্তব্য মানতে নারাজ আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী আধ্যাপক আবু সাইয়িদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, উন্নয়ন ধারা শক্তিশালী করতে হলে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে হবে। জনগণকে সম্পৃক্ত করা ছাড়া টেকসই উন্নয়ন সম্ভব না। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জনগণের ভাতের ও ভোটের অধিকারের জন্যই আওয়ামী লীগ গঠিত হয়েছিল। কিন্তু এখন তারা উন্নয়নের দোহাই দিয়ে সে মূলনীতি থেকে সরে যাচ্ছে। জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নূরুল আমিন বেপারী ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘১৯৪৯ সালে পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ জনগণের দাবি আদায়ের জন্যই গঠিত হয়েছিল আওয়ামী লীগ। এরপর তারা পূর্বপাকিস্তানের সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিল। গণতান্ত্রিক নানা আন্দোলনে সফল হলেও ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ কার্যক একতরফা শাসন কায়েম করেছে। বর্তমান আওয়ামী লীগ জনগণের নয়, প্রশাসন নির্ভর হয়ে গেছে’। জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক গোবিন্দ চক্রবর্তী ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এককথা আওয়ামী লীগকে মূল্যায়ন করতে গেলে বলা যায় অতীতের আওয়ামী ঐতিহ্যবাহী, অধিকতর মানবিক, ইহ রাজনৈতিক। কিন্তু বর্তমান আওয়ামী লীগকে মূল্যায়ণ করতে হলে বলতে হবে তারা প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ের জনগণের আকাঙ্খা থেকে অনেক দূরে সরে গেছে। তবে সে সরে যাওয়া হয়তো বাস্তববাদী কৌশলীর কারণেই হয়ছে। বর্তমান আওয়ামী লীগ কৌশলী হওয়ার কারণ উল্লেখ করে এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বলেন, এটা হয়েছে দেশিয় রাজনীতি, আঞ্চলিক ভূরাজনীতিতে ভারত এবং চীনের দ্বন্দ্বের কারণে, সর্বোপরি আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবের কারণে আওয়ামী লীগ হয়েছে অধিকতর কৌশলী। তবে বিষয়টি মানতে নারাজ আওয়ামী লীগ নেতারা। তারা বলেন, যারা বলেন দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নেই তারা দেশের উন্নয়নে ইর্ষান্বিত হয়েই এমন কথা বলছেন। দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশ আছে বলেই সকল সেক্টরে উন্নয়ন হচ্ছে। গণতান্ত্রিক পরিবেশ আছে বলেই সবাই সরকারের সমালোচনা করতে পারছে। যেটা সংসদ এবং সংসদের বাহিরেও হচ্ছে। জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, বাংলাদেশের যা অর্জন সবই আওয়ামী লীগের নেতুত্বে হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক মুক্তিও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে হবে।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়